কোন ব্লগার বা ব্যক্তি নয়, অপর বাস্তবের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে মন্তব্যসমেত লেখা। কাজেই একজন লেখকের ক্রেডিবিলিটি নয়, অংশগ্রহণকারী মন্তব্যকারীরা মিলে লেখাটাকে সার্থক করে তুলেছে। এখানের সাহিত্য নিয়ে আলাদা বই হতে পারে, সেটা সাহিত্যই হবে। কিন্তু আমরা চেয়েছিলাম ব্লগের এই আকর্ষণীয় কমিউনিকেটিভ চরিত্রটাকে সাধারণ পাঠকদের কাছে উপস্থাপন করতে। কোন সাহিত্য নয়। এবং এ বিষয়টা অসংখ্যবার বইয়ের পান্ডুলিপি তৈরী করার সময়ে আলাদা পোস্ট দিয়ে বা মন্তব্যের ঘরে ব্লগারদের জানানো হয়েছে। যারা জানতে পারেননি তারা নিশ্চয়ই সে পোস্টগুলো মিস করে গেছেন অথবা আমাদের ব্যর্থতা যে আপনাদের চোখের সামনে তুলে ধরতে পারিনি।
তাৎক্ষনিক কমিউনিকেটেড হচ্ছে লেখাগুলো এ চরিত্রটা ধরার জন্য দরকার ছিল বিতর্কমূলক পোস্টগুলো। আমরা পর্যালোচনা করে দেখলাম, প্রবন্ধগুলোই এমন বিতর্ককে ধারণ করেছে সবচেয়ে বেশী। গল্প, কবিতা ও অভিজ্ঞতার মন্তব্যগুলো হচ্ছে, ভাল হইছে, সুন্দর হইছে টাইপ এবং সে সাথে অপ্রাসঙ্গিক বিষয়। সেটাও ব্লগের একটা সত্ত্বা, এটা ঠিক, কিন্তু তা প্রিন্ট হয়ে বের হলে কতটুকু পাঠক প্রিয়তা পেত সে বিষয়ে আমাদের ঘোরতর সন্দেহ ছিল। তাছাড়া, তা বাছাই করার মত সময়ও আমাদের হাতে ছিল না। একুশের বই মেলা মাত্র অল্প কদিন আগে আমরা কাজ শুরু করি। সর্বপরি সাহিত্য বিষয়টার চেয়ে ভাবনার যে নতুনত্ব, বৈচিত্র, স্বাধীনতা ব্লগ ধারণ করে সেটা পাঠকদের জানানো বেশী জরুরী মনে করি আমরা। ফলশ্রুতিতে, যে বিষয়গুলো বিতকের্র জন্য সবচেয়ে বেশী আলোচিত হয়েছিল, বিভিন্ন মতকে ধারণ করেছিল সেগুলোকে লিস্ট করে সেখান থেকে একটা প্রায়োরিটি র্যাংকিং করা হয়েছে। যেমন সবচেয়ে বেশী কথা হয়েছে ড: ইউণূসকে নিয়ে, তারপরে ধর্ম নিরপেক্ষতা, ফতোয়া ধর্ম, ইশ্বরচিন্তা। এসব বিষয়ে দুইটা পক্ষ সমান সমান লড়েছে। অনেক বেশী প্রাঞ্জল ছিল আলোচনা।
এর বাইরে তেলাপোকার জাতিয় সংগীত পরিবর্তন বিষয়টা আমাদের কাছে নতুন মনে হয়েছে, সাধারণত প্রচলিত মিডিয়ায় এমন সেনসিটিভ বিষয় আলোচিত হয় না, সেজন্য এটার গুরুত্ব অন্যান্য অনেক বিষয়ের চেয়ে বেশী ছিল। টোটাল বিষয় নির্বাচন ও বইটির এমন আঙ্গিগত উপস্থাপনের মাধ্যমে যেটা দেখাতে চেয়েছি সেটা হচ্ছে -
1. সমাজের বিরাজমান বিতর্কগুলো নিয়ে ব্লগে আলোচনা হয় অনেক সাহসিকতার সাথে;
2. বিভিন্নমত/ভিন্ন মত/উলটো মতকে তা ধারণ করতে সক্ষম অনেক সহনশীলতার সাথে; এবং
3. ব্লগের লেখা ও মন্তব্যের একটা চাক্ষুস উপস্থাপনা।
বইটিতে বিতর্ক বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নিজেদের অভিরুচী কাজে লাগানোর কোন সুযোগ ছিল না। নির্বাচিত বিষয়গুলোতে সংশ্লিষ্ট সময়ের একটিভ সমস্ত ব্লগারদের পার্টিসিপেশন আছে। সমস্ত মত, পথ, আদর্শের বক্তব্যগুলো অকর্তিত রাখা হয়েছে।
আমাদের যা করতে হয়েছে সেটা হচ্ছে বিতর্কগুলো বেছে বের করা, কোন স্বজনপ্রীতি করে নয়, সেটা সম্ভবও নয়। বরঞ্চ, যে বিষয়টা কেবল খেয়াল করেছি, তা হছে
1. বিতর্কটি ব্লাসফেমী পর্যায়ে পড়ে কিনা!
2. পন্সচলিত জরুরী আইন ভায়োলেট করে কিনা
3. কতটা অভিনবত্ব ও নতুনত্ব আছে
4. কতটা প্রানবন্ত আলোচনা হয়েছে মন্তব্য বিভাগে।
5. মন্তব্যগুলোতে কি পরিমাণ সূত্রবদ্ধ তথ্য উপস্থাপিত হয়েছে।
আমরা যে 7 জন লেখাগুলো বাছাই করেছি - তাদের সাথে সবার মিলবে এমন তো কথা নেই, আমাদের নিজেদের মধ্যেও পছন্দের বিষয়ে গরমিল ছিল, শেষাবধি বেশীরভাগ যেটার কথা বলেছে সেটাই বেছে নেয়া হয়েছে। তারপরেও যারা নিজেদের লেখা প্রকাশিত হয়নি দেখে অখুশী হয়েছেন, তাদের সাথে আমাদের কমিউনিকেশন গ্যাপটার কথা স্বীকার করছি। কি কি বিষয় থাকছে সেগুলো টাইম টু টাইম জানানো হলেও অনেকের চোখ এড়িয়ে গিয়েছে জেনে এখন খারাপই লাগছে। তারপরেও নিজেদের দোষ স্বীকার করে নিচ্ছি। আমাদের পরিকল্পনা আছে পরবর্তী খন্ডটাতে ব্লগের সাহিত্যকে ধারণ করা।
অবশ্য সবই নির্ভর করছে অপর বাস্তবের সাফল্যের উপরে। তার জন্য আপনাদেরকে বইটির বিক্রয় বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করছি, নিজেরা কিনুন এবং অন্যকে কিনতে রেফার করুন। প্রথম প্রকাশনার বিতর্কগুলো ভিন্ন ধারায় হওয়াতে বইটি সুধীমহলে ইতোমধ্যে প্রশংসিত হতে শুরু করেছে, যার সাফল্য অবশ্যই সকল ব্লগারকে ছুঁয়ে যাচ্ছে।
বিঃ দ্রঃ সম্পাদকের এ কৈফয়েতের দায় দায়িত্ব একমাত্র আমার। বইটির সাথে জড়িত অন্যান্য সম্পাদকরা আমার মতের সাথে দ্্বিমত পোষণ করতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ ভোর ৫:৪৪