"যত দোষ নন্দ ঘোষ"....
বাংলায় প্রচলিত প্রবাদগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’। যে যত দোষ করুক না কেন, সব নন্দ ঘোষের ঘাড়েই যায়! এ প্রবাদের সহজ অর্থ হচ্ছে, দুর্বল মানুষের ঘাড়ে দোষ চাপানো। আবার অনেকের মতে, সব দোষ ঘুরে-ফিরে একজনের ওপর দেয়া। যা-ই হোক, কিন্তু এ নন্দ ঘোষটা কে? কিংবা কেন তার ঘাড়ের ওপর সব দোষ পড়ে?
চলুন, গল্পটা তাহলে জেনে নিই।
এই গল্পের প্রেক্ষাপট বৃন্দাবন। মথুরাপতি কংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য কৃষ্ণকে জন্মের পরপরই বৃন্দাবনের ঘোষপল্লীতে নন্দ ঘোষের বাড়িতে রেখে আসেন বাসুদেব। তারপর সেখানেই নন্দ আর যশোদার কোলে বেড়ে উঠতে থাকে দেবকী পুত্র কৃষ্ণ।
ছোটবেলা থেকেই অসম্ভব দুরন্ত কৃষ্ণ।কখনো লোকের বাড়ি থেকে মাখন-ননী চুরি করে খেয়ে নিচ্ছে, কিংবা হয়তো সরোবরে স্নান করতে নামা নারীদের পোশাক লুকিয়ে ফেলছে। তো বৃন্দাবনবাসীর ঘুম হারাম করে দিচ্ছিল ছোট্ট নন্দলাল।
সবাই নিজেদের নালিশ নিয়ে যেত পিতা নন্দ ঘোষের কাছে। নন্দ ঘোষও খুব মনোযোগ দিয়ে এই সমস্ত নালিশ শুনতেন। কিন্তু পুত্রকে তিনি এতই স্নেহ করতেন যে ছোট্ট কৃষ্ণের মুখের দিকে চেয়ে কিছুই বলতে পারতেন না।
ফলে সব রাগ-ক্ষোভ গিয়ে পড়তো নন্দ ঘোষের উপর। বৃন্দাবনবাসী মনে করলো, এই নন্দ ঘোষের প্রশ্রয় পেয়েই এত বাড় বেড়েছে কৃষ্ণের। ঘোষ মশাইও অম্লান বদনে মাথা পেতে নিতেন সমস্ত দোষ।
আর সেখান থেকেই এল ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’।
বিষ্ণুপুরাণ বা মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণের বাল্যলীলার কাহিনী তেমন ভাবে না থাকলেও; ভক্তদের লেখা ভাগবতে শ্রীকৃষ্ণের ননী-মাখন চুরি ও দুষ্টুমির কথা লেখা আছে। এসব ঘটনা থেকেই এ প্রবাদের সৃষ্টি।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৮:৫৫