প্রয়াত লেখক আহমদ ছফার বাঙালি মুলমানদের মন নিয়ে একটি লেখা ছিল। যার নাম ছিল বাঙালি মুসলমানের মন , লেখায় তিনি বিভিন্ন ভাবে বাঙালি মুসলমানের মন নিয়ে বাস্তব কিছু তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করেছিলেন।তিনি বলতেন বাঙালি মুসলমানের মন বড় অদ্ভুত। এক কথায় বলতে গেলে এই মানুষ গুলোর মন এক সাথেই অনেক কিছুই চায়। ভালো কে ও চায় আবার মন্দ কে ও মন থেকে সরাতে পারেনা।মুসলমানদের এই অদ্ভুত বিষয় টি আজ শুধু বাঙালির মাঝে নেই , এটি আজ বিশ্ব জনীন। হয়ত আহমদ ছফা আজ বেছে থাকলে হয়ত তার লিখাটিকে অন্যভাবে সাজিয়ে লিখতেন। বাঙালির জায়গায় তিনি বৈশ্বিক মুসলমানের মন বসাতেন।
একটি জাতি যখনি তার আত্ম পরিচয় ভুলে যায় , ইতিহাসে তার গৌরবজজল ক্ষণ গুলো শুধু মাত্র বইয়ের মলাটে বন্ধি হয়ে যায়। আত্মপ্রসাদ আর দুনিয়ার চাকচিক্যের মোহে অন্ধ হয়। তখনি তার মন এবং মননের স্থিরতা হারিয়ে যায়। কোনটি ভালো , কোনটি মন্দ সেই বিচার বুদ্ধি লোপ পায়। তখন সে একই সময় দুটোকেই একসাথে কাছে পেতে চায়।
সাম্প্রতিক সময়ে সেটির প্রকোপ দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই সময়ের মধ্য প্রাচ্যের কথাই ধরুন।সিরিয়াতে যখন কথিত সিয়া সুন্নি যুদ্ধ চলছে , ঠিক তখনি আরব বসন্তের হাওয়ায় চড়ে সামনে আসলো আই এস এস নামক আরেক গোষ্ঠী। এরা যখন একের পর এক নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে কথিত খেলাফত কায়েম করছে। এবং বাসার আল আসাদের মাথা ব্যথার কারন হয়ে দাড়াচ্ছে তখন আমরা তাদের কে বাহবা দিচ্ছি।আবার আই এস এস এর হাত থেকে বাসার কে বাচাতে যখন পুতিন , ইরান আর এরদোগান এগিয়ে আসলো তাদের কেও ওয়েলকাম করছি। এখানেই শেষ নয় এই অদ্ভুত মন এই সময়ে ওবামা এবং ক্যামেরুন কে ও বড় মিস করে।এই বহু মাত্রিক দন্ধে মুসলমানদের মন দিনকে দিন হারাচ্ছে আত্মবিশ্বাস।
আর মুসলমানদের তাল বেতালের অবস্থার সুযোগ নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব আর তাদের লেলিয়ে দেয়া এক শ্রেনীর বুদ্ধিজীবী আর মিডিয়া এগিয়ে এলো ধর্মনিরেপক্ষতার স্লোগান নিয়ে। আর অবাক করা বিষয় হলো ওদের কাছে ধর্মনিরেপক্ষতা মানে ইসলাম ধর্ম কে মাইনাস করা। আর সেই স্রোতে মিশে চলা এক জাতি আমরা।
দুর্ভাগা এই জাতিকে নিয়ে ঢাল বানিয়ে ঠিকই খেলে যাচ্ছে পৃথিবীর পরাশক্তিগুলো। আমাদের অদ্ভুত মন এক এক সময়ে এক এক শক্তিকে মন দিয়ে যাচ্ছে। আর ঠিক ই কিছু দিন পর পর মন ভাঙ্গার বেদনায় অশ্রু জলে ভিজে যাই।
আত্মপরিচয়ের কথা লিখতে গিয়ে এই হাবি জাবি কথা গুলো লিখতে হলো। মূল বিষয় হলো জাতীয় ক্রিকেট দলের প্লেয়ার লিটন দাস কে অন্তর থেকে ধন্যবাদ দিতেই এই অগোছালো লেখা।
অনলাইন পত্রিকা বিডি নিউজ ২৪ এ দেখলাম একটি রিপোর্ট : লিটন দাস ধর্মীয় বিদ্বেষের শিকার। শারদীয় দুর্গা পূজার শুভেচ্ছা জানিয়ে হিন্দুদের দেবী দূর্গার ছবি সম্বলিত স্ট্যাটাস দিয়ে ধর্মীয় বিদ্বেষের শিকার হয়েছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্য লিটন কুমার দাস। লিটন দাস ও পাল্টা জবাব দিলেন বিদ্বেষ কারীদের। এবং তার ধর্মীয় রীতিনীতির পক্ষে জোরালো অবস্থান নিলেন। আর এটি উচিত ও বটে তার ধর্মের পক্ষে সে অবস্যই কথা বলবে। শুধু সেই নয় তার পক্ষে কলম ধরল মিডিয়া গুলো।
পাঠক মনে থাকার কথা , গত কোরবানির ঈদের সময় মুশফিকুর রহিম যেইনা মাত্র তার কোরবানী করার ছবি ফেইসবুক এ পোস্ট করলো। আর তখনি তথাকথিত প্রগতি আর চেতনার দন্ড ওয়ালারা গেল গেল রব শুরু করে দিল। চ্যানেল আই এর ফ্যান পেজে এই ছবির বিরুদ্ধে লেখা হলো। ধর্ম নিরেপক্ষতার প্রমান রাখতে মুশফিক ও তার ফেইসবুক ওয়াল থেকে মুছে দিল তার কোরবানী করার পশুর ছবিটি। তখন তো কোনো চেতনা দন্ড ওয়ালারা মুশফিকের পাশে দাড়ায়নি। লিখেনি কেউ মুশফিকের ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর আঘাত হয়েছে এই রকম এমন কোনো লিখা। মুশফিক ও তার আত্মপরিচয় ভুলে আধুনিক প্রগতিশীল সাজতে গিয়ে ধর্মীয় বিশ্বাস কে কবর দিল।
মেসি কিংবা রোনালদো যখন গোল করে তাদের স্রষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বুকে ক্রস চিন্হ আকে তখন আমাদের চোখে সেটি দোষনীয় মনে হয় না। কিন্তু যখন পাকিস্তানের মোহাম্মদ হাফিজ কিংবা মিসবাহুল সেঞ্চুরি করে ক্রিকেট মাঠে আল্লাহর কাছে সেজদা দিবে তখন সেটিকে আমরা দৃষ্টিকটু ভাবি। বড়ই হিপোক্রেট মন আমাদের।
হিন্দি ছবি আমি কখনো পছন্দ করতামনা। কলেজ লাইফ এ বন্ধুদের সাথে আড্ডায় তাদের মন রাখতে অনেক সময় কিছু হিন্দি ছবি দেখা হয়েছিল। আমার দেখা এমন কোনো হিন্দি ছিলনা যেটি তে তাদের দেব দেবীর মন পেতে পুজো দেখানো হয়নি।
কিন্তু কখনো শুনেছেন অমিতাভ বচ্চন কোরবানির সময় পশু কোরবানী দিয়েছে কিংবা রমজানের রোজা রেখেছে , কিন্তু ঠিকই শাহরুখ খানের বাড়িতে নিয়মিত গীতা পাঠ করা হয় , আর পুজোর সময় পূজা করা হয়।
পশ্চিমা দেশে অনেকদিন থেকেই আছি ওদের সাথে মিশেছি ,লেখা পড়া করেছি। অর্ধ নগ্ন মেয়েদের গলায় কিংবা ছেলেদের গলায় ঠিক ই ওদের ক্রুশ চিন্হ লকেট ঝুলছে। কিন্তু আমার চোখে আজ ও পড়েনি কোনো মুসলমান ছেলে কিংবা মেয়ের গলায় আল্লাহ লিখা কোনো লকেট।
হয়ত বিষয় গুলো খুব ই সিলি বাট ফেলে দেয়ার মত নয়। এই ছোট্ট বিষয় গুলো থেকে মানুষের তার মূলের পরিচয় বহন করে।
অমুসলিম আস্তিকরা হয়ত তাদের ধর্মের প্রাকটিসের ব্যাপারে খুব সিরিয়াস নয় , কিন্তু তাদের আত্ম পরিচয়ের ব্যাপারে খুব ই সিরিয়াস। আর ঠিক উল্টো আমাদের মুসলমানদের ক্ষেত্রে।
আত্মপরিচয় হীন জাতি শুধুমাত্র তার ধর্মীয় বিধান পালনের মাধ্যমে বিশ্বের মোড়ল হতে পারেনা। বিশ্ব দরবারে আসন নিতে হলে ধর্মীয় বিধান পালনের সাথে আত্মপরিচয় কে ও গুরুত্ব দিতে হয়।
এত লম্বা বয়ান শেষ করছি ক্রিকেটের টেস্ট অধিনায়ক মুশফিক কে ধিক্কার জানিয়ে । একজন প্লেয়ার শুধুমাত্র তার জাত ভুলে শুধুই একজন প্লেয়ার নয়। মাত্র দশ পার্সেন্ট হিন্দুর একজন হয়ে ও তার আত্মপরিচয় ধর্মীয় পরিচয় দিতে ও লজ্জিত হয়না। সাবাস লিটন দাস সত্যি ই তুমি অনন্য,। ধিক মুশফিক তোমাকে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:৪৬