আজ কি যেন বাহারকে শুন্য করল। তার সমস্থ অস্তিত্বকে জ্বালীয়ে শুন্য করে গেল।তার সমস্থ আকাশে আজ মেঘ।মেঘে মেঘে পরিপুর্ণ।মেঘে মেঘে ঘর্ষণে গর্জন হয়।বৃষ্টি নেই, তার পর ও মনের অজান্তে চোখের কোনে এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল।বাহার ডান হাতে সে জল পরখ করে দেখে।এর কি বর্ণ, এ কি নিছকই জল, নাকি হৃদয় নামক যন্ত্রের ঘুন পোকা, যা হৃদয়কে কুড়ে কুড়ে খেয়ে চক্ষু গহব্বর দিয়ে বের হয়ে এসে তার আধিপত্যকে জানান দিচ্ছে।কল্পনা বাপের বাড়ি যাওয়ার পর বাহারের নিস্তব্ধ দিন কাটে।এলো মেলো ভাবনা বিলাসে সে ছন্নছাড়া।শরীর,পরনের জামা কাপড় কোথাও এক ফোটা যত্নের ছোঁয়া নেই।চাকরী তে মন নেই।ধারাবাহিক ভাবে স্কুলে যায়না হটাৎ একদিন দু দিন আবার দ্বীর্ঘ বিরতী।প্রায় মাস হতে চলল, দ্বীর্ঘ সময় স্ত্রীকে দেখতে না পেয়ে তার মন অস্থিরতায় কাতর। স্ত্রীর ভালবাসার টানে সমস্থ উপেক্ষা করে আজ বাহার স্ত্রীর পৈত্রিক নিবাসে উপস্থিত হল।শ্বশুর বাড়ির লোকের ক্ষুদ্ধ জনরোস বাহারের সমস্থ অস্তিত্বকে পদতলে পিসে কল্পনা ও বাহারের ভালবাসাকে কলঙ্কিত করল। সেখানে কল্পনার দেখা বাহারের মেলেনি।শুধু লাঞ্চনা, গঞ্জনা অপমানের বিম্তর বোঝা মাথায় নিয়ে তাকে বিদায় হতে হয়েছে।কল্পনার সেই সময়ের অবস্থান, বাহারের আগমনী বার্তায় কল্পনার আত্ম জিঞ্জাসা কি ছিল?কোন কিছুই বাহারের চোখে ধরা দিলনা।বাহার ফিরে এল পৃথিবী সমান ধ্বংসস্তুপের মাঝে অসহায় পঙ্গু যোদ্ধার সীমাহীন যন্ত্রনা নিয়ে।সমস্থ ঘটনায় কিভাবে বাতাসে রটে যায়।মোবারকের স্ব শিক্ষায় শিক্ষিত মন্ত্রটি এত দিন স্ত্রী আনোয়ারার বিদ্দেষপূর্ণ প্যানপ্যানানীর মাঝে আবদ্ধ ছিল।আজ চোখের সামনে ভাতিজার এমন করুন দশায় সে আর স্থীর থাকতে পারলনা।ব্যাপক খোঁজ খবর তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে, তার নিজের অনুতাপ হতে লাগল।কেন সে এতদিন স্তব্ধ ছিল। তাই আর কালক্ষেপন না করে, সমস্যা সমাধানে স্ব উদ্যোগে সে বাহারের শ্বশুর বাড়ি গিয়ে উপস্থিত হল।মোবারকের কাছে তাদের অভিযোগের অন্ত ছিলনা। আনেক বড় মুখ করে আপনার সংসারে মেয়ে দিয়েছিলাম। আমার মেয়ের নিত্য করুন অবস্থা আপনি স্বচক্ষে দেখেছেন, তখন তো আপনার মুখে আহা শুনতে পাইনি, আপনার ভাতিজা বদ্ধ উন্মাদ,সংসার কি সে বোধ শক্তি তার নেই।ছোট খাট সমস্যা থাকতেই পারে, কিন্তু দিনের পর দিন যে অত্যাচার মেয়ের উপর হয়েছে,সেখানে আপনার কি কিছুই করার ছিলনা।আজ এসেছেন মেয়ের চাচা শ্বশুর হয়ে আমার মেয়েকে নিয়ে গিয়ে আবার নরকে ফেলতে, আমি তা কিছুতেই হতে দেবনা।মোবারক বেয়াইয়ের রোসানলে পড়ে কি বলবে উত্তর জানা নেই।শুধু অসহায় আত্মসমার্পন করে বিনয়ের সাথে বলল,অতীতে যা হয়েছে, ওদের সংসারে যদি সেই পরিস্থিতি বিরাজ থাকে, তো এখন থেকে সমস্থ দায়ভার আমার। আমি চাইনা আমাদের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট হোক।কল্পনার বাপের ক্রোধ কমল, কিছুটা নমনীয় ভাব দেখাল, তবুও নিজের কতৃত্বকেই প্রাধান্য দিয়ে বলল, আজকের মত যান বেয়াই, সময় করে আবার আসেন চা নাস্তা খাওয়ার ভেতর দিয়ে আমরা আলোচনা করে দেখবো কি করা যায়। এমন পরিস্থিতিতে আর কিছুই বলার ছিলনা মোবারকের।সম্ভাবনার দুয়ার খোলা রেখে মন কে আস্বস্থ করে সামান্য বিষন্নতা নিয়ে বাড়ী ফিরল।এদিকে ভেতর ভেতর মোবারক বংসে ধ্বংসযঞ্জের ঝড়ো বাতাসে বাহারের মতিভ্রমের বিষয়টি স্পষ্ট হতে লাগল। বাহার নিস্ব হয়েছে,সম্ভাবনা, ব্যার্থতা, জীবনের নেগেটিভ পজেটিভ এক যায়গায় লেপ্টে গিয়ে বিদ্যুতের শট সার্কিট থেকে আগুন লাগার মত, তার সমস্থ শরীর ঝলসে গেছে, ধোঁয়া আর লেলিহান শিখা দেখা যাচ্ছে না, শুধু তার ব্যাপক নিস্তব্ধতার কারনে।শাস্তনবানুর সংসারে এখন তার পুরাপুরি কতৃত্ব, পুত্রবধুকে বিদায় করে সমস্থ কাজ এখন সে নিজেই করে।তবে শ্রী বিহীন, রান্না বান্না পাতিল পরিস্কার মন চাই করল, কিংবা খাওয়া পর্ব কোন মত সেরে অপরিস্কার নোংরা পাতিল উপর করে রাখল। সকালের খাবার যদি দেরি হয়, তবে ঘরে রাখা যবের ছাতু দিয়েই জাফর মিয়া খাওয়া পর্ব সারে।তার পর সমস্থ দিনই অবোধ বালকের মত নিশ্চুপ হয়ে থাকে।ছেলে মেয়ে কখন কি খেল- কি খেলনা সে খেয়াল তাদের মধ্যে নেই।এই হল ছন্ন ছাড়া সংসারের বর্ণহীন ব্যাকরন। তবে এই ব্যাকরন শাস্ত্রের আরেকটা অধ্যায় হল।বংসের বড় ছেলে স্ত্রী বিহনে পুরোপুরি দিশেহারা,তাকে এখন খাওয়ার খোঁটা শুনতে হয়। চাকরী বাকরি করেনা, বউ বিহনে তার পুত্র পাগল হয়ে যাচ্ছে,এমন অলক্ষি পুত্রকে খাওয়ন দেওয়া ঠিক না।বউ গেছে তো কি হয়েছে? অমন বউ এ সংসারের যোগ্য না।তার মতে বউয়ের দরকার হলে বিয়ে করতে হবে, তাই বলে কেঁদে কেঁদে বুক ভাষিয়ে সমস্থ কিছু জলাঞ্জলী দিয়ে সন্যাসী হওয়ার কি দরকার? সংসারে ভাল হয়ে থাকলে থাকুক , না পারলে ঐ রকম পাগল পোষা তার পক্ষে সম্ভব না।শাস্তণবাণুর মাতৃত্ব বোধ কোথায় গেল?পূর্ব সংসারে যখন শাস্তনের শ্বশুড়ি আমেনা বেঁচে ছিল,তখন দেখেছি শ্বাস্তনবাণুকে নিগৃহীত হতে,কিন্তু তার পুত্র জাফরের প্রতি তার সহমর্মিতার অভাব ছিলনা।মাতৃটানে ঘাটতি ছিলনা।আর আজ নির্যাতিত শাস্তনবানুর আত্মায় পেতাত্মা এমন ভাবে বাঁসা বেঁধেছে, যে জগতের সমস্থ মাতৃজাতকে কলঙ্কিত করার পয়গাম তার বিকৃত আত্মায় পেতাত্মার আশির্বাদ হয়ে সমস্থ মাতৃকুলকে রাক্ষসের মত ভক্ষন করে ফেলল।এমনও কি হয়?দশ মাস গর্ভে ধরে কি করে তা হয়।যাগগে এসব কথা, ঘটনা হল বাহার পাগল হয়ে গেছে, গ্রামের অনাচে কানাচে এ কথা ছড়াছড়ি হয়ে গেছে,বাহারের স্বাভাবিক চলাচলে কিছুটা পরিবর্তন দেখে গ্রামের মূর্খ সমাজ তাকে পাগল বানিয়ে ফেলল।এ কথা বাহারের শ্বশুর বাড়ি ও পোঁছে গেছে। বাহার মনে মনে হাঁসে , বিড় বিড় করে কি যেন বলে, আকাশের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে,পথে পথে ঘুরে বেড়ায়, পাড়ার বৌ-রা নালিশ দেয় গোসল করার সময় বাহার ভাই সেখানে উকি দিচ্ছিল, রাতে গলাছেড়ে গান গায়, রাস্তায় মানুষ ধরে জিঞ্জাস করে, কল্পনা কবে ফিরে আসবে, না আসলে কি? সে আবার বিয়ে করবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১৬ রাত ১০:১৫