এই অল্প সময়ে এই বজ্জাদ,চরিত্রহীন ছেলেটা আমার মনের অনেকটা জায়গা দখল করে ফেলে।কিন্তু তার জন্য ভালোবাসা নামক শব্দটা যেনো উচ্চারণ করাও 'পাপ' অথবা 'নরক'।বছরের পর বছর মানুষের পাশে থাকলেও নাকি তাকে চেনা যায় না,সেটা আমি মানি।তবে জাহিদের মধ্যে যে মনুষ্যত্ব বোধ অনেক বেশী তা আমি এই কিছুদিনে বুঝেছি।
কাজের মধ্যে তেমন কিছু সে করেনা,একটা DSLR আর ক্যামেরা নিয়ে সারাক্ষন বিয়ে বাড়িতে ছবি তুলে বেড়ায়।বিয়ে বাড়ি আর বড় কোন অনুষ্ঠানের বাড়তি খাবারগুলো আবার গরীব ও পথশিশুদের মাঝে বিলিয়ে দেয়।দিদির কাছে শুনেছি ঈদ-কুরবানী কিংবা পুজোতে অসহায় মানুষদের কাপড় এবং খাবার প্রদানের জন্য ও নাকি সে কি সব কমিটিতে যুক্ত।
ক্যামেরা নিয়ে বেশ কিছুদিন আমার সাথেও ঘুরেছে।নদীর পাড়ে,পাহাড়ের উপড়ে কিংবা রাস্তার পিচঢালা পথে জ্যোৎসা রাতে আমার সাথে গল্প করেছে আর ছবি তুলে দিয়েছে।নিষেধ করিনি কোনকিছুতেই,কটা দিন পর তো মায়ের সাথে চলেই যাচ্ছি।চুপচাপ দেখি না হয়, এই পাগলের পাগলামি।
জাহিদের পাগলামি যে 'ভালোবাসি' নামক শব্দে এসে থামবে,কোনদিন কল্পনাও করিনি।বাসা থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিলাম,ফোন-ফেসবুক অফ করে দিলাম।কাজ হয়নি,জাহিদের মতো ছেলেরা প্রেমে পড়লে অনেক কিছু করতে পারে।বাসার সামনে রাতভর কুকুরের ঘেউঘেউ শব্দে বুঝেছি,এখানে এসেও শুরু করেছে।কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না।দিদিকে বললে,আনন্দে লাফিয়ে উঠবে আর মাকে বললে পুলিশে ফোন করবে।বাধ্য হয়ে বাসার নিচে নামতেই দেখি জাহিদ দাঁত বের করে হাসছে।
বেয়াইনসাব,আমি জানতাম আপনি আসবেন।
আমার মাথায় অনেক যন্ত্রনা হচ্ছিলো।তারপর ও বললাম,
চলে যান প্লিজ।আমাকে একা থাকতে দিন।
সেদিন মন্দির থেকে ওভাবে চলে এলেন।কিছুই বলে এলেন না।
জাহিদ সাহেব,আমি আপনাকে ভালোবাসি না।
কিন্তু পূজা দেবী আমি আপনাকে ভালোবাসি,সত্যি ভালোবাসি।বিয়ে করতে চাই, খাটি ভালোবাসা কোন ভেজাল নেই।
হে ভগবান! এটা মরে গেলেও সম্ভব না।কোনদিন না।কিছুতেই না।আপনার পায়ে ধরি প্লিজ চলে যান।
আমার কথা শেষ না হতেই জাহিদ পায়ের কাছে বসে পড়ে।
আমিও আপনার পায়ে পড়ি পূজা দেবী, প্লিজ ফিরিয়ে দিবেন না।
আমি দ্রুত খানিকটা পিছনে সরে গেলাম।চোখে জল চলে এলো।
জাহিদ সাহেব।রাত বাড়ছে, কেউ দেখলে আমি বেঁচে থাকতে পারবোনা।আমি যে কেনো আবার আপনার সাথে দেখা করলাম?
আমি দৌড়ে বাসার দিকে চলে এলাম।উপরের বারান্দা থেকে মা তাকিয়ে আছেন।
বাসায় ঢুকেই মায়ের সামনে পড়ার মতো সাহস আর ছিলো না।নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করতেই দেখি জাহিদ ফোন দিচ্ছে।ফোন ধরেই বললাম,
আপনি আমাকে আজ মায়ের কাছে ছোট করেছেন।আপনাকে কোনদিন ক্ষমা করবোনা।
পূজা দেবী,সন্তানেরা মায়ের কাছে কখনো ছোট হয় না।বরং ভালোই হয়েছে তিনি দেখেছেন।
আপনি যদি সত্যি আমাকে ভালোবাসেন আমাকে একা থাকতে দিন।
আপনাকে ভালোবাসি বলেই একা থাকতে দিতে পারছিনা।আচ্ছা সমস্যাটা কোথায় বলুন তো,আমি মুসলিম শুধু এই তুচ্ছ সমস্যা?
আমি গম্ভীর গলায় বলায়,
এটা আপনার কাছে তুচ্ছ সমস্যা মনে হচ্ছে?
হ্যা হচ্ছে।ভালোবাসার কাছে এসব তুচ্ছ।
জাহিদ সাহেব।একই মায়ের পেটে জন্ম নিলেও আমি লাবন্য নই।ভুল মানুষকে ভুল কথা বলছেন।
পূজা দেবী, আমি কিন্তু একবার ও আমার ভাই আর আপনার বোনকে কথার মাঝে টানছিনা। আপনি ও আনবেন না।
রাখছি জাহিদ সাহেব।আর কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।
আমি আমার উত্তর জানতে কাল আবার আসবো পূজা দেবী।বারবার আসবো।
আমি ফোন কেটে দিয়ে কাঁদতে লাগলাম।মা দরজা ধাক্কাচ্ছে,
'পূজা' এই পূজা, দরজা খোল। তোর সাথে কথা আছে আমার।
এখন যাও মা,আমি একটু একা থাকতে চাই।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৪:২৩