
যদি প্রশ্ন করা হয় মায়ের ভাষার জন্য, নিজের সংস্কৃতির জন্য প্রাণ দিয়েছে এমন জাতি পৃথিবীতে কয়টি আছে? সংখ্যার আধিক্যে এই গ্রহের ষষ্ঠ বৃহত্তম ভাষার অধিকারীরা বুক ফুলিয়ে সমস্বরে বলে উঠবেন "বাঙালি"। যদি বলি শুধুমাত্র মাতৃভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে কোন ভাষার জন্য বছরের এক দিন সারা পৃথিবীর মানুষ দিবস পালন করে? হুহুংকারে কেঁপে উঠবে একটাই শব্দে, "বাংলা"!
বাঙালির ভালোবাসা, বাংলাদেশের গর্ব আমাদের জাতীয় কবি, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। যার কবিতায়, গানে, গজলে উদ্বুদ্ধ হয় প্রতিটি বাঙালির হৃদয়। রণ সংগীতে হয় বিক্ষুব্ধ। বিদ্রোহী হয়ে ওঠে ভেতো বাঙালি তার ঘরকুনো স্বভাব ছেড়ে, শিকল ভাঙার প্রতিজ্ঞায় ভেঙে গুড়িয়ে দেয় যত অচলায়তন। দেশ, কাল, পাত্র ভেদে তাই আমাদের লেটোগানের দুখু মিয়া হয়ে ওঠেন প্রতিটি বাঙালির ভালোবাসা, প্রাণের, সংগ্রামের প্রতীক।
বাঙালির এই ক্ষুদ্র দেশে সেই অতীত থেকে কালে কালে, যুগে যুগে সোনালী ফসল, স্বর্ণঝরা মাটি ও সরল মানুষ গুলোকে পন্য করার জন্য ছুটে এসেছে বহু বেনিয়ার জাত। ব্যাবসার নামে করেছে সাম্রাজ্য বিস্তার পর্যন্ত। শাসন-শোষন ও অত্যাচারে ইস্ট ইন্ডিয়ার মতো কোম্পানিগুলো করেছে বারংবার ধর্ষণ! সাম্রাজ্যবাদের স্বরূপ ধ্বংশ ও স্বাধীনতার পর নতুন রূপে এসেছে আবার বেনিয়ার জাত। চুষে ছিবড়ে বানিয়ে সোনার বাংলার সরটুকু খেয়ে তলানী দিয়ে যায় এদেশীয় কিছু দালাল-মীরজাফরকে। তারই নতুন রূপ গ্রামীণফোন-ডিজুস এর মতো কিছু কোম্পানি।
'আজাইরা' কিছু এড দিয়ে শুরু করে একটি প্রজন্মকে কিভাবে ধ্বংশ করে দেয়া যায় তার ষড়যন্ত্রের জাল ফেলা শুরু হয় 'সারারাত ফ্রি' নামক কিছু অফার দিয়ে। যার ফলশ্রুতিতে টার্গেট নবীন প্রজন্ম শুরু করে সারারাত কথা বলা ও সারাদিন ঝিমানো দিয়ে। শুরু হয় একটি প্রজন্মের মাঝে 'ক্রনিক ইনসোমনিয়া' নামক রোগের বিষ ঢুকিয়ে দেয়া। ইনসমনিয়া বা রাতের পর রাত না ঘুমানো রোগে ধ্বংশ হতে শুরু করে এই দেশের মোট জনসংখ্যার ৬০% তরুণ প্রজন্মের কর্মস্পৃহা ও কার্যদক্ষতা। স্লো পয়জনের এই পর্যায়ে শুরু হয় বাঙালি সংস্কৃতিকে ধ্বংশের ষড়যন্ত্র। নামই হয়ে যায় একটি প্রজন্মের 'ডিজুস প্রজন্ম'!
সেই ডিজুস প্রজন্মকে গেলানো হয় সংস্কৃতি ধ্বংশ করার উপকরণ। শত বছরের বাঙালীর গৌরবময় সংস্কৃতি তার গান, কবিতা ও আচরণ ভুলে হয়ে উঠতে শুরু করে 'ডিজুস'! বার বার টিভি-রেডিও-ইন্টারনেটে প্রচারিত হতে থাকে এক বেনিয়ার জাতের সংস্কৃতির নীল বিষ ধীরে ধীরে, বার বার দেখিয়ে শুনিয়ে মাথায় স্থান করে নেয়ার এক গভীর ষড়যন্ত্র। যার কিতাবীয় নাম 'মার্কেট পজিশনিং'।
মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম ,
মোরা ঝর্ণার মতো চঞ্চল,
মোরা বিধাতার মতো নির্ভয়,
মোরা প্রকৃতির মতো সচ্ছল।
মোরা আকাশের মতো বাধাহীন,মোরা মরু সঞ্চর বেদুঈন,
বন্ধনহীন মুক্ত স্বাধীন ,চিত্ত মুক্ত শতদল ...
কবি নজরুলের এই গানটি আমাদের সম্পদ, বাঙালীর ঐতিহ্য। এর সুর, কথা প্রতিটি বাঙালীর প্রাণের মাঝে আছে গেঁথে। আসল সুরের গানটি শুনুন-
কিংবা-
এবার দেখুন কিভাবে ধর্ষিত করা হয়েছে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের এই কালজয়ী গানটিকে ডিজুস ফ্লেভার লাগিয়ে-
বিকৃত করা হয়েছে সুর, বিকৃত করা হয়েছে গানটির কথা, উপস্থাপন করা হয়েছে সম্পূর্ণ 'ডিজুস' স্ট্যাইলে!
বেশ কিছু কর্মসংস্থানের সুযোগ দিয়ে, অনেক টাকা ট্যাক্স দিয়ে, কিছু সিএসআর এ অংশগ্রহন করে, আর সংস্কৃতি অঙ্গনে কিছু পৃষ্ঠপোষকতা করে বাংলাদেশে কিছু জায়ান্ট কর্পোরেট (টেলিকমগুলো, ইউনিলিভার, ইত্যাদি)'রা মনে করে তারা দেশের সব কিছু কিনে নিয়েছে। এর আগেও চায়না মোবাইল সিম্ফনি "আকাশ এত মেঘলা" গানটার ময়না তদন্ত করেছে।
অশিক্ষিত মফস্বলের ল্যাছড়া পোলাপান "রক উইথ রবিন্দ্রনাথ" নামে এ্যালবাম ছেড়ে পার পেতে পারে, কারন সত্যিকারের ক্লাসের শিল্পিরা তখন ময়লা ঘেটে হাত নোংরা করতে চায়নি। কিন্তু এত বড় বড় গাল গপ্পোওয়ালা গ্রামীনফোন এত সহজে পার পেয়ে যাবে, তা কি হয়? আমরা কি তা হতে দিতে পারি?
ভিনদেশী এরা আজ আমাদের দেশকে ভালোবাসতে শেখায়, শেখায় মায়ের প্রতি ভালোবাসা। করতে চায় আমাদের ইতিহাসকে তিরিশ মিনিটে বন্দী। আজ আক্রমণ করছে আমাদের সংস্কৃতিকে, কাল যে আমাদের নাড়ী ধরে টান দিবেনা, তার গ্যারান্টী কে দেবে?
আসুন দেখি গ্রামীণফোন-ডিজুস কি আসলেই অপরাধ করেছে?
বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার মঞ্জুরুর রহমান বলেন, "কপিরাইটের সব আইন লঙ্ঘন করে গ্রামীণফোন বিজ্ঞাপনটি নির্মাণ করেছে। নজরুলের গানটি ব্যবহার করলেও বিজ্ঞাপনটির কোথাও তার নাম ব্যবহার করা হয়নি। শুধু তাই নয়, এ ধরণের গান ব্যবহারে অবশ্যই সুর অবিকৃত রাখার নিয়ম থাকলেও বিজ্ঞাপনটিতে সুর অনেকাংশে বিকৃত করা হয়েছে। বিজ্ঞাপনটি প্রচারের পর থেকেই আমরা নানা রকম অভিযোগ শুনতে পাচ্ছি।"***
বাংলাদেশ কপিরাইট ও আইপি ফোরামের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ব্যারিস্টার এবিএম হামিদুল মিজবাহ বলেন, "দেশের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী যে কোনো গানের মূল স্রষ্টার অনুমতি ছাড়া কথা ও সুর পরিবর্তন এবং বিকৃতি করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। জাতীয় কবির গানটি বিকৃত সুরে পরিবেশনের কারণে নজরুল প্রেমী এবং সচেতন নাগরিকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।"***
না, আমরা এর প্রতিবাদ করতে মানব বন্ধন করবো না। মিছিল করবো না, মিটিং করবো না, সেমিনার ডাকবো না, করবো না আক্রমণ। আমরা সভ্য জাতি, আমাদের ঐতিহ্য দিয়েই এর মোকাবেলা করা হবে। আমাদের সংস্কৃতি দিয়েই করা হবে এই অপসংস্কৃতির প্রতিবাদ। ওরা আমাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানে না, আমরা শেখাবো। আমরা গানটি আসল সুরে ও কথায় একটি ঘন্টা ওদের কে শোনাবো। একটি ব্যানারে সংগঠিত হচ্ছি আমরা। সব ধরনের শিল্পীদের একত্রিত করেই আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি এই নামে-
~সংস্কৃতির জন্য শিল্পী : Artists For Culture~
কবে?
১৭ই মে বৃহস্পতিবার
কখন?
সকাল ১০.৩০-১১.৩০
কোথায়?
বসুন্ধরা বারিধারা জিপি হাউজের সামনে
আপনাকে কি করতে হবে?
আপনি যদি মিউজিশিয়ান হন, আপনার ইন্সট্রুমেন্ট নিয়ে চলে আসুন। গিটার/পারকাশন... যে যা পারেন।
আপনি যদি সংগীত প্রেমী হন, চলে আসুন একটি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে। হাতে হাত ধরে গলা ছেড়ে গাইবো।
যোগাযোগঃ
০১৬৭৪-৭৭৪৬৩৩
০১৯১৩-২২১৪৪৮
দেশের সব মিডিয়া আজ ওদের টাকার কাছে বন্দী। তাই যে যেভাবে পারুন, ছড়িয়ে দিন, শেয়ার করুন, ট্যাগ করুন। এ লড়াই আপনার, আমার, সকলের। তাই আসুন হয়ে উঠি বিদ্রোহী, হয়ে উঠি ঝন্ঝার মতো উদ্দাম!
ফেসবুক ইভেন্ট- Click This Link
*** সূত্র: Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:২৫