somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মায়াপার্ক (গল্পঃ কল্প কাহিনী)

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথমে কাউন্টার থেকে দশ টাকা মূল্যের প্রবেশ টিকেট নিতে হয়। এর পর বাঘের হাঁ করা মুখ। ভয়ে গা ছমছম করে। আমরা প্রায় দশ বারো জন ছাত্র। প্রত্যেকের হাতে একটা করে টিকেট। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে পার্কের প্রবেশ পথে প্রকান্ড এক বাঘ হা করে আছে। এই বাঘের মুখ দিয়ে পার্কের ভিতর প্রবেশ করতে হবে। আমি খুব সহজেই বাঘের মুখে ঢুকে গেলাম একদম পেটের ভিতর। না কোন ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আছে শুধু আনন্দ আর আনন্দের বন্যায় ভেসে যাওয়ার রঙ বেরঙের কত কিছু। তবুও ওরা আসছে না। আমি যতই ডাকছি, 'এই শফিক, কিরে তোরা ভিতরে আয়।'
ওরা প্রায় সমস্বরে বলল, 'আসবোনা ভয় করে।'
আমি চিৎকার কর বললাম, 'ভয় কিসের ? ওটাতো আসল বাঘনা। বাঘের মুখোস গেট, কংক্রিটের তৈরি। তাড়াতারি আয়, ভিতরে অনেক সুন্দর সুন্দর জিনিস।'
ওদের ভিতর কেউ কেউ বাঘের মুখোসধারী গেটটাকে পরীক্ষা করে দেখলো। আমিও তখন গেটের কাছে চলে এলাম। মনির আমাকে ডেকে বলল, 'এই সোহান, কোন সমস্যা নাইতো ?'
আমি বললাম, 'দেখোস না, আমি দিব্যি কি রকম ঘুরে বেড়ালাম। ভিতরে চমৎকার একটা বিশ্বমানের পার্ক। লন্ডন আমেরিকায় যে রকম পার্ক থাকার কথা। সিংগাপুর, থাইল্যান্ডের পার্কের মতো চমৎকার চমৎকার রাইড। জলদি আয়।'
ওরা এবার হুরমুর করে পার্কের ভিতরে ঢুকতে শুরু করেও থমকে গেল। গেটে বাঁধা পড়েছে। আগে চেকিং বক্সে টিকেটটা ঢুকাতে হবে। গেটে কোন লোকজন নেই, আছে ডিজিটাল চেকিং বক্স। চেকিং বক্সে একটা টিকেট ঢুকালেই একজনের জন্য গেট খুলে যাবে। ব্যবহৃত বা নকল টিকেট ঢুকালেই সে গেটে আটকা পড়ে যাবে এবং সাথে সাথে এমারজেন্সি সাইরেন বাজতে শুরু করবে। সাইরেনের শব্দ শুনে কর্তৃপক্ষ এসে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করবে। সঠিক টিকেট দিয়ে ভিতরে ঢুকলেই ফেরত টিকেট বেরিয়ে আসবে। এই ধরনের ডিজিটাল চেকিং বক্স বাংলাদেশে প্রথম।
চেকিং বক্সে টিকেট ঢুকিয়ে ঢুকিয়ে শফিক, মনির সহ ওরা সকলেই মায়াপার্কের ভিতরে চলে এলো।

:২:
মায়াপার্কের অবস্থান দ্বীপ জেলা ভোলার চরফ্যাশনের বিচ্ছিন্ন এলাকা চরকলমী ইউনিয়নের মায়পাতা গ্রামে। বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় কলমী ইউনিয়নটি ভোলা ও চরফ্যাশনের অন্যান্য ইউনিয়ন থেকে মায়ানদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন ছিল। মায়ানদীতে কলমী ব্রিজ হওয়ার পর এই এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি হয়। এখন এই ইউনিয়নকে তিনটি ইউনিয়নে ভাগ করা হয়েছে। হয়তো সেদিন আর দূরে নয় যেদিন কলমীকে উপজেলায় পরিনত করা হবে। এখন মায়ানদীর উপর আরও একটি ব্রিজ নির্মিত হচ্ছে যে ব্রিজটি হচ্ছে ভোলা জেলার সবচেয়ে বৃহত্তর ব্রিজ। এই ব্রিজ কলমীকে যুক্ত করবে উন্নতির সোপানের সাথে।
মায়াপাতা ব্রিজের নীচে মায়ানদীর কোল ঘেসে মায়াপাতা গ্রামের মায়াপার্কটি অবস্থিত। আনজুরহাট হাইস্কুলের আমরা দশ বারো ছাত্র আনন্দে মেতে উঠতে পার্কটিতে ছুটে এলাম।

:৩:
শাকিলের আনন্দের শেষ নেই। সে এ রাইডে ও রাইডে (রাইড হচ্ছে পার্কের অত্যাধুনিক খেলনা বিশেষ) সব রাইডেই চড়ে চড়ে ক্লান্ত। সবচেয়ে মজার রাইড হচ্ছে ঝকঝকাঝক ট্রেন। শুধু ভোলা নয় পুরো বরিশাল অঞ্চলের লোকজনই ট্রেনের সাথে অপরিচিত। এ মজার রাইডটি তাদেরকে ট্রেনের সাথেও পরিচয় করিয়ে দেয়। ট্রেনে চরে সমস্ত পার্ক ঘুরে দেখা যায়। দেখা যায় মায়ানদীকে এবং নদীর উপর নির্মিত ব্রিজটিকে। ট্রেনটি ঘুরতে ঘুরতে চলে যায় নদীর ভিতর। নদীর উপর বক্রাকারে ঘুরতে ঘুরতে উঠে যায় ব্রিজের কাছে। এর ব্রিজ দেখিয়ে ট্রেনটি ছুটে যায় পাতাল পুরীতে, মাটির নিচে। সেখানে আছে ভয়ংকর ভয়ংকর অজগর সাপ, বাঘ, ভাল্লুক। আছে ভুত, মানুষের কঙ্কাল ভুত, কালো মানুষ ভুত হঠাৎ করে আবছা আবছা অন্ধকারে ধপাস করে গায়ের উপর এসে পড়ে। ভয়ে পিলে চমকে যায়। মুখ ফুটে বেড়িয়ে আসে ভয়ংকর চিৎকার। এরপরই বুঝা যায় এসবই নকল। আনন্দের হাসি বেরিয়ে আসে মুখ থেকে। সবশেষে ট্রেন বেরিয়ে আসে পার্কের যথাস্থানে।
পার্কের সবচেয়ে ভয়ংকর রাইডটি আছে পার্কের মাঝখানে। এ রাইডটি থাইল্যান্ডের পাতায়া পার্কে আছে। হেলিকপ্টারের মতো সিটে বসিয়ে রাইডটি উড়াল দেয় শুন্যে। এরপর ঝুলতে ঝুলতে একের জনের ভয়টা সহনশীল করে উপরে নিচে চক্রাকারে ঘুরতে থাকে রাইডটি। অত্যন্ত ভয়ংকর অবস্থা। একেক জনের মাথা কখনো নিচে কখনো উপরের দিকে উঠতে থাকে। কারো পকেটে কিছু থাকলে তা মাটিতে পড়ে যায়। রাইডটিতে চড়ে আনন্দে বা ভয়ে চিৎকার করতে হয়। নতুবা ভয়টা বেড়ে যায়।
এখানে আছে রোলার কোস্টার, ওয়াটার কোস্টার সহ নানা প্রকারের রাইড। দুপুরের লাঞ্চের জন্য পার্কের মধ্যে একটি ফাইভস্টার সমমান রেস্তরা রয়েছে। একটা ক্যানেল ব্রিজ পার হয়ে মায়ানদীর উপর র‌্যালিং করা ফুল গাছে পরিপূর্ণ রেস্তরা। রেস্তরার পাশেই আছে একটা কৃত্রিম পাহাড়। পাহাড়ের ঝর্ণা বেয়ে জলধারা গিয়ে মিশে মায়ানদীতে।
সারাদিনে পার্কের এপ্রান্ত থেকে ও প্রান্তের সৌন্দর্য্য উপভোগ করে প্রায় সব গুলো রাইড চড়ে মুগ্ধপ্রানে যখন পার্ক থেকে বাহির হওয়ার পথ খুজছি ঠিক তখন দেখা গেলো উপরে ওঠার জন্য এক্সেলেটর (চলন্ত সিঁড়ি)। সবাই মিলে হৈহুল্লুর করে এক্সেলেটরে চড়ে উঠে গেলাম আরেক জগতে। চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্রের জগত। সৌর জগতের ক্যাপসুলে চড়ে এগিয়ে গেলাম মহাশুন্যের সামনের দিকে। পেয়ে গেলাম বাহির পথ। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলাম বাহিরে। পার্কের বাহিরে। বের হলাম একটা বাঘের লেজের ভিতর থেকে। পিছনে পড়ে রইল একটা বাঘের মুখ দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে লেজ দিয়ে বের হওয়ার চমৎকার অভিজ্ঞতা।

:৪:
আমি দাড়িয়ে আছি মায়াব্রিজের মায়াপাতা অংশের শেষ পিলারটির নিচে। কি চমৎকার ব্রিজটির নির্মান কৌশল। দেখার মতোই ব্রিজ এবং ব্রিজের কাজ। এসব দেখলে মন চায় ইঞ্জিনিয়ার হবো। দেশ বিদেশ ঘুরে ব্রিজ বানাবো, ইমারত বানাবো। বানাবো মনের মতো করে বিনোদন পার্ক। ব্রিজের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। শফিক, শাকিল, মনির ওরা সবাই নৌকা নিয়ে মায়ানদীতে ভেসে বেড়াচ্ছে। লোকজন আসে লোকজন যায়। কেউ আসে ব্রিজের কাজের সৌন্দর্য্য দেখতে। এরকম দেখার কিছুতো এঅঞ্চলের লোকজন সচরাচর দেখেনা। কেউ কেউ খেয়া পার হয়ে ওপারে চলে যায়। কেউ কেউ হয়তো অপেক্ষা করে কবে নাগাদ আর খেয়া পার হতে হবেনা। ব্রিজ দিয়ে সাই সাই করে ছুটে যাবে কোন না কোন গাড়ী নিয়ে।
আমি পূর্বদিকের খোলা ধানক্ষেতের দিকে তাকিয়ে আছি। ধান ক্ষেতে সোনা ফলে আছে। কি সুন্দর দৃশ্য। কিন্তু এদৃশ্য দেখতে এসব অঞ্চলের লোক খুবই অভ্যস্ত। তারা আরও আধুনিক কিছু দেখতে চায়। যেমনটি আমি কল্পনায় দেখেছিলাম বিনোদনের অত্যাধুনিক মায়াপার্কটি।
না এখানে কোন পার্ক নেই, আছে ধান ক্ষেত। যা মৌসুম পাল্টালে বিভিন্ন রকমের ফসল ফলায়। তবে এখানেই হওয়ার কথা একটি সুদৃশ্য পার্কের। যেখানে দেশী কিংবা বিদেশী পর্যটকগণ ছুটে আসবেন। দেখবেন মায়াপাতা গ্রামে মায়াব্রিজের মায়াপ্রান্তে মায়ানদীর তীরে অবস্থিত মায়াপার্কটিকে। আমার কল্পনাও সে অপেক্ষায় অধীর।

রচনায়ঃ মিজান রহমান শ্রেষ্ঠ
রচনাকালঃ জানুয়ারী ২০১২
কলমীকণ্ঠে প্রকাশিত।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:৩৯
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×