ব্লগে কিছু নাস্তিক আর বিভ্রান্ত ব্লগার যে অনুপাতে ইসলামের পিছনে লেগেছে আর কিছু জামাতিরা যে অনুপাতে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে লেগেছে সেটা দেখে ব্লগে আসলেই মন খারাপ হয়ে যায়। ব্লগে এম্নিতেই আসার সুযোগ পাইনা, আবার আসলেও প্রথম পাতায় দেখি জামাতিদের পাকি-টাইপ পোস্ট অথবা তথাকথিত আধাশিক্ষিত নাস্তিকদের ছাগলামি-মার্কা পোস্ট। ইনশাআল্লাহ, নেক্সট কয়েকটা পোস্ট আমি কুরআন যে এখনও আমাদের কাছে যা আছে সেটাই অরিজিনাল রাসুল (সাঃ) এর ভার্সন সেটা রেফারেন্সসহ দিব। উল্লেখ্য আমার লেখার বড় একটা অংশই হবে অনুবাদ। সব শেষে কোথ্থেকে অনুবাদ করা হয়েছে সেটাও সোর্স উল্লেখ করব ইনশাআল্লাহ।
প্রথম পর্ব:
প্রথমেই সবাই জানে যে মুহাম্মাদ (সাঃ) এর আমলেই প্রচুর সংখ্যক সাহাবী কুরআনে হাফিজ ছিলেন। (বিশ্বে আর কোন বইয়েরই কিন্তু এরকম ওয়ার্ড-বাই-ওয়ার্ড বা verbatim মুখস্তকারী পাওয়া যাবেনা। এটা একটা আশ্চর্য্যের বিষয়ই বটে। আমি এখানে আমার খ্রীস্টান এক বন্ধুকে যখন এটা বলেছি সে আশ্চর্য্য হয়ে গেছে।) মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জামানায় কুরআনে হাফেজদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন জায়েদ ইবনে সাবিত, উবাই ইবনে কা'ব, মুআ'য ইবনে জাবাল, আবু যায়েদ প্রমুখ সাহাবা (রাঃ) (১)।
তাছাড়া হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) -এর আমলে যখন কোরআন নাজিল হত তখনই কয়েকজন সাহাবা সেটা লিখে রাখতেন নবী কারীম (সাঃ) এর ডিকটেশান থেকেই। এরকম সম্মানিত সাহাবা (রাঃ) দের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন জায়েদ ইবনে সাবিত(২), উবাইয়া ইবনে কা'ব, ইবনে মাসুদ, মুআ'বিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান, খালিদ ইবনে ওয়ালিদ, জুবায়ের ইবনে আওয়াম (রাঃ) প্রমুখ (৩)। এগুলো সাধারণত লেখা হত লেদার, পার্চমেন্ট ইত্যাদিতে(৪)।
অনেকেই নবম-দশম শ্রেণীতে ইসলাম শিক্ষায় হয়ত ইয়ামামার যুদ্ধের কথা পড়েছিলেন। সে যুদ্ধে বিপুল সংখ্যক কুরআনে হাফিজ শহীদ হন। তাতে কুরআনকে সম্পূর্ণভাবে লেখ্য আকারে সংরক্ষণ করা জরুরী হয়ে পড়ে। তখন হযরত আবু বকর সিদ্দিকী (রাঃ) এর শাসনামল ছিল। হযরত উমর (রাঃ) হযরত আবু বকর (রাঃ) কে অনুরোধ করেন যেন লিখিত ফর্মে কুরআন সংরক্ষণ করা হয়। হযরত আবু বকর (রাঃ) হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত (রাঃ) কে প্রধান করে একটা কমিটি করেন যারা বিচ্ছিন্নভাবে ছড়ানোছিটানো সংরক্ষিত কুরআনের একটা অথরিটেটিভ কপি করবেন(৫)। এই কপিটাকে "মুশাফ"( loose sheets which bore the entire revelation on them) বলা হত। মুশাফটা যাতে কোনরকম ভুলভ্রান্তি না থাকে সেজন্য যায়েদ ইবনে সাবিত (রাঃ) এর কমিটি লেখা গ্রহণ করার জন্য দু'টা শর্ত জুড়ে দিয়েছিলেন(৬)।
i) শুধুমাত্র সেসব কপিই গ্রহণ করা হবে যা হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর উপস্থিতিতেই সংরক্ষণ করা হয়েছিল। (এবং)
ii) কমপক্ষে দুজন বিশ্বাসযোগ্য সাক্ষী এই মর্মে ঘোষণা দিবেন যে তারা রাসুল (সাঃ) কে এই আয়াত আবৃত্তি করতে নিজের কানে শুনেছেন।
মুশাফটা যখন সম্পন্ন করা হয়েছে আর সাহাবা আকরাম (রাঃ) দের দ্বারা সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করা হয়েছে তখন তা হযরত আবু বকর (রাঃ) এর কাছে ছিল, তার মৃত্যুর পর হযরত উমর (রাঃ)-এর কাছে এবং তার মৃত্যুর পর উমর (রাঃ) এর কন্যা মুহাম্মাদ (সাঃ) এর বিধবা স্ত্রী হযরত হাফসা (রাঃ) এর কাছে ছিল(৭)।
কিন্তু আরবরা কোন হরকত বা যের-যবর বা স্বরবর্ণ ছাড়াই আরবী পড়ত যেহেতু এটা তাদের মাতৃভাষা ছিল। উল্লেখ্য এখনও শিক্ষিত আরবরা হরকত ছাড়া আরবী পড়তে পারে। হযরত ওমর (রাঃ)-এর আমলে ইসলাম ব্যাপক প্রসার লাভ করে। অনেক অনারবরাও ইসলামের আওতায় আসে। তাছাড়া ইংরেজীর মত উচ্চারণেও আরবের বিভিন্ন রিজিয়নের মধ্যে পার্থক্য ছিল। হযরত ওসমান (রাঃ) এর আমলে দেখা গেল দুরবর্তী এলাকার অনেকেই রাসুল (সাঃ) যেরকম উচ্চারণ শিখিয়েছিলেন সেরকম উচ্চারণ করতেছেনা। (এক্সেন্টের কথা বলা হচ্ছেনা, উচ্চারণের কথা বলা হচ্ছে) তাতে অনেক অর্থেরই বিকৃতি হয়ে যাচ্ছিল। হযরত ওসমান (রাঃ)
উচ্চারণে ইউনিফরমিটি আনার জন্য হযরত হাফসা (রাঃ)-এর নিকট সংরক্ষিত মুশাফ থেকে অনেক কপি করলেন। এই কাজে তিনি হযরত আবু বকর (রাঃ) এর আমলে মুশাফ কমিটির হেড যায়েদ ইবনে সাবিত (রাঃ) সহ আব্দুল্লাহ ইবনে জুবায়ের, সায়ীদ ইবনে আ'স, আব্দুর রহমান ইবনে হারিস প্রমুখ সাহাবা (রাঃ) কে দায়িত্ব দেন(৮)। আসল ম্যানুস্ক্রিপ্ট হাফসা (রাঃ) কে ফেরত দিয়ে তিনি বাকি কপিগুলো মেজর ইস্লামিক প্রভিন্সে পাঠান। তাছাড়া যাতে পরবর্তীতে কোন কনফিউশন তৈরী নাহয় সেজন্য তিনি অন্য সকল কপি পুড়িয়ে ফেলার আদেশ জারি করেন। উল্লেখ্য হযরত ওসমান (রাঃ) এর করা কপি এখনও উযবেকিস্তানের তাশকেন্ত মিউজিয়ামে আছে(৯)। UNESCO-র Memory of the World Program মতে "it is the definitive version, known as the Mushaf of Uthman."(১০)
চলবে......
রেফারেন্স:
১. Saheeh Al-Bukhari Vol.6, Hadith No.525
২. Jalal al-Din Suyuti, Al-Itqan fee ‘Uloom al-Quran, Beirut: Maktab al-Thiqaafiyya, 1973, Vol.1, p.41 & 99.
৩. Ibn Hajar al-’Asqalani, Al-Isabah fee Taymeez as-Sahabah, Beirut: Dar al-Fikr, 1978; Bayard Dodge, The Fihrist of al-Nadeem: A Tenth Century Survey of Muslim Culture, NY: Columbia University Press, 1970, p.53-63.
৪. Al-Harith al-Muhasabi, Kitab Fahm al-Sunan, cited in Suyuti, Al-Itqan fi ‘Uloom al-Quran, Vol.1, p.58.
৫. Saheeh Al-Bukhari Vol.6, Hadith Nos.201 & 509; Vol.9, Hadith No.301.
৬. Ibn Hajar al-’Asqalani, Fath al-Bari, Vol.9, p.10-11.
৭. Saheeh Al-Bukhari, Vol.6, Hadith No.201.
৮. Saheeh Al-Bukhari Vol.4, Hadith No.709; Vol.6, Hadith No.507
৯. Yusuf Ibrahim al-Nur, Ma’ al-Masaahif, Dubai: Dar al-Manar, 1st ed., 1993, p.117; Isma’il Makhdum, Tarikh al-Mushaf al-Uthmani fi Tashqand, Tashkent: Al-Idara al-Diniya, 1971, p.22ff.
১০. I. Mendelsohn, “The Columbia University Copy Of The Samarqand Kufic Quran”, The Moslem World, 1940, p. 357-358.
A. Jeffery & I. Mendelsohn, “The Orthography Of The Samarqand Quran Codex”, Journal Of The American Oriental Society, 1942, Volume 62, pp. 175-195.
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ২:১৩