আগেই একটি পোস্টে বলেছি একটা সময়ে অনেক বাংলা সিনেমা দেখতে হয়েছে, বিটিভি ছাড়া বিনোদনের অন্য কোন মাধ্যম না থাকায়। এর কয়েকটা ছবি দেখার মত হলেও অধিকাংশই গাজাখুরি, হিন্দী সিনেমার নিম্নমানের কপি। বাংলাদেশের এই সিনেমা পরিচালকেরা কি খেয়ে সিনেমা বানান তা জানার ইচ্ছা আছে। একজন সুপারহিরোর চেয়েও বাংলাদেশের সিনেমা পরিচালকদের ক্ষমতা বেশী। তিনি চাইলেই একজন মৃত ঘোষিত ব্যক্তিকে জীবিত করে দিতে পারেন, চল্লিশোর্ধ নায়ককে কলেজের ছাত্র বানিয়ে দিতে পারেন, যখন তখন নায়ক/ নায়িকার স্মৃতিশক্তি ছিনিয়ে নিতে পারেন আবার যখন তখন তাকে ফিরিয়ে দিতে পারেন, আরো এমন সব কাজ করতে পারেন যা কোন হলিউডের পরিচালকও চিন্তা করতে পারবেন কিনা সন্দেহ আছে। তাদের ডাইলখুরিরই কিছু নমুনা দিলামঃ
ছবির নাম 'বিদ্রোহী সন্তান | গাঁজাখোরটা কে জানি না। তবে সিনেমাটা হিন্দী শোলের অতীব নিম্নমানের নকল। । এইখানে বাংলার জয় হল বাপ্পারাজ, আর বীরু হল আমিন খান। শোলের শেষ দৃশ্যে অমিতাভ মানে জয়ের মৃত্যু ঘটেছিল। তো বাঙ্গালী হল আবেগপ্রবন। শেষ দৃশ্যে নায়ক মরে গেলে দর্শক যদি তাকে মাইরধোর করে, এই টেনশনে বোধহয় একটু বেশীই গঞ্জিকা সেবন করে ফেলছিলেন। দেখা গেল শেষে নায়কের গায়ে গুলি লাগছে, নায়ক প্রায় মরোমরো। সবাইকে বিদায় জানাচ্ছেন। নায়িকা লিমা দেখলেন তার নায়ক মরে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত আর উপায় না পেয়ে আঙ্গুল দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে গুলি বের করে নিয়া আসলেন


গত কয়েক বছরে হিট বাংলা ছবিগুলোর মাঝে একটি ‘হৃদয়ের কথা’। গাঁজাখোর এস এ অলীক। সিনেমা কপি কিনা জানি না, ভালই চালাচ্ছিলেন। কিন্তু শেষে এসে একটুখানি গাঁজা খেয়ে অলীক সাহেব অলীক জিনিস দেখালেন। নায়িকা পূর্ণিমা দুই বছর ধরে কোমায়। ডাক্তাররা শেষ দেখা দেখতে এসেছেন। পূর্ণিমার জন্য মাজারে বসে মোমবাতি জ্বালিয়ে দোয়া করছেন মৌসুমী। এমন সময় হঠাৎ মোমবাতি নিভে গেল।, অন্যদিকে ডাক্তাররাও পূর্ণিমাকে মৃত ঘোষণা করলেন। ঠিক আছে মানা গেল। একটু পরে হঠাৎ বাতাস আসল, আর মোমবাতি জ্বলে উঠল

ছবির নাম মনে নাই। নায়ক ওয়াসিম। সিনেমার এক পর্যায়ে নায়ক স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। শেষে এসে তিনি স্মৃতিশক্তি ফিরে পেতে ব্যাকুল হয়ে পড়েন। তো ধারেকাছে কোন গুন্ডা না পেয়ে (মাথায় বাড়ি মারার জন্য) শেষ পর্যন্ত নায়ক নিজেই গাছের সাথে মাথা বাড়ি মেরে স্মৃতিশক্তি ফিরিয়ে আনলেন


এই ঘটনা অনেক ছবিতে দেখানো হয়েছে। এই কারনে ছবির নাম মনে নাই। ছবির নায়িকা বেদেনী। এইসব ছবিতে যা হয় নায়ক( রাজপুত্র

ছবির নায়ক আলমগীর। সিনেমার শেষে মারামারি করে আর না পেরে ভিলেন প্লেন নিয়ে পালায় যাচ্ছে। নায়ক সাহেব মোটর সাইকেল নিয়ে তার পিছনে তার করছেন। এক পর্যায়ে নায়ক প্লেনকেও ছাড়িয়ে সামনে এগিয়ে গিয়ে প্লেনের একটু সামনে গিয়ে থেমে যান। ভিলেন মনে হয়ে মোটরসাইকেল কে ধাক্কা দিয়ে ফেলে তারপর প্লেন চালানো জানত না। প্লেন থেমে গেল তাও হঠাৎ করে। শেষে ভিলেন বাইরে বের হয়ে মাইরপিট করে হেরে গেল। ইশ ভিলেন যদি খালি মোটরসাইকেলটাকে ধাক্কা মারা জানত তাহলে এইভাবে নায়কের কাছে মাইর খাইতে হইত না

ছবির নাম ‘লম্পট’। নায়ক কুংফু সম্রাট রুবেল। সিনেমার ভিলেন আরেক কুংফু সম্রাট ইলিয়াস কোবরা। তো সিনেমার শেষে দুই কুংফু সম্রাটে হেভী মারামারি। কেউ কারো চেয়ে কম না। এমন সময় ইলিয়াস কোবরা কুংফুর ইতিহাসে নতুন মাইর আবিস্কার করলেন। নিজের জায়গায় দাড়াইয়া এমন ঘুরান দিলেন যে ড্রিল মেশিনের মত মাটি ফুটা কইরা মাটির নিচে ঢুকে গেলেন


খালি বাংলা সিনেমায়ই মনে হয় এসব সম্ভব। ঠিক তেমনি উচ্চ মানের নেশাখোর হইলেই মনে হয় বাংলা ছিঃনেমাও বানানো সম্ভব।