আসছে বাংলা নববর্ষ বৈশাখ ১৪২১ বঙ্গাব্দ। বৈশাখ আসে নববর্ষের বার্ত নিয়ে আবার কখনো হয়ে ওঠে কাল বৈশাখী। কাল বৈশাখী মানে ঝড় আর বজ্রপাত। কাল বৈশাখীর বজ্রপাত যমদূত হয়ে আসে কারো কারো জীবনে। বজ্রপাত কী ও কেনঃ মহাভারতের দেবরাজ ইন্দ্রের অব্যর্থ অস্ত্রের নাম ছিল 'বজ্র'। অসুরদের পরাস্ত করতে দধীচি মুনির বুকের অস্থিতে বানানো হয়েছিল এই অস্ত্র। সেসব পুরাণের কথা। জলবায়ু পরিবর্তন আর দুর্যোগের এই যুগে বজ্রের সংজ্ঞা 'ঝড়বৃষ্টির সময় আকাশে বিদ্যুতের ঝলকানির সঙ্গে সৃষ্ট প্রচ শব্দ'। প্রশ্ন ওঠে- কীভাবে হয় এই বজ্রপাত?
প্রাকৃতিকভাবেই বায়ুমণ্ডলে বিদ্যুৎ সৃষ্টি হয়ে মেঘে জমা থাকে। এই বিদ্যুৎ মেঘে দুটি চার্জ ধনাত্মক ও ঋণাত্মক হিসেবে থাকে। বিপরীত বিদ্যুৎশক্তির দুটো মেঘ কাছাকাছি এলেই পারস্পরিক আকর্ষণে চার্জ বিনিময় হয়। ফলে বিদ্যুৎ চমকায়। মেঘের নিচের অংশ ঋণাত্মক চার্জ বহন করে। আবার ভূপৃষ্ঠে থাকে ধনাত্মক চার্জ। দুই চার্জ মিলিত হয়ে তৈরি করে একটি ঊর্ধ্বমুখী বিদ্যুৎপ্রবাহ রেখা, যা প্রচণ্ড বেগে উপরের দিকে উঠে যায়। ঊর্ধ্বমুখী এই বিদ্যুৎপ্রবাহ উজ্জ্বল আলোর যে বিদ্যুৎপ্রবাহের সৃষ্টি করে তা-ই বজ্রপাত। বজ্রপাতের তাপ ৩০ থেকে ৬০ হাজার ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়। বিজ্ঞানীদের মতে, আকাশে যে মেঘ তৈরি হয়, তার ২৫ থেকে ৭৫ হাজার ফুটের মধ্যে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে বেশি। বজ্রপাতের গতি প্রতি সেকেন্ডে ৬০ হাজার মিটার বেগে নিচে নেমে যায়। এই বিপুল পরিমাণ তাপসহ বজ্র মানুষের দেহের ওপর পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই তার মৃত্যু হয়।
বজ্রপাতের স্থায়িত্বকাল এক সেকেন্ডের দশ ভাগের এক ভাগ। ঠিক এই সময়েই বজ্রপাতের প্রভাবে বাতাস সূর্যপৃষ্ঠের পাঁচ গুণ বেশি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। প্রচণ্ড শব্দে কেঁপে ওঠে চারপাশ। শব্দের গতি আলোর গতির থেকে কম হওয়ায় বজ্রপাতের পরই শব্দ শোনা যায়। বজ্রপাত ভূমিকম্পের চেয়েও অনেক বেশি শক্তিশালী। একটি বজ্রপাতে প্রায় ৫০ হাজার অ্যাম্পিয়ার বিদ্যুৎশক্তি থাকে। অথচ বাসাবাড়ির বিদ্যুৎ চলে গড়ে ১৫ অ্যাম্পিয়ারে। একটি বজ্র কখনও কখনও ৩০ মিলিয়ন ভোল্ট বিদ্যুৎ নিয়েও আকাশে জ্বলে ওঠে। বাংলাদেশে বছরের দুটি মৌসুমে বজ্রপাত বেশি হয়। জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি হওয়ায় বাংলাদেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। আবহাওয়া অধিদফতরের সাপ্তাহিক ও দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস তালিকায় নতুন যুক্ত হয়েছে বজ্রঝড়। কাল বৈশাখীর বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা দুনিয়ার বুকে বাংলাদেশেই বেশি। দুর্যোগের বলয়ে বন্দি বাংলাদেশের বুকে এই বজ্রদুর্যোগ দীর্ঘ করছে মৃত্যুর মিছিল। বাংলাদেশে বজ্রপাতের ওপর তেমন কোনো গবেষণা না হলেও ইউরোপ, জাপান ও আমেরিকায় চলছে বিস্তর গবেষণা। ২০০৮ সালে সুইডেনের উপসালায় অনুষ্ঠিত ২৯তম 'ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন লাইটিং প্রটেকশন' শীর্ষক সম্মেলনে তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের জিওফিজিক্স বিভাগের গবেষক কলিন প্রাইস তার 'থান্ডারস্টর্ম, লাইটিং অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ' শীর্ষক গবেষণাপত্রে দেখান, বায়ুদূষণ তথা পরিবেশ দূষণের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে বজ্রপাতের। এ নিবন্ধে বলা হয়, বজ্রপাতে একদিকে যেমন বায়ুদূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি বায়ুদূষণের ফলে বেড়েছে পরিবেশে বজ্রপাতের হার ও এর তীব্রতা।
বজ্রপাতের ভয়াবহতা ও প্রতিকারের উপায় নিয়ে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে গবেষণার জন্য ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে সার্ক মিটিওরোলজিক্যাল রিসার্চ সেন্টার (এসএমআরসি)। যোগাযোগ করা হলে এসএমআরসির গবেষণা কর্মকর্তা আবদুল মান্নান সমকালকে বলেন, 'বজ্রপাতের হার ও মৃত্যুর সংখ্যা দুটোই উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশের বজ্রপাতের প্রবণতা নিয়ে সার্ক স্টর্ম প্রজেক্ট নামে আমাদের গবেষণা চলছে।' তিনি বলেন, বাংলাদেশ বজ্রপাত-ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। বাংলাদেশে বছরে গড়ে ৮০ থেকে ১২০ দিন বজ্রপাত হচ্ছে বলে গবেষণায় প্রকাশ। বজ্রপাতের কারণে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, তেমনি পরিবেশ দূষণের কারণেও বজ্রপাতের হার বেড়ে গেছে। হঠাৎ এই বজ্রপাত বৃদ্ধি এবং এতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে কেন? আবহাওয়াবিদদের কাছে বজ্রপাতের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা থাকলেও নেই কোনো প্রস্তুতি। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের মাথাব্যথা না থাকলেও বজ্রপাত গবেষণায় বিশ্ব থেমে নেই। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বজ্রপাতের পেছনে বায়ুদূষণ অন্যতম কারণ। বজ্রপাতকে আবহাওয়া সম্পর্কিত দ্বিতীয় বৃহত্তম ঘাতক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন কেউ কেউ।
বজ্রপাত গবেষণায় বাংলাদেশে সর্বাধিক মৃত্যুঃ যুক্তরাষ্ট্রের কেন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট অব জিওগ্রাফির অধ্যাপক ড. টমাস ডবি্লউ স্মিডলিনের 'রিস্ক ফ্যাক্টরস অ্যান্ড সোশ্যাল ভালনারেবেলিটি' শীর্ষক গবেষণা থেকে দেখা যায়, প্রতি বছর মার্চ থেকে মে পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশে প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় ৪০টি বজ্রপাত হয়। গবেষণায় তিনি বলেন, বজ্রপাতে বছরে মাত্র দেড়শ'র মতো লোকের মৃত্যুর খবর বাংলাদেশের পত্রিকায় ছাপা হলেও আসলে এ সংখ্যা ৫০০ থেকে এক হাজার। গবেষণায় টমাস দেখান যে, ঝড় ও বজ্রঝড়ে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটছে বাংলাদেশে। ন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যাটমস্টেম্ফরিক রিসার্র্চের (এনসিএআর) বিজ্ঞানী ডেভিড এডওয়ার্ডস গবেষণায় খুঁজে পান, বায়ুমতা বাড়ছে। ইউরোপের কয়েকটি শহরে এ গবেষণা করা হয়। ২০০৪ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক নিউজ বজ্রপাতকে আবহাওয়া সম্পর্কিত দ্বিতীয় বৃহত্তম ঘাতক হিসেবে চিহ্নিত করে। বিশ্বখ্যাত সায়েন্স ডেইলিতে প্রকাশিত 'গ্গ্নোবাল ওয়ার্মিং লাইকলি টু ইনক্রিস স্টর্মি ওয়েদার, স্পেশালি ইন সার্টেন ইউএস লোকেশন' শীর্ষক পারডু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে আবহাওয়া অনুকূল হবে, না তীব্র ঝড়বৃষ্টির মধ্যে প্রতিকূল হবে, তা বজ্রপাতের ধরনের ওপর নির্ভর করে।
বাংলাদেশে বজ্রপাতে সাম্প্রতিককালে মৃত্যুর ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। এক সেমিনারে তিনি বলেছিলেন, 'রাজনীতিবিদরা মানুষকে মানুষ নয়, ভোটার মনে করি। রাজনীতিবিদরা যদি মনে করেন, আমার ভোটার মারা যাচ্ছে তখন হয়তো বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যুর ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে।' তবে ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল হক সমকালকে বলেন, প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই বজ্রপাত হয়। এটা নিয়ে ঘাবড়ে যাওয়ার মতো কিছু নেই। তিনি জানান, বজ্রপাত নিয়ে অধিদফতরে কোনো গবেষণা বা প্রকল্প নেই। আবহাওয়া অধিদফতরের ঝড় পূর্বাভাস কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক ফারাহ দীবা সমকালকে বলেন, বাংলাদেশে যে দুটি মৌসুমে বজ্রপাত বেশি হয়, এর একটি হলো প্রাইমারি সামার (এপ্রিল থেকে মে)। এ সময় ভার্টিক্যাল ক্লাউড বা স্তম্ভ মেঘ থাকে বলে বজ্রপাত আর কালবৈশাখী হয়। বজ্রপাতে প্রতি বছর গড়ে দুই-তিনশ' মানুষের প্রাণহানি হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, বজ্রপাত নিয়ে আমাদের অধিদফতরে কোনো জরিপ বা গবেষণা নেই। আমরা শুধু বজ্রপাতে মৃত্যুর পরিসংখ্যান সংগ্রহ করে থাকি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রের গবেষণা কর্মকর্তা উম্মে হাবিবা সমকালকে জানান, বজ্রপাত নিয়ে তাদেরও কোনো গবেষণা নেই।
Click This Link
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বজ্রপাতের কারণ ও ফলাফল সংক্রান্ত কোনো গবেষণা হয়নি। তবে সম্প্রতি বজ্রপাতে মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, 'মোবাইল ফোন ব্যবহার মানুষের ওপর বজ্রপাতের আশঙ্কা বাড়ায়। বজ্রপাতের সময় মোবাইল ফোন বা ইলেকট্রনিক্স ব্যবহার খুবই বিপজ্জনক। একজন মানুষের সঙ্গে যখন সচল মোবাইল বা ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি থাকে, তখন তা একটি সার্কিট হয়ে যায়। ওই সার্কিটের মধ্য দিয়ে বজ্রপাতের বিদ্যুৎ প্রবাহ ভেতরে প্রবেশ করে।' বজ্রপাত বিষয়ে কোনো গবেষণা নেই বলে জানিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ। পরিবেশ অধিদফতরের হিসাব :বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর বাতাসে কার্বনের পরিমাণ চার শতাংশের বেশি বেড়েছে গত কয়েক বছরে। বাতাসে ধূলিকণার মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ২০০ মাইক্রোগ্রামকে সহনীয় পর্যায়ে ধরা হলেও সেখানে রাজধানীর এলাকাভেদে বাতাসে এ ধরনের উপাদান প্রতি ঘনমিটারে ৬৬৫ থেকে দুই হাজার ৪৫৬ মাইক্রোগ্রাম বা তারও বেশি পরিমাণ পাওয়া গেছে। বজ্রপাতের পরপরই ট্রপোস্টিম্ফয়ার বা বায়ুমণ্ডলে সবচেয়ে নিচের স্তরে নাইট্রোজেন অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ে। কার্বন ডাইঅক্সাইড বা কার্বন মনো-অক্সাইডের চেয়ে বেশি বিষাক্ত নাইট্রোজেন অক্সাইড রূপান্তরিত হয়ে তা রীতিমতো পরিণত হয় ওজোন গ্যাসে। এ গ্যাস বাতাসের এমন একটি স্থানে ভেসে বেড়ায়, যার ফলে দিন দিন বেড়েই চলেছে বায়ুদূষণের মাত্রা।
বজ্রপাতে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচার কৌশলঃ
বিশিষ্ট আবহাওয়াবিদ ড. সমরেন্দ্র কর্মকার জানান, বজ্রপাতের হাত থেকে বাঁচার কৌশল বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে মৃত্যুর সংখ্যা কমানো সম্ভব। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশে প্রবেশের আগে কালবৈশাখী ঝড় শুরু হয়। সাধারণত মার্চ থেকে শুরু করে মে পর্যন্ত চলে এ ঝড়। আগেরদিনে গ্রামের মানুষ বলত বৈশাখ মাসের ১২ তারিখ থেকে জ্যৈষ্ঠ মাসের ১৩ তারিখের মধ্যে বেশি কালবৈশাখী ঝড় হয়ে থাকে। কালবৈশাখী ঝড়ের সময় বেশি বজ্রপাত ঘটে এবং মানুষ বেশি মারা যায়। আবহাওয়া বিজ্ঞানে বলা হয়, গ্রীষ্মকালে দিনের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে বাতাস গরম হয়ে উপরে উঠতে থাকে। জলীয়বাষ্পও উপরে উঠে আর মেঘের ভিতর যত বেশি পরিমাণে জলীয়বাষ্প ঢুকবে তত বেশি উলম্ব মেঘের সৃষ্টি হবে। এ সময় ‘আপ ড্রাফ’ এবং ‘ডাউন ড্রাফ’ বাতাসে চলতে থাকে। একে বলা হয় বজ্রমেঘ। মেঘের উপরের অংশে পজেটিভ এবং নিচের ও মধ্য অংশে নেগেটিভ বিদ্যুত্ তৈরি হয়। পজেটিভ ও নেগেটিভ মেঘের ভিতরের বিদ্যুত্ আধারে দূরত্ব বেড়ে গেলে প্রকৃতির নিয়মে ভারসাম্য আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়। পজেটিভ ও নেগেটিভ মেঘ থেকে বিদ্যুত্ আদান-প্রদান শুরু হয়। পজেটিভ ও নেগেটিভ বিদ্যুত্ সঞ্চালন শুরু হলে বজ্রের সৃষ্টি হয়। আর তখনই বজ্রপাত হতে থাকে। পজেটিভ ও নেগেটিভ মেঘ একত্র হলে বিদ্যুত্ সঞ্চালনের ফলে বাতাসের তাপমাত্রা ২০ হাজার ডিগ্রি থেকে ৩০ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়ে থাকে। মেঘের ভিতর থাকা নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন গ্যাসের সমপ্রসারণ ঘটে। গ্যাসের কম্পনের ফলে মেঘের গর্জন সৃষ্টি হয়। বজ্র সৃষ্টি হয়ে তা পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়ার প্রক্রিয়াটিও বেশ জটিল বলে জানান ড. সমন্দ্রে কর্মকার। বজ্রপাতে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাও খুবই কঠিন। তবে সতর্ক হলে মৃত্যুর সংখ্যা কমানো যেতে পারে বলে তিনি জানান।
মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশে প্রবেশের আগ মুহূর্তে ঘন কালো মেঘ দেখলেই সাবধান হতে হবে। গুরগুর মেঘের ডাক শুনলেই নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে হবে। পাকা বাড়িতে আশ্রয় বেশি নিরাপদ। গাড়ির ভিতরও আশ্রয় নেয়া যেতে পারে। গাছের নিচে, টেলিফোনের খুঁটির পাশে বা বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনের খাম্বার পাশে দাঁড়ানো মোটেই নিরাপদ নয়। ফাঁকা মাঠের মধ্যে অবস্থান সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক বলে তিনি জানান। পানির সংস্পর্শে মোটেই যাওয়া যাবে না। মার্চ থেকে এপ্রিল মাসে কালবৈশাখী দুপুরের পরে হয়ে থাকে। এরপর মে’র শেষ পর্যন্ত সকালেও হয়ে থাকে। পশ্চিম, দক্ষিণ-পশ্চিম, উত্তর-পশ্চিম এবং উত্তর আকাশে মেঘের গুরগুর গর্জন শুরু হলে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে হবে। পূর্ব, উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব আকাশে বিদ্যুত্ চমকালে বজ্রপাতে মৃত্যুর আশংকা কম থাকে। আর বৃষ্টি ও মেঘের গর্জন না থামা পর্যন্ত নিরাপদে থাকা বাঞ্ছনীয় বলে জানান ড. কর্মকার। বজ্রপাতের আওয়াজ শোনার আগেই তা মাটি স্পর্শ করে। সোজাসুজি মানুষের গায়ে পড়লে মৃত্যু অবধারিত। বজ্রপাতে আহত ব্যক্তিকে স্পর্শ করাও বিপজ্জনক। শুকনা কাঠ দিয়ে ধাক্কা দিতে হবে। তিনি জানান, বজ্রপাতের সম্ভাবনা আবহাওয়া বিভাগের রাডারে ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘নাউকাস্টনিং’ পদ্ধতিতে মিডিয়াতে প্রচার করতে হবে, যাতে মানুষ নিরাপদ স্থানে যেতে পারে। এতে বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যুহার কমানো সম্ভব। ঝড়ের পূর্বাভাস দেখলে কখনো খোলা মাঠ, পাহাড়ের চূড়া, সমুদ্রসৈকতে অবস্থান করবেন না। গাছের নিচে, বিদ্যুতের খুঁটি বা তারের নিচে, পুরনো-জীর্ণ বাড়ির নিচে অবস্থান করবেন না। চলন্ত অবস্থায় রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়ে গাড়িতে অবস্থান করুন। কোনো কর্ডযুক্ত ফোন ব্যবহার করবেন না। মাটির সঙ্গে সংযু্ক্ত ধাতব পদার্থে হাত বা হেলান দিয়ে দাঁড়াবেন না। বৈদ্যুতিক সংযোগযুক্ত পানির ফোয়ারায় গোসল করবেন না। মরা কিংবা পচন ধরা গাছ ও খুঁটি কেটে ফেলুন। বাসা, অফিস কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বের হলে বিদ্যুতে সব সুইচ বন্ধ রাখুন, দরজা-জানালা ভালোমতো বন্ধ রাখুন। এ সময় সর্তক করার আরেকটি কারণ হচ্ছে, এপ্রিল, মে, জুন, এ তিন মাস আমাদের দেশে হঠাৎ ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কা বেশি থাকে। সবাই সচেতন হই, নিরাপদ থাকি, এটিই প্রত্যাশা।
সূত্রঃ ইণ্টারন্যাশনাল ফোরাম অন টনর্নেডো ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন ফর বাংলাদেশ
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০২