ছেলের নাম রাখা নিয়ে ছোটখাটো একটা গবেষণা হয়েছে। আমার খুব ইচ্ছে ছিল ছেলের নামটি খাঁটি বাংলা অক্ষরে রাখব। তবে সচরাচর এই নামে কাউকে যেন না পাওয়া যায়—এ বিষয়টিও মাথায় ছিল। কিন্তু যে নামই নির্বাচন করা হয়, পরিচিত কাউকে না কাউকে সেই নামে পাওয়া যায়। অবশেষে আমি আমার এক ভাগনির শরণাপন্ন হলাম। সে থাকে অস্ট্রেলিয়া। তো আমার ভাগনি আমাদের ৩/৪টি নাম পাঠাল। আমরা তার মাঝ থেকে ‘ফারশাদ’ নামটি বেছে নিলাম। এর কারণ, সাব্বির (অভিনেতা মীর সাব্বির) চেয়েছে আমার নামের প্রথম অক্ষরের সঙ্গে মিলিয়েই সে তার সন্তানের নাম রাখবে। এই ভাবনা থেকেই আমার নাম ফারজানা চুমকির প্রথম অক্ষরের সঙ্গে মিলিয়েই ছেলের নাম রাখা হয় ফারশাদ। এটি ফার্সি শব্দ। এর অর্থ সুখী। মীর সাব্বির ও আমার আদরের ধনের পুরো নাম মীর ফারশাদ মাহমুদ। ছেলেটি যখন প্রথম আমার পেটে আসে, তখন থেকেই আমি এক ধরনের স্বর্গানুভূতি টের পেতে থাকি। ফলে সেই সময় আমি অভিনয়ের ব্যস্ততা একেবারে কমিয়ে দিই। মা হওয়ার আগে আমি এক সময় ভাবতাম আমার বেবি হলে ওকে রেখে শুটিংয়ে যাব। কিন্তু ফারশাদ জন্মানোর পর সেই আমি অন্যরকম হয়ে গেলাম। এ সময় আমার মনে হলো—কিছু কথা বলা সহজ, কিন্তু তা ধরে রাখাটা অনেক কঠিন। ছেলের জন্য আমি মিডিয়ার কাজটা একেবারে বন্ধ করে দিয়েছিলাম। ফারশাদের যখন এক বছর বয়স, ওই সময় ও কথা বলার চেষ্টা শুরু করে। মাঝে মাঝে দেখতাম ও দা দা, বা বা বলে ডাকে। কিন্তু নিজেকে সম্বোধনের ক্ষেত্রে আমি সব সময়ই চেয়েছি, আমার ছেলে আমাকে ‘আম্মু’ নয় যেন ‘মা’ বলে ডাকে। এজন্য আমিই ওকে মা বলে ডাকতে থাকি। আমার ডাক শুনে শুনে এক সময় ফারশাদ প্রথম যেদিন আমাকে ‘মা’ বলে ডাকল, সেদিনকার খুশি বা আনন্দের কথা প্রকাশ করার মতো কোনো শব্দ বা ভাষা আমার জানা নেই। আসলে একজন মা’ই তা অনুধাবন করতে পারেন। আমার মনে হয়, আমার ছেলেটা না অন্য আর দশটা বাচ্চার চেয়ে ছোটবেলা থেকেই একটু আলাদা। অন্যরা যেমন আইসক্রিম চকলেট খেতে পছন্দ করে, ফারশাদ তেমনটি নয়। ও শসা আর মুড়ি খেতে ভালোবাসে। এজন্যই ওর টিঙটিঙে শরীর। ফ্যাটজাতীয় খাবার ওর একদম শত্রু। তবে ইদানীং সে কেএফসির বার্গার খেতে শুরু করেছে। ছেলের বয়স যখন আট মাস, তখন সংবাদ পাঠিকা ফারহানা নিশো শিরিনের গাওয়া ‘পাঞ্জাবীওয়ালা’ গানটি ওকে শোনাতে শোনাতে ফারশাদ এতই গানটির প্রেমে পড়ে গিয়েছিল যে, তিন বছর বয়স পর্যন্ত সেটিই ওর ফেভারিট গান ছিল। এরপর এক সময় ‘লুকোচুরি লুকোচুরি গল্প’ গানটিও ওকে বেশ টানে। এটাও মুখস্থ করে ফেলেছিল ফারশাদ। একদিন এই গানের শিল্পী ফাহমিদা নবী আমাদের বাসায় এলে আমি তার পরিচয় ওকে বললে সে শিল্পীর দিকে অবাক বিস্ময়ে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিল। আসলে আমার ছেলেটির নানা ভাবনা, ওর অ্যাটিচিউড আমার কাছে অনেক ম্যাচিউরড মনে হয়। ফারশাদ এখন ছবি আঁকতে পারে। আমার ঘরের দেয়ালজুড়ে ওর আঁকা নানা ধরনের ছবি রয়েছে। ফারশাদ এরই মধ্যে ছয় বছর অতিক্রম করেছে। ছেলেটি এখন প্রচণ্ড দুষ্টু। ওর মধুর জ্বালাতন আমাকে অনেক আনন্দ দেয়। আমার ছেলের একটি মুদ্রাদোষ রয়েছে। আর তা হলো—ঘুমানোর আগে ওর পিঠ চুলকিয়ে দিতে হয়। এ কাজটা আমার খুবই অপছন্দের। কিন্তু কী আর করা! ও যে আমার আদরের ধন। ছেলেটিকে অনেক স্বাধীনচেতা বলেই আমার মনে হয়। ওর যখন দেড় বছর বয়স, একদিন আমি একটি পোশাক আমার কাজের মেয়েকে ফারশাদকে পরিয়ে দেয়ার জন্য বললাম, কিন্তু সে তা পরল না। তখন থেকেই সে নিজের পছন্দের বাইরে কিছু পরে না। এক সময় ফারশাদ পুতুল নিয়ে খেলত। এখন গাড়ি, প্লেন ও রোবট জাতীয় খেলনা ‘ডিআইজু’ নিয়ে মেতে থাকে। কার্টুন ছবি দেখতে পছন্দ করে ফারশাদ। অবসর পেলে সিনেমা দেখে। ওর প্রিয় সিনেমার মধ্যে রয়েছে—তারে জমিন পার, থ্রি ইডিয়টস, বরফি ইত্যাদি। স্পাইডারম্যান ওকে আকর্ষণ করেছে। ফারশাদকে নিয়ে আমার একটি স্বপ্ন রয়েছে। আমি ছোটবেলা থেকেই গান পছন্দ করি। মীর সাব্বিরও তাই। কিন্তু আমাদের কখনও গান শেখা হয়ে ওঠেনি। আমি চাই আমার ছেলেটি গাইতে না পারলেও অন্তত যেন একজন মিউজিশিয়ান হয়। কোনো না কোনোভাবে ও গানের সঙ্গে জড়িয়ে থাকলে আমার ভালো লাগবে। সব বাবা-মায়ের মতো আমিও চাই আমার ছেলেটি যেন সুন্দর মনের একজন মানুষ হয়। সুশিক্ষা নিয়ে বেড়ে ওঠে।
==============================================
উপরের লেখাটা আজ আমারদেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। একজন অভিনেতা মা এবং বাবা অবশ্যই চাইবেন তার সন্তান সাংস্কৃতি মনা হোক, গান বাজনা নিয়ে থাকুক বড় স্টার হোক ইত্যাদি।
এমন হতে পারে না যে মা বাবা ভাবুক আমার সন্তানটা নবীর আদর্শ নিয়ে বড় হোক। ইসলাম নিয়ে থাকুক যেন এই সন্তান একদিন আমাদের জান্নাতের দিকে টেনে নিয়ে যায়। এই সন্তানই যেন আমাদের জীবদ্দশায় সর্বদা দোয়া করে "রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সাগিরা" এবং মৃত্যুর পর নামাজের মাদুরে বসে আমাদের জন্য দোয়া করে চোখের পানি ফেলে! কেন আমরা আমাদের কোমল মতি সন্তানতে দোযখের আগুনের দিকে ঠেলে দিব? আমরা কি সত্যই আমাদের সন্তানকে ভালবাসি? আমার যেমন করে ওদের ভালবাসছি ওরাও ঠিক আমাদের মৃত্যুরপর হুজুর ডেকে কুলখানি আর খতম পড়িয়ে দায়িত্ব শেষ করবে। ওরা কোনদিন আমাদের জন্য চোখের পানি ঝাড়বে না, মেতে থাকবে ষ্টার বান্ধবীদের নিয়ে, ড্রিংকস নিয়ে, যুগের সাথে পাল্লা দেওয়া নিয়ে।
সকল মা বাবাকে অনুরোধ করি; আপনাদের আদরের সোনামনিকে যদি সত্যিই ভালবাসেন তাহলে তাদের কিভাবে জান্নাতের ঠিকানায় পাঠানো যায় তা নিয়ে ভাবুন। মনে রাখবেন আপনার হাতেই ওর ভবিষ্যত, ওরা ছোট কাদার মতো ওদের মন। আপনি যে ভাবে ওকে গড়বেন ওরা ঠিক সেই ভাবে বড় হবে। আল্লাহর রহমত পেতে হলে রাসূলের শিখানো পন্থায় শিক্ষিত করতে হবে। বস্তুবাদ আজকে আমাদের সন্তাদেরকে এত দুরে ঠেলে দিচ্ছে যে শাহাবাগে লক্ষ লক্ষ নাস্তিক জড় হচ্ছে। তারা ধর্মীয় শিক্ষায় "গন্ড মূর্খ" থেকেই যাচ্ছে, তাদের এই রোগ মহামারি আকারে ধারন করেছে। এই সন্তান যদি বেপথে যায় তাহলে কাল কেয়ামতের মাঠে আপনি কি জবাব দিবেন?
দেখবেন এই সন্তানই আপনার বুকের উপর পাড়া দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করছে। এই সন্তানই আল্লাহকে বলছে "হে আল্লাহ আমার বাবা মা ছোটবেলা থেকে কোরআন পড়ানোর পরিবর্তে গানের তালিম দিত" নামাজের পরিবর্তে বলত নাচ শেখ"
আল্লাহপাক আমাদেরকে হেদায়েত করুন। আমিন