মানব সমাজে আদিম যুগ থেকে নারী নির্যাতন প্রতিদিনকার ঘটনা। কালে-কালে যুগে-যুগে নারীদেরই নির্যাতনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছে পুরুষ। আজও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। তবে দিন যে বদলায়নি তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। কেননা আধুনিক যুগে নারীরা তাদের চিন্তা চেতনায় অনেক পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের পাশাপাশি পুরুষরা ব্যাপক ভাবে প্রতিনিয়ত ও প্রতি মূহুর্তে নির্যাতিত হচ্ছে। নারী নির্যাতনের পাশাপাশি বাংলাদেশে পুরুষ নির্যাতন একটি প্রকট সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর পুরুষ মানুষ আজকে কোন না কোন নারী দ্বারা নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। মানুষের জীবনে কয়েক রকম ভাবে নির্যাতনের ঘটনা ঘটতে পারে, কেউ শারীরিক, কেউ মানসিক, কেউ দৈহিক-আর্থিক কেউ সামাজিক ভাবে নির্যাতিত হচ্ছে পাশাপাশি হচ্ছে শাসন শোষণের স্বীকার, ঘরে বাইরে এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে অহরহ। অনেক ক্ষেত্রে একটি ছেলেকে সায়েস্থা করতে বর্তমান সময়ে ইভটিজিং নামের একটি সোনার হরিণকে বেছে নিচ্ছে সমাজের এক শ্রেণীর নারীরা। তাদের জন্য তৈরী করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত নতুন আইন। ছেলেদের শায়েস্তা করতে মেয়েরা নতুন এ আইনকে ব্যবহার করে যাচ্ছে। একটি ছেলের সাথে পারিবারিক বিরোধ হলে তাকে স্কুল কিংবা কলেজের সামনে ডেকে নিয়ে ইভটিজিং নামের বেড়াজালে ফাঁসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু একটি ছেলে-মেয়ে কিংবা নারীদের কাছে নির্যাতন বা প্রতারণার শিকার হয়ে কোন ভাবে আইনের আশ্রয় নিয়ে প্রতিকার পাচ্ছে না। নারীরা এই আইনের সুযোগ গ্রহণ করলেও একটি মেয়ের কাছে প্রতারণার শিকার হয়ে মানসম্মান কিংবা উল্টো হয়রানীর ভয়ে নীরবে সবকিছু মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে।
এক জরিপে জানা যায় আমাদের সমাজে বর্তমানে পুরুষ নির্য়াতনের সংখ্যা শতকরা ৪৫ ভাগ সে তুলনায় নারী নির্যাতনের সংখ্যা ৫ ভাগ কম। নারী নির্যাতনের সংখ্যা ৪০ ভাগ। কিন্তু পুরুষ কর্তৃক নারী নির্যাতনের ঘটনা পত্র-পত্রিকায় ঢালাওভারে প্রচার হলেও নারী কর্তৃক পুরুষ নির্যাতনের ঘটনা তেমনটি চোখে পড়েনা। পুরুষ নির্যাতনের বিষয়টি চেপে যাওয়া আর নারী নির্যাতনের সংখ্যা প্রকাশ পাওয়ায় নারী নির্যাতন ব্যাপক মনে হয়।বাংলাদেশের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এক্ষেত্রে উদাসীন ও দায়িত্বহীন ভূমিকা পালন করছে। অপর দিকে নারী নির্যতন মামলায় আইন- আদালতের সহযোগীতা পাওয়া গেলেও পুরুষ নির্যাতনের বিষটিকে কম গুরু্ত্ব দেয়াতে এর প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে দিন দিন নারী কর্তৃক পুরুষ নির্যাতনের ঘটনা উর্ধ্বমূখী। এখনকার দিনে অনেকেই আছেন, যারা পুরুষদের অত্যাচারের জবাব দিতে কার্পণ্য করেন না। শরীরে হাতও তোলা কিংবা খুন করার মতো কঠিন কর্মটিও করে বসেন। মাঝে মাঝে পত্র-পত্রিকায় বিচ্ছিন্নভাবে প্রকাশিত হয় লৌহমূর্ষক পুরুষ নির্যাতনের কাহিনী। আমরা প্রায়ই দেখছি যে, প্রিয়তমা স্ত্রী কিংবা বান্ধবী বিষাক্ত নাগিনী হয়ে মরণ ছোবল দিচ্ছে স্বামীকে বা প্রেমিকাকে। কেড়ে নিচ্ছে তার প্রাণ। কখনো আবার প্রবাস থেকে পাঠানো স্বামীর টাকা পয়সা ধন-সম্পদ আত্মসাৎ করে, পরকীয়া প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে যাচ্ছে এমনকি স্বামীকে ডিভোর্স দিচ্ছে। অথবা নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে বা যৌতুক নিরোধ আইনে মিথ্যা মামলা করে জেল হাজতে পাঠিয়ে নিঃস্ব ও রিক্ত করে দিচ্ছে।
দ্য বেঙ্গলি টাইমস ডটকম ডেস্ক সূত্রে একটি গবেষণাপত্রে যা জানা গেছে স্ত্রী বা বান্ধবীর হাতে পুরুষ নির্যাতনের ঘটনা সাধারণ ধারণার চেয়ে অনেক বেশি। শুধু আমাদের দেশে নয় বিশ্ব জুড়ে আশংকাজনক ভাবে বাড়ছে পুরুষ নির্যাতনের ঘটনা। নারীরাই পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হন বেশি- প্রচলিত এই ধারণাকেও পাল্টে দিচ্ছে নানা সমীক্ষা। এক গবেষণায় জানা যায় পারিবারিক নির্যাতনের ৪০ শতাংশই হয় পুরুষের ওপর। স্ত্রী বা বান্ধবীর হাতে পুরুষ নির্যাতনের ঘটনা সাধারণ ধারণার চেয়ে অনেক বেশি। পুরুষ অধিকার নিয়ে কাজ করা 'প্যারিটি' নামের প্রচারণা গ্রুপের দাবি, সারা বিশ্বেই পুরুষ নির্যাতন বাড়ছে। ব্রিটেনে প্রতি পাঁচটি পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনার দুটির শিকার পুরুষ। অর্থাৎ ৪০ শতাংশ নির্যাতনের ঘটনা ঘটে পুরুষের ওপর।প্যারিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, পুরুষ তাঁর স্ত্রী বা বান্ধবীর হাতে নির্যাতনের শিকার হলেও পুলিশ প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা পাত্তা দেন না। তা ছাড়া নির্যাতনকারী নারী সহজেই ছাড়া পেয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে নারীদের চেয়ে পুরুষরা আইনের আশ্রয় কম পান। পারিবারিক নির্যাতনের ওপর পরিচালিত ওই সমীক্ষায় দেখা যায়, স্ত্রী বা বান্ধবীর হাতে পুরুষ নির্যাতনের ঘটনা সাধারণ ধারণার চেয়ে অনেক বেশি।
'পারিবারিক নির্যাতনঃ পুরুষের অবস্থানগত দিক থেকে' শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়ঃ 'পারিবারিক নির্যাতনের ক্ষেত্রে নারীদের ওপর নির্যাতনের বিষয়টিকেই সাধারণত বিবেচনা করা হয়। সমস্যাটিকে পুরুষের অন্যায় হিসেবেই দেখা হয়। কিন্তু তথ্য-প্রমাণ বলছে, এই চিত্র মিথ্যা।'
স্বরাষ্ট্র দপ্তর এবং ব্রিটিশ ক্রাইম সার্ভের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। এতে দেখা যায়, ২০০৪-০৫ এবং ২০০৮-০৯ সালে সংঘটিত পারিবারিক নির্যাতনের প্রায় ৪০ শতাংশেরই শিকার হয়েছে পুরুষ। মাঝখানে ২০০৬-০৭ সালে এই হার বেড়ে ৪৩ দশমিক ৪ শতাংশ হয় এবং ২০০৭-০৮ সালে হয় ৪৫ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে ২০০৮-০৯ সালে এই মাত্রা কমে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ হয়। আর শারীরিক নির্যাতনের শিকারের ঘটনা ঘটেছে ৪০-এর সমান বা তার চেয়ে কিছু বেশি। ২০০৬-০৭ সালে এ হিসাব ছিল ৪৮ দশমিক ৬ শতাংশ, ২০০৭-০৮ সালে ৪৮ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ২০০৮-০৯ সালে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০০৮-০৯ সালের তথ্যমতে, ব্রিটেনে প্রতি চারজন নারীর একজনের বেশি এবং প্রতি ছয়জন পুরুষের একজন ১৬ বছর বয়সে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
প্যারিটির দাবি, পারিবারিক নির্যাতনের ক্ষেত্রে পুরুষদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নির্যাতিত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পুলিশ বা কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ এদের অভিযোগে তেমন গুরুত্ব দেন না। প্যারিটির গবেষক জন মেস বলেন, 'আইনি কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে পুলিশ সাধারণত নির্যাতিত পুরুষদের ধর্তব্যের মধ্যেই আনে না। তারা পুরুষদের পক্ষ নিয়ে কাজ করেছে এমন ঘটনা সচরাচর দেখা যায় না।' পুরুষের দুর্দশা সংবাদমাধ্যমেও উপেক্ষিত বলে জানান তিনি। মেস বলেন, 'সংস্কৃতিগতভাবেই পারিবারিক নির্যাতনের বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আনা পুরুষের জন্য কঠিন কাজ। নির্যাতিত হয়েছেন এমন কথা স্বীকার করতে পুরুষদের সাধারণত অনীহা দেখা যায়। এই গবেষণা রিপোর্টটি নিয়ে ব্রিটেনের বিভিন্নমহলে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
একথা অনস্বীকার্য যে আমাদের সমাজেও প্রকাশে কিংবা লোকচক্ষুর অন্তরোলে পুরুষ নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে অহরহ। বিভিন্ন এলাকায় এমন ও আছে প্রায় প্রতিরাতে স্ত্রীর হাতে মারধর খেতে হয় স্বামী নামের সেই পুরুষটিকে। বেচারা স্বামী লোক লজ্জা আর সমাজপতিদের ভয়ে মুখ খোলতে পারছে না। এভাবে কত শত ঘটনা ঘটছে সারা দেশে তার নির্ধারিত পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও প্রতিদিন খবরের কাগজের পাতা উল্টালে চোখে পড়বেই স্ত্রী কর্তৃক স্বামী তালাক, মামলা-হামলা, পরকীয়ার বলি, আবার অনেক ঘটনা চাপাও পড়ে যায়। এমনি ভাবে শত শত পুরুষ প্রতিদিন প্রতিনিয়ত স্ত্রী কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হলেও আইনের আশ্রয় নিতে পারছে না। আত্মমর্যদা, সামাজিক লোকলজ্জা আর কোর্ট কাচারীর ভয়ে মুখ খুলে বলতে পারছেন না তার নির্যাতনের কথা। কিন্তু একজন নারী ইচ্ছে করলে এ ঘটনা সাজিয়ে থানা কিংবা আদালতে মামলা করতে পারতো। এছাড়া বর্তমান সময়ে একটি পরিবারকে ধংস করতে বিভিন্ন স্থানে নারী নির্যাতন মামলাকে বেছে নেওয়া হচ্ছে। কারণ মামলাটি সহজে করা যাচ্ছে এবং এ মামলাটি সাধারণত জামিন অযোগ্য। কিন্তু ইচ্ছে করলেই একজন পুরুষ নির্যাতনের স্বীকার হয়ে থানায় গিয়ে মামলা করতে পারছেন না।
একসময় নারীদের অবলা বলে আখ্যায়িত করা হলেও বর্তমান সমাজে নারীরা আন্ডারওর্য়াল্ডও নিয়ন্ত্রণ করছে। অনেক নারী খুন, রাহাজানী, ছিনতাই, কর্মকান্ডে ও নেতৃত্ব দিচ্ছে। সুতরাং তারা আর অবলা নয়। অপরদিকে এ দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী, স্পিকারসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধান নারী। সুতরাং বর্তমান প্রেক্ষাপটে নারীরা আর চার দেয়ালের বদ্ধ ঘরে নেই। এ অবস্থায় নারীদের জন্য বিশেষ আইন থাকলে পুরুষের জন্য বিশেষ আইন করতে বাধা কোথায়? নারী নির্যাতনের মতো পুরুষ নির্যাতন আইন প্রণয়ণ করে নারী পুরুষের মাঝে বৈষম্যতা দূর করতে সরকার আরো সচেষ্ট হতে হবে। নির্যাতন যাদের ওপরই হোক না কেন, তা সমাজ কিংবা ব্যক্তি জীবনের জন্য হুমকিসরূপ।
পাদটিকাঃ নারী নির্যাতিত হলে তার বিরুদ্ধে নারীদের সাথে সাথে সোচ্চার হয় পুরুষ।
নারীদের বিভিন্ন দাবীদাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে রাজপথে মানববন্ধন সভা সমাবেশ করছেন পুরুষ। কিন্তু যিনি বাইরে বেরিয়ে এসে নারীদের উন্নয়নের কথা নির্যাতনের কথা জোর গলায় বলছেন সেই বক্তাও হয়তো নিজ বাড়ীতে নিজ স্ত্রীর হাতে নির্যাতিত কিংবা মানসিকভাবে নিগৃহীত হয়ে এসেছেন। বাইরে তিনি নারী নির্যাতনের পক্ষে কথা বলছেন আর নিজের নির্যাতনের কথাটি ভেবে নিরঁবে কেঁদে যাচ্ছেন। নারী নির্যাতনের বিপক্ষে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবাই সোচ্চার হলেও দুঃখের সাথে লক্ষ্য করা গেছে যে পুরষ নির্যতনের ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করেন নারীবাদী সংগঠনগুলো। "তাই নারী বা পুরুয়ের জন্য আলাদা অধিকার নয়- চাই সমান অধিকার। সর্বত্র সমান অধিকার প্রতিষ্টা করতে হলে আইনের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য বিশেষ আইন থাকলে পুরুষের জন্য পৃথক বিশেষ আইন চাই”। সচেতন মহলেরও দাবী, নারী নির্যাতনের পাশাপাশি তৈরি করা হউক পুরুষ নির্যাতন আইন আর দূর করা হউক নারী-পুরুষের মাঝে বৈষম্যতা। তা না হলে সারা দেশে যে পরিমানে পুরুষ নির্যাতনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এক সময় তাহা ব্যাপক আকার ধারণ করবে তখন সরকার আইন করেও পুরুষ নির্যাতন কমাতে পারবেনা।