-কেমন আছো প্রলয়?
-আমার খোজঁ পেলে কি করে?
-ইন্টারনেটে।
-কিভাবে?
-খুব সোজা। গুগলিং করতেই তোমার সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোতে যতগুলো এ্যাকাউন্ট ছিলো, সবগুলোর ঠিকানা পেয়ে গেছি,
-"তারপর?"- আমার গলা থেকে নার্ভাসনেসটাকে কাটাতে পারলাম না।
-"তারপর আর কি? সেখানকার একটা এ্যাকাউন্ট থেকে তোমার মেইল আই ডি নিয়ে তোমাকে মেইল করলাম। দেখছো, আমার কত বুদ্ধি!

চোখের উপর চলে আসার কপালের একগাছি চুল সরাতে সরাতে বল্লা ও।
-ও আচ্ছা, - আমি আর কিছু বল্লাম না। একটা সময় ছিলো যখন মনে প্রানে চাইতাম ওর সাথে আবার দেখা হোক। কত চেষ্টা করেছি। পারিনি। অথচ আজ, বিনা শ্রমে সেই চাওয়াটা পূরন হওয়াতেই যেন কেমন একটা হকচকিয়ে গেছি।
-ইন্টারনেটে নিজেকে ছড়িয়ে দিয়ে ভালই করেছো। নতুবা তোমাকে খুজেঁ বের করা এতটা সহজ হতো না।
-হুমম।
-তুমি এত অল্প কথায় উত্তর দিচ্ছো কেন?- ও খুব অবাক হয়ে আমার দিকে তাকাল। একদম সরাসরি।
-বলার মত আর তো কিছু পাচ্ছি না।
-অথচ একটা সময় ছিলো, এই তুমি বকবক করে করে আমার মাধা ধরিয়ে দিতে।
আমি মাথা নিচু করে রইলাম। কিছু বল্লাম না।
-প্রলয়..
-উমম..
-অনেক বদলে গেছো তুমি...
-তাই নাকি?
-হুমম।
-অনেক দিন পর দেখছো তো, এইজন্য এমন লাগছে।
- অনেক শুকিয়ে গেছো, আর লম্বা হয়েছো মনে হয় খানিকটা তাই না?
- কি জানি! --আমি উদাস গলায় বল্লাম।
-তোমার ঠোটেরঁ তিলটা কি এখনও আছে? দেখি তো"- বলে ও খুব কাছে চলে এল আমার । আমি তাই একটু সরে দাঁড়ালাম। ও সেটা বুঝতে পেরে প্রসংগ চেন্জ করে ফেল্ল। বল্ল-
- চুল এত বড় রেখোছো কেন? বাউল বাউল লাগছে।-বলেই হো হো করে হেসে উঠল তনুষা।
- "খুশকি নেই এখন?" খুব সুন্দর করে তাকালো ও। কি সুন্দর লাগছে তনুকে। বিয়ের পর আরো সুন্দর হয়ে গেছে ও।
- তুমিও কিন্তু অনেক বদলেছো!- আমি নিচু স্বরে বল্লাম।
-কিরকম?--- চোখে মুখে ওর দুষ্টুমির আভাস দেখতে পেলাম।
-উমম..এই যেমন আগে তুমি অনেক চুপচাপ থাকতে সবসময়। এখন অনেক কথা বলো। আগে তুমি চুল খোলা রেখে বাইরে বের হতে। এখন চুল বেধেঁ বের হও। আগে সমালোয়ার কামিজ নতুবা টি শার্ট জিনস নতুবা স্কার্ট আর টপস পরতে ভালবাসতে। এখন পুরোদস্তুর শাড়ি। আগে চশমা পড়তে না । এখন পড়ো। আগে তোমাকে একটি বিষন্ন মেয়ে বলে মনে হতো। এখন মনে হয় একজন সংসারী নারী।
ও খুব হাসতে শুরু করল। হাসতে হাসতে বল্ল-- "বাব বাহ। স্যারের চোখের পাওয়ার বেড়েছে মনে হচ্ছে!"
-নাহ, দেখছো না, চশমার গ্লাসের পুরুত্ব আরো বেড়েছে।" ---মুচকি হেসে বল্লাম।
-আরে তাইতো, খেয়ালই করিনি।" অবাক হয়ে বল্ল ও- "এখন কত?"
-ডানপাশেরটা -৫, বামপাশেরটা -৩।
-সর্বনাশ!! তোমার তো অন্ধ হতে বেশী দেরী নেই।!!!!-- আতংকিত স্বরে বল্ল ও।
-হা হাহহা।--আমি শব্দ করে হেসে উঠলাম।
-"যাক, শেষ পর্যন্ত হাসলে তাহলে।" গম্ভীর স্বরে বল্ল ও। "কতদিন পর তোমার হাসি শুনছি জানো প্রলয়?
- কয়েকবছর তো হবেই।
- আমি পুরো অংকটা বলছি। ৫ বছর ৩ মাস ১৯ দিন।
- তুমি কি খাতা কলমে হিসাব কষে বলছ নাকি?
-তোমার সাথে আমার কবে, কখন, কোথায়, কত দিন আগে, শেষ কি হয়েছে আমি সব বলে দিতে পারব।
- খাইছে আমারে।
-৫ বছর অনেক দীর্ঘ সময়, তাই না প্রলয়?
আমি শুধু একটা নিশ্বাস ফেল্লাম। এবারও কিছু বল্লাম না।
-তোমার মনে আছে প্রলয়, তুমি তোমার ডায়রি থেকে একটা পাতা ছিড়েঁ আমাকে দিয়েছিলে। তোমার কবিতার একটা খসড়া।
-হুমম মনে আছে।
-এখনও আগলে রেখেছি ওটা। পরে আমি ওটা লেমিনেটিং করে নিয়েছিলাম যাতে করে আমার চোখে জলে ভিজে গিয়ে নষ্ট না হয়ে যায়।"- খুব আনমনে, আস্তে আস্তে বল্ল তনুষা।
ভোর হয়ে গেছে। খুব ঘুম পাচ্ছে। বাকিটা কাল লিখব।
...হয়তো...
--------------------------------------------
(আপডেটঃ বাকী অংশ-২৫.১০.০৮)
--------------------------------------------
তুমি কি আমাকে এখনও ভালবাসো প্রলয়?
- এই প্রশ্নটা এখন খুব হাস্যকর তনুষা।
-আমি তোমাকে অনেক বোঝার চেষ্টা করেছিলাম পারিনি।
-তুমি পেরেছিলে। কিন্তু সবসময় সেটাকে জোর করে অস্বীকার করে এসেছো।
-আমার সমন্ধে তোমার এই ধারনা ছিলো এতদিন?- ওর স্বরে প্রচন্ড বিস্ময়।
-হুমম। অবশ্য এ ছাড়া তোমার আর কোন উপায়ও ছিলো না। আমি জানি।
-আমি অনেক চেষ্টা করেছি প্রলয়। বাবাকে অসংখ্যবার বুঝিয়েছি। আর আমাদের বয়স তখন এত কম ছিলো...একা একা যে বিয়ে করব, সে সাহসটুকুও ছিলো না। অন্তত আমার ছিলো না। পরে এই না থাকা সাহসটুকুর জন্য নিজের কতবার যে ধিক্কার দিয়েছি!
-তুমি আমাকে কখনো বলেছো তোমার ভালবাসার কথা?
-ভয় পেয়েছিলাম খুব। তাই বলিনি। কিন্তু তুমিও তো বলোনি।
-বলিনি কেন বুঝতে পারোনি এতদিনেও?
-হ্যাঁ, পেরেছি। তাইতো আরো বেশী কষ্ট পেয়েছিলাম। আসলে, আমি প্রথমে বুঝতেই পারিনি তোমাকে এতটা ভালবেসে ফেলেছিলাম। যখন বুঝতে পারলাম, তখন কিছুই করার ছিলো না।
-তোমাকে পাবার চিন্তা করাটা আমার জন্য ছিলো নিতান্তই বিলাসীতা। অসম্ভব একটা বিলাসিতা।
-আমরা দুজন দুজনকেই প্রচন্ড ভালবেসেছিলাম, তাই না প্রলয়?
-হমম।
-এখনও বাসি তাই না প্রলয়?
-আমি এখন উঠব তনুষা। একটু তাড়া আছে।
-তুমি অনেক বাস্তববাদী হয়ে গেছো প্রলয়।
-হ্যাঁ, এটা ঠিক বলেছো।
-অথচ একটা সময় তুমি আকাশ কুসুম কল্পনায় বিভোর হতে! আমাকেও বিভোর করে দিতে!...তোমার একটা কবিতা পড়ে এতটাই সারপ্রাইজড হয়ে গিয়েছিলাম যে পুরোটাই মুখস্ত করে ফেলেছিলাম। পরে তুমি ওটা তোমার ডায়রি থেকে ছিড়েঁ আমাকে দিয়ে দিলে।
-আমি চলে যাবার পর অনেকদিন পর্যন্ত তুমি গিটার বাজাতে পারোনি, তাই না প্রলয়?
-হ্যাঁ। ৭/৮ মাস। পুরোপুরি বাজাতে শুরু করি একবছর পর।
-তুমি একবার পাগলামি করে ব্যাঙ্গালোর চলে যেতে চেয়েছিলে, তাইনা/
-হ্যাঁ, বেনাপোল বর্ডারে এস এফ সোলজাররা আমাকে আটকে দেয়।
-নানাবাড়ি যাবার পর তোমার কথা এত বেশী মনে পড়তো যে, নিজেকে প্রায়ই মানসিক রোগী মনে হতো। অনেক সময় আমার আচরনও নাকি সেরকম ছিলো। রাত্রে নামায পড়ে আল্লাহকে শুধু বলতাম- হয়ত আমাদেরকে আবার এক করে দিন নতু্বা দুজনকেই দুজনার কথা ভুলিয়ে দিন।" আমার কোন দোয়াই কবুল হয়নি।
চলবে
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ৩:৩৬