লেখক যিনিই হোন, তার বইয়ের একটা মহিমা আছে.....
খুনী কিম্বা কুখ্যাত দুষ্কৃতিকারী, লুচ্চা বদমাশ যখন বই লেখে তার সকল অপকর্মগুলো আশ্চর্য ন্যায়বিচার পায়! ফ্যুয়েরার 'মাইন কাম্প', সেখান থেকে স্মরণীয় উক্তি জীবনের আদ্যোপান্ত ঘুরে বেড়ায়, কিছু মানুষ সেখান থেকেও দর্শন বুঝতে যান। ব্রিটিশ রাজপুত্র ফ্যান্সি পোশাকে নাজি চিহ্ন 'হাকেনক্রুজ' (স্বস্তিক) নিয়ে গর্বিত পার্টি করেন। বেনিতো মুসোলিনি লেখেন 'আমার জীবন' (মাই অটোবায়োগ্রাফি)। ফ্রান্সিস্কো ফ্রাঙ্কো লেখেন 'ম্যাসোনেরিয়া।' ফিলিপিন্সের স্বৈরাচারী ফার্দিনান্দ মার্কোসের গোপন ডায়েরি- এমন অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়।
উল্লেখিত বইগুলি যেমন একদিকে ঐতিহাসিক দলিল। আবার রাষ্ট্র ব্যবস্থার শীর্ষে থাকা মানুষেরা প্রায়শই তাঁদের কৃতকর্মের সাফাই হিসেবে একটি বই লিখে রাখেন বা তাঁর হয়ে লিখে দেন কেউ। কর্মজীবনে সঞ্চিত ঘৃণা, একটি বই এসে ক্ষতস্থানে প্রলেপ দেয়। একদিন ইতিহাস খোঁড়া হলে বইটি থেকে যাবে প্রকৃত সত্যের মুখোশ হয়ে- বইয়ের মহিমা এমনই!
প্রায় প্রতিটি মানুষের শৈশবের বিশ্বাস- "ছাপার অক্ষর কখনো মিথ্যে বলে না"।
জীবন শেখায়- চরম মিথ্যেবাদী হতে পারে একটি বই। খানিক সত্য, খানিক মিথ্যে, খানিক নীরবতা, খানিক এড়িয়ে যাওয়া মিশে কোনো কোনো বই আসলে স্বৈরাচার, বদমন-পীড়ন, নৃশংসতাকে চমৎকার সহমর্মী ভারসাম্যে পাতার পর পাতা সাজিয়ে রাখে।
আসলে খুনির লেখা বই মূলত তার খুনের সপক্ষে সাফাই ছাড়া কিছু নয়। একজন খুনীর বই লেখা খুনের চেয়েও বড় অপরাধ। একজন খুনী বই লিখে ইতিহাসকেও খুন করতে চায়, করেও। সবখুনী লিখতে পারেন না, সব খুন লেখাও যায় না। কিছু কিছু খুনকে লেখনীর ধারালো অস্ত্র আরো ভয়ঙ্কর করে দেয়। তবু কোনো খুনেরই জাস্টিফাই হয় না। অজুহাত হিসেবে পরিগণিত হতে পারে। একনায়কতন্ত্রীদের লেখাগুলো নেহাৎই স্বপ্নভঙ্গের খতিয়ান, অসহায়ত্বের অভিব্যক্তি। খুন তো পরাজিতের কুৎসিততম নমুনা। ঠিক একই ভাবে কুখ্যাত দুষ্কৃতিকারী, লুচ্চা বদমাশ যখন বই লেখে তার সকল অপকর্মগুলোকে আড়াল করে নিজের জয়ধ্বনি করে নিঃসংকোচে!
আফসোস, খুনীর লেখা বই পড়ে, দুষ্কৃতিকারী, লুচ্চা বদমাশদের লেখা পাঠকদের কাছে আশ্চর্য ন্যায়বিচার পায়। মৃতেরা উঠে দাঁড়িয়ে কৃপাসুন্দর চোখে তাকায়। কি সেলুকাস!
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:০৫