ঘুপছি গলি থেকে তাড়া খেয়ে পোড়া সোলেমান হাঁপাতে হাঁপাতে কামারের দোকানে এসে বসে। হাপরের ভিতর কয়লা পুড়ছে। লাল লাল আগুনের টুকরা। সোলেমান কখনো পোড়া সোলেমান ,আবার কখনো পাগলা সোলেমান।
জ্বলন্ত কয়লার ভিতর লোহা পুড়ে পুড়ে লাল হয়ে আছে। পাগলা সোলেমান এক মনে কয়লার মাঝে লোহা পুড়ানো দেখে। আর নিজের মুখে হাত রাখে।
পাগলা সোলেমান একসময় তুখোড় মেধাবী ছাত্র ছিলো। তাও ছিলো আবার গণিতের। অঙকের জটিল সমস্যাগুলো তুড়ি মেরেই সে সমাধান করে দিতো ।
পরীক্ষা ভালো ভাবে পাশ দিয়ে মেধাবি সোলেমান চাকুরীর ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার জন্য বাসে বসে আছে।পাশে বসে আছে তার আদরের ছোট বোন। ওকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে তারপর যাবে।কিন্তু হঠাৎ কিছু বুঝে ওঠার আগেই দাও দাউ করে আগুন।জ্বলতে লাগলো পুরো বাস।বাসের ভিতর ধাক্কাধাক্কিতে সোলেমান আর বের হতে পারেনা। নিজের চোখে চেয়ে দেখে নিজে পুড়ছে , ,পুড়ছে তার বড় আদরের ছোট বোন। মনে হচ্ছে চিতার মাঝে জীবন্ত মানুষ সব পুড়ে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে।আর পুড়ছে জীবনের সবচেয়ে বড় সম্বল পরীক্ষা পাশের কাগজ।
সোলেমানের যখন হুশ ফিরে তখন সে দেখে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে।
শরীরের বিভিন্ন জায়গায় অসহ্য যন্ত্রণা। সোলেমান বাথরুমের আয়নায় নিজের মুখ দেখে ভয়ে আর আতণ্কে চীৎকার দিয়ে ওঠে। এযেন জ্বলন্ত চিতায় আগুনে পুড়া কোনো হায়েনার বিভৎস মুখ।
বাথরুমের জানালা দিয়ে দেখে সোলেমান-দেশপ্রেমিক দলের মিছিল এগিয়ে চলছে। মিছিলে ব্যানার , পোস্টার। বিভিন্ন নেতা নেত্রীর ছবি।
সোলেমান হাসপাতাল থেকে ছাড়া পায়। নীচে হাত দিয়ে দেখে না সব পুড়ে গেলেও তার লিঙগ ঠিক আছে। এ লিঙগের ক্ষমতা অসীম। সোলেমান এবার জলের পাইপ থেকে ত্বষ্না মিটিয়ে জল পান করে।
দেয়ালে দেয়ালে বিভিন্ন নেতা নেত্রীর পোস্টার।কিছু পোস্টার দেয়ালের খুব উপরে, কিছু নীচে,আবার কিছু মাঝামাঝি। সোলেমানের মাথায় অঙক ঘুরতে থাকে-কী পরিমাণ জল পান করে কী পরিমান বেগে মুত্র ছাড়তে পারলে এই পোস্টার গুলো সব মুতে মাখামাখি হয়ে যাবে।
মুখপোড়া সোলেমানের বীভৎস চেহারা কেউ সহ্য করতে পারেনা।লোকে পারবে কি? সে নিজেই আর নিজের চেহারা আয়নায় দেখেনা। নেতা সোলেমানের মুখের দিকে না থাকিয়ে গতরাতে কোলাকুলি করলেন।
আজ ভোটের দিন। সকালে সে ভোটের লাইনে এসে দাঁড়ায়। নেতা বলেছেন,ভোট দিতে হবে। সোলেমান বুঝে মানুষপুড়ে যাক,কিন্তু কোনোরকমে বেঁচে থাকতে পারলেও ভোটের কদর আছে। সারারাতভর জলপান করে সোলেমানের লিঙগ এখন টানটান হয়ে আছে।
সোলেমান হাতে ব্যালেট নিয়ে ধীরে ধীরে ভোটের বাক্সের দিকে এগিয়ে যায়।যে সোলেমান সারা জীবন গণিতে প্রথম হয়েছে, তার হিসাবতো আর ভুল হতে পারেনা। আদো অন্ধকার একা ঘরে দাঁড়িয়ে সোলেমানের চোখের সামনে ভেসে ওঠে বোনের পুড়া মুখ, পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া অঙগার দেহ। সোলেমানের বোন কানে কানে বলে, বড় সাবধানে ভাইয়া।বড় বেশী সাবধানে।দেখিস, এক ফোঁটাও যেন বাইরে না পড়ে।