somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মোরাল ছোটগল্প-"ফাউ"- দু মিনিট সময় নিয়ে গল্পটি পড়ার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি

১৯ শে জুন, ২০১৩ সকাল ৮:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক যে ছিলো ময়ুর। খুবই স্মার্ট আর মেধাবি এক ময়ুর। মুয়েট থেকে পাশ করাতো।
বাংলাদেশের যেমন বুয়েট,ময়ুরদের সেরকম মুয়েট আর কি।
ময়ুরের সাথে প্রেম হলো মাবি'র এক ময়ুরীর সাথে। সেও খুব মেধাবি।

বলতে কি আর অপেক্ষা রাখে, মাবি'তে চান্স পেতে কত কষ্ট। আমাদের ঢাবি'র মতো ওদের মাবি । মাচ্যের মক্সফোর্ড।

যাক, ময়ুর আর ময়ুরীর সংসার খুবই ভালো চলছিলো। দুজনের খুব হাসিখুশি সংসার। দুজনেই ভালো চাকুরি করে। অবসরে ময়ুর কবিতা পাঠ করে, ময়ুরি শুনে। আবার ময়ুরি গান করে , ময়ুর শোনে।

কিছুদিন পর, ময়ুরের পাশে প্রতিবেশি হয়ে আসলো এক শালিক পরিবার। তারা থাকে গাছের ওপর। তাদের অহংকারের শেষনাই। তারা যে ময়ুর ময়ুরির চেয়েও বড়।

ময়ুর আর ময়ুরী তাদের কাজের পরিমাণ বাড়িয়ে দিলো। অনেক বড় হতে হবে, অনেক বড়।

ইতোমধ্যে ময়ুর আর ময়ুরীর পরিবারে এলো ফুটফুটে একে সন্তান। চাঁদের মতো রুপ। ময়ুর আর ময়ুরীর খুশীর আর শেষ নেই। সন্তানের নাম দিলো মউরি। বাহঃ কি সুন্দর নাম। ময়ুরীর মেয়ের নাম মউরি। কিন্ত, শুধু খুশি হলেতো চলবেনা। সংসার বড় হয়েছে। কাজ আরো বেশী করতে হবে। আরো বেশী উপার্জন করতে হবে।

কিন্তু বাচ্চাকে রেখেতো কাজে যাওয়া যায়না । কি করা যায়, কি করা যায়। ময়ুরি খুব চিন্তায় পড়ে। মাবি থেকে পাশ করা ময়ুরি । কিছুই যদি না করা হয়, তবে এতো মেধা কাজে লাগাবে কেমন করে। কেনই বা এতো পড়ালিখা করলো।

হঠাৎ ময়ুরীর মাথায় বুদ্ধি আসলো। আরে মউরিকে তো প্রতিদিন পাশের তিতর পরিবারেই রেখে যাওয়া যায়। তাহলে নিজের চাকুরি ও করা হবে, আবার মউরিও তিতর পরিবারের সাথে থাকবে।

মায়ের আদর ছাড়া মউরি এখন তিতর পরিবারের সাথে বড় হতে লাগলো।
রাতে বাবা-মা যখন ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরে তখন মউরি কয়েকঘন্টার জন্য বাবা-মাকে পায়। মউরির তখন খুব কষ্ট।কিন্তু মউরি খুব ছোটতো তাইসব কথা আর বাবা-মাকে বুঝাতে পারেনা।

একদিন ময়ুরি কাজ থেকে বাড়ি ফিরছে। পাশের তিতর পরিবারে গেলো মউরিকে বাসায় আনতে। গিয়ে দেখে মউরি তিতরের কোলে বসে আপন মনে খেলছে। মউরি কিছুক্ষণ চেয়ে থাকলো। তারপর মউরিকে নিয়ে বাড়ী ফিরলো।

ময়ুরিদের শহরে আজ সবাই খুব ব্যস্ত। সামনে নববর্ষ। নবরুপে সবাই সাজছে। ময়ুরি অফিস থেকে ফিরার পথে একটু কেনাকাটা করার জন্য পাশে মোড়ের দোকানে গেলো।

গিয়ে দেখে প্রতিবেশী টুনি এসেছে।

ময়ুরি জিগ্গাসা করে, কি গো ভাই টুনি। কেমন আছো । অনেকদিন পর দেখা ।
হুমম, অনেকদিন পরেইতো দেখা হবে। তোমাদের দেখাইতো পাওয়া যায়না। স্বামী -স্ত্রী দুজনেই যে কাজে ভীষন ব্যস্ত থাকো।
কি করবো বলো । যে দুনিয়া পড়েছে। দুজনে কাজ না করলেতো সংসার চলেনা। তারপর মউরি'র জন্যও তো কিছু করে যেতে হবে, তাইনা?

টুনি বলে, হ্যাঁ। তাতো করে যেতে হবে। সেদিন দেখলাম। তিতরের বাসা থেকে মউরির কান্না ভেসে আসছে।আশে পাশে কেউ নাই। বেচারি কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে মাটিতেই ঘুমিয়ে পড়েছে।

একথা শুনে । ময়ুরির কলিজা যেন কেমন করে ওঠলো। ময়ুরি টুনিকে বললো, আচ্ছা আসি তাহলে পরে কথা হবে।

টুনি বলে, না গো দাঁড়াও না একসাথেই যাবো। টুনা বলেছে-পিঠা খাবে। তাই আমি পিঠা বানানোর জন্য তেল নিতে এসেছিলাম।

টুনি-মোড়ের দোকানিকে তেল দেয়ার জন্য কাঁচের শিশিটি এগিয়ে দেয়।

আর ময়ুরি পাশে দাঁড়িয়ে দেখে।

দোকানি কাঁচের শিশিতে তেল ভরলো।
টুনি, তেলের শিশি নিয়ে দোকানিকে বলে- আরেকটু বেশি করে দাওনা। অনেকগুলো পিঠা তৈরি করতে হবে।

দোকানি তেলের শিশি কানায় কানায় ভর্তি করে দিলো।

টুনি মনে মনে ভাবলো- ভালো করে চাইলে দোকানি হয়তো আরেকটু বাড়িয়ে দিবে। যত ফাও পাওয়া যায়। ততইতো লাভ।

তখন-টুনি দোকানিকে আবার বললো- ও দোকানি ভাই।এরকম কেন করো।
আরেকটু বাড়িয়ে দাওনা ভাই।

দোকানি এবার রাগ করে। তারপর বলে- পুরো শিশিইতো পরিপুর্ণ। আর কোথায় দেবো ।আমিতো কোনো খালি জায়গাই দেখছিনা।

টুনি খেয়াল করে দেখলো- আরে তাইতো। শিশিতে তো আর কোনো জায়গাই নেই। কিন্তু একটু ফাও না নিলে যে মনে শান্তি পায়না।

ময়ুরি , চুপচাপ পাশে দাঁড়িয়ে সব দেখছে। আর টুনির কান্ড দেখে ভিতরে ভিতরে খুব রাগ করছে।

হঠাৎ টুনির মাথায় এক বুদ্ধি আসলো। আরে আরেকটুতো খালি জায়গা আছে। শিশির নীচের দিকে।

তারপর ভীষন খুশী হয়ে দোকানিকে বললো- এই যে দোকানি ভাই। আমার শিশির অন্যদিকেতো একটু খালি জায়গা আছে।ওখানে একটু তেল দাওনা ।

দোকানি বললো- আচ্ছা।বোতলটা ওল্টো করে ধরো। আমি তেল দিয়ে দিচ্ছি।

টুনি আরেকটু ফাও তেল নেয়ার জন্য শিশি উল্টো করে ধরলো। আর সাথে সাথে শিশির সব তেল নীচে পড়ে গেলো।

ময়ুরি ,এবার ভীষন রেগে গিয়ে বললো।কি করলে-বলোতো টুনি।
সামান্য একটু ফাও তেল নিতে গিয়ে আসল টুকুইতো মাটিতে ফেলে দিলে।
তুমি এতো বোকা। সবাই যে তোমাকে খুব বুদ্ধিমতি বলে। এই বুদ্ধি নিয়ে তুমি পিঠা বানানোর বই লিখলে?

টুনি- এবার হেসে ময়ুরিকে বলো-
তুমি বুঝেছো তাহলে। তুমিওতো সেটাই করছো। এইযে- মউরিকে তিতরের বাসায় রেখে দিয়েছো। বেচারি সারাদিন-তোমাদের পানে চেয়ে বসে থাকে। মাঝে মাঝে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ে। কি লাভ হচ্ছে তাতে? সন্তান না পাচ্ছে , পৃথিবীর সবচেয়ে আপনজন মায়ের ভালোবাসা। আর মা-না পাচ্ছে বুকের মাঝে প্রিয় সন্তানের গভীর মমতা।

সামান্য ফাউ এর লোভে পড়ে জীবনের সবচেয়ে আসল সম্পদতো তুমিও এভাবেই মাটিতে ফেলে দিচ্ছো।

টুনির কথা শুনে ময়ুরির বুকের গহীন থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে । এতোদিন এতো পড়ালিখা করে যা শিখেছে তা আজকের শিক্ষার তুলনায় যে কিছুই নয়। জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ, আদরের সন্তানকে বুকের কাছে নেয়ার জন্য তার বুকটা হু হু করে ওঠে। সে টুনিকে রেখেই দ্রুত বাড়ির পথ ধরে।

এবার টুনি দোকানিকে বলে- ও দোকানি ভাই। খেলা শেষ হয়েছে। এতোক্ষণ শিশিতে পানি ঢেলেছো।দাও এবার শিশিতে তেল দাও। অনেক দেরি হয়ে গেলো। বাড়ি গিয়ে টুনার জন্য যে পিঠা বানাতে হবে।


( এখন আধুনিক জীবনে দেখা যায়-সন্তান বড় হচ্ছে বেবিসীটারের কাছে। অথবা কাজের লোকের কাছে। পরিবার হয়ে গেছে খুবই ছোট। নেই চাচা, চাচি, মামা, খালা,নানা,নানু, দাদা,দাদি। এরপর নিজের মাও যদি সন্তানকে রেখে চলে যায় কাজে আর রাতে ঘরে ফিরে।তখন ছোট মানুষটির দুঃখের আর শেষ নেই। বেচারা হয়তোবা ভালো করে বলতে পারেনা।কিন্তু হৃদয়ের গভীরে শুধু পুড়তে থাকে।একসময় সেই সন্তান হয়তোবা বড় হয়ে কর্পোরেট বড় একটা চাকুরি করবে, কিন্তু তার মানবিক অনুভূতি সব পাথর হয়ে যাবে। তখন কিন্ত আর আফসোসের শেষ থাকবেনা। তাই, ভালোভাবে চিন্তা করে দেখুন-একটু ফাওয়ের জন্য আসল জিনিস মাটিতে ফেলে দিচ্ছেন নাতো?)

সেই সব দুঃখি সন্তানদের যারা নিজের বাবা-মাকে ছেড়ে বেবিসীটার অথবা কাজের লোকের কাছে বড় হচ্ছে-তাদের উৎস্বর্গ করা হলো

MFBL

পোস্টটি ভালো লাগলে অনুগ্রহ করে শেয়ার করুন। কারো মনে হয়তোবা সামান্য ভাবনা জাগাতে পারে। ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০১৩ রাত ২:৩৭
৬৩টি মন্তব্য ৬৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×