I like relativity and quantum theories
Because I don’t understand them
And they make me feel as if space shifted about like a swan
that can’t settle,
Refusing to sit still and be measured;
And as if the atom were an impulsive thing
Always changing its mind
D. H. Lawrence
পদার্থবিজ্ঞানে অনিশ্চয়তার তত্ত্ব নিয়ে যতটা বিতর্ক হয়েছে এবং হচ্ছে অন্য কোনো তত্ত্বীয় অনুধাবন ততটা বিতর্কিত হয় নি। চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞানে যেকোনো বস্তুর ইতিহাসের ধারাবাহিকতা ( তার গতির ধারাবাহিক বিবর্তন, তার ভর- তার ভরবেগ, তার উপরে প্রযুক্ত বলের প্রভাব সবই নিখুঁত ভাবে পরিমাপযোগ্য) অবিচ্ছিন্ন। গ্রহ-নক্ষত্রের গতি- কক্ষপথ, পৃথিবীতে যা কিছু ঘটছে এবং ভবিষ্যতে ঘটবে, সবই প্রাথমিক অবস্থা জানা থাকলে নিখুঁত ভবিষ্যতবানি করা সম্ভব। এই সম্ভবপরতার ধারণাটিকে একেবারে ছুড়ে ফেলে দিয়ে হাইজেনবার্গ যখন অনিশ্চয়তার সূত্র দিলেন তখন থেকে অদ্যাবধি এই ধারণাকে মেনে নিতে কিংবা এ ধারণার সাথে খাপ খাওয়াতে পদার্থবিজ্ঞানী এবং সাধারণ বিজ্ঞান পাঠক সবারই কিছুটা সংকট তৈরি হয়েছে। ওয়াইবার্গ অবশ্য এ প্রসঙ্গে বলেছেন কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সাম্ভাব্যতা, কোনো অতিক্ষুদ্র বস্তুর অপরিমাপযোগ্যতা একধরণের বাস্তবতা- এটাকে মেনে নেওয়াই ভালো, এটার দার্শণিক ভিত্তি অনুসন্ধানের কোনো প্রয়োজন নেই, তা অনাকাঙ্খিত সংকট তৈরি করবে।
কোয়ান্টাম মেকানিক্সের জন্মের প্রায় ৭০ বছর পরে ওয়াইনবার্গের এই সাবধানবানী তৎকালীন পদার্থবিজ্ঞানীর মানসিক সংকটকে ততটা ফুটিয়ে তুলতে পারে নি। সেটা তখন এক ধরণের বিভ্রান্তিকর, ভ্রান্ত ধারণা হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছিলো এবং সে সময়ের বর্ষীয়ান পদার্থবিজ্ঞানীদের অধিকাংশই এই তত্ত্ব মেনে নিতে গররাজি ছিলেন।
তারই প্রতিক্রিয়ায় কোয়ান্টাম মেকানিক্সের অপরিমাপযোগ্য সা্ম্ভাব্যতাতত্ত্ব নিয়ে আইনস্টাইনের উক্তি ইশ্বর পাশা খেলা পছন্দ করেন না, যদিও আইনস্টাইন প্রথাগত অর্থে ধর্মবিশ্বাসী ছিলেন না , কিন্তু প্রকৃতির নিয়ম কানুনের ভেতরে এক ধরণের পরিমাপযোগ্যতা আছে এ ধারণার স্থির আইনস্টাইন শুধুমাত্র সাম্ভাব্যতাবহুল বলে কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে গ্রহনযোগ্য বিবেচনা করতে পারেন নি, যদিও কোয়ান্টাম মেকানিক্সের জন্মের পেছনে আইনস্টাইনের সামান্য অবদান আছে। আইনস্টাইনের আপত্তিকে একটু আলাদা ভাবে উপস্থাপন করেছেন শ্রোয়েডিংগার। শ্রোয়েডিঙ্গারের কালো বেড়াল জীবিত অথবা মৃত - সেটা নিয়ে বিতর্ক কখনও শেষ হয় নি, বিজ্ঞানীদের ভেতরে বিজ্ঞানের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এবং পরিমাপযোগ্যতার বিতর্ক সাধারণ মানুষের কথোপকথনে এসে বিভিন্ন ধরণের অনুধাবণের জন্ম দিয়েছে।
রবার্ট ফন লিউয়েনহুক , মাইক্রোস্কোপের জনকও বলা যায় তাকে, তার যন্ত্র দিয়ে বিভিন্ন বস্তুর পরিবর্তন পর্যবেক্ষণের সময় লক্ষ্য করেছিলেন স্থির তরলে নিস্প্রাণ বস্তুরও গতির পরিবর্তন হয়, কোনো রকম বাহ্যিক বলের প্রভাব ছাড়াই এরা গতিশীল, এদের ক্ষুদ্র প্রাণ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন লিউয়েন হুক। তার এই পর্যবেক্ষণ তার ক্রেতাদেরও আকৃষ্ট করেছিলো, বিভিন্ন অভিজাত পরিবারের ড্রইং রুমে রাখা মাইক্রোস্কোপে গৃহস্বামী জড়বস্তুর এমন গতিশীলতা দেখিয়ে আগত অতিথিদের মনোরঞ্জন করতেন।
পরবর্তীতে রবার্ট ব্রাউন এমন গতি পর্যবেক্ষণ করেন, তিনি পরাগ রেণুর গতিশীলতা দেখে কিছুটা অবাক হলেও পরবর্তীতে অন্যান্য জড় বস্তু, কাঁচের গুড়ো, পাথরের গুঁড়ো পর্যবেক্ষণ করেও দেখলেন এরাও তরলে ভাসমান অবস্থায় গতিশীল, তবে এদের গতিশীলতার কোনো নির্ধারিত ধরণ নেই, যাদৃচ্ছিক এই গতির পরিবর্তনের কোনো ব্যাখ্যা রবার্ট ব্রাউনের ছিলো না, পরবর্তীতে ইতিহাস বলছে টরলে জড়-নিস্প্রাণ বস্তুর এই যাদৃচ্ছিক গতিশীলতার পর্যবেক্ষণ এবং এই গতিকে ব্যাখ্যা করবার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছিলো পর্যবেক্ষকেরা তবে কেউই নিশ্চিত কোনো জবাব দিতে পারে নি।
উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি গ্যাসীয় গতিবিদ্যার আবির্ভাব হয়, তত্ত্ব হিসেবে এটা পরবর্তীতে অনেক জায়গায় ব্যবহৃত হলেও প্রাথমিক পর্যায়ে এটার ব্যবহার সীমাবদ্ধ ছিলো বস্তুর তাপের পরিচলন ব্যাখ্যায়। পদার্থবিজ্ঞানীরা সে সময়ে পরমাণু কিংবা অণুর ধারণা নিয়ে আলোচনা করলেও রসায়নে যেভাবে অণু-পরমাণু বিষয়ে আলোচনা হচ্ছিলো তার সাথে এ আলোচনার সংশ্রব ছিলো না। পদার্থবিদদের পরমাণু এবং রসায়নবিদদের পরমাণু দুটো ভিন্ন ধারণা হিসেবে বিকশিত হচ্ছিলো।
১৮৭২ সালে ডালটনের পরমাণুতত্ত্বকে অগ্যতা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে স্বীকৃতি দেওয়া হলো, একদল রসায়নবিদ পরমাণুর অস্তিত্বের সপক্ষে ছিলেন এবং অন্যান্য রসায়নবিদ গণের কাছে ভরের নিত্যতা সূত্র- গে ল্যুকাসের সূত্র- এইসবই একেবারে প্রাথমিক ধারণা হিসেবে গ্রহনযোগ্য ছিলো। পরিমাপঅযোগ্য কোনো ধারণাকে শুধুমাত্র তাত্ত্বিক সুবিধার জন্য গ|রহনের ক্ষেত্রে এক ধরণের বাধা হয়ে ছিলো নিউটনের সূত্রের প্রভাব। কজালিটি কিংবা কার্যকরণ সূত্রের প্রভাব পরবর্তীতেও বিজ্ঞানীগণ ব্যবহার করেছেন এবং এখনও করছেন, আইনস্টাইনপূর্ববর্তী সময়ে যতটা ছিলো এখন তারচেয়ে কিছুটা কম।
উনবিংশ শতাব্দির শেষাংশে বিভিন্ন ধরণের পর্যবেক্ষণের ব্যাখ্যা দিতে অসমর্থ হলেও বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিলো সকল বিষয়ের কার্যকরণ তারা উদঘাটন করতে পারবেন। তেজস্ক্রিয়তা, এক্স রে রশ্মির পর্যবেক্ষণ, তাপবর্ণালী এবং উত্তপ্ত বস্তুর বর্ণালী পর্যবেক্ষণ প্রায় নিয়মিত বিষয় হলেও সেসবের নেপথ্যের কারণ তখনও আবিস্কৃত হয় নি। এরই মধ্যে জে জে থম্পসন কেমব্রিজে ইলেক্ট্রন আবিস্কার করলেন, তার ছাত্র ও গবেষণা সহকারী রাদারফোর্ড পরবর্তীতে আবিস্কার করলেন বিটা কণিকা মূলত ইলেক্ট্রন, তেজস্ক্রিয় বিকিরণের অনিশ্চিত তাৎক্ষণিকতা কিংবা ইলেক্ট্রণের অবস্থান বিষয়ে কোনো স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে ম্যাক্স প্লাংক কণাতত্ত্ব উপস্থাপন করলেন এবং দেখা গেলো তাপবর্ণালীকে এই ধারণা খুব চমৎকার ব্যাখ্যা করতে পারে। ম্যাক্স প্ল্যাংক গাণিতিক সুবিধার জন্য একেবারে ক্ষুদ্রাকৃতির বিচ্ছুরণ ধরে নিয়ে তার বিশ্লেষণ শুরু করেছিলেন, ক্যালকুলাসের পরিচিট সীমাস্থ মাণ ব্যবহার করে তিনি এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিকিরণকে প্রায় শূণ্য ধরে নিয়ে পরবর্তীতে হিসেবেটা মিলিয়ে ফেলবেন এমন একটা ধারণা নিয়ে শুরু করলেও দেখা গেলো কণিকাগুলোর মাণ নির্দিষ্ট একটা সীমায় রাখলে সেটা তাপবর্ণালীকে ব্যাখ্যা করতে পারে- এর চেয়ে ক্ষুদ্র করলে সেটা অর্থহীন হয়ে যায়।
১৯০৫ সালে আইনস্টাইন চারটি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ করেন, প্রতিটিই বিখ্যাত- একটি বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব, যেখানে তিনি নিউটনের স্থান ও কালের ধারণাকে স্থান-কালের ধারণা দিয়ে প্রতিস্থাপিত করেন এবং সে ধারণার সূচনায় বলেন
আলোর গতি পদার্থ বিজ্ঞানের পরিমাপের ক্ষেত্রে একটি ধ্রুব সংখ্যা এবং পদার্থ বিজ্ঞানের সূত্রগুলো স্থান-কাল নিরপেক্ষ- পরবর্তী ১০০ বছরে প্রতিটি পরীক্ষাগারে বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের অভ্রান্ততা নিশ্চিত হয়েছে।
ব্রাউনিয়ান গতি ব্যাখ্যা করে লিখেছেন একটি গবেষণা নিবন্ধ, একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রফলের সীমানায় কোনো যাদৃচ্ছিক গতিশীল কণা পৌঁছাতে কি পরিমাণ সময় লাগতে পারে সেটার একটা পরিমাপ তিনি দিয়েছিলেন গতিবিদ্যার সমীকরণ ব্যবহার করে। সেখানে বলা হয়েছিলো এই যাদৃচ্ছিক পর্যবেক্ষিত গতিশীলতা আদতে সে বস্তুকণার উপরে বিভিন্নমুখী পরমাণু ও অণুর আঘাতের সামষ্টিক পরিণাম, প্রতিটি অণু-পরমাণু এই বস্তুকণাকে আঘাত করে এবং যেহেতু এই আঘাতগুলোর কোনো নির্দিষ্ট ধরণ নেই তাই বস্তুকণার গতিশীলতাকে াদৃচ্ছিক মনে হয়। ৩ বছর পরে মিলিক্যান আইনস্টাইনের এই অনুমাণের পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন আইনস্টাইনের ব্যাখ্যা সঠিক।
ধাতব বস্তু থেকে ইলেক্ট্রন নির্গত হওয়ার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আইনস্টাইন প্ল্যাংকের আলোর কণিকা মতবাদ গ্রহন করে পর্যবেক্ষণের ব্যাখ্যা প্রদান করেন। আলো তরঙ্গ না কি কণিকা এ প্রশ্নের চুড়ান্ত মীমাংসা হয় কম্পটনের পর্যবেক্ষণে- যদিও কম্পটনের আগেই অন্য একজন এমন পর্যবেক্ষণের অস্তিত্ব জানিয়েছিলেন তবে তার শিক্ষকের তিরস্কারে তিনি এ পর্যবেক্ষণ অস্বীকার করতে বাধ্য হন। কম্পটন পরীক্ষা করে দেখান যখন এক্স রে কোনো ইলেক্ট্রনকে আঘাত করে তখন ইলেক্ট্রনের গতি পরিবর্তিত হয়- ইলেক্ট্রন যে পরিমাণ শক্তি লাভ করে এক্স রে ঠিক একই পরিমাণ শক্তি হারায়- আইনস্টাইন ফটো ইলেক্ট্রিক ইফেক্ট ব্যাখ্যা করবার সময় এমন ধারণার কথাই বলেছিলেন পরবর্তীতে আইনস্টাইন ফটো ইলেক্ট্রিক ইফেক্ট ব্যাখ্যা করে নোবেল পুরস্কার পান। তবে তার এই ধারণা যে পরবর্তীতে পদার্থ বিজ্ঞানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে সে সম্পর্কে তিনি তখনও অবগত ছিলেন না।