অফিস থেকে বের হয়েই মেজাজটা খিঁচড়ে গ্যালো। শালার বাঙ্গালীর প্রোডাক্টিভিটি কতো! সারা রাস্তায় মানুষ আর মানুষ। একটা গাড়ীও নাই যেইখানে একটা সুঁচ ঢুকতে পারবে। সিএনজিতে উঠবো, সেই ইচ্ছাও করছে না। মহারাজারা যা দাবী করবেন তা দিতে গেলে মাসে বিশ দিন অফিস করা যাবে। বাদ বাকি দিন হেঁটেই আসতে হবে। যা থাকে কপালে ভেবে হাঁটা শুরু করলাম। ঘর্মাক্ত কলেবরে ছুটে যাচ্ছে মানুষ, ধাক্কা খাচ্ছে, গালি দিচ্ছে, আবার ঘুরে ছুটতে শুরু করছে। মানুষ এই শহরে ছুটতেই জানে। একটা রিক্সাওয়ালাকে খালি দেখে জিজ্ঞাসা করলাম-
- ভাই যাবেন? দাঁতের ফাকে জমে থাকা খাদ্যকনা কাঠি দিয়ে বের করতে করতে জিজ্ঞাসা করলো,
- কই যাইবেন? অত্যন্ত আশা নিয়ে বললাম
- এইতো, কাছেই; আজিমপুর কলোনী। খাদ্যকনা ঠোটে লেগে যাওয়ায় থু করে থুতু ফেলে বললো
- ষাইট টেকা দিবেন। কপাল থেকে গড়িয়ে পড়া ঘামটুকু ভ্রু কে দক্ষ স্ট্রাইকারের মতো পাশ কাটিয়ে চোখের কোনা দিয়ে নাকের পাশে ঝুলছিলো, মুছে ফেলে হতাস হয়ে তাকিয়ে থাকলাম। বিশ টাকার ভাড়া চাইছে ষাট টাকা! হাঁটা শরীরের পক্ষে ভালো ব্যায়াম, মনকে বুঝ দিতে দিতে আবার হাঁটা ধরলাম। শ্লা, হেটেই চলে যাবো আজ। জিদের বশে সিদ্ধান্ত নিলাম।
খানিক্ষণ হাঁটতেই ডেক্সে বসে কাজ করে করে তিন বছরে জমানো তলপেটের অশ্লীল চর্বি টুকু বিদ্রোহ করে উঠলো। হাঁটুতে দুই হাত রেখে হাঁপাতে হাঁপাতে উবু হয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি চুল বেয়ে গড়িয়ে পড়া স্বেদকনার ধরনী বরণ। আশে পাশে তাকাতেই চোখে পড়লো স্বর্গ! ইয়ে মানে, হাসবেন না। ওটা আমাদের মতো নামভরা-গালভরা পদস্থ কিন্তু আসলে আর্থিক ভাবে পদে পদে অপদস্থ মানুষদের মাসিক স্বর্গ। মাসে একবারের বেশি যাওয়ার সাহস হয়ে ওঠে না। এতো বিদেশ নয় যে বাড়ি ফেরার পথে দুচুমুক মেরে যাবো। আসল দামের সাড়ের সাত গুন পয়সা খসিয়ে তবেই মেলে মাসিক শান্তি। যাবো? নাকি যাবো না? গেলে আগামী সপ্তায় পাতে আর কাঁটা কিংবা হাড় জুটবে না। ডিম আর আলুই ভরসা। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে একপাশে হাড়সর্বস্ব মাংস আর ফরমালিনে চুবানো মাছ এবং অন্যদিকে শুদ্ধ একবোতল... মধু! হ্যা মধু ভাবতেই পছন্দ করি। সাদা পছন্দ নয় আমার, মধুরঙা পানীয়তেই আমার সুখ। হিসেব নিকেশের যোগ বিয়োগ করতে করতে হয়তো সিক্ত ঘামের স্রোত শুকাতেই পায়ে পায়ে হাজির হই স্বর্গের দ্বারে।
শহরের অন্যান্য পানশালা থেকে এই পানশালা টা একটু ভিন্ন। অন্যান্য পানশালায় বাজারে অবস্থা। একজন হুশ-জ্ঞান হারিয়ে চিল্লাচ্ছে, আর দশজন ধমক দিয়ে তাকে থামানোর চেষ্টা করছে। আলাদা ছোট কেবিনের দুইপাশে চারটি করে চেয়ার, লাল কুশনের নিচু টেবিল, আর ঠান্ডা বাতাসের ব্যাবস্থা! মাথার উপর একটা ফ্যান ঘুরছে বটে, তবে সেটা কমিয়ে রাখা, পাখা গোনা যায়। বেয়ারাকে বেল টিপে অর্ডার দিতেই চলে এলো এক বোতল মধুরঙা স্বর্গীয় পানীয়! সাথে কিছু বাদাম, কাবাব, পরোটা আর পেপসি। এই এক অদ্ভুত ব্যাপার, সারা শহরে ঘুরেও কোন দোকানে পেপসি পাবেন না; পানশালায় না চাইতেই পেপসি দিয়ে যায়। একটু গ্লাসে ঢেলে এক ঢোকে পার করে দিলাম... আহ! এই তো স্বর্গ!
হঠাৎ হুড়মুড় করে তিনজন ছেলে দরজা ঠেলে ঢুকেই দাঁড়িয়ে গ্যালো। ফিস্ ফিস করে নিজেদের ভেতর কি য্যানো বলাবলি করছে, আর আমার দিকে তাকাচ্ছে। ক্যামন য্যানো দোনোমোনো ভাব। একজনের কাধে একটা ক্যারিইং ব্যাগ, স্কুল বয়রা য্যামন বহন করে আরকি। বয়স তিনজনেরই কম মনে হলো, তবে ভাব চক্করে বড় দেখানোর প্রচেষ্টা। গলা খাকাড়ি দিয়ে একজন এগিয়ে এলো-
- এই যে শুনেন... সচকিত হলাম
- বলুন। ইতস্তত করে বললো
- আপনার কি দেরী হবে? এর মাঝে মনে মনে আমি এদের নাম দিয়ে ফেলেছি। যে আমার সাথে কথা বলছে, এটা লিডার গোছের। এর সাহসেই অন্য দুজন এসেছে। অন্য দুজনের একজন একটু লম্বা, আরেকজন মোটাসোটা। আমি ওদের নাম দিলাম- ডন, টেলিসামাদ আর জাম্বু । আরেক চুমুকে গ্লাস টা শেষ করে বললাম
- হ্যা, দেরী হবে। কিন্তু ক্যানো বলোতো? জাম্বু উসখুস করে উঠলো। ডন কে বললো
- চল চলে যাই। আজ থাক। ডন একটু চোখ গরম করে তাকালো তার দিকে। আমার দিকে ফিরে বললো
- না মানে, হয়েছে কি, সব কেবিন বুকড, এইখানে আপনি একা। তাই ভাবছিলাম, আপনার এখানে বসে আমরা খেলে কি সমস্যা হবে? মনে মনে হাসলাম। এরা আমার মতো মেরুদন্ডহীন তৈরী হচ্ছে। কিন্তু খুব অল্প বয়সে এরা শুরু করছে। ওদের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললাম
- শিওর! ক্যানো নয়?
- ইয়েহহ!! চিৎকার করে উঠলো তিন বালক।
- Lets get da nut crackers! চকচকে চোখ বলে উঠলো একজন। এইসব ইংলিশ চুদানো ক্রীমি বয়েজ দের আমি হেইট করি, ওহ গড! বাংলা বললে যেনো এদের পেট ফুঁড়ে কুলের গাছ বের হয়!
একজন পকেট থেকে তিনপাতা ওষুধ বের করলো। এইগুলা কি! ভাবছিলাম আমি। ওরা দেখলাম ওদের ড্রিংক্সের সাথে ওগুলোর কিছু মিশিয়ে গুলালো। আমি ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করলাম,
- এগুলা কি? জাম্বু ক্যামন একটা হাসি দিয়ে বললো
- You want some? আমি একটু ভয় পেলাম,
- ন্ নাহ! তোমরা খাও। ওরা দেখি হো হো করে হেসে দিলো। টেলিসামাদটা বলে
- আরে নেন, তেমন খারাপ কিছু না। ঘুমের ওষুধ। তবে অন্য ওষুধে পিনিক হয় না। এইটাতে হয়। শুনে একটু ভরসা পেলাম। বললাম,
- দাও দেখি। ওদের মাঝে কিন্চিৎ অনিশ্চয়তা ভর করলো। কেউ কারো ভাগ ছাড়তে রাজি নয়। ডন তখন তিনজন থেকে সমান ভাগ করে আমার ড্রিংক্স এর মধ্যে ছেড়ে দিয়ে গুলিয়ে দিলো। এক ঢোকে খেয়ে নিতে বলায় খেয়ে নিলাম। ক্যামন তিতকুটে স্বাদ। ডন বললো,
- একবার আমরা খুব বিপদে পড়ে গিয়েছিলাম। একটা গল্পের আভাস পাওয়ায় উৎসুক হয়ে উঠলাম।
- কি হয়েছিলো? পিনিক করতে করতে গল্প শোনাতেই বেশী মজা। চুপচাপ বসে খাওয়াতে কোন মজা নাই। কাউকে না কাউকে টেবিলটা জমিয়ে রাখতে হয়। ডন বলে চললো,
- আমাদের আরেকটি ফ্রেন্ড ছিলো। ওদের বাসার চিলেকোঠায় আমরা চারজন পিনিক করতাম। You know, safe place is tough to find। তো ওর বাসার চিলেকোঠা ছিলো আমাদের সেফ প্লেস। আমরা সেদিন হেভী পিনিক নিতেছিলাম। শুরু করেছিলাম weed দিয়ে। ও কোথা থেকে যেনো "বাবা" জোগাড় করেছিলো। Smack করলাম। তারপর বিয়ারের সাথে এক বক্স ইপাম মিশিয়ে খেয়েছিলাম। সে কি পিনিক! ঐ ফ্রেন্ডটা বেশি Desperate ছিলো। ও খেয়েছিলো সবার চেয়ে বেশী। হঠাৎ ও শুয়ে পড়ে বলে ওর চোখ আর ঘাড় যন্ত্রণা করছে। আমরা ভাবলাম ওরে ধরছে। হাসতে থাকলাম। ও গালি দিতে আরম্ভ করায় আমরা ভয় পেয়ে গেলাম। ওকে(টেলিসামাদকে) দেখিয়ে বললো, ওরে নিচে পাঠা। আমি হাসপাতাল যামু। সবাই মিলে টাল অবস্থাতেই সিএনজিতে উঠে বসলাম। ও ক্রমাগত চিল্লাইতে থাকলো। আমার চোখ, আমার চোখ বলে। চোখের দিকে তাকিয়ে দেখি টকটকে লাল হয়ে ফুলে উঠেছে। আমরা যখন হাসপাতালের প্রায় কাছা কাছি, তখন ওর চোখটা গলে গেলো।
- কি!! আমি চিল্লিয়ে উঠলাম।
- হ্যা, বেশি পিনিক করায় ওর প্রেসার পড়েছিলো চোখে।
গল্পটা শেষ করার পর দেখি তিনজন একটু বিমর্ষ হয়ে পড়লো। একটু পর বিদায় নিলো তিনজন। মনে মনে ভাবছিলাম, শ্লা! কি অবস্থা! হেলান দিয়ে ঢোক ঢোক করে আরেকটি পেগ মেরে দিলাম। বেয়ারা এর মাঝে এসে বললো রেস্টুরেন্টে কোথাও আর কেবিন বা চেয়ার খালি নেই, আমি এইখানে তিনজনকে বসতে দিতে রাজি কিনা। আমি একটু বিরক্ত হলেও বললাম,
- লে আও। যারা আমার সামনে উদয় হলো, তাদের দেখে একটু ভয়ই পেলাম। আঁটোসাটো জামা পরা, জিন্স আর হাতে বড় লোহার বালা। কোথায় যেনো একটা দূর্বিনীত ভাব। তিনজন তিনটা চেয়ার নিয়ে বসে পড়লো। যে লিডার গোছের, সে বলে উঠলো,
- ভাইজান, মাইন্ড করছেন নি? আমি তাড়াতাড়ি করে হেসে বললাম
-নাহ মাইন্ড করবো ক্যানো? নেশার প্রভাবে কিনা জানিনা, ওদের সঙ্গ আমার ভালই লাগতে লাগলো। একই বয়সী আমরা, অথচ কি দারুণ প্রাণ চান্চল্য এদের মাঝে। আর আমি, অফিসে মাথা গুজে পড়ে থেকে থেকে ভেদা মাছ হয়ে গেছি। ওদের তিন জনের নাম দেই একটা করে। যে লিডার গোছের, ধরি ওর নাম সম্রাট, অন্য দুজন নাট আর বল্টু।
সম্রাট হঠাৎ ওদের বলে উঠলো-
- হালার রুবেলরে সাইজ করতে হৈবো কাইলকাই। সাথে সাথে অন্য দুজন মাথা নাড়লো। নাট আমাকে ইঙ্গিত করে বললো,
- বস, এর সামনে আলোচনা করা কি ঠিক হচ্ছে? সম্রাট হো হো করে হেসে আমার কাধে একটা চাপড় দিয়ে বললো,
- আবে হালায় ইনি তো আপনা লোক। কি বস ঠিক কইছি না? আমি তাড়াতাড়ি সমর্থন সূচক একটা ভেটকি দিয়ে গ্লাসের বাকিটুকু এক ঢোকে শেষ করে হাপাতে লাগলাম। সম্রাট তখন জানালো, তারা তাদের এলাকার মাস্তান। এলাকার কাক পক্ষী পর্যন্ত তাদের দেখে ভয় করে। সিক্স ফাইভ সব সময় তার মাজায় গোজা থাকে। বলতে বলতে মাজা থেকে একটা পিস্তল বের করে দেখিয়ে বলতে থাকলো,
- বস, এইডা হইতেছে সিক্স ফাইভ। সিক্স ফাইভ নাম হৈছে কেলা কইতে পারেন? উত্তরের অপেক্ষা না করেই বলতে থাকে, এইডার বিচির মাপ হইতেছে গিয়া 7.65 মি:মি:। বিচি কারে কয় বুঝেন তো? বিচি হইতেছে গিয়া গুলি। হে হে হে হে! আমি আতংকে সিটকে গিয়ে ব্যাপারটি বোঝার চেষ্টা করছিলাম। এরা কি আমাকে হাইজ্যাক করতে এসেছে? আর বার বার উপর নিচে মাথা নাড়াচ্ছিলাম আর কষ্ট করে হাসি দিচ্ছিলাম। এর মাঝে নাট আর বল্টুর মাঝে গ্যান্জাম লেগে গেলো। বল্টু বলছে নাট নাকি ওরে মাল দেবার সময় কম করে দিচ্ছে। ওদের গ্যান্জাম এর ফাকে হাফ ছেড়ে বাঁচি! যাক, আমাকে নিয়ে ওদের কোন উদ্দেশ্য নেই। ওদের বোঝাতে না পেরে সম্রাট রাগ করে চলে গেলো। ওরা দুজন একটু থম মেরে বসে থেকে কয়েকটা পেগ মেরে দিয়ে সম্রাটকে খুঁজতে চলে গেলো।
আহ! শান্তি। এবার একটু একা একা আয়েস করে খাওয়া যাবে।একটু শীত লাগছে কি? এসিটা অফ করে দিতে বলে চেয়ারে হেলান দিলাম। হুড়মুড় করে ঢুকে পড়লো চারজন! আজব! একটু শান্তিতে কি খেতেও পারবোনা? আমার অনুমতির তোয়াক্কা না করেই চেয়ার টান দিয়ে নিয়ে বসে পড়লো আগুন্তুকেরা। আমার দিকে তাকিয়ে ওদের মাঝে একজন বলে উঠলো,
- দেখেন, আমরা মাল খাইতে আসিনাই। কয়ডা বাবা খায়াই ভাগুম।
বাবা, মানে ইয়াবা? আমি ভাবি। বেশ। ভালই তো, খাও বাবারা কিন্তু আমারে জ্বালায়োনা। মনে মনে বললেও মুখে বললাম,
- না না ঠিকাছে। আপনারা খান। ওরা ফয়েল বের করে তার উপর বাবা ছেড়ে দিয়ে তলায় লাইটার ধরিয়ে টানতে থাকলো একটা পাইপ দিয়ে। দেখে বেশ আগ্রহ জাগলো। আমি উৎসুক হয়ে বললাম,
- বাবা খাইতে ক্যামন লাগে? যে আমার সাথে কথা বলছিলো, তার চোখটা বেশ চকচকে হয়ে উঠলো। ধোঁয়া ছেড়ে আমাকে বললো,
- আপনি খাইবেন? তাইলে একটান দিয়া দেখেন। বলে আমার হাতে পাইপটা ধরিয়ে দিলো। একটা পয়সাও এগিয়ে দিলো। ওদের দেখিয়ে দেয়ায় পয়সাটা মুখের মাঝে ঢুকিয়ে দাঁতের পেছনে জিহবা দিয়ে চেপে ধরলাম। পাইপ টা দিয়ে জুত মতো ধরে একটা টান দিলাম, ধোঁয়া চলে গেলো পেটে। ক্যামন যেনো একটা সুন্দর গন্ধ, কিন্তু তিতকুটে একটা স্বাদ। সবমিলিয়ে খারাপ লাগলো না ব্যাপারটা। কিন্তু ওরা নিয়ে নিলো। আমার মনটা বেশ খারাপ হয়ে গেলো। আমি বললাম,
- আপনাদের কাছে আর নেই? চকচকে চোখে সেই ছেলেটিই আমার বললো,
-আপনি কিনবেন? প্রতি পিস ৫০০ টাকা। আমি মানিব্যাগ থেকে ৫০০ টাকা বের করে ওরে দিতেই ও আমাকে একটা কমলা কালারের বড়ি দিলো, এটাই বাবা। হুম, তারপর তানতে থাকলাম বেশ আয়াস করে পালাক্রমে। ওটা শেষ হয়ে যাবার পর ছেলেটা আরেকটি বের করলো। আমি বললাম,
- আমার কাছে তো আর টাকা নেই। ছেলেটা ক্যামন যেনো একটা হাসি দিয়ে বললো,
- টাকা নেই তো কি হয়েছে, মোবাইল আছেনা? আর হাতের ঘড়িটাও তো মনে হচ্ছে ব্র্যান্ডের। খাইতে থাকেন, পরে দেখা যাবে। আমি বেশ ভয় পেয়ে গেলাম। ঘড়িটা আমার প্রেয়সীর দেয়া। মোবাইলটাও ওরই দেয়া। বেশ দামী। আমি তাড়াহুড়ো করে বললাম,
- না না, আমি আর খাবোনা। ছেলেটা আমার হাতের ঘড়িটা চেপে ধরলো, ওর সাথে থাকা ছেলেগুলো দাঁড়িয়ে গেলো। ছেলেটা আবার ক্যামন একটা হাসি দিয়ে বললো,
- আরে খাবেন না ক্যান, জীবনে তো একদিনই খাবেন, তাই না? ঐ তোরা ওর মোবাইলটা নিয়ে নে। ওরা এগিয়ে আসতেই আমি চিৎকার দিয়ে দাঁড়িয়ে গিয়ে একজন কে ঘুসি মেরে বসলাম। ওরা সবাই মিলে আমাকে চেপে ধরলো, ঐ ছেলেটা আমার মুখে একটা ঘুষি মারতেই ঠোঁট ফেটে রক্ত বেরিয়ে আসলো। আমি চিৎকার করে উঠলাম, ইয়েস! নেশা করবো আর মারামারি হবেনা, তাই হয় নাকি!
এর মাঝেই দড়াম করে দরজাটা খুলে গেলো। সম্রাট তার বন্ধুদের খুঁজতে ফিরে এসেছে। তখন তিনজন আমাকে ঝাপটে ধরে আছে, একজনের হাতে আমার মোবাইল ও ঘড়ি। আরেকজন আমাকে মারার জন্য হাত তুলেছে। জাদু মন্ত্রের মতো সম্রাটের হাতে পিস্তল বেরিয়ে এলো। হিস হিস করে বলতে থাকলো,
- খানকির পোলারা লোকটারে একা পায়া ফাপড়বাজি চুদাইতেছো? ফাপড় পাপড় বানায়া হোগা দিয়া ভৈরা দিমু। ছাড় উনারে কুত্তার বাচ্চারা। বলে দুইপা এগিয়ে এলো। ভোজবাজির মতো আমার চারপাশ থেকে ছেলেগুলো উধাও হয়ে গেলো। টেবিলের উপর রাখা মোবাইল আর ঘড়িটা নিয়ে টলতে টলতে রাস্তায় নামলাম। সম্রাট জিজ্ঞাসা করতে ওর বন্ধুরা চলে গেছে জানিয়ে একটা সিএনজি খুঁজতে থাকলাম। মধ্যরাতের রাস্তায় কোন জনমনিষ্যি নেই। আমি আর আমার দুটি পা একসাথে চলছে কোনদিকে আমার সে হুস নেই। একবার নিজেকে আবিস্কার করলাম একটি বাথরুমে বেসিনের সামনে। বমি করে বেসিনে থক থকে আধা হজম হওয়া খাবার ভরে রেখে আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখি আমার চেহারা হয়ে গেছে সম্রাটের মতো। তারপর নিজেকে আবিস্কার করলাম মধ্যরাতের পাহারাদারের সামনে ঝগড়া রত। পাহারাদারের হাত থেকে তার লাঠিটা কেড়ে নিয়ে উর্ধশ্বাষে দৌড় দিলাম... তার পর আবিস্কার করলাম নিজেকে একটা সিএনজিতে। বাসার সামনে নেমে ভাড়া দিয়ে সিএনজি ড্রাইভারের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি, তার দুই চোখ গলে গেছে। নরম গলিত তরল চোখের সীমানা উপচে গাল বেয়ে ধীরে নামছে মুখের দিকে। জিহবা দিয়ে একটানে তরলটুকু গিলে ফেলে ড্রাইভার বললো,
- ভাড়া। হাতে থাকা লাঠিটা রাস্তায় আছড়ে চিৎকার করে উঠি,
- কিসের ভাড়া? ঠোঁটের কোন থেকে গলিত তরল টুপ করে পড়ে। ড্রাইভার তার গলে যাওয়া দুই চোখের অসীম শুন্যতা নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
- জীবনের ভাড়া।