কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ কি লিখতে চান আপনি? যাই লিখুন না কেন আপনাকে কিছু নিয়ম কানুন জানতে হবে।
কথায় বলে - গাইতে গাইতে গায়ক, লিখতে লিখতে লেখক। কিন্তু ব্যাপারটা কী এতো সহজ? ধরুন আপনি লেখক হতে চান। তাহলে কী করতে হবে? সুন্দর একটি কলম আর বেশ কিছু কাগজ নিয়ে বসে লিখতে থাকলেই কি আপনি লেখক হয়ে যাবেন? নাকি আরো কিছু করণীয় আছে?
হ্যাঁ, করণীয় অনেক কিছুই আছে, যদি আপনি নিজেকে লেখক হিসেবে দেখতে চান।
ভালো লেখক হতে হলে:
পাঠে সময় দিন প্রচুর: সমাজকে জানুন। পৃথিবীকে জানুন। একজন লেখককে লেখার মধ্য দিয়ে পাঠককে অনেক কিছু জানাতে হয়। তাই পড়তে হবে প্রচুর।
লক্ষ্য স্থির করুন: কোন লক্ষ্যে নিবেদিত হবে আপনার লেখা, তা স্থির করে নিন। কিছু লোক পয়সার জন্য অনৈতিকতা, অপসংস্কৃতি ও নোংরামিকে লেখার উপজীব্য বানায়। যারা শেষ পর্যন্ত নিন্দিত হয়। তাই আপনি আপনার লক্ষ্য ঠিক করে নিন।
সাহসী ও সত্যনিষ্ঠ হন: সত্যের শক্তি অসীম। তাই সত্যকে বুকে ধারণ করে কলম বা কীবোর্ড হাতে নিন। পাঠক আপনার লেখার সাথে আপনাকেও ভালোবাসতে শুরু করবে। আপনি হয়ে উঠবেন আরো সাহসী।
ভালো লেখকদের অনুসরণ করুন: ভালো লেখকদের লেখা পড়ুন। তাদের লেখার ধরন, আঙ্গিক ইত্যাদি লক্ষ্য করুন।
প্রতিদিন লিখুন: লিখতে থাকুন প্রতিদিন। প্রথম দিকে যা মনে আসে তা-ই লিখে ফেলুন। হোক ভুল-ত্রুটি। প্রথম জীবনে বড় বড় লেখকদের লেখাও ত্রুটিমুক্ত ছিল না।
অপারেশন চালান/কাঁটাছেঁড়া করুন: আপনার লেখাটি দু-একদিন পর পড়ে দেখুন, কোথায় কী ভুল হলো। সংশোধন করুন, সংযোজন করুন। লেখাটিকে সুন্দর করে তোলার জন্য নিজেই সম্পাদনা করুন।
লেখাকে তথ্যসমৃদ্ধ করুন: পাঠক জানার আগ্রহ থেকেই আপনার লেখাটি পড়বে। তাই লেখাটিকে তথ্যসমৃদ্ধ করে তুলুন।
অনন্যতা অর্জন করুন: অনন্যতা হলো, অন্যদের চেয়ে আপনার লেখার স্বাতন্ত্র্য, আপনার লেখাতে আপনার নিজস্বতা, আপনার স্বকীয়তা। যতোদিন আপনি নিজস্ব স্টাইল নিয়ে অন্যদের অতিক্রম করতে না পারেন, ততোদিন পাঠকের দৃষ্টি কেড়ে নিতে কষ্ট হবে আপনার।
পরিশেষে আপনাদের জন্য থাকছে দেশের দুই খ্যাতিমান লেখকের কথা। এবার জানাচ্ছেন কেন লেখক হলেন তাঁরা, কীভাবে লেখক হলেন সে অভিজ্ঞতা।
হাসান আজিজুল হক
লিখতে হলে পড়তে হবে। তরুণ লেখকদের প্রতি প্রথমত এটিই আমার বলার কথা। মনে রাখতে হবে, লেখকের পথ বড়ই বিপদসংকুল। এটা সম্পূর্ণ একার পথ। কঠিন এক সাধনা। কোনো লেখকের পক্ষে কি বলা সম্ভব, তিনি কেন লেখক হয়েছেন? মাঝেমধ্যে আমার মনে হয়, লেখক না হয়ে উপায় ছিল না বলেই শেষ পর্যন্ত লেখক হয়েছি।
খুব ছোটবেলা থেকে কেন যে কবিতা, গল্প এসব লিখতাম, আজ সেটা স্মৃতি খুঁড়ে বের করা কঠিন। বলা যায়, যে পৃথিবীতে বেঁচে আছি সেই পৃথিবীর একটা অর্থ ও ব্যাখ্যা তৈরি করতে পারি লেখার মাধ্যমে। এটি হয়তো প্রত্যেক লেখকই পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে একজন লেখকের সমাজ-রাষ্ট্র-পৃথিবী সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট একটা ধারণা থাকা জরুরি। লেখক হতে চাইলে তুমি যা কিছু করতে চাও, তার সবই তোমাকে লেখার ভেতর দিয়ে প্রতিফলিত করতে হবে। ব্যক্তি ভেদে একেকজন লেখকের লেখার কৌশল একেক রকম। আমি যেমন সাধারণত একটি লেখা একবারেই লিখে ফেলি। কিন্তু লেখাটি লেখার আগে, তা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা থাকে বিস্তর। কীভাবে আগের লেখা থেকে নতুন লেখাকে আলাদা করা যায়, এই ভাবনাও থাকে। আমি মনে করি, প্রত্যেক লেখকই তাঁর নিজস্ব জগৎ তৈরি করে নেন একান্ত তাঁর মতো করে।
মহাদেব সাহা
আমি কি কবি হতে পেরেছি? জানি না। মনে পড়ে, ১৯৭৬ সালে প্রেসক্লাব-সংলগ্ন ফুটপাতের ওপর বসে একটানে লিখেছিলাম ‘চিঠি দিও’ কবিতাটি। পরে সেটি প্রচন্ড জনপ্রিয় হয়। শৈশবে আমার মা বিরাজমোহিনির মুখে রামায়ণ ও মহাভারত শুনতে শুনতে বড় হয়েছি। তখন মনে হতো, বাল্মীকি বা ব্যাসদেবের মতো যদি কবি হতে পারতাম!
একটি শব্দের জন্য বসে থেকেছি সারা রাত। জীবনানন্দ দাশ কিংবা সুধীন্দ্রনাথ দত্তের বাংলা কবিতা পড়েছি উন্মাদের মতো। পড়েছি জন কিটস, রাইনার মারিয়া রিলকে, ডব্লিউ বি ইয়েটস। পড়তে পড়তে লিখতে লিখতে হয়তো কবি হয়ে উঠেছি আমি। আমার মনে হয়, পৃথিবীতে কবি হচ্ছে একমাত্র অবিনাশী সত্তা। রাজা, সম্রাট তাঁর কাছে কিছু নয়। তাই কবি বা লেখক হতে গেলে যেমন পড়াশোনা জরুরি, তেমনি দরকার লেখকের স্বাধীন সত্তা। কারও পরামর্শ নিয়ে কেউ কোনো দিন কবি হতে পারে না।
সূত্রঃ ইন্টারনেট (চমৎকার)
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৩:০৮