somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরমাত্মীয় (পৃষ্টা ২-৩)

০৫ ই মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ওরা যখন কথা বলে অনুশিষ্যরা তখন মাসুমের লাশ গাঙে ফেলে দেয়। বিত্রস্ত মালীহা শিষ্যের হাত ধরে হাঁটতে শুরু করে। মায়াবনের প্রবেশপথে প্রবীণ লোককে দেখে মালীহা চিৎকার করে বলল, ‘বাবা, আমাকে বাঁচাও।’
উনি অগ্রসর হলে মারণমন্ত্রে শৌভিক বাণ মারে এবং অনুশিষ্যরা উনাকে আক্রমণ করে। তা দেখে শিষ্য হতাশ হয়। একজনের হাত থেকে লাঠি কেড়ে পালটা আক্রমণ করলে ওরা দৌড়ে পালায় এবং মন্ত্রবাণ বাতাসে অদৃশ্য হলে বিস্মিতকণ্ঠে শিষ্য বলল, ‘শৌভিকের বাণ নাশ করলেন কেমনে?’
‘বিশ্বাসের জোরে। এদের খপ্পরে পড়েছ কেন? চলো, ওকে বাড়ি পৌঁছে দেব।’ বলে উনি হাত প্রসারিত করেন। মালীহা দৌড়ে যেয়ে দুহাতে উনার হাত ধরে হাঁটতে শুরু করে। মাথা নেড়ে পিছু হেঁটে শিষ্য বলল, ‘খপুষ্প দেখতে চেয়ে আমি খচ্চরের খপ্পরে পড়েছি।’
উনি কথা না বলে দ্রুত হেঁটে চলে যান। শিষ্য মায়াবনে প্রবেশ করলে শৌভিক গর্জে বলল, ‘খালি হাতে এসেছিস কেন?’
‘বাবাপির বাধা দিয়েছিলেন।’
‘ভড়ং ভক্কি আমি বুঝি না। যা, কলেকৌশলে ওকে নিয়ে আয় নইলে তোর কলিজা চিবিয়ে খাব।’ বলে শৌভিক শিষ্যের বুকে ধাক্কা মারে। নিজেকে সামলিয়ে শিষ্য বলল, ‘পাকেপ্রকারে আনতে গেলে বিপাকে পড়ব। আমি স্বচক্ষে দেখেছি আঙুলের ইশারায় মন্ত্রবাণ নাশ করেছিলেন। আত্মিক এবং দৈহিকবলে উনি বলীয়ান। উনার সাথে টক্কর দিলে মারাত্মক ভুল হবে।’
‘ভুল-টুল আমি বুঝি না। আমি অমর হতে চাই। আকাশে তাকিয়ে দেখ, নতুন চাঁদ জন্মছে। ষষ্ঠী তিথিতে ভূতপূর্ণিমা শুরু হবে। প্যাঁচায় উপোস ভাঙার আগে মন্ত্রামৃত পান করতে হবে। যা, সত্বর ওকে নিয়ে আয়।’ বলে শৌভিক তর্জনগর্জন করলে শিষ্যরা বেরোয়। অন্যরা নন্দিরগাঁওর দিকে যায়। শিষ্য দিগন্তরপুরের দিকে হাঁটতে শুরু করে প্রবীণ লোককে দেখে দৌড়ে যেয়ে সালাম করে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, ‘বাবা, জাদু শিখতে চেয়ে আমি মহাপাপ করেছি। আমাকে উপদেশ করুন নইলে বেঈমান হয়ে মরব।’
‘পাপ করলে তওবা করতে হয়। ভুল করলে শুদ্ধ করতে হয়। আত্মশুদ্ধির জন্য সাধনা করতে হয়। কী করতে চাও?’
‘আত্মশুদ্ধি করতে চাই। মালীহাকে আমি ভালোবাসি। ওর মন জয় করতে চেয়ে আমি বিভ্রান্ত হয়েছি। ওরা ওকে মেরে ফেলবে।’
‘আত্মা এবং মৃত্যুকে মানুষ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।’
‘আপনি নিশ্চয় জানেন সে অমর হতে চায়। মালীহার রক্তে মন্ত্রামৃত বানাবার জন্য সে বেপরোয়া হয়েছে।’
‘তা আমি জানি। এখন একমাত্র তুমি তাকে উচিত শিক্ষা দিতে পারবে।’
‘মন্ত্রবলে সে আমাকে নিয়ন্ত্রণ করে। চাইলেও আমি কিছু করতে পারি না।’
‘তুমি কী করতে পারো তা তুমি জান না। রক্ত কুম্ভে ভরার সময় একমাত্র তুমি তা বিষাক্ত করতে পারবে।’
‘মরণপণ করে হলেও আমি তা করব। কী করতে হবে?’
‘রক্তে খাঁটি মধু মিশাতে হবে।’ বলে তার মাথা বুকে হাত বুলিয়ে সালাম করে উনি চলে যান। সালামের জবাব দিয়ে সে বুক ভরে শ্বাস টেনে দৌড়ে মালীহার বাড়ি যায়। উঠানে কয়েক শিষ্যের লাশ। ঘরে ঢুকে মা বাবার লাশ দেখে তার আক্কেল গুড়ুম হয়। মালীহার হাতে বন্দুক। ভয়ে থরহরি করছে দেখে অভয় দিয়ে শিষ্য বলল, ‘আমাকে সাহায্য কর। আমি তোর ক্ষতি করব না। আমাকে গুলি করলে ওরা তোকে মেরে ফেলবে। আমাকে বিশ্বাস করলে আমাদের মঙ্গল হবে।’
অন্যরা অগ্রসর হলে মালীহা ট্রিগার টানে। ফাঁকা শব্দ হলে শিষ্য দৌড়ে যেয়ে গম্ভীরকণ্ঠে বলল, ‘আমাকে বিশ্বাস কর। আমি তোকে ভালোবাসি। আমার সাথে চল।’
আরেক শিষ্য চোখ পাকিয়ে বলল, ‘দূরে থাক, আমি তোকে বিশ্বাস করি না।’
‘চোপ।’ বলে শিষ্য মালীহার হাত ধরে ঘর থেকে বেরিয়ে ডানে বাঁয়ে তাকিয়ে মৌচাক দেখে ব্যস্তকণ্ঠে বলল, ‘আমার সাথে আয়।’
দৌড়ে মালীহা তাকে অনুসরণ করে। শিষ্য গাছে উঠে মৌচাকে টুসি মেরে লাফ দিয়ে নেমে ডান হাতে মালীহার বাম হাত ধরে দ্রুত হেঁটে শৌভিকের সামনে যায়। মালীহাকে দেখে আলুদোষী শৌভিক আনন্দোত্তেজিত হয়ে যুগপৎ শুরু করলে অপলকদৃষ্টে তাকিয়ে শান্তকণ্ঠে শিষ্য বলল, ‘অক্ষতের রক্তে মন্ত্রামৃত হয়।’
কথা না বলে শৌভিক তেগ দিয়ে মালীহার বাম হাতের কবজি কেটে স্রাবিত রক্ত কুম্ভে ভরে এবং কোষবদ্ধ তেগ টেবিলের উপর রেখে দু হাতে কুম্ভ ধরে মহানন্দে পান করে কম্পিকণ্ঠে বলল, ‘বিশ্বাসঘাতক হলে কেন?’
‘আমি মন্ত্রসিদ্ধ হতে চে‌য়েছিলাম। মন্ত্রে নিয়ন্ত্রণ করে আমার ভালোবাসাকে হত্যা করতে চেয়েছিস। তোর শ্রম সাধনা পণ্ড করেছি।’ বলে শিষ্য পলকে তেগ হাতে নিলে ক্ষুব্ধকণ্ঠে শৌভিক বলল, ‘তেগ ফিরিয়ে দে নইলে তোর সর্বনাশ করব।’
‘তোরা আমার যথেষ্ট অনিষ্ট করেছি। আজ আজি ভোজবাজির ভুষ্টিনাশ করব। গুরুমন্ত্রের জন্য তুই দরদিবাড়ির দরদিয়াকে হত্যা করেছিলে।’
‘হ্যাঁ, গুরু বেঘোরে মরেছিল। তোকে আমি চরকির মত ঘুরিয়ে মারব।’
‘আমার উরে আয়, আমি তোকে রৌরব দেখাব।’ বলে শিষ্য হাতের ইশারায় ডাকে। আক্রমণ না করে শৌভিক মন্ত্র জপতে শুরু করলে দুজন অদৃশ্য হয়। অন্যরা দৌড়ে পালায় এবং ডান হাতে বাঁ হাত ধরে মালীহা ভয়ে কাঁপতে শুরু করলে শিষ্য বলল, ‘মালীহা, বাড়ি ফিরে যা।’
‘আমি তোমাকে দেখতে পাচ্ছি না। সত্যি আমার ভয় হচ্ছে।’
‘তুই নির্ভয়ে যা।’
কথা না বলে মালীহা যখন হাঁটতে শুরু করে, প্রবীণ লোক তখন এশার নমাজ পড়ে মসজিদ থেকে বেরিয়ে হাঁটাহাঁটি করেন। উনাকে ডেকে শিষ্য বলল, ‘বাবা, আপনার উপদেশমতো রক্তে মধু মিশিয়েছিলাম। মালীহা বলেছে আমি নাকি অদৃশ্য হয়েছি?’
‘অবিশ্বাস্য হলেও তুমি অদৃশ্য হয়েছ। তোমার উপস্থিতি আমি অনুভব করতে পারিনি। তুমি চাইলে অকল্পনীয় অপকর্ম করতে পারবে। মনে থাকে যেন, প্রতিহিংসা প্রতিহার্য। অন্যকে কষ্ট দিলে পাপ হয়। অন্যের অনিষ্ট করলে আত্মা অতুষ্ট হয়।’
‘আমি জানি আপনি দীর্ঘতপা এবং দূরদর্শী। উপদেশ করলে উপকৃত হব। আমাকে উপদেশ করুন।’
‘আল্লাহ বলেছেন, শপথ নফসের এবং তাঁর, যিনি তাকে সুঠাম করেছেন, অতঃপর তাকে তার অসৎকর্ম ও তার সৎকর্মের জ্ঞান দান করেছেন, অবশ্যই সে সফলকাম হবে যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করবে। এবং নিশ্চয় সে ব্যর্থ হবে, যে নিজেকে কলুষিত করবে।’
‘আমি পরিশুদ্ধ হতে চাই। দৃশ্যমান কীভাবে হব?’
‘মন্ত্রশক্তি নষ্ট করার জন্য তাকে হত্যা করতে হবে। আমরা তাকে হত্যা করতে পারব না। তার তেগে জাদুশক্তি আছে।’
‘তেগ এখন আমার হাতে।’
‘নিশ্চয় কোষবদ্ধ?’


এই বই দুই খন্ডে আমাজনে প্রকাশ করেছি
Poromatthio: Volume 1 (Bengali) Paperback – 21 Jun 2016
by Mohammed Abdulhaque (Author)
Product details
Paperback: 596 pages
First edition (21 Jun. 2016)
Language: Bengali
ISBN-10: 1534824596
ISBN-13: 978-1534824591
Product Dimensions: 12.7 x 3.4 x 20.3 cm

এক সাথে পড়তে চাইলে আমাজন থেকে কিনতে পারবেন

অথবা অনলাইন পড়তে চাইলে আমার সাইটে আছে

এখানে বিজ্ঞাপন দিচ্ছিনা, কারো কাছে বিজ্ঞাপন মনে বলবেন, পোস্ট ডিলিট করব।

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২৪
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবি কখনো কখনো কিছু ইঙ্গিত দেয়!

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৭



গতকাল ভারতীয় সেনাপ্রধানের সাথে বাংলাদেশ সেনাপ্রধান এর ভার্চুয়ালি কথা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের অফিসায়াল এক্স পোস্টে এই ছবি পোস্ট করে জানিয়েছে।

ভারতীয় সেনাপ্রধানের পিছনে একটা ছবি ছিল ১৯৭১ সালের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রথম আলু

লিখেছেন স্নিগ্দ্ধ মুগ্দ্ধতা, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



লতিফপুরের মতি পাগল
সকালবেলা উঠে
পৌঁছে গেল বাঁশবাগানে
বদনা নিয়ে ছুটে



ঘাঁড় গুঁজে সে আড় চোখেতে
নিচ্ছিল কাজ সেরে
পাশের বাড়ির লালু বলদ
হঠাৎ এলো তেড়ে




লাল বদনা দেখে লালুর
মেজাজ গেল চড়ে।
আসলো ছুটে যেমন পুলিশ
জঙ্গী দমন করে!





মতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×