আপনি যে ধর্মেরই হোন না কেন , মানুষ মাত্রই এ গল্পটি আপনার পড়া দরকার।
সাধক বললেন- স্রষ্টা আমি ভালো আর মন্দ, স্বর্গ আর নরক, দেবতা আর শয়তানের পার্থক্য দেখতে চাই। শ্রষ্ঠা বলেন- তুমি তোমার নিজের মতো করে দেখলেই বুঝতে পারবে কোনটি স্বর্গ আর কোনটি নরক। কে শয়তান আর কে দেবতা।
সাধক দেখেন- খুবই সুসজ্জিত অপরুপ সুন্দর একটা ঘর। ঘরের ভিতর বিশাল সুপ্রশস্ত একটা খাবার টেবিল। গোল টেবিলের একবারে মাঝখানে বসানো খাবারের পাত্র। সুগন্ধেই বুঝা যায়-এ এক অতি উপাদেয় খাবার। টেবিলের চারপাশে আরামদায়ক চেয়ারে হাতে খাবারের চামচ নিয়ে কিছু মানুষ বসে আছে। চামচগুলো খুবই লম্বা। যাতে বিশাল টেবিলের মাঝখানে খাবারের পাত্র থেকে অতি উপাদেয় সেই স্যুপ চামচে নিয়ে খাওয়া যায়। কিন্তু কারো মুখে কোনো খাবার নেই। সবার জীর্ণ স্বাস্থ্য। অপুষ্ট শরীর। অনাহারী রোগাগ্রস্থ চেহারা। সবার মাঝে বিষাদের ছায়া।
সাধু ওদেরদিকে চেয়ে কিছুক্ষণ চিন্তা করে বুঝলেন চামচগুলো বেশী লম্বা হওয়ার ফলে খাবার চামচ থেকে নিজেদের মুখে দিতে খুব কষ্ট হচ্ছে, এমনকি সম্ভব হচ্ছেনা। সাধক এবার আরেকটি ঘরে আসলেন। খাবার, খাবার টেবিল, চামচ, পাত্র, মানুষগুলো সবকিছুই অবিকল আগের ঘরটির মতো। তবে পার্থক্য একটা। এরা খুবই আমোদে সময় পার করছে। সবার চেহারা উজ্জ্বল। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। গল্পে, আনন্দে মেতে আছে।
স্রষ্টা বললেন- কী দেখলে, কী বুঝলে?
কিছুইতো বুঝলামনা। দুটি ঘর একি রকম। মনে হলো- একটি ঘর আরেকটির অবিকল নকল। তবে প্রথম খাবারের টেবিলে কেবলি বিষাদ যেন নরকের যন্ত্রণা। আর ২য়টিতে শুধুই সুখ, আর সুখ যেন স্বর্গীয় সুখ।
আর কি দেখলে। মানে মানুষগুলো কেমন?
দেখলাম-সাদা, কালো, এশিয়ান, আফ্রিকান, পীর, ফকির, মৌলানা, পাদ্রি, ভিক্ষু, ভান্তে, রাবাই, ক্যাথলিক, প্রোটাস্ট্যান্ট, শিয়া, সুন্নী, ব্রাহ্মন, শূদ্র, সবরকমের মানুষ পরপর দুটো টেবিলেই গোল হয়ে বসে আছে।
দুটো টেবিলেই কি পাত্রে খাবার আছে?
জ্বি, তাইতো দেখলাম।
তবে প্রথম টেবিলের মানুষ খুশী না কেন?
কারণ তারা যে খাবার খেতে পারছেনা।
কেন পারছেনা?
এতো লম্বা চামচ দিয়ে নিজেদের মুখ অবধি খাবার নিতে ওদের কষ্ট হচ্ছে।
তবে ২য় টেবিলের মানুষ এতো খুশী কেন?
তাদেরকে দেখেতো মনে হলো- ওরা ঠিকমতো খাবার খেয়ে যাচ্ছে।
একই চামচ দিয়ে ২য় টেবিলের ওরা পারলে প্রথম টেবিলের ওরা পারছেনা কেন?
স্রষ্টা সাধককে বসতে বললেন। বড় একটি গোল খাবার টেবিল। মাঝখানে বিশাল খাবারের পাত্র। সাধকের হাতে লম্বা খাবারের চামচ। অপরপাশে বসা দেবতা। দেবতার হাতেও একটি চামচ। সাধক চামচে খাবার নিচ্ছেন ঠিকই কিন্তু মুখ পর্যন্ত নিতে সমস্যা হচ্ছে। এখন দেবতা অপরপাশ থেকে নিজের চামচে খাবার নিয়ে অন্য পাশে বসা সাধকের মুখে তোলে দিলেন। এবার সাধকও তাই করলেন। যে খাবার নিজের মুখে নিতে কষ্ট হচ্ছে চামচ লম্বা হওয়ার ফলে সেই খাবার কত সহজেই অন্য পাশে বসা দেবতার মুখে তুলে দিতে পারছেন।
সাধক এবার বুঝতে পারলেন। প্রথম খাবার টেবিলে পারষ্পরিক ঘৃণা, অহমিকা, গর্ব, হিংসা, বর্ণ বৈষম্য, ধর্ম বৈষম্য, শ্রেণী বৈষম্য, জাতিগত বৈষম্যের ফলে চামচে খাবার নিয়ে অন্যের মুখে তুলে দিতে পারছেনা। আবার নিজেও খেতে পারছেনা। ঘৃণায় মানুষসব হয়ে গেছে শয়তান। আর ২য় টেবিলে সব পার্থক্য, সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সবাই কত সুন্দর স্বর্গীয়ভাবে, পরম ভালোবাসায়, মায়ার মমতায় একজন আরেকজনের মুখে চামচে করে খাবার মুখে তুলে দিচ্ছে। যেন এরা শুধু মানুষ না। ভালোবাসায় একেকজন হয়ে গেছেন সত্যিকারের দেবতা।
ফলে যা হবার তাই হয়েছে। স্রষ্টার দানতো সব জায়গায় সমান। কিন্তু মানুষই এটাকে নরক বানায়, আবার এই মানুষই তাকে স্বর্গ বানায়।
স্বর্গ-নরক
সবাইকে ঈদমোবারক।