না বুঝলে প্রশ্ন করুন, আলোচনায় আসুবান।বা যদি আপনার ভিতরে এর থেকেও কোন গভির উপলব্ধি, জ্ঞানের কথা থাকে তাহলে জানিয়ে জান।
কাউকে আঘাত দেয়া আমার লক্ষ নয়।ইহা একান্তই নিজস্ব চিন্তা ধারনা। সত্য জানতে ইচ্ছুক সত্য মানুষের জন্য।
ধর্মের নামে যারা মানুষকে মানুষ থেকে ভেদাভেদ করে, কোরানের দোহাই দিয়ে যারা মানুষকে কাফের বলে গালি দেয়,যারা আল্লাহকে মানুষের সাথে-ভিতরে অবস্থানটি অস্বীকার করে, স্রষ্টাকে তার সৃষ্টি হতে আলাদা চিন্তা করে থাকেন তারা যেকোন ধর্মেরই হোন না কেন দয়া করে পড়োবেন না। ইহা মানুষের জন্য, যেই মানুষ মানুষকে ভালবাসে, সৃষ্টিকে ভালবাসে।
ঈমান অমুল্য ধন। মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি যে, সে ঈমান চায়, মুক্তি চায়। সরলতার এই সুযোগ নিয়ে মুন্সী-মৌলভী থেকে শুরু করে কত সাধু ফকির দরবেশ নামধারীরা ঈমানের নামে প্রতারনা করেচে। মানুষেরা প্রতারিত হচ্ছে, তবুও ঈমান চাচ্ছে, এদিক ওদিক ছুটছে।
ধর্মের ডাক ঈমান আনার-ঈমান মোজাম্মেল হোক আর মোফাজ্জেল হোক, কিন্তু আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে। কোরানের স্পষ্ট ঘোষনা-“মানুষের সাধ্য নাই যে ঈমান আনে আল্লাহর অনুমতি ব্যতিত (ইউনুসঃ১০০)। কাজেই আল্লাহর অনুমতি ছাড়া ঈমান আনা ফাসেকী ও খোদাদ্রোহীতা। আল্লাহর অনুমতি ব্যতিত ঈমান আনা যাবেই না- একথাটির ভেতর প্রচ্ছন্নভাবে লুকানো রয়েছে আল্লাহকে চেনা-জানার প্রশ্নটিও-অর্থাৎ নিজেকে চেনা। যে তার নিজেকে চিনল সে তার রবকে চিনল-হাদিস কুদসি। আর আল্লাহকে চিনলে অনুমতিও পাওয়া যাবে। অথচ খোদার অনুমতিতে ঈমান- এই সোজা কিন্তু তাৎপর্যপূর্ন কথাটির কোন আবেদন সমাজে নেই। তারা নিজেরা নিজেরা ঈমান আনছে, ধর্মানুষ্ঠান পালন করছে। তারা আল্লাহকে দেখার ধার ধারছে না, অনুমতি নিয়ে ঈমান আনার ধার ধারছে না। বরং বলে, এ দুনিয়ায় আল্লাহকে দেখা যাবে না। অথচ স্পষ্ট হাদিস-“যে বলে এই দুনিয়ায় আল্লাহকে দেখা যাবেনা, তার জন্য দোজখের একটি ছিদ্রপথ খুলে যায়”। অর্থ দাড়াচ্ছে, যে বলে এ দুনিয়ায় খোদাকে দেখা যাবে না, সে দোজখী। খোদাকে যেখানে দেখা যাবেনা, অনুমতি প্রশ্ন সেখানে নাই। আল্লাহর অনুমতি ছাড়া ঈমান আনার যে কাজটি কিছুতেই করার নয় হবারও নয়, সেই ঈমান নামে নিজেরা নিজেরা ঈমান নামে যা-ই আনুক ইহা ঈমান তো নয়ই, বরং ধৃষ্টতা-মূর্খতা ও খোদাদ্রহীতা। আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করে ঈমান নামে অনুমানে তারা একটা কিছু আনছে, অপরকে আনতে বলছে, জমাত করছে, মসজিদ ঘর করছে, নামাজ পড়ছে, রোজা রাখছে-,আর নিজেদের পাকা মুসলমান মনে করছে। মুসলমানের ঘরে মুসলমান, সবই এখন পৈতৃক ওয়ারিশী-সূত্রে। এক জাতিকে বিভক্ত করে ভিন্ন ভিন্ন জাতি হয়েছে। অথচ খোদার অনুমতি ক্রমে ঈমান আনলে মানব জাতি বিভক্ত হয়না, সবাই এক অভিন্ন জাতি থাকে। ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায় থাকতে পারে-তার অর্থ এই নয় যে জাতি বিভক্ত হয়ে গেছে। বরং প্রতিযোগিতা থাকবে মানুষ একাত্ন হবার, প্রতিযোগিতা থাকবে কোন সম্প্রদায় আত্নার উৎকর্ষ সাধনের কি অবদান রাখতে পারে, তার। ঈহাই শান্তি, ঈহাই ইসলাম।
নিজেরা নিজেরা ঈমান আনা যত সহজ উহা রক্ষা করাও সহজ। এরুপ ঈমান আনা ও রক্ষা করার প্রয়োজনও নাকি আর থাকছে না। মুসলমান ঘরে জন্ম নিলেই পৈতৃক-ওয়ারিশী সূত্রে যখন মুসলমান হওয়া যাচ্ছে তখন ঈমান আনার প্রয়োজন আর থাকেনা।ঈমান রক্ষার কাজটিও পৈতৃক ওয়ারিশী সুবাদেই হয়ে যাবার কথা। কিন্তু যারা আল্লাহর অনুমতি ক্রমে ঈমান আনেন, তারা জানেন ঈমান আনা যেমন কষ্টকর, রাখাও তেমন কষ্টকর। রসুলের হাদিস থেকে সেই শিক্ষাই পাওয়া যায়ঃ শেষ জামান্য ঈমান রক্ষা করা হাতে জলন্ত অঙ্গার রাখার চেয়েও কঠিন হবে”।এ ঈমান একাদশের ঈমান, দশজনের পৈতৃক-ওয়ারিশী কিংবা নিজে নিজে আনা ঈমান নয়। ইহা আল্লাহর কাছ থেকে বহু কান্নাকাটির পর মিলে।
মুসলমান জাতি আল্লাহ মানে। এমন মানে যে আল্লাহর নামে প্রানপাত করে। কিন্তু ঈমানের প্রশ্নে আল্লাহ যেখানে জোরের সাথে বল্লেন-“মানুষের সাধ্য নাই ঈমান আনে আল্লাহর অনুমতি ব্যতিত-“সে ক্ষেত্রে আল্লাহকে তোয়াক্কা না করে নিজেরা নিজেরা ঈমান(!) এনে ফেললো। ঈহা কি ঈমান?আল্লাহর অনুমতি ক্রমে ঈমানই ঈমান-ঃএলমে লাদুন্নীর সাথে ঈমান। ইহাই জ্ঞান আর এ জ্ঞানই আল্লাহর অসি। এলমে লাদুন্নী সম্পর্কে মাদ্রাসা শিক্ষা বহু দূরে থাকায় ঈমানের প্রশ্নে মুসলিম জাতির এ দূর্দশা। এ জন্য বলা যায় – মাদ্রাসায় কোন জ্ঞানই নাই। মাদ্রাসা পড়ুয়া আরবী বিদ্বানগন অজ্ঞানতাকে জ্ঞান নামে চালাবেন, জাতিকে পেছনে ফেলে দিবেন, জাতির সর্বনাশ করবেন, ইহা জেনেই রসুলুল্লাহ (সাঃ) চৌদ্দশ হিজরি আগে বলেছেনঃ ক) মানবের তরে এমন এক সময় আসবে যখন ইসলাম থাকবেনা, থাকবে উহার নাম, কোরান থাকবেনা, থাকবে উহার খোসা, স্থানে স্থানে মসজিদ ঘর পাকা হবে হেদায়েতের নাম গন্ধ থাকবেনা, ঐ জামানার আরবী বিদ্বানগন চরিত্রহীন হবে, তারা পরষ্পর ঝগড়া করবে এবং বিবাদ বিসম্বাদের মতানৈক্য প্রচার করে জনগনকে সত্য থেকে দূরে সরে রাখবে; আসমানের নীচে তাদের থেকে বড় চরিত্রহীন আর কেউ হবেনা। খ) আলেমদের ভিতর থেকে দজ্জাল দল বের হবে, তারা ঘরে ঘরে ঢুকবে এবং সকলের ঈমান নষ্ট করবে।“আলেমদের মধ্যে থেকে দজ্জালদল, তারাই ধর্মসমাজের পরিচালক।
সাধনার দ্বারা মুসলমান হতে হয়, হিন্দু হতে হয়, খ্রীষ্টান হতে হয়, বৌদ্ধ হতে হয়। সুতরাং সাধনার দ্বারা মানুষ হতে পারলেই ধার্মিক হওয়া যায়। আগে মানুষ হতে হবে অতঃপর ধর্ম পালন। তার পূর্বে নয়।
মানুষ হবার আহবান।
কাদেরীয়া দরবার শরীফ।