somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিনি গল্পসমগ্র- ২

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৪:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রকাশক

খুব ইচ্ছা, আসছে বই মেলায় বড় একটা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে আমার একটা বই বের করব। তাই উপন্যাসের পান্ডুলিপি নিয়ে গেলাম বিখ্যাত সেই প্রকাশকের কাছে।
এটা কী?
একটা পান্ডুলিপি।
পান্ডুলিপি তো বুঝছি, কিসের পান্ডুলিপি?
একটা উপন্যাসের।
ঠিক আছে। রেখে যান। পড়ে দেখব।
আমি রেখে এসেছিলাম। এক সপ্তাহ পর প্রকাশকের সাথে দেখা করলাম।
প্রকাশক বললেন, কী লিখসেন এইসব? হাতি ঘোড়া কিছুই হয় নাই। আবার লিখেন।

এতো দরদ দিয়ে লেখাটা লিখলাম, অথচ কিছুই হয়নি! এতোদিন লেখক হিসেবে নিজের সম্পর্কে বেশ ভাল ধারনা রাখতাম। তাই প্রকাশকের কথায় মনটা খারাপ হয়ে গেল।

তবু,
আবার লিখলাম।
প্রকাশক পান্ডুলিপি রেখে দিলেন।
এক সপ্তাহ পর ফলাফল জানতে গেলে জানালেন, এইটা তো আরো অখাদ্য লিখসেন। আবার চেষ্টা করেন।

পান্ডুলিপি নিয়ে ফিরে আসার সময় মহামান্য প্রকাশককে মন খুলে জানাতে পারলাম না, লেখাটা ছিল নোবেল জয়ী দ্যা ওল্ড ম্যান ইন দ্যা সী উপন্যাসের বাংলা রূপান্তর।

তবু মনটা ভাল হয়ে গেল।


২৫ তারিখ

আমরা একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। আমাদের অফিসে সকালবেলা প্রবেশের নির্দিষ্ট সময় থাকলেও বেরুবার সময় নির্দিষ্ট না। দিনের কাজ শেষ করে বের হতে হতে রাত হয়ে যায়। তাই কর্তৃপক্ষের উপর সারাক্ষণ বিরক্ত থাকি। নানা রকম গালমন্দ করি। মনে মনে ভাবি, এখানে আর কাজ করব না। আজই হবে এ অফিসে আমার শেষ দিন। শুধু ২৫ তারিখে এ ঘটনার উল্টোটা ঘটে। আমরা সবাই হাসিমুখে কাজ করি। এ অফিসে কাজ করি বলে গর্বিত বোধ করি।

কারন,

২৫ তারিখ আমাদের বেতন দেয়া হয়।


১০ হাজার + ৭ বছর = ৭০ হাজার

২০০৭ সালে রাজিক ১০ হাজার টাকা বেতনের চাকরিতে ঢুকে। তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা তখন ৭। পরিবারের খরচ যোগাতে তার আয়ের সাথে বাবার আয়টাও যোগ করতে হত। সিনিয়রদের দেখে তাই সে ভাবত কবে যে তার বেতন ওদের সমান হবে।

আজ ৭ বছর পর ২০১৪ সালে এসে তার বেতন হয়েছে ৭০ হাজার। এখনও সেই সাত সদস্যের পরিবার চালাতে তাকে তার বাবার পেনশনের টাকার আয়ের সাহায্য নিতে হয়।

তাছাড়া, এখন স্বপ্ন দেখানোর মতো কোন সিনিয়রও এই অফিসে নেই।


নিখোঁজ সংবাদ

তাকে আমরা খুঁজে পাচ্ছিলাম না কোথাও। হঠাৎ এমন করে কেন যে সে উধাও হল! তাও কাউকে না জানিয়ে! তন্ন তন্ন করে খুঁজেও তাকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছিল না। না ফেসবুকে, না হোয়াট্সঅ্যাপে, না ভাইবারে, না ট্যাঙ্গােতে! তাকে আমরা, তার বন্ধুরা কোথাও খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
পরদিন জানতে পারলাম, তার মোবাইলটা চুরি হয়ে গিয়েছিল গতকাল!


ব্যক্তিগত গল্প-৪

মেয়েটি আমাদের অফিসে নতুন জয়েন করেছিল। একদিন বিকাল চারটায় আমার কাছে এসে জানাল তার বড় বোনের এনগেজমেন্ট সন্ধ্যেবেলা। বাড়ি যেতে এক ঘন্টা লাগবে। তাই একটু আগেভাগে ছুটি চায়।

আমি দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকালাম। অফিস শেষ হতে তখনো দু ঘন্টা বাকি। বললাম, আপনার নিজের কাজ শেষ করে চলে যান। আমার আপত্তি নেই। আমি জানতাম নিজের কাজ শেষ করতে করতে সন্ধ্যা ছয়টা বেজে যাবে।

মেয়েটি মাথা নীচু করে ডেস্কে চলে গেল। কাজ শেষে সাড়ে পাঁচটায় যাবার অনুমতি নিতে আসলে দেখলাম, চোখ বেয়ে টল টল করে জল বেয়ে পড়ছে। মেয়েটি চলে গেলে পাশের ডেস্কের সহকর্মীকে হেসে বললাম, এই মেয়ে তো এখনও বুঝে নাই কর্পোরেট জগতটা কেমন। বলতে বলতে নিজের ক্ষমতার প্রদর্শনে কিছুটা আরামও বোধ করলাম।

কয়েক বছর পরের ঘটনা।

আমার স্ত্রী তার ল্যাপটপে রাখা ছবিগুলা দেখাচ্ছে। হঠাৎ একটা ছবিতে আমার দৃষ্টি আটকে গেল। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, এই ছবিতে তোমাকে এমন মনমরা লাগছে কেন।
সে বলল, ওটা আমার বোনের এনগেজমেন্টের ছবি।
আমি বললাম, তাহলেতো তোমার হাসিখুশি থাকার কথা!
সে রেগে গিয়ে বলল, তোমার বুঝি মনে নাই? আামাকে তুমি কয়টায় ছুটি দিয়েছিলে?

ছুটির ঘটনাটা আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। ওর কথায় মনে পড়ল। আহারে! বউটা আমার কতটাই না কষ্ট পেয়েছিল সেদিন! মনটা তখন ডুকরে কেঁদে উঠল।



সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৫:১৬
১৬টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×