somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

আবারও 'জল-বনের কাব্য'.......

০৩ রা জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১০:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আবারও 'জল-বনের কাব্য'.......

১৬ মার্চ, ২০২১ সালে 'জল-বনের কাব্য' নিয়ে লিখেছিলাম.....তারপরও কয়েক বার 'জল-বনের কাব্য' পড়েছি...যতটা পড়েছি তার চেয়ে অনেক বার, অজস্র বার বইটা আমার গালে, আমার বুকে চেপে ধরে রেখেছি। চোখ বুজে, নিঃশ্বাস বন্ধ করে বইয়ের ঘ্রাণ নিয়েছি....



সৃষ্টির আদি থেকে সভ্যতার ধারক বাহক হিসেবে চিহ্নিত নদী ও অরণ্য। যদিও এই বই সেই ইতিহাস সম্বন্ধীয় নয়, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কাল এই রচনার সময় হলেও শহুরে পরিবেশের অসহিষ্ণু মুখরতা থেকে দূরে অরণ্যবিস্তৃত যাত্রাপথের এক টুকরো চিত্র ফুটে উঠেছে এই বইতে। লিখেছেন সরলা বসু, এগারো বছর বয়সে ফরেস্ট অফিসে কর্মরত স্বামী অশ্বিনীকুমার বসুর সঙ্গে যার এই নদীপথে যাত্রার সূচনা।
"...মা -বাবাকে ছেড়ে অচেনা মানুষের সাথে চলেছি অকূলে। শুধু কান্না পেতে লাগলো। শুধু কান্না। দাদাকে জড়িয়ে দাদার কোলে কখন ঘুমিয়ে গেলাম জানিনে।"
"ঘুম যখন ভাঙলো নৌকা নোঙর দেওয়া ভদ্র নদীর মধ্যে। উপরে ডুমুরিয়ার বড়ো হাট। এই হাটে অনেক জায়গার লোকজন, জিনিস-পত্রের সমাগম হয়। দূরে হট্টি-টি-হট্টি-টি- পাখি ডাকছে। ভোরের রৌদ্রে নৌকাখানি ঝলমল করছে।"

রাতের কান্না মুছলো, ভোরের আলোর পরশে...নারী মনের গহনে জটিল অন্ধকারে এই কি তবে প্রথম প্রকৃতির আলতো ছায়া!
এতো অস্বীকারের কোনো জায়গা নেই যে নারী ও প্রকৃতি আজ ও কোনো অদৃশ্য সুতোর বাঁধনে জড়িয়ে।
"বিকেল হয়-হয়। কচিপাতা নদীতে নৌকা নামল। সামান্য তরঙ্গায়িত মাঝারি নদী। কতো গ্রাম, মুচি পাড়া, দারোগার বোট, পুলিস সাহেবের স্টীমার দেখতে দেখতে যাচ্ছি।
সন্ধ্যায় রূপসাতে নৌকা নামলো। একটি গ্রাম। নদীর ধারে গোহালে সাঁজাল দিচ্ছে। গ্রাম্য বধূ প্রদীপ জ্বালাচ্ছে। কতগুলো গোরু জোয়ারের জলের মধ্যে জলো লম্বা-লম্বা ঘাস খাচ্ছে তখনও।"

এরকম টুকরো টুকরো কিছু চিত্রকে একত্রিত করেছেন। সমাজ, জগৎ সম্পর্কে সম্পূর্নত অজ্ঞ এক সদ্য কিশোরীর চোখে ছুঁয়ে যাওয়া গ্রামের দৃশ্য। নৌকোর চলনের মতো মৃদু কখনো কখনো আমাদের জীবনতরনী সব ঘাটে আলতো করে তার ছুঁয়ে যাওয়া, বৈঠা হাতে মুহুর্ত ...কিছু কিছু স্মৃতি এমন অমলিন থেকে যায় যা হয়তো কিছুই না এমনি...শুধু অন্ধকার ঘরে হাতড়ে খুঁজে পাওয়া মোমবাতি।
শুধু প্রকৃতির বর্ননা নয়, এসেছে মানুষের কথা। নিবারণের মা, সন্ধী বুড়ি, কাওরা বুড়ি, হারান বাছার, সরলা মিতিন, বনবিবি, বৈষ্ণবী, প্রত্যেকটি চরিত্র যেন শুধু এই বইয়ের ভিতরের ছাপার মানুষ নয়; তারা যে এই অরন্যের, এই মাটির মধ্যেকার এক একটি অংশ...
নির্জন জীবনে স্বামীর সঙ্গে বাসস্হান থেকে দূরে কাটানো সময়গুলিতে এই মানুষেরা ঘিরে রেখেছিল তার জীবন।
"আমার স্বজনহীন নির্বাসন দন্ডে মন যেন হাঁপিয়ে উঠললো। এমন সময় নতুন ঘটনা ঘটলো।স্বামী বদলী হলো সাহেবখালি ফরেস্ট আপিসে। জেলা চব্বিশ পরগনা।

কয়েকদিন পর চলে যাবো। নটবর মুখখানা আঁধার করে বললে, মা, এতোদিন ছুটিতে ছেলে-মেয়ে দেখতেও যাইনি। ভাবি ছেলে-মানুষ কষ্ট হবে। আর এখন তো কোনো কাজ ই থাকবে না। নিশ্চিন্তে যেতে পারবো!
বহুদিন পর মনে পড়লো অক্ষয়ের কথা। কোথায় আছে কে জানে? ওদের এই পিতৃহৃদয়ের অকৃত্রিম স্নেহের তুলনা খুঁজে পেলাম না কোনোদিন"। এর পাশাপাশি এসেছে আলেতম জলেতমের কথাও। এই যে কৈশোরের পর্ব জুড়ে তার ভেসে চলা, স্বল্পস্হায়ী বাসস্হান নির্মাণ আবার দূরে কোথাও বয়ে চলা - তাই এই যাত্রাপথে তার দুঃখ, ক্লেশ, বিরাগ থেকে স্নেহ, ভালোবাসা, বিচ্ছেদের বেদনাই মধুর হয়ে দেখা দিয়েছে।

একদম শেষে "তারপর? তারপর, যুগ-যুগান্তর, বর্ষা বসন্ত, শীত হেমন্ত, দিন দিনান্ত, বর্ষ-মাস, দিন রাত্রি পেরিয়ে আজ পৌঁছে গেছি আর একটি জীবনে।এখানে অনেক দুঃখ, ক্লেশ, ঘাত-প্রতিঘাত, নিরুপায়তা, বহু দৈন্য যন্ত্রনা-ভরা দিবসের শেষে স্মৃতির নয়নে ফুটে ওঠে কৈশোর বেলার প্রাচুর্য -সুন্দর দিনের স্বপ্ন। সুশ্যাম বনজ সৌগন্ধ এখন আমায় আকুল করে।
আর যাইনি সুন্দরবনে।"

যাননি কেন?
হয়তো সময়, হয়তো পারিপার্শ্ব হয়তো বা জীবন সে সুযোগ আর দেয়নি তাকে। স্মৃতির পাতায় অমলিন তার প্রথম কৈশোরের চোখ ও হৃদয় ছোঁয়া প্রকৃতি মানুষের কাব্য।

কিছু কিছু বই থাকে যাতে যুক্তির লৌহশলাকা আপনি পাবেন না, পাবেন না তথ্য বা তত্ত্বনিষ্ঠতা...এককথায় এই বইতে কী আছে?
এর উত্তর বহু খুঁজে যা পেলামঃ সবার আগে আছে আমার মায়ের হাতের স্পর্শ....আছে আমার মায়ের ঘ্রাণ- যা আমি বাস্তবে কখনও পাইনি.....!

আর যা আছে তা হলো- মানুষের কথা, আছে প্রকৃতির বুকে তাদের গড়িয়ে, এলিয়ে পড়ার কথা...আর আছে আমরা যা সোজা সরল করে বলতে লিখতে পারিনা, সেইসব সহজ সরল উপস্থাপন, যা আমার মায়ের মতোই একজন সরলা বসু লেখনীতে ফুটে উঠেছে।
কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কথায় "আমার সব হিসেব গোলমাল ক'রে দিয়েছিল ''জল-বনের কাব্য'। অখ্যাত প্রকাশক। অনাদরে ছাপা। বিজ্ঞাপন নেই। বাঁশ দিয়ে তোলা অনুকূল সমালোচনা নেই। এ সত্ত্বেও, যতদূর মনে পড়ে, ববিক্রি খারাপ হয়নি। পুরোটাই লেখার কব্জির জোরে।"

এবার বলি, কেনো এই বইটি আমি বারবার পড়ি, বারবার স্পর্শ করি......কারণ, এই বইয়ে আমার মায়ের স্পর্শ আছে। এই বইয়ের উপর আমার মায়ের হাতের লেখা কয়েকটা বাক্য আছে- যা আমাকে মায়ের স্পর্শ দেয়!

https://www.facebook.com/sharer/sharer.php?u=http://www.somewhereinblog.net/blog/jullvern/30316800&display=popup&ref=plugin&src=like&kid_directed_site=0&app_id=1545167315695654
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আহত আততায়ী

লিখেছেন রাজীব নুর, ১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:৩০



সভ্য নগরের মানুষ যেনবা বনমানুষ।
মানুষকে মানে না মানুষ;
আর মানুষের হানাহানি দেখে হাসে বনের মানুষ।

পথে না বেরোলে জানতামই না-
কতটা রপ্ত করেছি আমরা অবজ্ঞা অবহেলা ও পরচর্চা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ টাকার চাল ইতিহাসের সেরা দাম (এখন ৮৫), এই দামে ওনাদের চোখে পানি আসেনা৷

লিখেছেন আহসানের ব্লগ, ১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:০৭

আমার বাবা সরকারি চাকরী করছে, একাই বিশাল যৌথ ফ্যামিলি চালাইসে৷ যার ফলে প্রচুর ঋণ হইসে৷ কিন্তু কোনোদিন চুরি করেন নাই৷ গ্রামীন ব্যাংক থেকে বাবা ১০ হাজার টাকা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডক্টর মুহম্মদ ইউনুস ওয়ান ম্যান আর্মি!!!!!

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ২:৩২

ইন্টারিম সরকারে প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর একের পর এর চমক দিয়ে যাচ্ছেন ডক্টর মুহম্মদ ইউনুস। ভঙ্গুর, মেরুদন্ডহীন শাসন ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক ভাবে পঙ্গু, গৃহযুদ্ধের কাছাকাছি চলে যাওয়া একটি দেশের দায়িত্ব কাঁধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফ্রিল্যান্সারদের রক্ত-ঘামে অর্জিত অর্থ আটকে রাখার ষড়যন্ত্র: পেপ্যাল চালু না করার পেছনে কাদের হাত?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭

ফ্রিল্যান্সারদের রক্ত-ঘামে অর্জিত অর্থ আটকে রাখার ষড়যন্ত্র: পেপ্যাল চালু না করার পেছনে কাদের হাত?

পেপ্যাল লোগোটি বিবিসি ওয়েব পেইজ থেকে সংগৃহিত।

ভূমিকা

বিশ্বের প্রযুক্তিনির্ভর শ্রমবাজারে বাংলাদেশি তরুণ-তরুণীরা এখন এক অনস্বীকার্য শক্তি। আপওয়ার্ক,... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় সার্কাস দল!!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:১৫

আওয়ামিলীগ আমলে আওয়ামি মন্ত্রী এম্পিরা বিনোদনবঞ্চিত :( এই দেশের জনগনকে বিনোদিত করত তাদের বিভিন্ন মন্তব্যের দ্বারা। এখন এই স্থান একছত্রভাবে দখল করেছে বিএনপি !! দুই রাজনৈতিক দলের নেতাদেরই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×