প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে দেশের বুদ্ধিজীবিরা ব্যাপক চিন্তিত থাকে। আমি বুদ্ধিজীবি না। তাই আমি এ বিষয়ে চিন্তিত না। বুদ্ধিজীবিদের চিন্তিত থাকার যথেষ্ট কারণ আছে। হাতে গুণা কয়েকটা বাদ দিলে ৯০% প্রাইভেটের অবস্থা তথৈবচ। অবশ্য সরকারিগুলোর অবস্থাও খুব বলার মত নয়। তবে সরকারিগুলোর সৌভাগ্য হল তারা দেশের সেরা ছাত্রগুলো পায়। ভাল প্রাইভেটগুলোতে প্রতি ব্যাচেই কিন্তু কয়েকজন তুখোর ছাত্র থাকে। তবে এভারেজে ছাত্রদের কোয়ালিটি যথেষ্ট খারাপ। আমার বড় ভাইয়ের রুমমেট ছিল বুয়েটে কম্পিউটারের ছাত্র(পরবর্তীতে শিক্ষক)। তিনি ঢাকার স্ট্যামফর্ড না অন্য কোন নামের একটা প্রাইভেটে কম্পিউটার সাইয়েন্সের ছাত্রদের পড়াতে গিয়ে দেখলেন তাদের বেশিরভাগই ত্রিভুজের তিন কোণের সমষ্টি কত জানেনা!
আমি একাউন্টিং আর ফাইনান্সের ছাত্র। ফাইনান্স ইকনমিক্সের একটা পার্ট হওয়াতে আমি ইকনমিক্সের অনেক ধারণায় বিশ্বাস করি। তাই মনে করি ডিমান্ড আছে বলেই এত এত প্রাইভেটের সাপ্লাই আছে। সময়ের সাথে সাথে ভালগুলো থাকবে, খারাপগুলো চলে যাবে। তাই প্রাইভেটের কোয়ালিটি নিয়ে এত চিন্তিত আমি না। তবে ইকনমিক্সে ব্যাড মানি ড্রাইভস গুড মানি আউট অফ দ্যা মার্কেট নামেও একটা কথা চালু আছে। সেটা অবশ্য এক্ষেত্রে সত্য হওয়ার কোন কারণ নেই। এআইইউবি নামে একটা বিশ্ববিদ্যালয় আছে। বিশ্ববিদ্যালয়টা ভাল। ছাত্রদের কোয়ালিটিও ভাল। কিন্তু সেটা নাকি চালায় হাসান নামে একজন ব্যক্তি আর তার পরিবার। বাজারে প্রচলিত আছে ভিসি(বিদেশিনী)নাকি হাসান সাহেবের সাথে লিভ টুগেদার করে। কে কার সাথে লিভ টুগেদার করে সেটা বিবেচ্য না, তবে লিভ টুগেদার করার জন্যই ভিসি কিনা সেই প্রশ্ন অবশ্যই আসে। দেশে সাইফুর'সে জিমেট পড়ানোর সুবিধার্তে প্রাইভেটের প্রচুর শিক্ষকদের সাথে পরিচয় হয়েছিল। আমার কাছে বেশিরভাগ শিক্ষককে ঢাবি'র পলিটিকালি নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের থেকে ভাল মনে হয়েছে। কিন্তু কোন এক ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণাধীন বিশ্ববিদ্যালয় হলে সেখানে করাপশান হতে বাধ্য। এবসলিউট পাওয়ার করাপ্টস এবসলিউটলি। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে প্রাইভেটগুলোর ছাত্রদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে টাকার পাহাড় গড়লেও তাদের ইনকাম ট্যাক্স-ফ্রি। এর সুবিধা নিয়ে লোকজন ব্যবসা করা শুরু করেছে। নর্থ-সাউথের ইনকাম শুনলে টাসকি লেগে যায় অথচ এরা ১৮ বছর ধরে পার্মানেন্ট কোন ক্যাম্পাস করতে পারেনি। বৃষ্টির সময় বিল্ডিংয়ের সামনে যে পানি জমে যায় সেটার পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা করেনি। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় হইল সেই জায়গা যেখানে "বিশ্বের" সকল "বিদ্যার" "লয়" ঘটিয়াছে। প্রাইভেটগুলো দেখলে সেটা চরম সত্য মনে হয়।
তবে আমার সবসময় যেটা আশ্চর্য্য লাগে সেটা হল প্রাইভেটগুলোর নাম। উত্তর-দক্ষিণ কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হয়? ব্রিটেনে আর এমেরিকায় বেশির-ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম স্থান বা ব্যক্তির নামানুসারে। বাংলাদেশের পাবলিকগুলো সহ অন্যান্য দেশেও তাই। কিন্তু প্রাইভেটগুলোর এরকম বিতিকিচ্ছিরি নাম দেওয়ার কারণ কি? উত্তর-দক্ষিণ দিয়ে কি বুঝানো হচ্ছে? পূর্ব-পশ্চিমরা দাবি করে তারা নাকি আসলে উত্তর-দক্ষিণ থেকে আগের। কোন এক সরকারি ঝামেলায় পড়ে পরে স্থাপিত হয়েছে। কিন্তু পূর্ব-পশ্চিম নাম নেওয়ার কারণ কি? এটার মানে কি? নর্দান-সাউদার্ণ আরো কত কি আছে। নর্দান শুনলে আমার নর্দমার কথা মনে চলে আসে। আইইউবি অবশ্য ভালই নাম বলা যায়। অন্তত একটা অর্থ আছে। তর্কের খাতিরে ধরে নেওয়া যায় তারা মানুষকে(মনকে) স্বাধীন করবে। বা অন্য কিছু হবে। কিন্তু এমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল দিয়ে কি বুঝাচ্ছে? ইন্টারন্যাশনাল লাগানোর মাজেঝা কি? ডেফডিল নামেও একটা আছে। ডেফডিল একটা ওয়েস্টার্ণ ফুলের নাম আমি যদ্দুর জানি। ফুলের নামেই যদি বিশ্ববিদ্যালয় দিতে হয় তাহলে শাপলা বা গোলাপ তো আমাদের দেশীয় ফুল। সেগুলোর নামে দিল না কেন? সবচেয়ে টাসকি লাগার মত নাম হল স্ট্যাম্ফরড। নাম শুনলেই মনে হয় বিশ্ববিখ্যাত স্ট্যানফরডের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু না, ওখানে "এন" না, লিখা আছে "এম"। স্ট্যাম্ফরড মানেটা কি? কেউ কি জানেন? এরকম নাম দেওয়ার মাহাত্ম কি?
কথায় বলে নামে কিবা আসে যায়। কিন্তু আমার এক চাচাত ভাইয়ের নাম "বকালা" হওয়াতে সে চরম মনোবেদনায় ভুগে। তার আসল নাম মুমিন। সে সবাইকেই মুমিন নামটাই বলে। কিন্তু দুষ্ট বালকেরা মাঝে মাঝেই তাকে বকালা বলে ডাকে। নামে কিছু না যায় আসলেও যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম দেওয়া হচ্ছে তখন সেটার একটা অর্থ থাকা উচিৎ না? যাতে ছাত্রদেরকে কেউ জিজ্ঙেস করলে অন্তত বলতে পারে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের অর্থ কি। বিশেষ করে উত্তর-দক্ষিণ বা পূর্ব-পশ্চিমের মত দিকগুলো নিয়ে টানাটানি করার হেতু কি সেটা আমার মাথায় ঢুকেনা। দশ-দিকের কম্বিনেশান নিয়ে যত বিশ্ববিদ্যালয় আছে তাদের ছাত্রদের উচিৎ কতৃপক্ষকে জিজ্ঙেস করা নাম পরিবর্তন করে ভাল অর্থপূর্ণ নাম রাখার জন্য।
//
নরাধম