মাঝে মাঝে কিছু খবর আমাদের মুহূর্তের জন্য থমকে দেয়। গা-সওয়া বাস্তবতাটাকেই আবার নতুন করে ভাবিয়ে তোলে। পুনর্মূল্যায়নের তাগিদ দেয়। এমনই একটা খবর গত ১০ অক্টোবর প্রথম আলোয় ছাপা হয়: `তাঁদের বয়স ১৮ থেকে ২২ বছর। চলন্ত ট্রেনের ছাদের ওপর দিয়ে অস্বাভাবিক ক্ষিপ্রতায় দৌড়াতে পারেন তাঁরা। রাতের অন্ধকারে সুযোগ বুঝে গামছা দিয়ে যাত্রীদের গলা পেঁচিয়ে ধরে কেড়ে নেন সর্বস্ব। তারপর ছুরি মেরে চলন্ত ট্রেন থেকে লাথি মেরে নিচে ফেলে দেন। এরপর লুটের টাকা ভাগাভাগি করে তা দিয়ে মাদক কিনে নেশায় মেতে ওঠেন।.... তাঁদের হাতে কমপক্ষে সাতজন খুন হয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেক যাত্রী।'
ঘটনাক্রমে পর দিনই রাতের ট্রেনে চট্টগ্রাম থেকে সিলেট যাচ্ছিলাম। মাথায় খবরটার রেশ কাজ করছিল। একটা অজানা অতংক যেন পেয়ে বসল আমাকে। মনে হলো এই বুঝি পেছন থেকে কেউ গামছা পেঁচিয়ে ধরবে, তারপর সবকিছু লুটেপুটে ছুঁড়ে ফেলবে জানলা দিয়ে। তাই সেদিনের প্রতিটি ঘটনাই মনোযোগ সহকার লক্ষ্য করছিলাম। ট্রেনটা সাড়ে তিন ঘন্টা দেরিতে রাত সাড়ে বারোটায় ছাড়ল। অনেক যাত্রীই টিকেট ফেরত দিয়ে চলে গিয়েছিল। তাই ট্রেনটা ছিল বেশ ফাঁকা। এটেন্ডেন্ট বিনা টিকেটের যাত্রীদের বেশ খাতির করে বসিয়ে দিচ্ছিল সেসব আসনে। মিনিট দশেক চলার পর দেখি ট্রেনে হৈচৈ। ৭ -৮ জন হিজড়ার একটা দল অশ্লীল সব কথা আর অঙ্গভঙ্গি করে সবার থেকে ১০ টাকা করে তুলেছে। এরা এমন এক ভীতি ও কদর্যের পরিবেশ তৈরি করেছে যে শিশু ও নারীরা ভয়ে সিঁটকে যাচ্ছিল।
ঘন্টা দেড়েক চলার পর ফেনীতে যাত্রা বিরতি। উদয়ন এক্সপ্রেসের একমাত্র শোভন চেয়ার কোচটিতে মধ্যবর্তী গন্তব্যের কোন টিকেট বিক্রি করা হয়না। একইভাবে মধ্যবর্তী স্টেশন থেকেও টিকেট বিক্রি হয় না। তাই যাত্রী উঠানামারও প্রশ্ন উঠে না। কিন্তু কী সুন্দর ট্রেনের ডালা খুলে গেল। যাত্রী উঠল নামল। একই দৃশ্য পথের প্রত্যেকটি স্টেশনে।
মাঝরাতে একেকটি স্টেশন থেকে এমন সব লোকজন উঠছিল মনে হচ্ছিল এই বুঝি কিছু একটা হয়ে গেল। গামছা.. ছুরি.. ছুঁড়ে ফেলা..। একেতো ভয় তার ওপর হকার আর ভিক্ষুকের হাঁকডাক। একেবারে নরক গুলজার। সারাটা রাত নির্ঘুম কাটল। এর মধ্যে একবারও টিটি এলো না। দুয়েকজন নিরপত্তা বাহিনীর লোককে দেখলাম। তারা আছে যাত্রী তোলার ধান্ধায়।ভয়ে ভয়ে একটা রাত কাটল। জার্নি বাই ট্রেন উইথ প্যানিক।