somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালবাসা কারে কয়

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



খুবই আজব লাগছিল যখন আমার বিয়ে ঠিক হল। অচেনা একজন এর সাথে বাকিটা জীবন কাটাতে হবে। বাবা-মা এর পছন্দ মতই বিয়ে হয় আমার । দেখতে তেমন ভাল ছিলাম না বলে প্রেম করার সৌভাগ্য হয়নি কখনো। যেদিন আমাকে দেখতে আসে, ছেলেকে দেখেই মনে হয়েছিল যে আমাকে ওদের পছন্দ হবে না। কারন ছেলে অনেক স্মার্ট এক কথায় সেরম সুন্দর :P । সবথেকে বড়ো কারন হল আমি অনেক কালো যতটা কাল হলে মা তাদের মেয়েকে শ্যামলা বলে তারচেয়ে বেশী কাল কিন্তু এই কালোর আড়ালেও আমার একটা কিউট আর মায়াবী চেহারা আছে তারচেয়ে বড় কথা তিথির মন টা আসলেই অনেক ভাল।কিন্তু মেয়েদের সুন্দর এর আসল মাপকাঠি তো কাল আর ফরসা দিয়ে বিচার হয় তাই আমাকে কোন ...ছেলেই পছন্দ করে না। করবে এমনটি আশাও করি নাই।যখন খবর আসলো যে ছেলে আমাকে পছন্দ করেছে, আমি ত পুরাই টাশকি খাইলাম।
বিয়ের দিন আমার সব বান্ধবীরা আমাকে বাসর রাত এর ব্যাপারে জ্ঞান দিচ্ছিল।ভাব টা এরকম যেন সবাই একএক টা এক্সপাট কিন্তু সবগুলাই unmarried। ফাজিলের এর ফাজিল সবগুলা। তিথির খুবই অস্বস্তি লাগছিল। আসলে আমি খুবই শান্ত-শিষ্ট একটা মেয়ে। খুব কম কথা বলি। বাসর ঘরেও আমি খুব ভয় এ ছিলাম। সারাদিন বিয়ের ধকল যাওয়াতে অনেক ক্লান্ত ও ছিলাম। ও যখন ঘরে ঢুকল, হঠাৎ হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল। কিন্তু কাছে আসার পর সে যা বলল, সেটা শুনে আমি অভিভুত এবং অবাক হয়ে গেলাম।
সে বলল “তুমি নিশ্চই অনেক ক্লান্ত। খাওয়ার সময় ও বেশি কিছু খেতে পারনি দেখলাম। এখন কিছু খাবে?”
আমি না বললাম।
সে বলল “আচ্ছা, তাহলে শুয়ে পড়।”
তার প্রতি অন্যরকম এক ভাললাগা আমার উপর ভর করে। সম্মানবোধ করি তার প্রতি। কারন সে আমাকে হয়ত বুঝতে পেরেছে।
পরদিন সকালে নাশতার পর আমি আলমারি গুছাচ্ছিলাম। সে হটাত পেছন থেকে এসে আমাকে এমনভাবে জরিয়ে ধরল, যেন সে আমার কতকালের চেনা। তখন একইসাথে ভাল লাগা এবং একরকম নতুনত্ব অনুধাবন করি। আমি সবসময় চুপচাপ থাকতাম। সে আমাকে সবসময় খুশি রাখার চেষ্টা করত। তার বাবা-মা অনেক আগেই মারা গিয়েছেন। কোন ভাইবন ও নেই। এই দুনিয়া তে আমি ছাড়া তার আপন কেও নেই। একদিন রাত এ আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। অন্ধকারেও বুঝতে পারি যা তার চোখে পানি। সে আস্তে করে আমাকে বলছে “আমাকে কখন ছেড়ে যেও না। তুমি ছাড়া ত আমার আর কেও নেই।” সেদিন আমি মনে মনে তার কাছে প্রতিজ্ঞা করি যে আমি কখনো তাকে ছেড়ে যাব না।

অফিস থেকে আমাকে প্রতিদিন ফোন করে জিজ্ঞেস করত আমি খেয়েছি কিনা। আমি জানি যে আমি না খেলে সেও খাবে না। তার সম্পূর্ণ জগত ছিলাম আমি। অবশ্য আমার প্রতি তার অনেক অভিযোগ ছিল। কারন আমি কখনই তার সাথে ফ্রী হয়ে কথা বলি না। সবসময়ই জড়তা থাকে। আমি নিজেও সেটা বুঝি। কিন্তু জড়তা কাটিয়ে উঠতে পারি না। তবে প্রায়ই কেন যেন মনে হতে লাগল আমি তাকে অনেকদিন থেকে চিনি। কোথায় যেন দেখেছি তাকে,বেশ আগে। কিন্তু কিছু মনে করতে পারি না।
আমাদের বিয়ে হয়েছিল ডিসেম্বর মাসে।পরের বছর ১৪ই জানুয়ারিতে আমার জন্য বিশাল এক চমক অপেক্ষা করছিল। সে আমাকে ফোন করে আমার ছোটবেলার স্কুল এর সামনে আসতে বলে। আমি অবাক হয়ে জাই। তারপরও গেলাম। গিয়ে দেখি সেখানে সে হাতে একটি জংলি ফুল নিয়ে আমার কাছে আসছে। দৃশ্যটি খুব পরিচিত মনে হল। কাছে এসে সে পুরাই বাংলা সিনেমার মত করে বলল -
“আমি তোমাকে ভালবাসি। তুমি যদি আমাকে ভালো না বাসলে আমি গাড়ির নিচে পড়ে আত্মহত্যা করব।”

আমার তখন হঠাৎ করেই সবকিছু মনে পড়ে। ঠিক এই ঘটনাটি আমার জীবনে ঘটেছিল ১০ বছর আগে। ক্লাস নাইন এ পরতাম আমি। একদিন বেশ সুন্দর একটি ছেল এসে আমাকে ঠিক এভাবেই প্রপোজ করেছিল। আগেই বলেছি আমি বেশ কালো। তাই এত সুন্দর একটি ছেলে আমাকে প্রেম নিবেদন করায় আমি অনেক খুশি হয়ে যাই। ছেলেটি আমার দিকে একটি জংলি ফুল এগিয়ে দেয়। অনেক লাজুক হওয়া সত্ত্বেও আমি ফুলটি হাতে নেই। হাতে নেয়ার সময় সে আমাকে বলে ফুল হাতে নিয়ে ফেলে দিলে সে আত্মহত্যা করবে। ফুল হাতে নেয়ার পর আমি দেখতে পাই ফুল এর ভেতরে এক ভয়ঙ্কর পতঙ্গ। দেখে আমি ভয় পেয়ে যাই। কিন্তু তবুও আমি হাত থেকে ফুল ফেলি নি এই ভয় এ যে সে যদি আমাকে ভুল বুঝে আত্মহত্যা করে! হয়ত সে জানেও না যে ফুল এর মাঝে একটি কুৎসিত পতঙ্গ আছে।

কিছুক্ষণ পর তার বন্ধুরা হাসতে হাসতে বের হয়। পরে বুঝতে পারি, তারা শুধু মজা করার জন্য এই কাজটি করেছে। তাদের মধ্যে একজন বলে ওঠে “পোকাটা দেখতে ঠিক তোমার মত,তাই না?” প্রচণ্ড অপমানিত হই আমি। সেই ছেলেটিও বলে ওঠে “তুমি কি মনে করেছিলে, তোমার মতো মেয়েকে আমি ভালবাসবো!!!” আমার চোখ ফেটে সেদিন অঝোরে অশ্রু ঝরেছিল।

বুঝতে পারলাম, সেই ছেলেটি মানে অভ্র এখন আমার স্বামী। সে বলল, “সেদিন তোমার সাথে যে খারাপ ব্যাবহার আমি করেছি, তার ফলও ভোগ করেছি। এক সুন্দরী মেয়েকে আমি অনেক ভালবাসতাম। আমাদের মাঝে সম্পর্কও ছিল। একদিন একটা এক্সিডেন্ট এ আমার পা এর হাড় ভেঙ্গে যায়। ডাক্তার বলেছিল ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু সময় লাগবে। আমি দুষ্টুমি করে ওই মেয়েকে বললাম যে আমার পা আর কখনও ভাল হবে না। তারপর খেয়াল করলাম ও আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। একদিন আমাকে সে বলল যে সে পঙ্গু একজনের সাথে সম্পর্ক রাখতে পারবে না। সেদিন আমি তাকে বলতে চেয়েছিলাম যে আমি আসলে ঠিক আছি। কিন্তু আর বললাম না। সেদিন কেন যেন বারবার আমার তোমার কথা মনে হচ্ছিল। তোমার কান্নামাখা মুখটি বারবার চোখ এর সামনে ভেসে উঠছিল। সেদিন আমি ঠিক করলাম যে আমি তোমাকেই বিয়ে করব। অনেক কষ্টে তোমাকে খুঁজে বের করলাম।বিয়ে করলাম। ভেবেছিলাম আগে প্রপোজ করে পরে বিয়ে করব। কিন্তু তোমার ফ্যামিলি তাড়াতাড়ি তোমার বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছিল। যদি অন্য কারও সাথে তোমার বিয়ে হয়ে যায় সেই ভয়ে আগে বিয়ে করে নিলাম। আজ সেই ঘটনার ঠিক ১৪ বছর সেই একই দিনে আমি তোমাকে আবারো প্রপোজ করছি। এবার মন থেকে। ফুলটি নাও। না নিলে আমি গারির নিচে পড়ে আত্মহত্যা করব।”
আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। সে বলল “ভয় নেই, এবার কোন কুৎসিত পোকা নেই ফুলটিতে।”
আমি সেখান থেকে দৌড়ে চলে আসি ,না অভ্র বাসায় না , আমি আমার বাবার বাসায় আসি।
তার ১৫ দিন পর ডির্ভোস লেটার পায় অভ্র। পুরা দুনিয়া টাই ওর মাথাই ভেঙ্গে পরে । অনেক যোগাযোগ এর ট্রাই করে কিন্তু কোন লাভ হয় না।
সবাই বলে আমি নাকি মস্ত বড় একটা ভুল করেছে। কিন্তু আমার তা মনে হয় না যে আমি কোন ভুল করেছি। আমি জানি আমার ভাগ্যটাই খারাপ। আমি আমার কপাল টাকে মেনে নিয়েছি।

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:৫৬
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×