"পরমাত্মীয়"
অধ্যাত্মতত্ত্বে তাত্ত্বিক হতে চেয়ে জেনেছি, আত্মা হলো আল্লাহর আদেশ। আত্মা এবং দেহের সমন্বয়ে সত্তা। সত্তায় আত্মা যোগ হলে জীব জীবন্ত হয়, আত্মা বিয়োগ হলে হয় জীবনান্ত। আত্মা অচিন্ত্য এবং অবিনশ্বর। পরমাত্মা এবং পরমাত্মীয়ের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করলে অত্যহিত হয়। আত্মা আমাদের জীবনীশক্তি। আত্মসাধনা এবং কায়সাধনায় সত্তা সংসিদ্ধ হলে দেহান্তে প্রশান্ত আত্মা স্বর্গে প্রত্যাবর্তন করে। তা প্রমাণসিদ্ধ এবং মৃত্যু অবধারিত জেনেও শৌভিকরা বিশ্বাস করে, তিথ্যমৃতযোগে কুমারীর রক্ত পান করলে অমর হতে পারবে। এমন এক শৌভিকের আবির্ভাব আউলিয়ার দেশে হয়েছিল। জাদুবলে মায়াবন বানিয়ে শবসাধনা করতো। ঐন্দ্রজালিক এবং সম্মোহনবিদ্যায় সে পারর্দশী ছিল। তার আহারবিহারে ভক্তরা বিত্রস্ত হলেও সে বিভ্রান্ত হত না। কানাকানি থেকে জানাজানি হলে গুরুমন্ত্র শিখতে যেয়ে যুবকরা নিয়ন্ত্রিত হতো। কোনোএক বৃহস্পতির বারবেলায় সূর্যগ্রহণের পূর্ণগ্রাস শুরু হলে, আকর্ষণশক্তিবিশিষ্ট তেগ কোষ থেকে বার করে শিষ্যদেরে দিকে তাকিয়ে বলল, ‘অবশ্যম্ভাবী, পূর্ণগ্রাসে পূর্বাভাস। আরাধ্যতিথিতে অমরত্ব লাভ করব।’
অপলকদৃষ্টে তার দিকে তাকিয়ে এক শিষ্য স্বগতোক্তি করে, ‘পঞ্চামৃতে অত্বর মুত্যু হয়। কদ্দিন আগে তুই নুন পান্তা খেয়েছিস। সত্বর মৃত্যু স্বাদ আস্বাদ করবে।’
হিংস্রদৃষ্টে তার দিকে তাকিয়ে শৌভিক বলল, ‘আমার সাথে চালবাজি করলে অকালমৃত্যু হবে। তোরা আমার চেলা। গুরুমারা বিদ্যা শিখে আমি দক্ষিণায় গুরুকে মৃত্যু উপহার দিয়েছিলাম। তোদেরকে বশ করে আমি নিরাপৎসু হয়েছি। স্বত্বর অমরত্ব উপভোগ করব। কেউ আমাকে স্পর্শ করতে পারবে না।’
নির্বাক শিষ্যরা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকালে শৌভিক চিৎকার করে বলল, ‘যা, নন্দিরগাঁওর নন্দিনীকে নিয়ে আয়। সুন্দরী আজ ষোড়শী হয়েছে। কালক্ষেপে কালান্তর হলে কালান্তক হবে।’
আদিষ্ট শিষ্যরা যখন ভয়ে আড়ষ্ট তখন মৌজার রাখালরা গরু নিয়ে নন্দিরগাঁওর গোঠে যায়। অন্যরা যখন রাখালি করে তখন মাসুম নামের রাখাল বটগাছে হেলান দিয়ে বসে বাঁশি বাজায়। মোহনসুরে সম্মোহিত হয়ে নন্দিরগাঁওর জমিদারের মেয়ে দৌড়ে বেরোলে মা চিৎকার করে ডাকেন, ‘মালীহা, দাঁড়া।’
পিছন ফিরে না তাকিয়ে মালীহা দৌড়ে বটতলে যেয়ে মাসুমের মুখোমুখি হয়ে বলল, ‘তোমার ভালোবাসার জন্য আমি নিরাকুল হয়েছি। বাঁশির সুর আমাকে বশ করেছে। ভালোবেসে আমাকে বিবশ করো।’
মাসুম পিছু হেঁটে হাসার চেষ্ট করে বলল, ‘আমি এক গরুরাখাল। রাখালি করার জন্য গরু নিয়ে গোঠে এসেছি। ঘাস খেয়ে গরুরা তাজা হলে আমার পাতে ভাত পড়বে।’
‘আমাকে ভালোবাসলে গোঠের গরু কিনে দেব।’
এমন সময় শিষ্য অনুশিষ্যরা তাদেরকে আক্রমণ করে এবং আঁধীঝড়ে পরিবেশ বিপর্যস্ত হয়। শিষ্য দৌড়ে যেয়ে মালীহার হাত ধরে মাসুমের দিকে তাকিয়ে ব্যস্তকণ্ঠে বলল, ‘দৌড়ে দিগন্তরপুর যা, চাইলেও আমি তোকে সাহায্য করতে পারব না।’
শিষ্যের দিকে তাকিয়ে মালীহা বলল, ‘তাকে সাহায্য করো নইলে অমঙ্গল হবে।’
‘আমি এখন নিয়ন্ত্রিত এবং ওরা আড়ে-হাতে লেগেছে। তোড়-জোড়ে লাভ হবে না। আড়ে-দিঘে দৌড়ালে আমাকেও মেরে ফেলবে। আমাকে বিশ্বাস কর, আমি তোকে সত্যি ভালোবাসি। তোর ভালোবাসার জন্য আমি ভেলকিবাজ হয়েছি। এখন জোরাজুরি করলে অঙ্গল হবে।’
২৫ বছরে এই উপন্যাস শেষ করে নিজে প্রকাশ করেছি। আজ দেখতে চাই ২৫ বছরে কী করলাম?
বইর প্রচ্ছদ বিজ্ঞাপন হলে এবার হয়তো আমাকে ব্যান করা হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১৭ বিকাল ৫:০৫