পরমাত্মীয় পৃষ্টা ২৬-২৮
‘ম্যাদার সাথে আমরা খেলি না। যা ভাগ।’ বলে যূথী মুখ ভেংচিয়ে চলে যাওয়ার জন্য হাত দিয়ে ইশারা করে। যূথীর ব্যঙ্গবিদ্রূপে রেগে ক্ষিপ্ত হয়ে কিছু করতে না পেরে সাইদার বুকে ধাক্কা মেরে কিশোর দৌড়ে পালায়। যূথী ব্যতিব্যস্ত হয়ে খোঁজাখুঁজি করে ঠ্যাঙা হাতে নিয়ে কপাল কুঁচকে বলল, ‘আবার আসলে ঠ্যাঙা দিয়ে ঠ্যাঙিয়ে ল্যাংড়া করব। ওই, বাখান দিলাম আমি তোর বুকে ধাক্কা মারল কেন?’
‘আমি জানি না।’ সাইদা ঠোঁট উলটিয়ে কাঁধ বাঁকিয়ে বলে খেলতে শুরু করে। যূথী ঠ্যাঙায় ভর দিয়ে এদিক-ওদিক তাকায়। কিশোর গাছের আড়ালে লুকিয়ে বানরের মত মুখ বাড়িয়ে দেখে। আচকা কোঁদা দিয়ে যূথী বলল, ‘ওরে ওড়ম্বা, বাগে পেলে তোকে আমি ধুম্বা বানাব রে।’
‘আম্মা গো আমারে বাঁচাও?’ বলে কিশোর দৌড়ে ঘরের ভিতর চলে যায়। সাইদা মুখ ভেংচিয়ে হেসে কুটিপাটি হয়ে বলে, ‘ফুফুর পুত, অবলার রূপ দেখেছ তুমি রোষ দেখনি।’
‘এই চোট্টাকে চৌহদ্দিতে ঢুকতে দিস কেন? আমার বাড়ি চল।’ বলে যূথী মাথা দিয়ে ইশারা করে। সাইদা দাঁত কটমট করে বলল, ‘একমাত্র ফুফুর একমাত্র পুত এবং দাদা দাদি নেই তাই আদর করে মারি না, নইলে মুগুর মেরে ল্যাংড়া করতাম।’
‘আমার বুকে ধাক্কা মারলে ওকে আমি জানে মেরে ফেলতাম। দেখ দেখ, কেমন লকলক করে তাকাচ্ছে? দাঁড়া, আজ তোর একদিন কী আমার একদিন।’ বলে যূথী কোঁদা দিলে সাইদা ওর হাত ধরে বলল, ‘যূথী বাদ দে। ম্যাদাকে দেখলে আমার লোমোদগম হয়। চল, পড়তে বসি যেয়ে।’
‘হ্যাঁ চল, বাড়ির কাজ করি যেয়ে নইলে হাতের তালুতে জালিবেত পড়বে।’ বলে যূথী ঠ্যাঙা ছুড়ে ফেলে দৌড়ে যেয়ে পড়তে বসে। রাহীম তখন ছোট চাচার বাড়ি যায়। চাচির বিয়োগব্যথায় চাচা অত্যন্ত মর্মাহত। দাদা দাদি চা পান করছিলেন। উনাদের পাশে যেয়ে চাচার দিকে তাকিয় রাহীম বলল, ‘চাচাজান, বাড়ি চলুন।’
‘আমি এখন একলা থাকতে চাই।’
‘কেন?’
‘তোর মা চাচি খামোখা আমার সাথে ঝগড়া করেন।’
‘আর ঝগড়া করবেন না।’
‘ঠিকাছে পরে যাব, এখন আমার সাথে চল বাজারে যেতে হবে।’ বলে চাচা মাথা দিয়ে ইশারা করে কপাল কুঁচকে বললেন, ‘তুই যে আমার বাড়ি এসেছি তা কি রাশিদা জানে?’
‘ইস, আমার মনেই নেই, কাল ওকে জানিয়ে আসব।’
‘আম্মা, নাস্তার জন্য কী আনব, আব্বা আপনার কিছু লাগবে?’
দাদি মাথা নেড়ে বুক কাঁপিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, ‘আসার সময় রাশিদাকে সাথে আনিস নইলে মাতিন ওকে নিয়ে আসবে।’
‘আম্মা, আমি এখন কী করব?’ বলে চাচা কপট হাসলে, দাদা মাথা নেড়ে বললেন, ‘তোমরা বাজারে যাও আমরা বাড়ি চলে যাব।’
‘জি আচ্ছা আব্বা।’ বলে চাচা রাহীমকে নিয়ে বাজারে চলে যান। রাতের খাবার খেয়ে ছোট চাচাকে ডেকে দাদি কামরায় যান। চাচা যেয়ে পাশে বসলে গম্ভীরকণ্ঠে দাদি বললেন, ‘হাবিবের বিয়ের বয়স হয়েছে। লুকমানের মেয়েকে দেখার জন্য গিয়েছিলাম। খুব যত্নআত্তি করেছিল। অত্যন্ত শান্তশিষ্ট এবং হাস্যমুখে কথা বলে। হাবিবের সাথে মানাবে। আমার পছন্দ হয়েছে। তোর মতামত কী?’
‘আপনার পছন্দ হলে নিশ্চয় হাবিবের পছন্দ হবে।’
‘তোর মতামত জানতে চেয়েছিলাম।’
‘আম্মা, আপনার পছন্দে আমাদের পছন্দ। আপনি বললে এখুনি আকদ করাব।’
‘তোর সাথে কথা বলে আমি আশ্বস্ত হয়েছি। এখন ঘুমা যেয়ে।’ বলে দাদি মাথা দিয়ে ইশারা করেন। চাচা বেরিয়ে গেলে দাদি শুয়ে পড়েন। মাস ছয়েক পর একচল্লিশ দিনের ব্যবধানে দাদা দাদির মৃত্যু হলে বাড়ির পরিবেশ অস্বাভাবীক হয়। সবার মন বেজার। প্রয়োজন ছাড়া কারো সাথে কেউ কথা বলে না। হঠাৎ একদিন বাড়িতে ঘটক আসলে ছোট চাচা ধমকে বললেন, ‘ওই, আমাদের বাড়ি এসেছিস কেন?’
ঘটক সভয়ে বলল, ‘আপনার ভাতিজার জন্য পাত্রী খুঁজে পেয়েছি।’
‘আমার ভাতিজার জন্য পাত্রী খুঁজতে হবে না। আমার আম্মার পছন্দের পাত্রীর নামধাম আমি জানি। যা ভাগ।’ বলে চাচা হাত দিয়ে ইশারা করলে ঘটক চলে যায়। রাহীমের বাবা ডেকে বললেন, ‘আরকান, এদিকে আয়।’
চাচা পাশে গেলে চিন্তিতকণ্ঠে রাহীমের বাবা বললেন, ‘আম্মার পছন্দের পাত্রীর নামধাম আমাকে বল।’
‘লুকমান ভাইর একমাত্র মেয়ের নাম সুফিয়া।’ বলে ছোট চাচা ডানে বাঁয়ে তাকালে সানন্দে হেসে রাহীমের বাবা বললেন, ‘আমাদের দুর্দশা দূর হয়েছে।’
‘স্যত্যি ভাইজান?’
রাহীমের বাবা মাথা দুলিয়ে বললেন, ‘হ্যাঁ, বিয়ের আয়োজন কর। ভাইজান কোথায়? লুকমান ভাইর সাথে এখুনি দেখা করব। রাতে বিয়ে হবে।’
‘জি ভাইজান।’ বলে ছোট চাচা আনন্দোত্তেজিত হয়ে রাহীম এবং মাস্টরকে ডেকে ব্যস্ত হন। ছোট দাদা এবং বড় চাচাকে নিয়ে রাহীমের বাবা বেরিয়ে যান। মহোৎসবে রাতে বিয়ে হয়। সকালে কামরা থেকে বেরিয়ে সুফিয়া অস্বস্তিবোধ করলে ছোট দাদি পাশে যেয়ে মাথা দিয়ে ইশারা করে বললেন, ‘কী হয়েছে, টুনির মত ছোটফট করছিস কেন?’
‘কী করব আমি জানি না। বুকের ভিতর আনচান আনচান করছে।’ বলে সুফিয়া হতাশ হলে ছোট দাদি সানন্দে হেসে হাত ধরে পাকঘরের দিকে হাঁটতে শুরু করে বললেন, ‘বেশি চুলবুলে হলে চুলাচুলি হবে।’
সুফিয়া চমকে উঠলে বুক ভরে শ্বাস টেনে পাকঘরে প্রবেশ করে মুখের দিকে তাকিয়ে ছোট দাদি বললেন, ‘চা বানাতে পারিস?’
‘জি দাদি, চা বানাতে পারি।’
‘সবার জন্য চা বানা বাকি সব আমি সামলাব।’ বলে দাদি ব্যস্ত হন। রাহীমের মা এবং হাবিবের মা পাকঘরে প্রবেশ করে একসাথে বললেন, ‘চাচি আম্মা, বউমাকে দিয়ে এসব করাচ্ছেন কেন?’
ছোট দাদি গম্ভীরকণ্ঠে বললেন, ‘সংসারে সুখশান্তি ফিরিয়ে আনতে হলে তোমাদের আদুরে বউকে দিয়ে সব কাজ করাতে হবে। এই, চা হয়েছে?’
‘জি দাদি হয়েছে। এখন কী করব?’
‘বউমা, তোমরা চা নাস্ত খাও আমরা সবার সাথে খাব। নাতিবউ, আমার সাথে আয়।’ বলে ছোট দাদি পরোটা এবং তরকারির কটরা হাতে দ্রুত চলে যান। কাপ এবং কেতলি হাতে সুফিয়া উনাকে অনুসরণ করে। রাহীমের মা এবং হাবিবের মা দু হাতে মাথা চেপে ধরে মেঝেতে বসে হায় হায় করেন। ছোট চাচা দৌড়ে যেয়ে ব্যস্তকণ্ঠে বললেন, ‘বড়-ভাবী, চাচি কী শুরু করেছেন?’
‘আমি জানি না, ওকে জিজ্ঞেস কর।’
‘আজ উত্তম মধ্যম হতে পারে গো ভাবী।’ বলে চাচা রাহীমের মা’র পাশে ধপাস করে বসেন।
‘আরকান, এদিকে আয়।’ রাহীমের বাবা হেঁকে বললে চাচা শিউরে বললেন, ‘ভাবী গো, চাচিকে আমি কুবুদ্ধি দেইনি, তাইলে ভাইজান আমাকে ডেকেছেন কেন?’
‘আজ তোকে দুরমুশ করে মনের ঝাল ঝাড়বে। ত্বরে যা, নইলে মুগুর মারার জন্য পাকঘরে আসবে।’ বলে হাবিবের মা কপালে আঘাত করলে, রাহীমের মা শিউরে বললেন, ‘কালঘুম ভাঙতে আজ কেন যে এত দেরি হয়েছিল। আজ আমাকেও দু চারটা দেবেন।’
রাহীমের বাবা পরোটা হাতে পাকঘরে গেলে তিনজন একসাথে ঝম্পে উঠেন। রাহীমের বাবা বাজুতে অশ্রু মুছে পরোটায় কামড় দিয়ে বললেন, ‘পরোটা খা। আম্মা যেমন বানাতেন এক্কেবারে তেমন হয়েছে।’
‘ভাইজান, কী হয়েছে?’
‘আমি আর আম্মার জন্য কাঁদব না তুইও কাঁদিস না। নে খা।’ বলে রাহীমের বাবা পরোটা দিয়ে চলে যান। রাহীমের মা হাঁপ ছেড়ে বললেন, ‘আমি ভেবেছিলাম আমার গর্দান নেওয়ার জন্য এসেছিলেন গো ভাবী।’
‘তুই থাম, আমি ভেবেছিলাম আমার মুণ্ডু দিয়ে নগরঘণ্ট খাওয়ার জন্য এসেছিল।’ বলে হাবিবের মা মাথা নাড়লে, চাচা চোখ বুজে শিউরে বললেন, ‘আমি ভেবেছিলাম আমার ওস্তাদের নামধাম জানার জন্য এসেছিলেন গো ভাবী।’
‘তোর ওস্তাদের দাদা ওস্তাদের নামধাম জানে। একমাত্র আম্মার ভয়ে ঠগের বারোটা বাজায়নি, নইলে মুণ্ডু দিয়ে সেই কবে খঞ্জনি বানাত। বউলার শাগরেদ বাউরা, দূরে সরে বস। তোর গতর ঘেঁষে বাতাস লাগলে বাউলানি হব।’ বলে হাবিবের মা নড়েচড়ে বসেন।
‘বাউলানির বিরহে বাউল হয়েছি আমি বাউলানির খুঁজে দিশাহারা।’ বলে চাচা মাথা দুলিয়ে কলসিকে ঢুলের মত বাজালে হাবিবের মা দাঁত কটমট বললেন, ‘ওই মুখ বন্ধ কর। তোর গান শুনলে চুলকানি শুরু হয়।’
এমন সময় রাহীম পাকঘরে প্রবেশ করে চাচার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘চাচাজান, কী হয়েছে?’
‘নাস্তা খেয়েছিস? আয়, আমার পাশে বস।’ বলে চাচা হাত প্রসারিত করেন। রাহীম উনার পাশে বসে। চাচা তার হাতে অর্ধেক পরোটা দিলে পরোটায় কাম দিতে চেয়ে তিন ভাগ করে মা এবং চাচির দিকে এগিয়ে দেয়। হাবিবের মা মৃদু হেসে হাতে নিয়ে বললেন, ‘আজ কলেজে যেতে হবে না, বাড়িতে অনেক কাজ আছে।’
‘জি চাচিজান।’ বলে রাহীম আনন্দোত্তেজিত হয়। রাহীমের মা চা নিয়ে ব্যস্ত হন। ছোট দাদি এবং সুফিয়া পাকঘরে ফিরলে অবাককণ্ঠে রাহীম বলল, ‘বড়ুইর চাটনি খাওয়ার জন্য এসেছ নাকি?’
সুফিয়া শিউরে বলল, ‘জি না।’
‘বউমা, রাহীমকে তুমি নাম ধরে ডাকবে। রাহীম, তোর চাচাকে জিজ্ঞস কর যেয়ে আর কিছু লাগবে কি না?’
এই বই দুই খন্ডে আমাজনে প্রকাশ করেছি
Poromatthio: Volume 1 (Bengali) Paperback – 21 Jun 2016
by Mohammed Abdulhaque (Author)
Product details
Paperback: 596 pages
First edition (21 Jun. 2016)
Language: Bengali
ISBN-10: 1534824596
ISBN-13: 978-1534824591
Product Dimensions: 12.7 x 3.4 x 20.3 cm
এক সাথে পড়তে চাইলে আমাজন থেকে কিনতে পারবেন
অথবা অনলাইন পড়তে চাইলে আমার সাইটে আছে
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০১৭ বিকাল ৫:৩৬