অতি সম্প্রতি ঘুরে এলাম সিলেট বিভাগের কিছু অংশ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর এই বিভাগ, বিশেষ করে বর্ষাকালে। যদিও হাওর বাওর আমার দেখা হয়ে ওঠে নাই। শুধু সবুজ প্রকৃতি, চা বাগান, নদি, খাল, ঝর্ণা, জলপ্রপাত দেখতেই আমার দু'তিন দিন কেটে গেল। ঝর্ণা, জলপ্রপাত যদিও নেমে এসেছে মেঘালয়ের পাহাড়গুলো থেকে, তবে সৌন্দর্য্যমন্ডিত করেছে বাংলাদেশকেই।
সিলেট থেকে গোয়াইনগাট উপজেলা প্রায় ৬৫/৭০ কিলোমিটার পথ। ছয় জনের একটা দল আমরা। সাথে পাঁচ বছর আর সাত বছরের দু’টো বাচ্চা। ওদের ঘুম থেকে উঠতে দেরী হতো বলে আমরা যে তিনটে দিন সিলেটে ছিলাম, একদিনও খুব ভোরে বেরোতে পারিনি। সকাল ন’টায় সবার সকালের নাশতা কিনে নিয়ে বেরোলাম। দোকানে বসে খেতে আরো দেরী হবে। একটা সাত সিটের মাইক্রো দু'দিনের জন্য ভাড়া করে রেখেছিলেন আমাদের এক বন্ধু। এই গাড়ীতেই রওয়ানা হলাম আমরা।
সিলেট শহর পেরিয়ে যাবার পরেই শুরু হলো দু’পাশে সবুজ ধানের চারার ক্ষেত। কোথাও ছোট বড় পুকুর। ফুটে আছে লাল সাদা শাপলা। আমাদের বেরসিক মনিপুরী ড্রাইভার আমাকে শাপলার ছবি তুলতে দেয়নি। আমার খুব রাগ হচ্ছিল ওর ওপরে, কিছুই বলতে পারছিলাম না।
আরো কিছুদূর এগিয়ে যাওয়ার পরেই শুরু হলো দু’পাশে বিস্তীর্ণ জলরাশি। মাঝে মাঝে একেকটা দ্বীপবাড়ি। প্রতিটি বাড়ির সাথে একটা করে ডিঙি নৌকা বাঁধা, যা এই বর্ষায় তাদের একমাত্র বাহন। এভাবে ঘন্টা দুই যাবার পরে রাস্তাটা একটু খারাপ, মাঝে মাঝে ডুবেও গেছে। এর মাঝেই এগিয়ে চলেছি আমরা। একবার অবশ্য ড্রাইভার আমাদের অনুরোধে থামলেন, কিছু ছবি তুললাম আমরা। দূরে দেখা যাচ্ছিল ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়ের সারি। সমস্ত পাহাড় জুরেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ছোট বড় ঝর্না। যতগুলো ঝর্না নেমে এসেছে, সবই ভারত থেকে। এমনই একটা ঝর্না দেখার জন্য আমরা বিছানাকান্দি যাচ্ছি।
দু’পাশে এমনই বিস্তীর্ণ জলরাশি।
মাঝে মাঝে রাস্তাও পানিতে ডুবে গিয়েছিল।
একসময় পৌছে গেলাম গোয়াইনঘাট উপজেলার পীরেরবাজারে। এখান থেকে নৌকায় যেতে হবে। যেতে, ঘুরে দেখতে আর আসতে ঘণ্টা চারেক সময় লাগবে আমাদের। অনেক দর কষাকষির পরে দুই হাজার টাকায় নৌকাভাড়া মিটল। উঠে পড়লাম আমরা ছয় জন।
নৌকা ছাড়ার পরে চারিদিকে দেখতে দেখতে বিস্মিত আমি! দুইপাশে সবুজ গ্রামের মধ্যে দিয়ে চলেছি আমরা। এই এলাকায় পাথর তুলে স্তুপ করা আছে। নদিতে, মাটিতে, বালিতে সবখানেই শুধু পাথর। স্থানীয় অধিবাসীদের বেশীরভাগ মানু্ষের জীবিকা পাথর তোলা! একপাশের গ্রাম একসময় শেষ হয়ে গেল, শুরু হলো শুধু পাহাড় আর পাহাড়। পাহাড়ের দেয়াল যেন নেমে এসেছে ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে। আরেকপাশে বাংলাদেশের সবুজ গ্রাম।
মহিষ এভাবে পানিতে মুখ ডুবিয়ে নিচের ঘাস-পাতা খায়, আমি এই প্রথম দেখলাম। আগে শুধু দেখেছি পানিতে গোসল করতে বা গরম লাগলে পানিতে সারা শরীর ডুবিয়ে রাখতে।
এমনই কখনও দু'পাশে সবুজ গ্রাম, কখনও একপাশে পাহাড়ের সারি পেরিয়ে চলেছি আমরা।
একসময় পৌছে গেলাম বিছানাকান্দি। চারিদিক ছোট বড় পাথর, তার মাঝে বয়ে চলেছে ঝর্ণার স্রোতধারা। ঝর্ণাটা বেশ দূরে, কিন্তু তবুও পানিতে বেশ স্রোত। পাথরের উপর দিয়ে এগিয়ে গেলাম বাংলাদেশের শেষ সীমানা পর্যন্ত! ছবি তুলছিলাম আর বিস্ময় নিয়ে দেখছিলাম! ধীরে ধীরে পর্যটকের ভীড় বাড়তে শুরু হলো। ঘন্টাখানেক থেকে আমরাও রওয়ানা হলাম পান্থুমাই জলপ্রপাতের দিকে।
গোয়াইনঘাট উপজেলার বিছানাকান্দির পথে যে সৌন্দর্য্য আমি দেখেছি, তা' শুধুই উপভোগ করার। ছবির ফ্রেমে ধরে রাখার মত নয়। স্মৃতির এলবাম-এ ভরে রাখলাম আমি এই ছবিগুলো।
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:১৭