প্রকাশক
খুব ইচ্ছা, আসছে বই মেলায় বড় একটা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে আমার একটা বই বের করব। তাই উপন্যাসের পান্ডুলিপি নিয়ে গেলাম বিখ্যাত সেই প্রকাশকের কাছে।
এটা কী?
একটা পান্ডুলিপি।
পান্ডুলিপি তো বুঝছি, কিসের পান্ডুলিপি?
একটা উপন্যাসের।
ঠিক আছে। রেখে যান। পড়ে দেখব।
আমি রেখে এসেছিলাম। এক সপ্তাহ পর প্রকাশকের সাথে দেখা করলাম।
প্রকাশক বললেন, কী লিখসেন এইসব? হাতি ঘোড়া কিছুই হয় নাই। আবার লিখেন।
এতো দরদ দিয়ে লেখাটা লিখলাম, অথচ কিছুই হয়নি! এতোদিন লেখক হিসেবে নিজের সম্পর্কে বেশ ভাল ধারনা রাখতাম। তাই প্রকাশকের কথায় মনটা খারাপ হয়ে গেল।
তবু,
আবার লিখলাম।
প্রকাশক পান্ডুলিপি রেখে দিলেন।
এক সপ্তাহ পর ফলাফল জানতে গেলে জানালেন, এইটা তো আরো অখাদ্য লিখসেন। আবার চেষ্টা করেন।
পান্ডুলিপি নিয়ে ফিরে আসার সময় মহামান্য প্রকাশককে মন খুলে জানাতে পারলাম না, লেখাটা ছিল নোবেল জয়ী দ্যা ওল্ড ম্যান ইন দ্যা সী উপন্যাসের বাংলা রূপান্তর।
তবু মনটা ভাল হয়ে গেল।
২৫ তারিখ
আমরা একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। আমাদের অফিসে সকালবেলা প্রবেশের নির্দিষ্ট সময় থাকলেও বেরুবার সময় নির্দিষ্ট না। দিনের কাজ শেষ করে বের হতে হতে রাত হয়ে যায়। তাই কর্তৃপক্ষের উপর সারাক্ষণ বিরক্ত থাকি। নানা রকম গালমন্দ করি। মনে মনে ভাবি, এখানে আর কাজ করব না। আজই হবে এ অফিসে আমার শেষ দিন। শুধু ২৫ তারিখে এ ঘটনার উল্টোটা ঘটে। আমরা সবাই হাসিমুখে কাজ করি। এ অফিসে কাজ করি বলে গর্বিত বোধ করি।
কারন,
২৫ তারিখ আমাদের বেতন দেয়া হয়।
১০ হাজার + ৭ বছর = ৭০ হাজার
২০০৭ সালে রাজিক ১০ হাজার টাকা বেতনের চাকরিতে ঢুকে। তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা তখন ৭। পরিবারের খরচ যোগাতে তার আয়ের সাথে বাবার আয়টাও যোগ করতে হত। সিনিয়রদের দেখে তাই সে ভাবত কবে যে তার বেতন ওদের সমান হবে।
আজ ৭ বছর পর ২০১৪ সালে এসে তার বেতন হয়েছে ৭০ হাজার। এখনও সেই সাত সদস্যের পরিবার চালাতে তাকে তার বাবার পেনশনের টাকার আয়ের সাহায্য নিতে হয়।
তাছাড়া, এখন স্বপ্ন দেখানোর মতো কোন সিনিয়রও এই অফিসে নেই।
নিখোঁজ সংবাদ
তাকে আমরা খুঁজে পাচ্ছিলাম না কোথাও। হঠাৎ এমন করে কেন যে সে উধাও হল! তাও কাউকে না জানিয়ে! তন্ন তন্ন করে খুঁজেও তাকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছিল না। না ফেসবুকে, না হোয়াট্সঅ্যাপে, না ভাইবারে, না ট্যাঙ্গােতে! তাকে আমরা, তার বন্ধুরা কোথাও খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
পরদিন জানতে পারলাম, তার মোবাইলটা চুরি হয়ে গিয়েছিল গতকাল!
ব্যক্তিগত গল্প-৪
মেয়েটি আমাদের অফিসে নতুন জয়েন করেছিল। একদিন বিকাল চারটায় আমার কাছে এসে জানাল তার বড় বোনের এনগেজমেন্ট সন্ধ্যেবেলা। বাড়ি যেতে এক ঘন্টা লাগবে। তাই একটু আগেভাগে ছুটি চায়।
আমি দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকালাম। অফিস শেষ হতে তখনো দু ঘন্টা বাকি। বললাম, আপনার নিজের কাজ শেষ করে চলে যান। আমার আপত্তি নেই। আমি জানতাম নিজের কাজ শেষ করতে করতে সন্ধ্যা ছয়টা বেজে যাবে।
মেয়েটি মাথা নীচু করে ডেস্কে চলে গেল। কাজ শেষে সাড়ে পাঁচটায় যাবার অনুমতি নিতে আসলে দেখলাম, চোখ বেয়ে টল টল করে জল বেয়ে পড়ছে। মেয়েটি চলে গেলে পাশের ডেস্কের সহকর্মীকে হেসে বললাম, এই মেয়ে তো এখনও বুঝে নাই কর্পোরেট জগতটা কেমন। বলতে বলতে নিজের ক্ষমতার প্রদর্শনে কিছুটা আরামও বোধ করলাম।
কয়েক বছর পরের ঘটনা।
আমার স্ত্রী তার ল্যাপটপে রাখা ছবিগুলা দেখাচ্ছে। হঠাৎ একটা ছবিতে আমার দৃষ্টি আটকে গেল। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, এই ছবিতে তোমাকে এমন মনমরা লাগছে কেন।
সে বলল, ওটা আমার বোনের এনগেজমেন্টের ছবি।
আমি বললাম, তাহলেতো তোমার হাসিখুশি থাকার কথা!
সে রেগে গিয়ে বলল, তোমার বুঝি মনে নাই? আামাকে তুমি কয়টায় ছুটি দিয়েছিলে?
ছুটির ঘটনাটা আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। ওর কথায় মনে পড়ল। আহারে! বউটা আমার কতটাই না কষ্ট পেয়েছিল সেদিন! মনটা তখন ডুকরে কেঁদে উঠল।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৫:১৬