.
.
বিয়ের সময় এতটা উপলদ্ধী হয়নি আলাদিনের। এখন যেটা হাড়ে হাড়ে উপলদ্ধী করছে তা অর্থ সংকট। বউয়ের নতুন শাড়ী, চুড়ি নানাবিদ বাজার করে বাবার জমানো টাকা শেষ। এখন ? চার মাস যেতে না যেতেই সংসারে টানাটানী। একটা কিছু করার জন্য হন্যে হয়ে চারদিকে ঘুরছে আলাদিন। কোথাও কোন কিছুর বন্ধবস্ত নেই। আলাদিনের বাবা আনজুরহাট বাজারে কাচামালের দোকান করতো। বাড়ীর চারদিকে যেটুকু জমি ছিল তাতেই খুচিয়ে খাচিয়ে সংসার চালিয়েছে। বাবা মারা যাবার দু’দিন আগে আলাদিনের নতুন বউ ঘরে আসে।
আরদিনের বাবা হঠাৎ করে কাহিল হয়ে পড়ল। ডাক্তার দেখিয়ে প্রেসার মাপিয়ে ঔষধ আনলো যেদিন সেদিনই রাতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। সকালে জ্ঞান ফিরলেও হাত পা আর নাড়াতে পারেনি। কথা বার্তা যা বলতে পারতো তার ১৪ আনাই বুঝা যেতনা। এর মধ্যে সে এতটি কথা সবাইকে বুঝাতে পারে। তা হচ্ছে, মরার আগে ছেলের বউ দেখার বড় শখ তার। সেদিনই দশম ক্লাশে পড়–য়া আলাদিনের ঘওে নতুন বউ এল।
আলাদিনের বাবা মারা গেলে তার মা, বউ, শশুর শাশুরী, পাড়াপড়শী সবাই বলে, কিছু একটা তো করে খেতে হবে। আলাদিন ছোটে কাজের সন্ধানে। সবার কাছে বিদায় নিয়ে আলাদিন বকশী থেকে লঞ্চে ওঠে।
॥২॥
চারদিক অন্ধকার। আলাদিন কিছুই দেখতে পায়না। দূরে মিটি মিটি একটা জ্বলছে। আলাদিন সেদিকে ছুটে চলে। না সে আগাতে পারেনা। কি করে আগাবে কিছুই দেখা যায়না দূরের একটি বিন্দুর মত আলো ছাড়া। তবুও ছুটে চলে। একসময় কে যেন চেচিয়ে বলে ছুটে যাও আলাদিন ছুটে যাও। সামনে যে বাত্তিটি দেখতে পাচ্ছ সেটা জাদুর বাত্তি। তুমি কি আলাদিনের বাত্তির গল্পটি শোননি ? তুমিই সেই আলাদিন, ওই বাত্তিটাই সেই জাদুর বাত্তি। আরও আরও জোড়ে ছুটে যাও , ওই বাত্তি তোমায় পেতেই হবে।
- হ্যাঁ ওই বাত্তি আমায় পেতেই হবে। আলাদিন চেচিয়ে বরতে থাকে। আমার অনেক কষ্ট, অনেক দু:খ। বাড়ীতে আমার মা, আমার বউ না খেয়ে আছে, আমার বাবা বেঁচে নেই। আমি কোন কাজ পাচ্ছিনা, ওই বাত্তিটা পেলে আমার দু:খ, আমার কষ্ট দূর হবে।
আলাদিন দৌড়াতে থাকে। হঠাৎ পা পিছলে পড়ে যায় আলাদিন। আবার উঠে দাড়ায় এবং বার বার পড়ে যায় আবার উঠে দৌড়াতে থাকে অন্ধকারে দূরের মিটিমিটি আলোর দিকে। তখন চারদিক আলোকিত হয়ে ওঠে। এখন সব পরিষ্কার দেখা যায়। আনন্দে আত্মহারা আলাদিন দৌড়াতে থাকে আলোর মাঝে আলোর খোজে। কিন্তু কন্টকাকির্ণ পথতাকে যেতে দেয়না। বিশাল দেহী কুন্ডলী পাকানো সাপ কুন্ডলী খুলে তেড়ে আসতে থাকে আলাদিনের দিকে। পাওয়ার সুখে হাসিতে জ্বলজ্বল করতে থাকা আলাদিনের মুখ কয়লার মত কলো হয়ে ওঠে আর সাপ ফনা তুলে তেড়ে আসে আরও কাছে। আলাদিন হাত তুলে প্রার্থনা করে, হে আমার প্রভূ আমাকে তুমি সুখের সন্ধানে প্রেরন কর।
প্রার্থনা শেষ চোখ খুলে আশ্চর্য হয়ে যায় আলাদিন। একি দেখছে সে- তার সামনেই জাদুর বাত্তি জ্বলজ্বল করতে থাকে। হাত বাড়িয়ে প্রদ্বিপ টি তুলে নিয়ে বার বার আদরে আদরে চুমু খেতে থাকে বাত্তিটির গায়ে। এবার পরীক্ষা করে দেখা উচিৎ এ বাত্তি সেই আসল আলাদিনের বাত্তি কিনা। এ বাত্তি সেই আরব্য উপন্যাসের হাজার রাতের কাহিনীর আলিফ লায়লার বাত্তি কিনা। পরীক্ষা মূলক বাত্তির গায়ে ঘষা দিতেই সত্যি সত্যি হাজির হলো বিশাল দেহী এক দৈত্য। হু হু হু হা হা হা হে হে হে ওহে মানব সন্তান আমার প্রভূ কেন আমার ঘুম ভাঙ্গালে কেন আমায় ডেকেছো আমায় আদেশ করো প্রভূ। কি তোমার মনের ইচ্ছে আমায় বল প্রভূ।
আলাদিন যেন অপ্রস্তুত কি বলবে কি চাইবে সে দৈত্যের কাছে। কিইবা চাওয়ার আছে তার ? চাইলেই কি দৈত্যটি তার আশা পূর্ণ করবে ? বাড়ীতে তার বড় অভাব অনটন। নতুন বউ, মা প্রায় না খেয়ে আছে। আলাদিনেরও কোন কাজ নেই। কি চাইবে সে এখন দৈত্যের কাছে ? অর্থ, সম্পদ, সোনা দানা, কি চাইবে সে ?
- ওহে আমার প্রভূ। দৈত্যটি আবার বলতে থাকে। কি চাই তোমার বল, আমি তোমার তিনটি ইচ্ছে পুরণ করবো।
- তুমি আমাদের কলমী কে পৃথিবীর সবচাইতে সুন্দর ও সম্পদ শালী শহরে পরিনত করে দাও।
- জি হুকুম আমার প্রভূ। দৈত্যটি অদৃশ্য হয়ে গেল এবং কিছুক্ষনের মধ্যে আবার হাজির হলো এবং বলল, কলমী এখন বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর ও আধুনিক শহর হয়ে গেছে। এর পর কি চাই তোমার ?
- আমাকে ঐ দেশের প্রধান করে দাও।
- তুমিই ঐ শহরের প্রধান। দৈত্য বলল। এরপর কি চাই বল, আর একটি ইচ্ছে বাকী আছে।
বল কি চাই ?
- আমার মা আর স্ত্রীকে নিয়ে থাকার মত বিলাস বহুল প্রাসাদ বানিয়ে দাও।
দৈত্য তার সবগুলো ইচ্ছে পুরণ করে অদৃশ্য হয়ে গেল। এরপর আলাদিন সুখে দিন কাটাতে লাগল। কিন্ত একদিন অন্তরায় হলো এক অপরূপ সুন্দরী জাদুর পরী। আলাদিন কিছুতেই ঐ পরীকে দেখতে পারে না। সে আবার দৈত্যটির সাহায্য চাইতে জাদুর বাত্তিটিতে ঘষতে লাগলো। কিন্তু এবারে সেই দৈত্য এলোনা। কি হলো বাত্তির! আলাদিন অস্থির হয়ে একে ঘেমে একাকার।
॥৩॥
আলাদিন ঘুম থেকে জেগে উঠেছে। সে এখন লঞ্চের ডেকে শুয়ে আছে। ভোর হতেই সে হয়ত পৌছুবে কোন এক অজানা শহরে কাজের সন্ধানে।
=== সমাপ্ত ===
মিজান রহমান শ্রেষ্ঠ রচিত স্বপ্ন বিলাস গল্পটি কলমীকণ্ঠ ২০০৪ সালের আগষ্ট সংখ্যায় প্রকাশিত।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১:৪২