আমি তখন ক্লাস থ্রী পড়ি। আমাদের বাড়ির পাশে হিন্দু বাড়ি ছিল নাম শংকর সরকার। উনার দুই ছেলে এক মেয়ে । বড় ছেলে সুমন, তার ছোট রাজন এবং সব থেকে ছোট মেয়ের নাম অপেক্ষা। অনেক চেষ্টার এবং প্রতিক্ষার পর মেয়ে হয়েছে তাই নাম রাখছে অপেক্ষা। সুমন পড়ে ক্লাস ফাইভ, রাজন ফোর। উনাদের বাড়িতে এক গৃহ শিক্ষক ছিল। একদিন সন্ধ্যায় মা আমাকে বলল চল আজ থেকে তোকে নতুন শিক্ষক আর কাছে পড়তে দিয়ে আসি। মনটা একটু খারাপই লাগছিল কারণ তখন মনে হত নতুন শিক্ষক মানে আরও পড়া দিবে আরো পড়তে হবে তাহলে খেলার সময় কমিয়ে আসবে। তারপরো গেলাম মায়ের সাথে। মা আমাকে সোজা শংকর বাবুর বাসার দিকে নিয়ে গেল। যখন উনার বাসার দরজায় গিয়ে বেল দিল তখন আমার মনে ভয়ের জোয়ার এসে গেছে কারণ সপ্তাহ দুয়েক আগে আমি খেলার মাঠে সুমন যখন তার টি শার্ট খুলেছিল তার পিঠে একটা লম্বা লাল দাগ দেখে ছিলাম। আমি জিজ্ঞাসা করতেই রাজন বলে উঠ ছিল স্যার দিছে। এই কথা মনে হবার পর আমার মনে কেন জানি আরও ভয় কাজ করা শুরু হল। দরজা খোলার পর সোজা আমাকে সুমন, রাজনের পড়ার ঘরে নিয়ে মা পাশের ঘরে সুমনের মায়ের সাথে গল্প করার জন্য চলে গেলেন। তখনো স্যার আসে নি । সুমন, রাজনের সাথে সম্পর্ক ভাল থাকার কারনে আমাকে স্যার এর সম্পর্কে আমাকে বিস্তারিত বলা শুরু করতেই স্যার চলে আসলেন। স্যার আসতেই সুমন রাজন যেন অনেক মনোযোগ দিয়ে পড়ছেন এমন ভান ধরলো। স্যার আমার নাম জিজ্ঞাসা করলেন আমি ভয়ে ভয়ে আমার নাম বললাম। তারপর রোল নং জিজ্ঞসা করলেন আমি যখন বললাম ৩ উনি বললেন সামনে ক্লাসএ রোল ১ হতে হবে শুনেই মনে হচ্ছিল আমার উপরও হবে। সেদিন কিছু পড়া দিয়ে পরের দিন সন্ধ্যায় আমি একাই পড়তে গেলাম। খুব ভালই লাগছে মাঠে এক সাথে স্কুল যাই একসাথে আবার প্রাইভিট ও এক সাথে পড়ছি। স্যার আসলেন স্যার এসে প্রথমে সুমন কে জিজ্ঞসা করলেন পড়া হয়েছে কি? সুমন বলল হুম। স্যার মুখে পারে নি বলে কি শাস্তি দিল। এমন ভাবে মারছিল যেন কোন বড় অপরাধী। দেখেই আমার কান্না পেয়েছিল কিন্তু মুখে কোন শব্দ হচ্ছিল না শুধু চোখ দিয়ে পানি পরছিল। এখন ভাবলেই আমার হাসি পায় কত ভীতু ছিলাম আর এখন কত সাহসী . . .....................
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৩৯