somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক পাহাড়ি কন্যার অবাস্তব ভালবাসা ......

১০ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




বাস চলছে। হঠাৎ আরমান চোখ খুলে দেখে আবছা আবছা আলো। উহ ! কি সুন্দর , নিজের অজান্তেই বলে উঠে। শহরের ব্যস্ত কাজের ফাঁকে এবার অফিস থেকেই বেড়াতে গেল সবাই রাঙ্গামাটি হীলে । চারিদিকে তাকিয়ে দেখল সবাই ঘুম । শফিক বার বার আরমানের কাঁধে মাথা ফেলে দিচ্ছিল। আরমান কোন দিকে দৃষ্টি না দিয়ে বাইরে তাকাল। মিষ্টি বাতাস। খুব ভালো লাগছে। মন টা কেমন চঞ্চল হয়ে উঠলো , এই সময় যদি কেউ পাশে থাকতো , খুব কাছের কেউ।

কেমন যেন নির্জীব হয়ে গেছে সে, নাই কোন অনুভুতি, নাই কোন প্রেম , এক কথায় যন্ত্র বলা যায়।

সবাই গাড়ি থেকে নেমেই আগে গরম চা হাতে নিল। সবাই মিলে খুব প্ল্যান করছে কখন কোথায় যাবে? তাড়াতাড়ি চা শেষ করেই বাংলোর দিকে গেলো। আজ আরমানের কি হয়েছে? কে জানে। বার বার মনে হচ্ছিল সে খুব একা, কাউকে চাই তার পাশে। ভাবতে ভাবতে হাটতে লাগলো, হঠাৎ মনে হল, আচ্ছা সত্যি যদি কারো দেখা পাই। ভেবেই নিজের অজান্তে হেসে দিল। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বন্ধুদের সাথে হাঁটতে লাগলো ।

রুমে এসে সবাই মিলে আগে গোসলটা সেরে নিল। কিছু খেয়ে ঝুম আড্ডায় মগ্ন। কোথায় যাওয়া যায় তাই নিয়ে সবাই ভাবছিল। বিকেলে সবাই বের হল, নতুন জায়গায়। আরমান খুব উপভোগ করছিল নতুন পরিবেশ। সবাই প্রথমে ঠিক করল পাহাড়ে ঘুরতে যাবে। যেই কথা সেই কাজ। সবাই মিলে পাহাড়ের শেষ চূড়ায় উঠল। প্রকৃতির কি সুন্দর উপস্থাপন। আহ ! এমন অপূর্ব দৃশ্য এর আগে দেখেনি আরমান। ছবি তুলছে সবাই আর আরমান একা একা হাঁটছে। হাঁটতে হাঁটতে পাহাড়ের এক পাশে এসে দেখে নীচে নদী। সবাইকে ডাক দিল। এই এদিকে আয় সবাই দেখ কি সুন্দর !

সবাই মিলে নদী দেখেই বলল চল নিচে যাই। নীচে এসে নদীর পানিতে নেমে পড়লো সবাই। খুব মজা করছে । কেউ গান ধরল। স্বচ্ছ পানি। নিচের সব পাথর দেখা যাচ্ছে। পাহাড়ী নদীর একি রুপ ! আরমান এক পা দু’পা করে অনেক টুকু সামনে চলে আসল। পাহাড়ি ফুল দেখল কি সুন্দর আগে কক্ষনো দেখেনি। অনেক ছবি নিচ্ছে। একটু একটু করে আরমান আরো সামনে চলে আসল। সবুজ অরণ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলল। বন্ধুদের আওয়াজ কানে এল,
-এই আরমান’ ওখানে কি করিস ? কোন পাহাড়ী কন্যা পেয়েছিস নাকি ?
-আরমান হাসল। বলল তোরা পারিস বটে। মেয়ে ছাড়া বুঝি জীবন চলে না ?
-শফিক বলল না গুরু চলে না।
কথা বলতে বলতে হঠাৎ আরমান ধাক্কা খেয়ে প্রায়ই পড়ে যাচ্ছিল। নিজেকে সামলে উঠতেই দেখে, কে যেন মাটিতে পড়ে যাওয়া ফুল কুড়িয়ে ঝুড়িতে নিচ্ছে। আরমান সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসল, একটা ফুলে হাত দিতেই মেয়েটি নিজের হাত দিয়ে আরমানের হাত সরিয়ে দিলো । বলল ছুঁবে না। বলেই বড় বড় চোখ করে আরমানের দিকে তাকাল। কি অদ্ভুত চোখ, এমন চোখ আর দেখেনি আরমান। সে ভাবল মেয়েদের চোখ এমন হয় ! আগে কখনো অনুভব করেনি।
- মেয়েটি বলল, এ আমার দেবতার পায়ে দিব, তুমি ছুঁলে কেন ?
- আরমান বলল আমি তো জানি না, তোমার দেবতার ফুল । -
তাই বলে তুমি আমার ফুল ছুঁবে ?
-আচ্ছা মাফ করে দাও, সে মেয়েটিকে আপাদ মস্তক দেখতে লাগল ।
অপরুপ! এর আগে কখনো কোন মেয়েকে সে এভাবে এতো কাছে থেকে দেখেনি।
-হঠাৎ মেয়েটি বলল, কি বাবু ও ভাবে কি দেখ ? আগে কখনো মেয়ে দেখনি ?
আরমান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। সে এ কথার জন্য প্রস্তুত ছিল না। মেয়েটিফুল গুছিয়ে উঠে দাঁড়াল।
-আমি যাব। বলেই চলে গেল মেয়েটি।

রাতে একটা জমজমাট আসর বসল। বাইরে আগুন জ্বালিয়ে ,কারো হাতে গিটার, কারো সামনে তবলা , কেউ গান ধরেছে আবার কেউ খোস গল্পে মেতেছে । সুন্দর এক পরিবেশ সৃষ্টি হল। আরমান দেখল জোনাকি জ্বলছে । হঠাৎ তার সেই পাহাড়ী মেয়েটার কথা মনে পড়ল। নিজে নিজে হাসল, আর ভাবল, এটা কেন হচ্ছে ? বার বার সে নিজেকে এটা ওটা করে ভুলিয়ে রাখার কথা ভাবছিল । কিন্তু কিছুতেই কাজ হচ্ছিল না। ভাবল, দেখি খাবার দাবারের কি অবস্থা । রায়হান কে বলল- কিরে খাবারের কি ব্যবস্থা ? রায়হান বলল, এই বাংলো যে দেখাশুনা করে সেই সব ব্যবস্থা করছে । চলে আসবে খাবার কিছুক্ষন পর, ভাবিস না । সবাই মিলে যার যার জীবনের মজার গল্প নিয়ে আড্ডা জমাল। একটু পরেই একজন খাবার নিয়ে আসল। মুরং চাং তার নাম। সে সামনে এসে নমস্কার করে বলল, বাবুরা কোন সমস্যা হচ্ছে নাতো ? সবাই বলল না। মুরংচাং বলল, বাবু এই আপনাদের খাবার। বলতেই আরমান দেখল সেই পাহাড়ি মেয়েটি খাবার হাতে। সে যেন আকাশ থেকে পড়ল , কি করে হয় ? স্বপ্ন দেখছে নাতো ? মেয়েটি খাবার নামিয়ে দিয়েই বলল, বাবা আমি যাই ? তুমি বাবুদের খাইয়ে এসো । আমার মেলা কাজ আছে ঘরে। মুরং চাং মেয়েকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। বাবু এ আমার মেয়ে কঙ্কনা। বড়ই দুরন্ত। এক জায়গায় বেশিক্ষণ টিকে না।

সবাই খেতে বসল । আরমান হঠাৎ বলল, আপনারা দু’জন আমাদের সাথে আজ খেয়ে নিন। মুরুং চাং বলল না বাবু তা কি করে হয় ! আপনারা খান, আমরা এগিয়ে দিচ্ছি । এদিকে আরমানের পুরো দৃষ্টি ছিল কঙ্কনার উপর । খেয়াল করছিল মেয়েটি বাবাকে বার বার তাড়া দিচ্ছিল যাওয়ার জন্য। হঠাৎ আরমান ভাবল পাহাড়ী গল্প শুনি, সেই অজুহাতে সে কঙ্কনাকে আটকানোর চেষ্টা করছিল । কিন্তু কিছুতেই কাজ হচ্ছিল না । বার বার মেয়েটি চলে যেতে চাইল । হঠাৎ কঙ্কনার বাবা এক ধমক দিয়ে বলল, চুপ করে বস । একসাথে যাব । বাবুদের গল্প শোনাই। এরা এক দেশ থেকে এসেছে । আমাদের জানুক। তারপর কঙ্কনার বাবা গল্প শুরু করল । পাহাড়ী মানুষ তাদের জীবন ও তাদের জীবিকা । তাদের কষ্ট সুখ সব বলতে লাগলো আর সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনছিল কিন্তু আরমানের পুরো মন ছিল কঙ্কনার উপর , ভাবল সে মেয়েটিকে এক দেখায় ভালবেসে ফেলেনি তো ? না না এ কেমন করে হয় ? হঠাৎ দেখল কঙ্কনা তার সামনে নেই । সে খুঁজতে লাগল কোথাও দেখছে না । তাহলে কি চলে গেল ! আশ্চর্য ! কখন গেল ? মন খারাপ করে বসে গল্প শুনতে লাগল, কি করে এক পাহাড়ী মেয়েকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়। নিজের গোত্রের বাইরে গিয়ে কাঊকে ভালবাসার অপরাধে এই পাহাড়েই এক তরুণীকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় । তারপর থেকে একটা ভয় কাজ করে পাহাড়ী ছেলে মেয়েদের মধ্যে , তারা গোত্রের বাইরে কারো সাথে বন্ধুত্ব করে না , আরমান গল্প শুনছিল আর আনমনা হয়ে পড়ছিল। অদ্ভুত সব ব্যাপার ঘটছে তার সাথে। তার চোখ এদিক ওদিক করে বার বার কঙ্কণাকেই খুঁজছিল। চাঁদের আলো চারিদিকে ঝলমল করছে । তার চোখে পড়ল বাংলোর সিঁড়ির উপর বসে কঙ্কনা তার দিকে অপলক চেয়ে আছে । বুকটা মুচড়ে উঠল । জানতে ইচ্ছে হল- কি দেখছে সে, কেন ? বার বার ইচ্ছে হল, তার কাছে যেতে । মন কিছুতেই এদিকে নাই। সে সবার চোখ কে ফাঁকি দিয়ে সিঁড়ির কাছে গেল।
-বলল কি পাহাড়ী নদী ওদিকে কি দেখছ ?
-কঙ্কনা হচকিৎ হয়ে বলল কই কিছু না তো বাবু। কি দেখবো ?
- আমার চোখ কে ফাঁকি দিচ্ছ ?
- যা বাবু কি বল এসব আমি বাবাকে দেখছিলাম। -
-সুন্দরীদের মিথ্যে বলতে নাই !
- যা তুমি এদিক চেয়ে দেখছিলে, তাই আমি ওদিক চেয়ে দেখছিলাম।
- কঙ্কনা বলল, এতো মানে জানিনে। বুঝিয়ে বলতে পারব না।

কঙ্কনা বাবার কাছে গিয়ে বলল , কি তোমার হয়েছে গল্প বলা ? বাবা বলল, এইতো শেষ, তুই সব গুছিয়ে নে। আরমান জিজ্ঞেস করলো আপনাদের ঘর কোথায় ? মুরাং চাং বলল, ঔ তো বাবু, উপরে তাকাও দেখো বাতি জ্বলছে ওটাই আমাদের বাপ-বেটির বসত। অনেক কষ্টে ধরে রেখেছি । সবাই উঠে দাঁড়াল। রাত অনেক হয়েছে। ঘুমানো দরকার। কঙ্কনা আর তার বাবা যাওয়ার আগে সাবধান করে দিয়ে গেল, বাবু রাত বিরাতে তেমন বাইরে যেও না। এই জায়গা গুলো তেমন ভালো না। বিপদ হতে পারে। বাঙ্গালীদের এমনিতেই কেউ সহ্য করতে পারেনা । তার উপর শান্তীবাহিনিদের একবার নজর পড়লে প্রাণও যেতে পারে। সাবধানে থেক । কোন সমস্যা হলে ডাক দিও । আমরা উপরেই আছি, বলে মুরং চাং মেয়েকে বলল চল মা যাওয়া যাক। সকালে আবার কাজ আছে। কঙ্কনা যাওয়ার আগে হঠাৎ পিছনে এসে সবার চোখ এড়িয়ে একটি ফুল দিল আরমানকে, নাও এটা তোমার। তুমি আগে ছুঁয়েছ , তাই আর দেবতার পায়ে দেয়া হল না । সারাদিন তোমায় অনেক খুঁজেছি- দিব বলে , পাইনি তোমাকে, এখন কি করে যেন পেয়ে গেলাম। নাও তোমার জিনিস তুমি রাখ, বলেই আবার হাসি দিল। আরমান কিছুই বুজতে পারছিল না এর অর্থ কি ?

সবাই ঘরে এসে ঘুমাতে গেল। কিন্তু আরমানের দু'চোখ কিছুতেই এক হচ্ছিল না । বার বার কঙ্কণার মুখ আর হাসি কানে ভাসছিল... সে বাইরে এল। কঙ্কনার দেয়া ফুলটি হাতে নিয়ে দেখল। কি আছে এই ফুলে ? কেন কঙ্কনা এই ফুলটি তাকে দিল। ভুলে গেল এক মুহূর্তে আরমান ধর্ম জাত-কুল, ধনী-গরীব সব সব ব্যবধান। কঙ্কনার জন্য মনটা কেমন করতে লাগল। আচ্ছা, কঙ্কণা কি এখন তার জন্য তাই অনুভব করছে? ভাবতে লাগল সে।

এদিকে কঙ্কনা ঘরের আঙ্গিনায় বসে। কেন জানি তার ও ঘুম আসছিল না। বার বার বাবুর কথা মনে পড়ছিল । চারিদিকে চাঁদের আলো ঝলমল করছে , আজ ভরা পূর্ণিমা, চারিদিকে সব পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে , চাঁদের দিকে তাকালেই বাবুর কথা মনে পড়ছে , কেমন করে চেয়ে দেখছিল তাকে। এমন করে আর কেউ তাকে দেখেনি। চেনা নেই, জানা নেই, এই মানুষটার কথা কেন তার বার বার মনে পড়ছে ! নিজের গোত্রে কত ছেলে দেখল কই কখনো তো কারো জন্য এমন হয়নি । ভাবছিল একবার যদি এখন দেখতে পেতাম বাবু কে। কি সুন্দর দেখতে, কেমন করে যেন তাকায়, অনেক মায়া নিয়ে। উহ ! কঙ্কনা অস্থির হয়ে উঠলো । ঘর থেকে নীচের দিকে আলো নিয়ে তাকায় কাউকে দেখা যায় কিনা । দেখল হ্যাঁ - কে যেন বসে আছে, মনটা চঞ্চল হয়ে উঠল আচ্ছা সেই বাবু নয় তো ?

আরমান ঠিক সিঁড়িতে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে । সবাই অঘোরে ঘুমাচ্ছে কিন্তু, তার চোখে ঘুম নেই। হঠাৎ কানে গানের সুর আসলো ...কি মিষ্টি কণ্ঠ, কি সুমধুর সুর ! কি যে আহবান কাছে ডাকার ! ও আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলনা । সিঁড়ি থেকে নেমে উপরে তাকাতেই স্পষ্ট দেখতে পেলো কঙ্কনাকে , সে গান গাচ্ছে------মধুএই লগনে ...... মধু এই খনেতে......মধু তোরি সাথে......মধু হবো মগনে ।।

আরমান অস্থির হয়ে উঠলো । ইস ! কখন সকাল হবে ? কঙ্কনা গান করতে করতে দাওয়ায় ঘুমিয়ে পরল । চোখ খুলে দেখে ভোর ভোর । তাড়াতাড়ি উঠেই ফুলের ঝুড়ি নিয়ে সেই নদীর পথে গেল বাবুর দেখা যদি পায়। একবার ভেবেছে বাবুদের বাঙ্গলোয় যাবে , পরে ভাবল ছি ! কেউ যদি কিছু মনে করে ! কিন্তু আজ অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর ও আরমানের দেখা পেলনা কঙ্কণা । খুব মন খারপ করে চলে আসল , ভাবল- বোধ হয় সে যা ভাবছে তা ভুল । শহুরে মানুষ দু’দিনের জন্য বেড়াতে এসে কি তার মতো কঙ্কণার জন্য এখানে আসবে দেখা দিতে ! সে শেষমেষ ঝুড়ি হাতে ঘরে ফিরল । উঠোনে পা দিতেই দেখল, বাবুরা সবাই তাদের ঘরে! কঙ্কনা নিজের অজান্তেই উচ্ছল হয়ে উঠল । ওহ ! ভগবান যা চেয়েছি তাই দিলে আজ। কঙ্কনা বলল, বাবু তোমরা বস আমি কিছু নিয়ে আসি, বলেই ভিতরে চলে গেল। এদিক ওদিক দেখতে লাগলো কি খাওয়াবে অতিথীদের, তার উপর বাবু এসেছে !

এতক্ষণ আরমান অস্থিরতার মধ্যে ছিল। বার বার মনে হচ্ছিল কেন এলাম! আর বন্ধুরা পাহাড়ে বাড়ীর আশে-পাশে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগল । কঙ্কণা কে দেখা মাত্রই আরমান যেন উজ্জীবিত হয়ে উঠল, আর তার সব কিছু ভালো লাগতে লাগল । অনেকক্ষণ সময় কাটানোর পর ওরা মুরাং চাং কে বলল- আচ্ছা, এখানে কোথায় ঘুরা যায় বলতো ? মুরাং চাং বলল- বাবু ওই দিকে যাও ঝর্না আছে , আছে পাহাড়ী অনেক নাম না জানা গাছ । আরমানের ইচ্ছে হল- কঙ্কণাকে সাথে নিবে, কিন্তু সাহস পেলনা । এমনিতেই বন্ধুরা তাকে নিয়ে গুনগুন শুরু করেছে । বার বার জিজ্ঞেস করছে কিরে , তোর কি হয়েছে ? উদাস উদাস কেন ! প্রেমে পড়লি নাকি ? আরামান জবাব দেয়না শুধু এড়িয়ে যাওয়ার জন্য এদিক ওদিক জবাব দেয়। অনেক সময় লজ্জাও পায় সে । কারন বন্ধুরা যা জিজ্ঞেস করে তা তো সত্যি । নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে সে সবাইকে নিয়ে চলে গেল । কঙ্কণার খুব মন খারাপ হল, কেন যে সকাল সকাল বাইরে গেলাম! নইলে তো বাবুকে অনেকক্ষণ কাছে পেতাম। কঙ্কণা ঠিক করল, বাবুকে একা পেলে বলবে- বাবু তোমার জন্য জানি আমার মন কেমন করে ! কঙ্কণা বাবাকে তাড়া দিল তাড়াতাড়ি বাজার নিয়ে এসো , এতো গুলো মানুষের রান্না । মুরাং চাং বলল- ঠিক আছে দে টাকা দে । কঙ্কনা বাবার হাতে টাকা দিতে দিতে বলল আচ্ছা বাবা আমার মা পাহাড়ী ছিলনা বলেই কি সে এতো কষ্ট পেয়েছে ? মুরাং চাং কিছুক্ষণ মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইল । মুরাং চাং এক বাঙালি মেয়েকে ভালবেসে বিয়ে করেছিল । তাদের প্রেমের ফসল এই কঙ্কণা । অনেক কষ্ট পেয়েছে তার সংসারে এসে । সমাজ আত্মীয়-স্বজন সবাই, সবাই কষ্ট দিয়েছে তার বউটা কে । মুরাং তখন খুব অসহায় ছিল । পাহাড়ী নিয়ম-কানুন খুব কঠিন ছিল । কঙ্কণা কে জন্ম দিতে গিয়েই বউটি তার মারা গেল । কোলে মেয়েকে দিয়ে বলেছিল ওকে কখনো কষ্ট দিও না । আমার সময় শেষ । বলেই নিস্তেজ হয়ে গেল। হঠাৎ মুরাং এর সব অতীত চোখের সামনে । বউ চলে যাওয়ার পর এই মেয়েকে নিয়েই কাটিয়ে দিল সারাটা জীবন । আর কেউ নাই কোন আপন এই বাপ বেটির । মেয়েকে কিছু না বলে চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে গেল । কঙ্কণা বাবার দিকে চেয়ে রইল । সেই ছোট বয়স থেকে মা এর জন্য বাবার কান্না দেখেছে সে , বাবার মুখে গল্প শুনেই সে তার মা কে চিনেছে । ভাবতে ভাবতে ঘরে চলে আসল । রান্না করার ব্যবস্থা শুরু করল ।
রাতের খাবার শেষ করে সবাই খুব আড্ডা দিচ্ছে । কেঊ কাঊকে নিয়ে দুষ্টামি করছে । মজার মজার গল্পের সাথে ছুটি শেষ হবার দুঃখ । সবাই মিলে ঠিক করল- কাল রাতের গাড়িতে ঊঠবে । আরমান বলল ঠিক আছে , কালই বলে দিবো আমারা বাংলো ছেড়ে দিচ্ছি । আবার সবাই আড্ডায়। শফিক বলল আচ্ছা তোদের কি মনে হয় আরমান কি আমাদের সাথে আছে ? আরমান বলল মানে কি ? শফিক বলল- গুরু তুমি তো তা ভাল করেই জান । আরমান হেসে বলল, মাথা পুরোটাই গেছে ? সবাই মিলে খুব খেপাচ্ছিল আরমান কে । ঠিক সেই সময় এ কঙ্কণার আওয়াজ । গান করছে কঙ্কণা ......

“কইতে গিয়ে তোমায় আমি থমকে গেছি আজ
সপ্ত রাঙা মনের কথা চোখে দিলো লাজ
এই তুমি কি জান না কি হয় কি ব্যথা
এই আমি যে তুমি ছাড়া ভীষণ একা “

আরমান আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না । মনে হচ্ছিল, এই গান দিয়েই কঙ্কণা তাকে সব বলছে । কঙ্কণার গান শেষ হতেই আরমান মাঊথ অর্গানটা ঠোঁটে লাগাল, ঠিক কঙ্কণার গানের সুরেই কঙ্কণাকে তার কথার উত্তর দিল । কঙ্কণা বুঝল হ্যাঁ বাবুর জন্য যেমন আমার মন কেমন কেমন করে , ঠিক তেমনি বাবুর ও । কঙ্কণা আস্তে আস্তে ঊপর থেকে নেমে আসল । বাংলোর দিকে তাকিয়ে দেখল কাঊকে দেখা যায় কিনা । না বাবুর সাথে কেঊ একজন দাঁড়িয়ে কথা বলছে । সে অপেক্ষা করতে লাগল । বাবূ একা হলেই বাবুর কাছে গিয়ে বলবে , বাবূ তোমার জন্য জানি আমার মন কেমন করে , তোমায় ছাড়া আমি বাঁচবো না । তোমার সাথে আমাকে নিয়ে চল । ভাবতে ভাবতে সে আরমানকে একা পেয়ে ওর সামনে গেল । ডাক দিল এই বাবূ শোন ! আরমান বুক টা ধাক করে ঊঠল । কঙ্কণাকে দেখে প্রথমে ভাবল কল্পণা, পরে দেখল না সত্যি কঙ্কণা ! আরমান জিজ্ঞেস করল তুমি এতো রাতে ? কঙ্কনা বলল- জানিনে কেন ? আরমান বলল- কিছু বলবে ? কঙ্কণা হূম, বলব । আরমান বলল , বল । কঙ্কণা এখানে নয় কেঊ দেখে যাবে , ওদিকে চল , বলেই আরমানের হাত ধরে নদীর ধারে চলে গেল । এক মুহূর্ত আর সইতে পারল না দূরত্ব । দৌড়ে গিয়ে আরমানের বূকে পড়ল । খূব শক্ত করে তাকে ধরে রাখল । আরমান অনুভব করল- তার খালি লাগা বুকটা ভরে গেছে । সে আর পারল না নিজেকে ধরে রাখতে । দু'হাত দিয়ে কঙ্কণাকে নিজের আরো কাছে নিল । কঙ্কণা বলতে লাগল- বাবূ তোমায় ছাড়া আমি বাঁচবো না , আমায় নিয়ে চল । আরমান মুগ্ধ হয়ে শুনছিল । মনে হচ্ছিল এই মুহূর্তে তার চেয়ে সুখী কেঊ নেই। আরমান কঙ্কণাকে সামনে ধরল বলল- কঙ্কণা আমিও তোমাকে ............ বলতেই হঠাৎ কে যেন বলল, এই কে ওখানে ? কঙ্কণা তাড়াতাড়ি আরমানকে ছেড়ে দিল । বলল বাবু চল । কেঊ দেখলে মারা পড়ব । তারপর ও কঙ্কণা আবার শুনতে পেল কে ওখানে ? আর এক মুহূর্ত দেরী না করে কঙ্কণা আরমানকে নিয়ে ওখান থেকে পালিয়ে এল ।আরমানকে বলল, যাও ঘুমিয়ে পড় সকালে নদীর ধারে এসো , বলেই চলে গেল । আরমান খুব আনন্দ নিয়ে ঘুমাতে গেল । সকালে ঘূম ভাঙ্গল কঙ্কণার বাবার কান্নার আওয়াজে । তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বেরোল । দেখল মুরাং চাং কাঁদছে , আরমান জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে ? কঙ্কণার বাবা বলল, বাবু আমার মেয়েকে বাঁচাও। কে যেন শান্তি বাহিনীকে খবর দিয়েছে যে , আমার মেয়েকে তোমার সাথে রাতে নদীর ধারে দেখেছে , ওরা আমার মেয়েটাকে মেরে ফেলবে । ওকে বাঁচাও । এই মেয়ে ছাড়া যে আমার আর কেঊ নাই । আরমানের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল । কি করবে সে । তার বাবা বার বার কেঁদে বলছিল শান্তি বাহিনী ছাড়লেও গাঁয়ের মানুষ আমার মেয়েকে মেরে ফেলবে । বাবু আমি সব জানি । আমার মেয়ের প্রাণ ভীক্ষা দাও আমায় । বাবূ ফিরে যাও । সবাই মিলে ভাবতে লাগল কি করা যায় । প্রথমে ওরা পুলিশে খবর দিল । তারপর কঙ্কণার বাবার পিছু পিছু সবাই পুলিশের সাহায্য নিয়ে শান্তিবাহিনীর আস্তানায় গেল । ভয়ঙ্কর এক জায়গা । সবাই অস্ত্র হাতে । এক কোণায় দেখল কঙ্কণাকে বেঁধে রেখেছে । ওর গায়ে আঘাতের চিহ্ন । আরমান সহ্য করতে পারল না, যেতে চাইল । কিন্তু বন্ধুরা তাকে বাধা দিল । অপেক্ষা কর । পুলিশকে তাদের কাজ করতে দেয় । আমাদের একটু ভুলে কঙ্কণার জীবণ যেতে পারে । আরমান নিজেকে সামলে নিল । পুলিশ অত্যন্ত চালাকির সাথে শান্তিবাহিনীর সেই গ্রুপটাকে আটকাল । দু'জন মারা গেল, বাকীদের নিয়ে পুলিশ চলে গেল । এদিকে কঙ্কণাকে বাঁধন থেকে খুলে আরমান তাকে তুলে দাঁড় করালো । কঙ্কণার কপালে রক্ত, গায়ে মারের দাগ ! আরমান কষ্টে মরে যাচ্ছিল । কি করে একটা মেয়েকে ওরা এভাবে অমানুষের মতো মারতে পারল । কঙ্কণার বাবাকে বলল, ওকে নিয়ে যান । কাল কথা হবে ।

সেই রাত ওরা কেঊ ঘুমাতে পারল না । আরমান বুজতে পারল কাল সকালেই হয়তো কঙ্কণাকে নিয়ে আবার শালিস বসবে । সে কঙ্কণার ভালোর কথা চিন্তা করে একটা সিদ্ধান্ত নিল , না কঙ্কণাকে তার বাবার কাছেই ফিরিয়ে দিবে । ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ল । সে রাতে আর তাদের ফিরা হল না । পরের দিন সকালেই না বলে চলে যাবে ভাবল , সকাল হতেই তারা একবারেই ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়ল । ভাবল না বলেই যাওয়া ভাল । কিছু রাস্তা যেতেই খূব চ্যাঁচামেচি শুনল । এগিয়ে গিয়ে সবাই দেখল কঙ্কণা আর তার বাবার বিচার হচ্ছে । কঙ্কণা কে রাতের আধারে কারো সাথে দেখেছে, আরমান আর সবাই সামনে গিয়ে দাঁড়াল । বলল থামুন কি করছেন আপনারা । নিরাপরাধ দু'জন মানুষকে কেন এই অমানুষিক শাস্তি দিচ্ছেন ? কঙ্কনার শাস্তি নির্ধারণ করা হল গ্রামের এক বুড়োর সাথে তার বিয়ে দিবে । আরমান কিছুতেই মানতেপারল না । কঙ্কনা চিৎকার করে কেঁদে বলল বাবু আমাকে নিয়ে যাও, আর অমনি গ্রামের মানুষ ওর ঊপড় চড়াও হল । ইট মারতে লাগলো । আরমান সহ্য করতে না পেরে কঙ্কণার সামনে গিয়ে দাড়ায় । বলে কি করে ভাবলে তোমায় আমি ভালবাসি ! আমার সাথে নিয়ে যাব? কেন আমায় এগুলোতে জড়াচ্ছ ? কখনই আমি তোমায় নিয়ে ভাবিনি । গ্রামের বিচারকদের উদ্দেশ্যে বলল এদের ছেড়ে দিন, সেদিন আমি ছিলামনা , হয়তো অন্য কেঊ ছিল , আমি জানিনা সে কে , আমি চলে যাচ্ছি । দয়া করে এদের ছেড়ে দেন। আমার সাথে কঙ্কণার কোণ সম্পর্ক নেই । খূব হৈ চৈ হল । তারপর কঙ্কণা কে শাসিয়ে তাকে আর তার বাবাকে ছেড়ে দেয়া হল । আরমান আর পিছু না ফিরে সামনে হাঁটতে শুরু করল । বন্ধুদের বলল তাড়াতাড়ি চল । কঙ্কণা পিছন থেকে ডাক দিল দাড়াও বাবু । আরমান থামল না , কারণ সে কঙ্কণার কোন প্রশ্নের জবাব দিতে পারবে না । কঙ্কণা দৌড়ে এসে আরমানের সামনে দাঁড়াল , বলল আমার দিকে তাকিয়ে বল তুমি আমায় ভালবাস না ? আরমান নিজেকে সামলে নিয়ে বলল না , তোমার আমার কোন মিল নেই , কখনো হবার ও নয় , আমি যাই , তুমি ভালো থেক । কঙ্কণা কাঁদতেই লাগল - আর বলতে লাগল কেন মিথ্যে বলছ বল ? আরমান ওর হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল আমায় ক্ষমা কর , আমি যাই কঙ্কণা । কঙ্কণা বলল যাও , তবে মাথার দিব্যি রইল কখন ফিরে এসোনা , তাহলে আমার মরার খবর শুনবে । আরমান আর এক মুহূর্ত দেরি না করে চলে গেল । বাসে বসে সব ভাবতে লাগল , কল্পনার মতো লাগছে সব , কিছুতেই মন কে বুঝাতে পারছে না , ওর বুক টা চিড়ে যাচ্ছিল । কঙ্কণা এখন কি করছে ? এসব ভাবতে ভাবতেই পুরো গাড়ি গেল । নিজের কর্মস্থলে পৌছে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করল । সে অবাক হল কঙ্কণার একটা ছবিও তোলা হয়নি ! কোন সৃতি নাই শুধু ঐ ফুল টা ছাড়া । অনেক বছর কেটে গেছে । বন্ধুরা বাবা মা অনেক চেষ্টা করেছে বিয়ে করানোর জন্য কিন্তু পারেনি । কেন জানি আরমানের মন সায় দেয়নি । অনেক বার ভেবেছে কঙ্কণার কাছে যাবে । ওকে নিয়ে আসবে , কিন্তু কঙ্কণার সেই দিব্যি ভুলতে পারেনি । যদি সত্যি গিয়ে কঙ্কণা কে না পায় !

প্রায়ই ৮ বছর পর আবার সেই রাঙামাটি যেতে হচ্ছে অফিসের কাজে । আগের চাকরি পালটে নতুন চাকরিতে । বনে বনে ঘুরে বেড়ানোই তার কাজ । ফরেস্ট অফিসার সে, রাঙ্গামাটি এসে নামতেই পুরনো অনেক সৃতি তার মনে হতে থাকলো । বার বার জানতে ইচ্ছে হল আচ্ছা কঙ্কণা কেমন আছে ? আজ অফিসের কাজ শেষ করেই ভাবল কঙ্কণার খোজ নিবে । কাজ শেষ করতে প্রায়ই বিকেল হল । ও সোজা অফিস থেকেই কঙ্কনাদের বাড়ি গেল , অনেক বদলে গেছে সব কিছু । আরমান ডাকল কেঊ আছেন ? আওয়াজ শুনে কঙ্কনার বাবা বাইরে আসলো । জিজ্ঞেস করলো কে ? আরমান বলল আমি । দেখল কঙ্কনার বাবা অনেক বূড়ো হয়ে গেছে । খূব দুর্বল । কাশছিল অনবরত । আরমান এদিক ওদিক কঙ্কণাকে খুঁজছিল । কঙ্কনার বাবা আরমান কে চিনল , বলল কেমন আছ বাবু ? আরমান বলল ভাল আছি , আপনি কেমন আছেন ? কঙ্কণার বাবা বলল দেখতেই তো পাচ্ছ । আরমান বারবার এদিক ওদিক তাকাচ্ছিল দেখে কঙ্কনার বাবা বলল- কাকে খোজ বাবু ? সে তো নাই । তুমি যাওয়ার পর আমার মেয়েটার কি হল জানিনে , কাল ব্যাধি ধরল ! খাওয়া নাই দাওয়া নাই মেয়ে আমার পাথর হয়ে গেলো ,শুধু কাঁদত , আমি একবার বলেছিলাম মা রে বাবুকে খবর দেই ? বলল না বাবা থাক যদি সে না আসে , আর বাবুকে পাবে কোথায় তার যে কোন ঠিকানা জানা নাই । সেই যে মেয়ে আমার বিছানায় পড়ল তোমার শোকে আর উঠতে পারল না । শুধু একটা কথাই বলত বাবু ফেরো একবার আমার কাছে , আমার মাথার দিব্যি তূলে নিলাম , আমার যে অনেক কষ্ট হয় , নিয়ে আমায় তোমার কাছে । অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি কিছুতেই কিছু হয়নি । একদিন ঘরে এসে দেখি মেয়ে আমার বিছানায় কাতরাচ্ছে , মুখে ফেণা , কষ্ট সহ্য করতে না পেরে বিষ খেল , মরার আগে তোমার জন্য একটা জিনিস দিয়ে গেছে । বলেছে কখনো তোমার দেখা পেলে তোমায় যাতে দেই , বলেই ঘরে গেল । ময়লা একটা ভাজ করা কাগজ দিল । বলল এতে কি লিখা আছে আমি জানিনা , অনেক যত্ন করে রেখে দিয়েছি বাবু , আমায় একটু পড়ে শোনাবে ? আমার মেয়ের শেষ কথা গুলি ।

আরমান যেন পাথর হয়ে গেল , হাত পা নাড়ার শক্তি পর্যন্ত হারিয়ে ফেলল । কাঁপা কাঁপা হাতে চিঠিটা নিল , পড়তে লাগলো ।

বাবু ,

আমি জানতাম তুমি আসবে , একদিন আমায় খুঁজবে , আর কেঊ দেখুক না দেখুক আমি তোমার চোখে আমার জন্য মায়া দেখেছি , তা মিথ্যে ছিল না । তাই আমায় খুঁজতে এসে যদি আমার কিছুই না পাও -তাহলে যে অনেক কষ্ট হবে তোমার, যেমন আমার হচ্ছে এখন তোমায় না পেয়ে ! বাবূ একবার আমার কবরে আসবে ? আমি জানি আসবে , কেন জানি মনে হয় আমি আর বাচবো না , এই জীবনে আর তোমায় দেখা হবেনা । বাবু আমায় মুক্তি দাও তুমি । বল আমায় তুমি ভালবাস । আমার অনেক পিপাসা বাবু । তোমার চোখের পানি দিয়ে আমার কবরের বুকটা ভিজিয়ে দাও , আমায় তুমি বিদায় দাও বাবু । নতুন জীবন শুরু কর । আমায় মুক্তি দাও । আমি যে কষ্টে আছি ।

তোমার কঙ্কণা ।


আরমান আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না । কঙ্কনার বাবাকে নিয়ে তার কবরে গেল। ওখানে নিজেকে সামলাতে পারল না । সত্যি আরমানের চোখের জলে কঙ্কনার কবরের বুক ভিজল । কঙ্কণার বাবা আরমান কে ওখান থেকে নিয়ে আসল । আরমান ফিরে আসল গাড়িতে ঊঠবে বলে । বার বার কঙ্কণার চিঠিটা পড়ছিল আর সেই ৮ বছর আগের কঙ্কণাকে দেখতে লাগল , এ তুমি কি করলে কঙ্কণা ! কেন?

খূব মন খারাপ নিয়ে ঢাকা ফিরল । সবাইকে জানাল বিয়ে করবে । নিজেও মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছিল । মায়ের পছন্দেই বিয়ে করল । বউ নিয়ে বাড়ি ফিরল । বাসর ঘরে বৌ কে রেখে বারান্দায় গেল । কঙ্কনার দেয়া চিঠিটা পড়ল । আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল আজ তোমায় আমি মুক্তি দিলাম কঙ্কণা , যেমন তুমি আমায় দেখতে চেয়েছ ঠিক তেমনি পাবে । বলেই চিঠিটা কুটি কুটি করে ছিঁড়ে আকাশের দিকে ছুঁড়ে মারল । কিছুক্ষণ একা দাড়িয়ে থেকে ঘরে আসল , এক নতুন জীবন শুরু করতে যা শুধু কঙ্কণার দাণ । সব পিছনে ফেলে নতুন বৌ এর হাত ধরে বলল আমায় একটা ভালবাসার জীবন দেবে ? চলো আজ থেকে আমরা নতুন জীবনে যাই । বৌ এর হাত নিজের হাতে নিয়ে আদর করল আরমান । আর এর সাথেই শুরু আরমানের সম্পূর্ণ নতুন জীবন ।




(গল্পটা অনেক বড় হয়ে গেল আর কিছুটা সিনেমার মত হয়ে গেল মনে হয়:P)
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:২৩
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×