somewhere in... blog

।স্বপ্ন গুলো স্বপ্নই রয়ে গেল।

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৫:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি: হ্যালো, এটা কি ০১৭১১১১১১১১।
অপরিচিত মেয়ের কন্ঠ: জ্বি, কে বলছেন?
আমি: আমাকে আপনি চিনবেন না, আপনাকে আমি দেখেছি মনির চায়ের দোকানের সামনে, অডিটরিয়ামে নাটকের অনুশীলনের পর চা খাচ্ছিলেন।
অপরিচিত মেয়ের কন্ঠ: তো।
আমি: তো, আমি আপনার সাথে কথা বলতে চাই। আপনার কথা বলার ভঙ্গি খুব সুন্দর।
অপরিচিত মেয়ের কন্ঠ:আমি অপরিচিত কারো সাথে কথা বলি না।
আমি: কথা না বললে চিনবেন কেমন করে? আসুন আমরা চিনি একে অপরকে।
অপরিচিত মেয়ের কন্ঠ: হাস্যকর।
আমি: এখানে হাস্যকরের কি দেখলেন? আসেন আমরা কথা বলি একে ওপরকে চিনি।
অপরিচিত মেয়ের কন্ঠ:না।
আমি: আপনার প্রিয় বই কি?
অপরিচিত মেয়ের কন্ঠ:আজব!!কেন?
আমি: আমি আপনাকে চেনার চেষ্টা করছি। প্লিজ বলেন?
অপরিচিত মেয়ের কন্ঠ: ওকে। সমরেশের সাতকাহন। আমার প্রিয় লেখকও সমরেশ।
আমি: বুঝলাম, আপনি খুব একটা ভাল পাঠক না কারন সমরেশের ভাল পাঠক কখনই সাতকাহনের নাম বলবে না। তার আরও ভালো লেখা আছে সেগুলোর নাম বলবে।
অপরিচিত মেয়ের কন্ঠ:এটা আমার ব্যপার, আমার কি ভালো লাগবে আর কি লাগবে না এটা আমার ব্যাপার।কেন আপনার কোনটা ভালো লাগে? (এ জন্যই আমি আগের কথাটা বলেছি, সরি সমরেশ বাবু, আপনার সাতকাহন আমার ভালো লাগে।)

প্রথম দিন কথা এভাবেই শুরু হয়ে ছিল, তারপর ধীরে ধীরে কথা বলার গভীরতা বৃদ্ধি পেল। কথা বলতে বলতে এক ভাল লাগা শুরু হল আমাদের মাঝে। আনুষ্ঠানিক ভাবে দেখা করার দিন ঠিক করলাম, দেখা হল আমাদের। বটতলার এক চায়ের দোকানে প্রতিদিন অগনিত কাপ চা খাওয়া হত আর গল্প করতাম কোন বিষয় ছাড়াই। সময় গড়ানোর সাথে সাথে সম্পর্কের গভীরতা টের পেলাম আমরা দু'জনই কিন্তু কেউ কাউকে বলতে পারলাম না। মোবাইল কোম্পানী গুলোর ভালো লাভ হল সেই সময়টা আমাদের দু'জনের কাছ থেকে। রাত জেগে কথা বলা ছিল আমাদের নেশা, কথা না হলে তো ঘুমই হত না আমাদের। বাবা, মা কে লুকিয়ে কথা বলার জন্য অনেক রাত জেগে থাকতে হত আমাদের।

কিছুদিন যেতেই আমিই ইনিয়ে বিনিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করলাম মনের অবস্থা। কিন্তু সে ছিল ভাঙবে কিন্তু মচকাবে না টাইপ মেয়ে। সে কিভাবে মচকালো সেই ঘটনাটা আমি এখানে গোপন রাখলাম। তবে আমিই তাকে প্রথম ভালোবাসার কথা প্রথম বলি। আমি তাকে ভালবাসি শুনে সে হয়েছিল নিশ্চিন্ত আর আমার চিত্ত হয়েছিল উন্মত্ত। আমার উন্মত্ত চিত্তকে শান্ত করার বদলে সে আমার ভালবাসাকে যাচাই করাতেই ছিল ব্যস্ত। ভাগ্য খুব ভাল ছিল বলেই হয়তবা তাকে মচকাতে খুব একটা দেরী হয়নি আমার।

শুরু হল নতুন এক জীবন। শুধুই ভালবাসা, কথা বলা, রাগ করা, অভিমানে খাওয়া বন্ধ করা, রেস্টুরেন্টে বসে চা খাওয়া, চিঠি চালাচালি, মুঠোবার্তা আদান প্রদান আরো কত কি। ১লা বৈশাখে, ১ লা ফাল্গুনে তাকে নিয়ে ইউনিভার্সিটি না গেলে তো সে কথা না বলার ধর্মঘট শুরু করে দিত আমার সাথে। আমার জীবন থেকে কষ্টগুলোকে নির্বাসনে পাঠিয়ে দিল তার ভালোবাসা। দুঃখ, কষ্ট কিন্তু পেতাম, যা ছিল ভালোবাসার। ভালোবাসার দুঃখ, কষ্ট গুলোও ভালো লাগত।

চাকরীও পেয়ে গেলাম পড়ালেখা শেষ করে, বাকি ছিল শুধু বিয়ে। আমরা স্বপ্ন দেখতাম আমাদের বিয়ে নিয়ে। স্বপ্ন ছিল নীলগিড়িতে (বান্দরবনে) দুজনে কাটাব এক রাত হাজার তারা দেখে, মেঘেদের খেলা দেখে। স্বপ্ন ছিল সেন্টমার্টিনে কাটাব দুজনে, প্রবালে বসে পানিতে পা ডুবিয়ে, রাত হলে ক্যাম্পফায়ার করব বিশাল সমুদ্রকে সামনে রেখে। স্বপ্ন ছিল প্রতি বর্ষার প্রথম দিনে তাকে ১০০ কদম ফুল এনে দেব। স্বপ্ন ছিল ছেলে হলে নাম রাখব "সমুদ্র" আর মেয়ে হলে রাখব "কবিতা"।

আমাদের সুন্দর জীবন অসুন্দর হয়ে গেল খুব তাড়াতাড়ি। সে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেল। আমি অসুখের বর্ননাও দিতে চাচ্ছি না এখানে। শুধু এটুকু বলব সে আমার সামনে আমাকে ছেড়ে চলে গেল, আমার সব স্বপ্নকে স্বপ্ন রেখে। মনে নেই চোখ ভিজে গিয়েছিল নাকি, মনে নেই কতক্ষন ছিলাম তার নিথর দেহের পাশে, শুধু মনে আছে সে যাওয়ার আগে আমাকে বলেছিল "ভালবাসি তোমাকে"। তার চোখের কোন থেকে রূপালী পানি গড়িয়ে পড়ল বালিশের উপর। আমার চারিদিক তখন বিষম শুন্যতা গ্রাস করে, আমি হারিয়ে যাই নিকষ অন্ধকারের মাঝে।

স্বপ্ন গুলো স্বপ্নই রয়ে গেল।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১২:৫৩
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্পা এবং দেহ ব্যবসায়ীদের কথা শুনলে রেগে যাবেন না

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৬:৪৯



পুরো পৃথিবীতে স্পা এর সংখ্যা ১ লক্ষ ৮১ হাজার। এইসব স্পা-গুলোর বেশির ভাগই গড়ে উঠেছে ইউরোপে। এশিয়া - প্যাসিফিকের দেশগুলোতেও স্পা-এর সংখ্যা কম নয়। ৫১ হাজারেরও বেশি। বাংলাদেশে স্পা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম বিহীন বিশ্ব গড়ার চেষ্টা বিশ্ব জনসংখ্যা অনেক কমিয়ে দিবে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৫০



নেতানিয়াহু বলেছে তাদের সাথে অনেক শক্তিশালী রাষ্ট্র আছে। সে মুসলিম বিশ্বকে বড় রকমের হুমকি দিয়েছে। সে গণহত্যা চালাচ্ছে। আত্মরক্ষায় মরিয়া মুসলিমরাও গণহত্যা চালাবে। তখন আর সভ্যতার বাণীতে কাজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার মিরর ডোল, নিজের মনের অশান্তি অন্যের উপর চাপিয়ে দিয়ে ফ্যাসিস্টের মতো আচরণ করবেন না

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ২:৩৫

ব্লগার মিরর দৌলাকে বলছি।
আপনাকে কিছু কড়া কথা আজ বলবো। ব্লগে বর্তমানে আপনার কোন অবদান নেই। সামুর যে ব্লগপেইজটা আপনি চালান, সেখান থেকে সব পোষ্ট আপনি ড্রাফটে নিয়েছেন। সেটা আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এনসিপিনামা - যে যায় লংকায় সেই হয় রাবণ ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩১


জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশে অসংখ্য রাজনৈতিক দল আত্নপ্রকাশ করেছে। সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি(এনসিপি) কে নিয়ে। জুলাই অভ্যুত্থানের সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের নিয়ে এই দল গঠিত হয়েছে। প্রচলিত রাজনৈতিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

হারিয়েছি অনেক কিছু....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৫৪

হারিয়েছি অনেক কিছু....

আমি প্রতিদিন নিয়ম করে বেশ কয়েক কিলোমিটার হাটি। তবে ইদানিং হাটাহাটিতে অপ্রত্যাশিত ছন্দপতন হচ্ছে! এই যেমন, হাটাহাটির টার্গেট মিসিং! যে পথে হাটার কথা, সে পথে না গিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×