বিশেষ দ্রষ্টব্যঃএই গল্প পুরোটাই কাল্পনিক।বাস্তবের কোনো কিছুরই সাথে এর মিল থাকার কথা নয়,আর মিল পাওয়া গেলেও সেটা কাকতাল ছাড়া আর কিছুই নয়।
দায় স্বীকারঃ লেখায় বানান ভুল থাকলে লেখক ক্ষমাপ্রার্থী
অংশ ১৪ (ফ্ল্যাশব্যাক ৫)
বেগম হেনা রত্নাকে ভাল করে পরখ করে দেখে, তারপর ওর কাছে গিয়ে জিজ্জেস করেঃ
“তোমার বাড়ি কোথায়? বাবা কি করেন?”
রত্না বেগম হেনার প্রশ্ন করার ভঙ্গিতে থতমত খেয়ে বললঃ
“আমাদের বাসা উত্তরপাড়ায়, বাবা এখন কিছু করেন না।”
“আগে কি করত?”
“আগে বাবার চালের আড়তের ব্যবসা ছিল।”
“ও আচ্ছা।”
এবার মির্জা আলি কথা বললঃ
“তুমি কি আনিস ব্যাপারির মেয়ে নাকি?”
রত্না অবাক হয়ে বললঃ
“জ্বী, আপনি কি বাবাকে চেনেন?”
“আরে, চিনব না কেন? সপ্নপুরীর যত ভোজ হয়েছে তার বেশিরভাগের রান্নার চাল এসেছে তোমার বাবার আড়ত থেকে।”
“ও আচ্ছা।”
“তবে আমি যতটুকু শুনেছি যে তোমার বাবার এখন আর কিছুই নেই, সবকিছু নাকি শেষ হয়ে গেছে?”
রত্না মুখ ভার করে বললঃ
“জ্বী, ঠিকই শুনেছেন।”
“তোমাদের বাসায় এখন খাবার পানিরও ব্যবস্থা নেই ঠিকমত?”
“জ্বী, না।”
“তুমি কি কিছু কর নাকি?”
“জ্বী, একটি স্কুলে শিক্ষকতা করি।”
“কোন স্কুলে?”
“উত্তরপাড়ার এতিমদের স্কুলে।”
“খুব ভাল। আমি তো ঐ স্কুলের একজন নিয়মিত দাতা। তুমি যা বেতন পাও তা দিয়ে নিশ্চয়ই তোমাদের সংসার না চলাই স্বাভাবিক। আমি দেখি তোমার জন্য স্কুলের বোর্ডের সবার সাথে কথা বলে বেতন বাড়াতে পারি কিনা। তোমার বাবা একজন খুব ভাল মানুষ, তাকে একদিন আমার সাথে এসে দেখা করে যেতে বলো।”
“ঠিক আছে, বলব। আমার পানি নিয়ে তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে হবে, সবাই পানির জন্য বসে আছে।”
“ও, হ্যা, তাই তো! গফর আলি, এদিকে এসো, এই মেয়েটির কলসে পানি ভরে নিয়ে আসো নহবতখানার পুকুর থেকে।”
“আপনাদেরকে অনেক ধন্যবাদ।” রত্না কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল।
মির্জা আলি বললঃ
“এতে ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু নেই। তোমরা আমাদের তত্ত্বাবধানে থাকো, তোমাদের সুবিধা-অসুবিধা দেখার দায়িত্ব তো আমাদেরই।”
“জ্বী।”
গফর আলি এরই মধ্যে কলসে পানি ভরে নিয়ে এসেছে। রত্না সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এল আর মির্জা শাব্বির ওকে বাইরে এগিয়ে দিতে গেল। সপ্নপপুরীর ফটকে এসে থামল দুজন। রত্না কথা বললঃ
“আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। ধন্যবাদ দেওয়া ছাড়া আমার আর কিছু করার নেই।”
“ভিতরে বাবা কি বলল? ধন্যবাদ দিতে হবে না। যেকোনো সমস্যা হলে আমাকে খবর দেবেন আর হ্যা আপনার মহৎ কাজে আমাকেও অংশীদার রাখতে হবে।”
“হ্যা রাখব।আজ আসি তাহলে।”
“আমি কিন্তু প্রতিদিন দীঘির পাড়ে যাই সকালবেলায়। আপনিও মনে হয়ে প্রতিদিন ওখানে আসেন, তাই না?”
“হ্যা, কিন্তু কেন?”
“তাহলে আপনার সাথে আমার প্রতিদিনই দেখা হবে।”
“ও আচ্ছা, সেটা পরে দেখা যাবে। এখন আমি আসি।”
“ঠিক আছে।”
রত্না চলে যায় আর মির্জা শাব্বির রত্নার পথের দিকে নিষ্পলক নজরে তাকিয়ে থাকে যতক্ষণ না পর্যন্ত রত্না চোখের আড়াল হয়ে যায়। কেন জানি মির্জা শাব্বিরের রত্নাকে খুব ভাল লেগে গেছে, আর এই ভাল লাগা ইতিমধ্যে সপ্নপুরীর অন্য সবাইও বুঝে গেছে।
মির্জা শাব্বির রত্নাকে বিদায় দিয়ে অন্দরমহলে ফিরে এল আর সাথে সাথে বেগম শিফা আর মির্জা শাহরিয়ার ছুটে এল মির্জা শাব্বিরের কাছে। দুজনে শাব্বিরের কানে কানে একই কথা বললঃ
“মেয়েটা তো সুন্দর আছে, ভালই দেখে পছন্দ করেছ নিজের জন্য। তলে তলে এতকিছু? প্রেমের সাগরের ভাসছ আর আমাদেরকে বল নাই?”
মির্জা শাব্বির লজ্জা পেয়ে যায়।
“আরে, ধুর! ওরকম কিছু না, ওর সাথে তো আজকেই দেখা হল। সেরকম কিছু না।”
“আস্তে আস্তে সব হয়ে যাবে।” বেগম শিফা বলে উঠল।
“মেয়েটাকে কিন্তু তোমার সাথে ভালই মানাবে, কথা বলে দেখব মেয়েটার মা-বাবার সাথে বিয়ের ব্যাপারে?” মির্জা শাহরিয়ার খোঁচা মেরে বলল।
“একি! আমার বিয়ে পর্যন্ত চলে গেছ? আমি নিজেও তো এতদূর ভাবি নি। আগে তোমার নিজের বিয়ের কথা চিন্তা কর। তোমার তো বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে। আমার তো এখনো সময় আছে।”
তিন ভাইবোন মিলে হেসে উঠল। একটু দূর থেকে তিন ছেলেমেয়ের হাস্যোজ্জ্বল মুখ দেখছিল মির্জা আলি আর বেগম হেনা। বেগম হেনা বলে উঠলঃ
“আমি যা ভাবছি, তুমিও কি তাই ভাবছ?”
“আমাদের ছেলেমেয়ে কত বড় হয়ে গেছে, তাই না? এখনো মনে হয় ওরা তিনজনই এই তো সেদিনই জন্ম নিল, হাঁটতে শিখল আর এখন ধীরে ধীরে এত বড় হয়ে গেছে যে আমাদের দুই ছেলের বিয়ের বয়স হয়ে গেছে, আমার নিজের কাছেই অবাক লাগে!”
“হমম...একদম আমার মনের কথা বলে দিয়েছ। আসলেই ওরা বড় হয়ে গেছে। আমাদের দুই ছেলের বিয়ে দিতে হবে। আমার মাথায় একটা পরিকল্পনা আছে।”
“কি?”
আমার ইচ্ছা আমার দুই ছেলে একই দিনে একই সাথে বিয়ে করুক, বিয়ের অনুষ্ঠান হবে অনেক ধুমধাম করে।”
“ভালই বলেছ, তাহলে আনন্দটা দ্বিগুণ হয়ে যাবে। তবে এখন তো দুই ছেলের জন্য পাত্রী দেখতে হবে।”
“দুই ছেলের জন্য নয়, এক ছেলের জন্য।”
“কেন?”
“দেখলে না যে শাব্বির এর মধ্যেই রত্না নামের মেয়েটাকে পছন্দ করে ফেলেছে। আমি তো মা, আমি বুঝে ফেলেছি। আর মেয়েটাকেও আমার খারাপ লাগেনি, ওদের দুজনকে মানাবে ভাল। যদিও মেয়েটার পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়, তাতে কোনো সমস্যা নেই। আমরা তো কখনো ধনী-গরিবের মধ্যে ভেদাভেদ করিনি, তাই না? তা না হলে আমিও যে এই সপ্নপুরীর মালকিন হতে পারতাম না।”
“হ্যা, ঠিকই বলেছ। মেয়েটাকে আমারও ভাল লেগেছে। বিশেষ করে ওর মহৎ পেশা আর উদ্দেশ্য আমাকে মুগ্ধ করেছে।”
“তাহলে এখন শাহরিয়ারের জন্য মেয়ে দেখতে হবে। তোমার নায়েব টিপু সুলতানের মেয়ের সাথে আমাদের শাহরিয়ারকে কেমন লাগবে বল তো?”
“হমম...খারাপ লাগবে না। টিপুর মেয়ের নাম কি জানি?”
“শায়লা।”
“ও হ্যা, ঐ লক্ষ্মী মেয়েটা যে তোমাকে প্রায়ই গৃহস্থালির কাজে সাহায্য করে আর তুমি ওর প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাক?”
“হ্যা, ঐ মেয়েটা।”
“তাহলে আমাদের কাজ শুরু করে দিতে হয়। আনুষ্ঠানিক আলাপ করে নিতে হবে। শুভ কাজে দেরি করতে নেই। আমি কালকেই আনিস ব্যাপারী আর টিপুকে তলব করে দরবার ডাকব, তারপর ইনশা-আল্লাহ সবকিছু ঠিকঠাক হবে।” (চলবে)
পরের অংশঃ অংশ ১৫ (ফ্ল্যাশব্যাক ৬)
ব্লগ পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।
শারিফ শাব্বির
ইমেইলঃ sharif_shabbir@yahoo.com
টুইটারঃ http://www.twitter.com/kliptu
ফেইসবুকঃ http://www.facebook.com/kliptu
গুগল প্রোফাইলঃ http://www.google.com/profiles/sharifshabbir
ইউটিউবঃ http://www.youtube.com/user/sharifshabbir
ওয়েবসাইটঃ
http://bdbuzz.ucoz.net
http://grou.ps/bdlinks
http://kotharbuli.blogspot.com