somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

প্রাণসংহারী রক্তকরবী এবং রবীন্দ্রনাথের নন্দিনী......

০৯ ই মার্চ, ২০২৩ সকাল ১১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রাণসংহারী রক্তকরবী এবং রবীন্দ্রনাথের নন্দিনী......

১৯৪৫ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকান এটম বোমার আঘাতে হিরোশিমা ও নাগাসাকি জ্বলেপুড়ে শেষ। তখনও দুটি শহরে সাকুল্যে কোনো ভাবে বেঁচে গিয়েছিল বিভিন্ন প্রজাতির ১৭০টি গাছ। ওই ১৭০টি গাছের মধ্যে ছিল একটি রক্তকরবী।
বিস্ফোরণের পর ম্যানহাটান প্রজেক্টের বিজ্ঞানী ড.হ্যারল্ড জ্যাকবসেন একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন- আগামী ৭০ বছর হিরোশিমায় কোনো কিছু জন্মাবে না।

আশ্চর্যজনক ভাবে সেই বছরই হিরোশিমার ধ্বংসস্তূপের মাঝে প্রথম যে ফুলটি ফুটেছিল, সেটি ছিল রক্তকরবী!



"গাছ মানুষের বন্ধু, এদের জীবন উৎসর্গ করে দেয় মানব কল্যাণে"- কিন্তু রক্তকরবীর আচরণ ঠিক তার বিপরীত। এর পাতা, বাকল, ফুল ও ফল সহ উদ্ভিদের প্রতিটি অংশ তীব্র বিষাক্ত। এই উদ্ভিদ থেকে নির্গত লেটেক্স সেবন করলে মৃত্যু নিশ্চিত। অত্যন্ত রুক্ষ পরিবেশে এই গাছ বাড়তে এবং বেঁচে থাকতে পারে।



সৌন্দর্যের কারণে রক্তকরবী ও শ্বেতকরবী সাহিত্যে স্থান দখল করে নিয়েছে। পাতা তেতো বলে মানুষের ক্ষেত্রে বিষক্রিয়া কম দেখা যায়, অবশ্য TESS (Toxic Exposure Surveillance System) অনুসারে প্রতি বছর আমেরিকায় সহাস্রাধিক বিষক্রিয়ার ঘটনা ঘটে। ঘাসে মেশা শুকনো করবী পাতা বা শাখা খেয়ে গবাদি পশু (বিশেষত ঘোড়ার) বিষক্রিয়া/মৃত্যু দেখা যায়- পূর্ণবয়স্ক ঘোড়ার মারাত্মক মাত্রা ১০০g, (০.৫ mg/Kg)।



'রক্তকরবী'-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি রূপক-সাংকেতিক নাটক। মানুষের প্রবল লোভ কীভাবে জীবনের সমস্ত সৌন্দর্য ও স্বাভাবিকতাকে অস্বীকার করে মানুষকে নিছক যন্ত্রে ও উৎপাদনের উপকরণে পরিণত করেছে এবং তার বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিবাদ কী রূপ ধারণ করছে তারই রূপায়ণ এই নাটকে। নাটকটি বাংলা ১৩৩০ সনে রচনা করেছেন রবীন্দ্রনাথ।

রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং লিখেছিলেন...'রক্তকরবী নাটকে ‘নন্দিনী' একটি মানবীর ছবি। চারিদিকের পীড়নের ভিতর দিয়ে তার আত্মপ্রকাশ।’ নাটকের মধ্যেই কবি আভাস দিয়েছেন, মাটি খুঁড়ে যে পাতালে খনিজ ধন খোঁজা হয় নন্দিনী সেখানকার নয়; মাটির উপরিতলে যেখানে প্রাণের, যেখানে রূপের মৃত্যু, যেখানে প্রেমের লীলা, নন্দিনী সেই সহজ সুখের সেই সহজ সৌন্দর্যের।



রবীন্দ্রনাথের নন্দিনী যে এ বাংলার মেয়ে আমাদের একান্ত আপনজন। নন্দিনী সহজ সুখ ও সহজ সৌন্দর্যের প্রতীক। সে সহজতা আমাদের জীবন থেকে চলে গিয়েছে। সহজতার অনুশীলন একান্তভাবে প্রয়োজনে টিকে থাকার জন্যে নয়, বেঁচে থাকার জন্যে। সে কথা বুঝেছিল রাজা। নিজের শক্তির অহংকারে রাজা নিজেকেই বন্দি করেছে। তার সে ‘বন্দিত্ব’ থেকে মুক্তির স্বপ্ন দেখাতে পেরেছে শুধু নন্দিনী। নাটকের শুরুতেই আমরা দেখি ‘রক্তকরবী’ ফুল এনে দিয়ে কিশোর নন্দিনীকে বলে ‘কীসের দুঃখ’। একদিন তোর জন্যে প্রাণ দেব নন্দিনী, এই কথা কতবার মনে মনে ভাবি।’

কিশোরের সঙ্গে কথোপকথনের পরেই নাটকে অধ্যাপকের প্রবেশ ঘটে। অধ্যাপক নন্দিনীকে বর্ণনা করে যক্ষপুরের আচমকা আলো হিসেবে। অধ্যাপকের সঙ্গে কথোপকথনে আমরা বুঝতে পারি নন্দিনী এখানকার নয়। নন্দিনী এই অন্ধকারের বুকে আলোর ঝলসানি। রঞ্জনকে সে বুকে নিয়ে আছে। নন্দিনীর সংলাপেই আমরা প্রথম ‘রঞ্জন’ এবং ‘রক্তকবরী’ এই দুটি শব্দ শুনি। রঞ্জন মুক্তির অনুপ্রেরণা আর রক্তকরবী মুক্তির প্রতীক।

‘রঞ্জন আমাকে কখনো-কখনো আদর করে বলে রক্তকবরী। জানি নে আমার কেমন মনে হয়, আমার রঞ্জনের ভালোবাসার রঙ রাঙা সেই রঙ গলায় পরেছি, বুকে পরেছি, হাতে পরেছি।’

‘রক্তকরবী’ নাটকের নন্দিনী প্রেমের প্রতীক। যক্ষপুরীতে নন্দিনীর এই প্রেমের পরশ রাজা পাননি তার লোভের জন্য, সন্ন্যাসী পায়নি তার কুসংস্কারের জন্য আর মজুররা পায়নি তারা নিজেরাই নিজেদের শেকলে বন্দি বলে।

তবু সেই যক্ষপুরীর শেকল ছেড়ে মুক্ত হওয়ার বারতা আনে নন্দিনী। নন্দিনীর এই আহ্বানে চঞ্চল হয় সবার হৃদয়। জেগে ওঠে সবার মধ্যে মুক্তির স্বাদ। অত্যাচারী রাজাও পেতে চাইল নিষ্কৃতি। কিন্তু লোভী রাজা যে কায়দায় স্বর্ণ মজুদ করেন, সেভাবে কী নন্দিনী নামের প্রেম আর শ্বাশত সুন্দরকে পাওয়া যায়। কেবল রাজা নয়, নন্দিনীকে পেতে চায় সবাই। মোড়ল, কিশোর, অধ্যাপক, কেনারাম, বিশু সবাই চায় নন্দিনীর স্পর্শ। কিন্তু নন্দিনীর ভালোবাসা শুধু একজনের জন্য। মানুষটির নাম রঞ্জন। রঞ্জনের মধ্যেই নন্দিনীর প্রেমের দিশা। অথচ রঞ্জনও তার নিজের শেকলে বন্দী।

‘রক্তকরবী’ নাটকে দেখা যায় যক্ষপুরীর অন্ধকারে পুরুষের সবল শক্তি ভূমিগর্ভ থেকে উঠিয়ে আনছে তাল তাল সোনা। এখানে শুধু কঠোর আর নিঠুর শ্রম দিয়ে সবার কেবল স্বর্ণ লাভের চেষ্টা। এখানে নেই মোটেও প্রাণের আহ্বান। তাই প্রেম সেখান থেকে যায় নির্বাসিত। যক্ষপুরীর মানুষরা ভুলে গেছে যে, সোনার চেয়ে আনন্দের দাম বেশি। ভুলেছে প্রতাপের মধ্যে নেই পূর্ণতা, প্রেমের মধ্যেই পূর্ণতা। নিজের শেকলের কাছে নিজেই তারা দাস। কিন্তু একসময় নন্দিনী রূপে সকলের চিত্তে দোলা দেয় প্রেম। তাই নন্দিনী চরিত্র দিয়ে বোঝা যায়, মাটির তল থেকে যে সম্পদ খুঁড়ে খুঁড়ে আনতে হয় নন্দিনী সে সম্পদ নয়। মাটির উপরিতলের প্রাণের রূপই হলো নন্দিনী।

তথ্যসূত্রঃ রক্তকরবী ফুল ও নাটকের পোস্টারের ছবি নিয়েছি গুগল থেকে।



সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৪১
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছায়ার রক্তচোখ: ক্রোধের নগর

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:৫২


ষড়ঋপু সিরিজের দ্বিতীয় কাহিনী ”ক্রোধ”

রাত্রি নেমেছে শহরের উপর, কিন্তু তিমির কেবল আকাশে নয়—সে বসেছে মানুষের শিরায়, দৃষ্টিতে, শ্বাসে। পুরনো শহরের এক প্রান্তে, যেখানে ইট ভেঙে পড়ে আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রিয় কন্যা আমার- ৭৪

লিখেছেন রাজীব নুর, ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:৪২



প্রিয় কন্যা আমার-
ফারাজা, তুমি কি শুরু করেছো- আমি কিছুই বুঝতে পারছি না! রাতে তুমি ঘুমানোর আগে ঘুমানোর দোয়া পড়ে ঘুমাতে যাও। প্রতিদিন তোমার মুখে ঘুমের দোয়া শুনতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি আমি আর আমাদের দুরত্ব

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৩



তুমি আর আমি
দুই বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে,
নেই কোন লোভ চুম্বনের ,
ছোঁয়ারও কোন প্রয়োজন নেই
অথচ প্রতিটি নিঃশ্বাসে কেবলি তুমি।

তোমার হাসি সুবাসিত নয়,
কিন্তু সে আমায় মাতাল করে
যেন তরংগ বিহীন কোন সুর বাজে
মন্থর বাতাসে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নববর্ষের শোভাযাত্রা নাম বদল করছি না, পুরোনো নাম–ঐতিহ্যে ফেরত যাচ্ছি: ঢাবি উপাচার্য

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:০৪



পয়লা বৈশাখে ফি বছর চারুকলা অনুষদ আয়োজিত মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেছেন, ‘আমরা নাম পরিবর্তন করছি না। আমরা পুরোনো নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

'৭৪ সালের কুখ্যাত বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল এখন সময়ের দাবী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৫


বিগত আম্লিক সরকারের আমলে যে কুখ্যাত আইনের অপব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে কোনো অভিযোগ ছাড়াই আটক করে গায়েব করার চেষ্টা চলতো তা হলো ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন। এই আইন ব্যবহার করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×