নামঃ মেসিউল আলম চৌধুরী (মেসি)
জন্মঃ গেণ্ডারিয়া , ঢাকা
শিশুকাল
নাম তার মেসিউল আলম । ডাকনাম মেসি । বাবা মায়ের বড় শখ ছেলে বড় হয়ে প্রকৌশলী হবে , বুয়েটে পড়বে । তবে মেসির বোধহয় সেদিকে তেমন কোন আগ্রহ নেই । তার যাবতীয় আগ্রহ লাত্থালাত্থির দিকে । পায়ের কাছে যা পায় তাতেই তার একটা কিক দেওয়া চাই । এ পর্যন্ত কিক দিয়ে দুইটা ফুলদানী সে ভেঙ্গে ফেলেছে ।
কিশোরকাল
মেসির ইচ্ছা বড় ফুটবলার হওয়ার । কিন্তু, ঢাকা শহরে খেলার মতো মাঠ কই ? মাঠ তো দুরের কথা , বাড়ির ভিতরেই এক ইঞ্চি খালি জায়গা পাওয়া যায়না !! সবচেয়ে বড় কথা খেলার জন্য সময়ের বড়ই অভাব । পড়াশোনার ভীষণ চাপ। স্কুলের সময় সকাল ৯ টায় । জ্যামের কারনে বাসা থেকে বের হতে হয় ৭ টায় । ছুটি দুপুর ৩ টায় । এই সময় আবার জ্যাম একটু বেশি থাকে , বাসায় ফিরতে ফিরতে বিকাল ৫ টা কিংবা আরো বেশি । সামান্য বিস্রাম নিয়ে আবার প্রাইভেট পড়তে ছুটতে হয় । ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা । তারপর আবার বাসায় স্যারের কাছে পড়তে হয় । স্যার যাওয়ার পর করতে হয় স্কুলের হোমওয়ার্ক । এরপরে আর খেলার সময় কই ? মাঝে মাঝে ইচ্ছা নিজের জীবনটারেই ফুটবল বানিয়ে সজোরে দুইটা কিক নেয়। অগ্যতা কম্পিউটারের সামনে বসে 'ফিফা' গেমস খেলেই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে হয়।
আর মাঝে মাঝে কখনও খেলতে গেলে বাবার কড়া ধমক শুনতে হয় ‘আরেকবার যদি ফুটবল খেলায় তোমারে দেখি তাইলে কিন্তু তোমার দুইটা ঠেং গুরা কইরা দিমু, এমনিতেই শরীরে হরমোনের অভাব তার উপড়ে তুমি ফুটবল খেলতে যাও কোন সাহসে? ছাত্রনং অধ্যয়ং তপস্যং , তোমার কাম পড়ালেখা করা , আর কিছু না , যাও গিয়া পড়তে বস...
দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় বাংলা ২য় পত্রে রচনা এসেছিল ‘তোমার জীবনের লক্ষ’ । মেসি লিখে দিয়ে এলো সে ম্যারাডনার মতো ফুটবলার হতে চায় । পরিক্ষার উত্তরপত্র দেখার পর বাবা তাকে ২৫ বার কানে ধরিয়ে উঠ-বস করিয়েছিলেন। আর স্কুলের বন্ধুদের কাছে তো তার নামই পড়ে গেল ‘মেরাডুনা’।
তরুনকাল
দুরন্ত তরুন মেসি । ফুটবল খেলার বড়ই শখ । কলেজের ক্লাসের ফাকে ফাকে টুকটাক খেলার সুযোগ পাওয়া যায় । কলেজে তো পড়ার চেয়ে রাজনীতি বেশী হয়। তাই সময়ের অভাব হয়না । বাম পায়ের যাদু আছে তার পায়ে । কিন্তু শরীরে শক্তির অভাব , বাজারের ভেজাল খাবার খেয়ে খেয়ে শরীরের বারোটা বেজেছে , তার উপরে মন্ত্রীর কড়া নির্দেশ ‘কম কম খেতে হবে’ । ফুটবল খেলার মত পুষ্টি সে পাবে কই ? শামসুর হাল্কা ধাক্কাতেই তাকে পড়ে যেতে হয় । উল্টো শামসুর শাসানি থাকে ‘শালা আরেকবার লাগলে মাইরা তোর টেংরি ভাইঙ্গা দিমু’ ।
বিশ্বকাপ চলে এসেছে, মেসি আবার আর্জেন্টিনার হুলুস্থুল ফ্যান । ২০০ টাকা দিয়ে আর্জেন্টিনার একটা পতাকাও সে কিনে ফেলেছে । তবে গণ্ডগোল লাগলো ‘সুইটির’ কারনে । সুইটির কড়া নির্দেশ ‘আরজেন্টিনা’ সাপোর্ট করলে তার সাথে আর সম্পর্ক থাকবেনা । ‘ব্রাজিলের’ পতাকা লাগাতে হবে। ব্রাজিলের জার্সিও কিনতে হবে । ‘কাকার’ জার্সি !!! কি আর করা ? ‘বিশ্বকাপ ৪ বছরে একবার আসে কিন্তু গারলফ্রেন্ড একবার গেলে আরেকবার পাওয়াটা বড় কষ্টের ’ এই চেতনার ভারে ব্রাজিলের একটা বড় পতাকা তাকে লাগাতেই হল। এমনকি ব্রাজিলের জার্সি গায়ে দিয়ে সুইটির সাথে ডেটিঙেও যেতে হল।
যৌবনকাল
টগবগে যুবক মেসি । ভার্সিটিতে ব্যাস্ত (??!!) সময় কাটাতে হয় । প্রেসেন্টেশন , এসাইনমেন্ট , সপ্তাহে ৪ টা পরীক্ষা ,বন্ধুদের নিয়ে পার্টি তার উপরে সপ্তাহে দুই দিন থাকে মলির সাথে ‘ডেটিং’ । রাত জেগে কথা বলতে হয় ফোনে ।
আবার সামাজিক জীব হিসেবে দিনের একটা বৃহৎ অংশ তাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কাটাতে হয়। এত ব্যাস্ততার মাঝেও ভার্সিটিতে টুকটাক খেলে বেড়ায় , আর সবাই একবাক্যে মেনে নেয় , ‘নাহ , ছেলেটা সত্যিই দারুন ফুটবল খেলে‘ ।
অবশেষে ক্লাব ফুটবলে
নিজের প্রতিভার ঝলকে আর ভার্সিটির এক বড় ভাইয়ের সহযোগিতায় মেসি সুযোগও পেয়ে গেলো ক্লাব ফুটবলে। তেমন বড় কোন টিম না । দেশের প্রথম সারির লীগ খেলা দল 'তৃতীয়' সারির দল । খেলার চাইতে টাকার বিষয় টা যাদের কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ।
লীগ শুরু হয়ে গেলো । মেসিকে বেঞ্চে বসেই সময় কাটাতে হলো । ঢাকায় স্থায়ী হওয়া নাইজেরিয়া , ঘানার ‘শক্ত-পোক্ত’ কাল ফুটবলাররা দাপটের সাথে জায়গা করে নিলো একাদশে । কোচ তাকে খুব একটা সুযোগ দিলেন না । আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলেন তুমি আর কি খেলবে । যা একটু বাম পা দিয়ে কারিকুরি করো , কিন্তু এ দিয়ে কি হবে ? কাঁদা মাঠে আসল তো হলো বল নিয়া উথাল-পাথাল দৌড় ... বল কাঁদা-পানিতে আটকে থাকবে কিন্তু গায়ের জোড়ে বল নিয়ে দৌড়াতে হবে , সামনে পেলে ছোটদের পিষে ফেলতে হবে। আফ্রিকান ফুটবলার ছাড়া এই গুলা আর কে করতে পারবে ? ড্রিব্লিং -ফিব্লিং করে বিপক্ষের প্লেয়ারদের বোকা বানানো যায় , কাঁদাকে তো বোকা বানানো যায়না । ম্যাচের পড় ম্যাচ বসে থেকে মেসিকে আফ্রিকান পাঁঠাদের ফুটবল নামক ‘কসরত’ দেখতে হল। আর মেসি অপেক্ষা করতে থাকলো কেবল একটা সুযোগের অপেক্ষায় ।
ম্যাচ খেলার সুযোগ
লীগ প্রায় শেষ পর্যায়ে , মেসির দল পয়েন্টের তলানীতে , নিশ্চিত রেলিগেশনে পড়বে । তাই 'হটাৎ' করেই একটা ম্যাচ খেলার সুযোগ এসে গেলো মেসির সামনে । মেসি খুশিতে আটখানা, অবশেষে সে খেলবে বি-লীগের ম্যাচ !!! বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে !! আনন্দে রাতে ঘুম হলোনা । সেদিন ফেসবুকে মেসির স্ট্যাটাস ছিল ' bisshash korte koshto hoi...'
তবে পরদিন সকালে খেলতে গিয়ে মনটা খারাপ হয়ে গেলো । ম্যাচটা আসল ম্যাচ না , ‘নকল’ ম্যাচ । মানে পাতানো ম্যাচ । দলের উপর মহলের কড়া নির্দেশ গোল দেওয়া যাবে না , বেশী বেশী গোল খেতে হবে। যত গোল তত টাকা !
তার উপরে মাঠের অবস্থা খুবি খারাপ , আর যাই হোক এই মাঠে ফুটবল খেলাটা কস্টকর । তবে যতই মাঠ খারাপ হোক ‘মেসিকে’ কি আর আটকানো এতো সহজ ? ঠিকই মেসি ফাঁকফোকর দিয়ে বল বাড়িয়ে দিল সতীর্থদের উদ্দেশ্যে ... তবে কারো গোল দেওয়ার কোন ইচ্ছাই দেখা গেলোনা । একেকজন উদাস উদাস ভাব নিয়ে বারের ৮০ হাত বাইরে দিয়ে শট নিতে থাকলো ।
কিছুটা রাগের মাথায় অবশেষে নিজেই একটা গোলও দিয়ে বসলো মেসি... দলের ভেতর চাপা হতাশা , এই ছেলেটা সর্বনাশ করে দিল রে... ম্যাচ শেষে শাস্তি স্বরূপ দল থেকে আজীবন বহিস্কার করা হল , কেটে রাখা হল পারিস্রমিকের ৯০ ভাগ!!!
অবশেষে ...
প্রতিভা কি আর সহজে চাপা রাখা যায় । বড় দলের (??!!) ঠিকি চোখ পড়লো মেসির উপড়ে । কম পয়সায় ভাল ‘বাতিল’ মাল পাওয়ার ধান্দা আরকি !! দু একদিনের মধ্যেই চুক্তি হয়ে যাবে বোধয়।
সেদিন মেসি একটা কাজে গিয়েছিলো নিউমার্কেট । ফেরার সময় রাস্তায় হটাৎ কিছু ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য’ ঘিরে ধরল মেসিকে । তাদের মুখে চাপা আনন্দ । যেন কোন শীর্ষ সন্ত্রাসীকে খুজে পাওয়া গেছে । একজন বলে উঠল ‘তুই কাদের না?’
আরেকজন বললো , ‘আমি চিনি স্যার , এইটা তো ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী কাদের !!’
প্রথমজন এবার বলে উঠল ‘অপরাধী যেই হোক , তাকে খুজে বের করে দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি দেওয়া হবে । এই , এইটারে গাড়িতে তোল ।‘
মেসি কিছু বলার চেষ্টা করলো , কিন্তু বলার কোন সুযোগই পেলোনা । দুইজনে মিলে শক্ত করে তাকে ধরে রাখা হয়েছে ।
‘গাড়িতে তোলার কি দরকার স্যার ? এই খানেই গুলি করেন ... ভয়ংকর সন্ত্রাসী , আবার কি থেকে কি করে বসে ঠিক নাই...’
‘গুলি করুম ? না পাবলিকের হাতে দিয়া দিমু ? পাবলিক তো এদের পাইলে বিরাট খুশি হয় । একটু মজাও হইল , খামাকা একখান গুল্লি নষ্ট কইরা কি লাভ ?’
‘গুলি না করতে করতে হাতের নিশানা নষ্ট হয়ে গেছে ছার , গুল্লি করাই ভাল ...
‘আইচ্ছা যাও , টস করি , হেড উঠলে গুল্লি , আর টেল হইলে পাবলিকের হাতে ...’
সবাই সম্মতি জানালো , মেসিকে শক্ত করে ধরে রেখে শুন্যে ছুড়ে দেওয়া হল কয়েন ...
সবার অপেক্ষা কি উঠে ...... হেড না টেল ...
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০১১ রাত ৯:২৬