।।দুইঃ (নির্মাণের উজানে ভাঙছি)।।
যাকে নিয়ে গল্পের মূল চরিত্র শিল্পী’র এত বাঁধভাঙ্গা আবেগ, এবার তার ভাবনাগুলো জানা যাক-
নীল। নীল হায়াৎ! পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। সরকারি চাকুরির দাফতরিক পেশার ফাঁকে কলম চালান কি-বোর্ডে। পেশাগত ব্যস্ততার এক ফাঁকেই চোখ বুলিয়ে নেয় নিজের শখের লেখার ভুবনে। অল্পকিছু বইও প্রকাশিত হয়েছে একুশে বইমেলায়।
ছাপার অক্ষরের সৌখিনতার পাশাপাশি নীল আগ্রহী ছবি তোলায়। মিরপুর দশে নিজের ডুপ্লেক্স বাড়ির একতলার সিড়ি হতে ছাদ পেরিয়ে খোলা নীল আকাশ সহ পেশাগত অফিসবাড়ি ও সেই বাড়ি যাওয়ার পুরো পথের বিন্দু বিন্দু জীবের স্পন্দন ফ্রেমে বন্দী করে নিতে যেন ততপর থাকে। অফিসে নেয়ার বড় ব্যাগে ল্যাপটপের পাশে এক কোণায় বেশ আয়েশী কায়দায় ভরে নিয়ে বের হয় প্রতিদিন ডিএসএলআর ক্যামেরাটি।
এমনি একদিন, অফিস ছুটির পরে ধানমন্ডিতে দরকার ছিলো। রাস্তার দৃশ্য দেখতে দেখতে আসছিলো। ছবি তোলার সাবজেক্ট এত আশেপাশে! কিন্তু, রাস্তাটা বৃষ্টিতে পানি জমা। ধানমন্ডি এলাকাতেও এরকম অবস্থা হয়! এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে দেখলো, এক বাসার বারান্দা থেকে বেশ গলা বাড়িয়ে মে ফুল ওকে ডাকছে। ক্যামেরা তাক করে কয়েকটা শট নেয়া হয়ে গেলেই নিচে ঐ বাসার গেটের কাছে চোখে পরলো। এক একুশ বাইশ বছরের তন্বী ললনা দাঁড়িয়ে। শরীরের বঙ্কিমে কোথাও যেন খুঁত নেই এতটুকু। বিধাতা যেন নিজ হাতে গড়েছেন প্রতিটি ফোঁটা! মুহুর্তেই কয়েকটা শট নিয়ে নিলো সে মেয়েটিরও। ভালো লাগলো মেয়েটিকে। অমাবস্যার অন্ধকারেও যে এত সৌন্দর্য্য থাকে এই জানলো! কালো মেয়েটা!
নীল যে জন্য ধানমন্ডি এসেছিলো রিকশা চলতে থাকলো সেদিকে। ক্যামেরায় আরো অনেক দৃশ্যপট বন্দী করে নিতে নিতে ও এগুতে লাগলো।
যেতে যেতে ধানমন্ডি সাতাশ নম্বর রোড ছাড়িয়ে আড়ং এর দিকে মোড় নিলো রিকশাটা। একটু ঢুকেই থেমে গেলো একটি কমলা টাইলস বাঁধানো বাসার সামনে। এখানে ইফতি থাকে। ওর জানের দোস্ত। ওদের বাসায় একটা দাওয়াত ছিলো। দারোয়ান গেট খুলে দিলে সোজা লম্বা লম্বা পা ফেলে তৃতীয় তলার ডান দিকে এসে বেল চাপলো। ভেতর থেকে খুব কলকল হাসির শব্দ ভেসে আসতে আসতে দরজায় এসে থামলো কণ্ঠটা। দরজা খুলে দিলো মিষ্টি একটি পান পাতা মুখের গড়নের মেয়ে। ইফতির ছোট বোন। ভেতরে ঢুকতেই আরো কিছু গেস্ট দেখতে পেল। তাদের মধ্যে চোখ আটকে গেলো একটি দৃশ্যপটে। একটু আগে যাকে ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দী করে নিয়েছিলো সেই কাজল কালো মেয়েটা! কে সে? তাকিয়েই ছিলো বলে ইফতি পাশ থেকে বলে উঠলো, “শিল্পী। অংকন শিল্পী!”
নীল প্রথমটায় বুঝতে পারেনি। কি বললো ইফতি। “অংকন শিল্পী মেয়েটা? নাম কি ওনার?”
ইফতি এবার হেসে উঠলো শব্দ করে, “জানতাম তুমি এই কথাই বলবে বন্ধু। ওর নাম শিল্পী। আর ও চিত্রশিল্পী! এইবার কি বুঝাতে পারলাম?”
এর মধ্যে শিল্পীও কাছে এগিয়ে এসেছে। “বেশ সপ্রতিভ তো মেয়েটা! কালো কৃষ্টাল মূর্তি যেন!”
(চলবে)
।।পর্ব- একঃ (স্বরচিত আরাধনা অথবা নিঃস্বংগ দুঃখপাঠ)।।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১২:৩৫