somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার পাঠ: আমার উপলব্ধি // চৈতি কর

২২ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বই মানুষের জীবনে অতি গুরুত্বপূর্ণ।বই পড়লে অনেক জানা অজানা বিষয়ে জ্ঞান লাভ করা যায়। আমি এস.এস.সি পরীক্ষা দেওয়ার পর অনেগুলো বই পড়েছি। আমি যে সব বই পড়েছি সে গুলো হল, ‘কবিতার ক্লাস’ ,‘মহাভারত’,‘মহাবিশ্ব’,‘গল্পগুচ্ছ’, ‘লাল নীল দীপাবলী বা বাংলা সাহিত্যের জীবনী’, ‘যে গল্পের শেষ নেই’ এবং‘বরণীয় মানুষ স্মরনীয় বিচার’। কবিতার ক্লাস বইয়ে বাংলা কবিতার ছন্দ সম্পর্কে সুবিস্তর আলোচনা রয়েছে।মহাভারত একটি মহাকাব্য। এতে পৌরানিক কাহিনী আলোচনা করা হয়েছে। মহাবিশ্ব বইটি মূলত বিজ্ঞান বিষয়ক বই। এতে বিজ্ঞান বিষয়ক নানা জিনিস এবং মহাবিশ্বের উৎপত্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।গল্পগুচ্ছ বইটি রবীন্দ্রনাথের অমর সৃষ্টি। নানা ধরনের ছোট গল্প এতে রয়েছে। লাল নীল দীপাবলী বইয়ে বাংলা সাহিত্যের শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত বিষয় সমূহ তুলে ধরা হয়েছে। যে গল্পের শেষ নেই বইটিতে পৃথিবীর উৎপত্তি সহ বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে বিস্তর বর্ননা রয়েছে। অনেক বিজ্ঞানী, দার্শনিক, কবি, রাজনীতিবিদ, সহ বিখ্যাত বিভিন্ন ব্যক্তির জীবনের নানা ঘটনা ‘বরনীয় মানুষ স্মরনীয় বিচার’ নামক বইয়ে রয়েছে।




কবিতার ক্লাস: এ বইয়ের লেখক নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। এতে বাংলা কবিতার তিনটি ছন্দ রয়েছে। অক্ষরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত এবং স্বরবৃত্ত এই তিন ধরনের ছন্দ সম্পর্কে বিভিন্ন আলোচনা রয়েছে। কবিতা লেখার জন্য যা যা প্রয়োজন হয় যেমন: কাগজ, কলম,সময় প্রভৃতির কথা এখানে উল্লেখ করা হয়েছে। অক্ষরবৃত্ত ছন্দে যত অক্ষর বা বর্ণ, তত মাত্রা। মাত্রাবৃত্তে যুক্তবর্ণের ক্ষেত্রে দুই মাত্রা ধরা হয়। হস্বর্ণ গুলোকে মাত্রাবৃত্তে আলাদা মাত্রা ধরা হয়।স্বরবৃত্তের চাল চার মাত্রার। এতে সিলেবল কে একটি করে মাত্রার মূল্য দেওয়া হয়। বাংলা কবিতা লেখার বিভিন্ন নিয়ম কানুন এতে সুন্দরভাবে উল্লেখ রয়েছে।




মহাভারত: কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস কর্তৃক সংস্কৃত ভাষায় রচিত মহাভারত বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন রাজশেখর বসু। মহাভারতের কাহিনী পৌরানিক কাহিনী। এতে মূলত রাজ্য নিয়ে যুদ্ধের বর্ণনা রয়েছে। মহাভারতের চরিত্র গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যুধিষ্ঠির, ভীম, অর্জুন, কৃষ্ণ, দুর্যোধন, ভীষ্ম, কর্ণ, দ্রৌপদী এবং আরো অনেকে। কৌরব এবং পান্ডবদের মধ্যে রাজ্য নিয়ে বিরোধিতা শুরু হয়। দুর্মতি দুর্যোধন পান্ডবদের রাজ্য ফিরিয়ে দেওয়া নিয়ে নানা টালবাহানা শুরু করলেও পান্ডবরা তাদের ন্যায্য ভূমি চেয়েছিল। অবশেষে যুদ্ধের মাধ্যমে পান্ডবরা তাদের রাজ্য ফিরে পায়।





মহাবিশ্ব: মহাবিশ্ব বইটি হুমায়ুন আজাদের লেখা। এ বইয়ে মহাবিশ্বের উৎপত্তি এবং সৌরজগতের উৎপত্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।দশ থেকে বিশ বিলিয়ন বছর আগে বিরাট মহাগর্জনের ফলে সৃষ্টি হয়েছিল মহাবিশ্ব। মহাবিশ্বের সৃষ্টি সম্পর্কে বিজ্ঞানসম্মত তত্ত্ব হচ্ছে ‘বিগ ব্যাং’। আদিম মানুষ মনে করত পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন ঈশ্বর। প্রাচীন কালের বিজ্ঞানীর নানা ধরনের বিশ্বকাঠামো তৈরি করেছেন। তাদের মধ্যে গ্রহনযোগ্য বিশ্বকাঠামো তৈরি করেছেন কোপারনিকাস। সৌরজগতের নয়টি গ্রহ এবং তার বর্ননা এতে রয়েছে। পৃথিবী এবং চাঁদের মধ্যে অভিকর্ষ নামক বল রয়েছে। সৌরজগতের সব গ্রহ, উপগ্রহ সমূহ অভিকর্ষের কারনে টিকে রয়েছে। তারা আমাদের পৃথিবী চেয়ে অনেক অনেক দূরে অবস্থিত। এমন অনেক তারা রয়েছে যেগুলো সূর্যের চেয়েও অনেক বড়। মহাবিশ্বে প্রতিনিয়ত নানা ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে।




গল্পগুচ্ছ: গল্পগুচ্ছ বইয়ের লেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি বিশ্বকবি নামে পরিচিত। গল্পগুচ্ছ বইটি ছোটগল্পের আধার। এতে নানা ধরনের ছোটগল্প রয়েছে। ছোটগল্প শেষ হয়েও শেষ হয়না। এতে কাহিনী অপূর্ণ থেকে যায়।নানা ধরনের ছোটগল্প এ বইয়ে রয়েছে। রবীন্দ্রনাথ যে সব জায়গায় বসে গল্প গুলো রচনা করেছেন তার কথা ও বইয়ের শেষে রয়েছে। সত্যতা অবলম্বনে নানা ছোটগল্প এ বইয়ে আছে।




লাল নীল দীপাবলি বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী: লাল নীল দীপাবলি বইটি হুমায়ুন আজাদ লিখেছেন। বাঙলা সাহিত্যের হাজার বছরের ইতিহাস এতে রয়েছে। সাহিত্য সময়ের সাথে সাথে এগিয়ে চলে। আগে সাহিত্য রচিত হত মুখে মুখে। মানুষের মুখে মুখে অনেক বদল হয়েছে সাহিত্যের। চর্যাপদ বাঙলা সাহিত্যের প্রথম কাব্যগ্রন্থ। এটি প্রাচীন যুগে রচিত । চর্যাপদের ভাষা অনেক কঠিন, বুঝতে কষ্ট হয়। শ্রীকৃষ্ণকীর্তন মধ্যযুগের বাঙলা সাহিত্যের অন্যতম নির্দশন। অনেক ধরনের মঙ্গলকাব্য মধ্যযুগে রচিত হয়েছে। আধুনিক যুগের বাঙলা সাহিত্যের নিদর্শন হচ্ছে গদ্য। নাটক, কবিতা, উপন্যাস প্রভৃতির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত যা ঘটেছে তার বর্ননা লাল নীল দীপাবলীতে রয়েছে।




যে গল্পের শেষ নেই: যে গল্পের শেষ নেই বইয়ের লেখক দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়। আদিম যুগ থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত বিজ্ঞানের আবদান এর কথা এতে রযেছে। এটি মূলত জীব বিজ্ঞানের একটি অংশ। জীবের উৎপত্তি কিভাবে হয়েছে তার কথা এ বইয়ে রয়েছে। মানুষের পূর্বপুরুষ শিম্পাঞ্জীর কথাও এতে বলা হয়েছে। প্রাচীন কাল থেকে মানুষ পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ার জন্য বিভিন্ন পথ অবলম্বন করেছে। বর্তমানে মানুষ নিজেরাই নিজেদের শত্রু। মানুষ মানুষকে ঘৃণা করে, অর্থেও লোভে মানুষ অন্য মানুষকে খুনও করতে পারে। মানুষের গল্প কখনও শেষ হবার নয়।




বরণীয় মানুষ স্মরণীয় বিচার: এ বইয়ের লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। জ্ঞানের জন্য দন্ডিত অমর মানুষদের কথা এবং তাদের বিচারের কথা এ বইয়ে রয়েছে। সক্রেটিসকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছিল রাস্তাঘাটে মানুষকে জ্ঞান দান করার জন্য।কবি হিসেবেও অনেককে নানা ধরনের শাস্তি দেওয়া হয়েছিল।জ্ঞানী মানুষদের স্মরনীয় বিচার তাদের অবদানের কথা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়।


এসব বইয়ের মধ্যে আমার সবচেয়ে ভাল লেগেছে‘ লাল নীল দীপাবলী’ । কারণ এতে বাঙলা সাহিত্যের শুরু থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত সবকিছুর বর্ণনা রয়েছে। লাল নীল দীপাবলী বইটি পড়লে বাঙলা সাহিত্যের সব দিক সম্পর্কে জানা যাবে। এ বইয়ে অত্যন্ত্ সুন্দরভাবে সবকিছু উপস্থাপন করা হয়েছে। অন্যান্য বইসমূহেও জানা অজানা নানা বিষয় রয়েছে। সবগুলো বই মূলত জ্ঞান ভিত্তিক বই। আমার সবচেয়ে ভাল লাগে বিজ্ঞান বিষয়ক বই পড়তে। তাই ‘মহাবিশ্ব’, ‘যে গল্পের শেষ নেই’ এ বইগুলো আমাকে অনেক কিছু জানতে সাহায্য করেছে। কবিতার ক্লাস বইটিতে অনেক দুর্বোধ্য শব্দ ব্যাবহার করা হয়েছে। সেজন্য এ বইটি আমার পছন্দ হয়নি। বই পড়ায় অনেক আনন্দ আছে। বই পড়লে জ্ঞানের ভান্ডার অনেকাংশে বেড়ে যায়। তাই বই পড়া সবার জন্য খুবই জরুরি।

........................................

( চৈতি কর আমার বড় ভাইয়ের দ্বিতীয় সন্তান। ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে এস, এস, সি পরীক্ষা সমাপ্ত হওয়ার পর আমার বইভাণ্ডার থেকে কিছু বই পড়ে উপরের লেখাটি সে লিখে। লেখাটি পড়ার পর আমার সুখ লাগে। এভাবেই বেড়ে উঠুক সুন্দর সুস্থ নিজস্ব বিবেচনায়, আমি তা চাই।
.....................................................
সেবার এস, এস, সি পরীক্ষায় সে জিপিএ ৪.৮১ পেয়েছে। এখনকার ভরা এ+ মৌসুমে তাদের বিদ্যালয়ে এটাই সর্বোচ্চ ফলাফল। এসব নিয়ে তার মাথাব্যথাও নেই। কিন্তু তার মন খারাপ ছিল, তার দীর্ঘ দিনের প্রতিদ্বন্দী ফার্স্টগার্ল পরীক্ষায় ফেল করেছে যা তার কাছে অপ্রত্যাশিত।)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:০৪
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঘুষ ইজ গুড ফর হেলথ !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১:২৩


সিরাজদিখানের মাহফুজুর রহমান সাহেবের কান্ড দেখে মনে হলো, তিনি ব্রিটিশ আমলের একটা গল্প খুবই সিরিয়াসলি নিয়েছেন। গল্পটা পুরনো, কিন্তু ঘুষখোরদের মধ্যে এখনো জনপ্রিয়। এক ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট বাংলায় দুর্বল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছায়ার রক্তচোখ: ক্রোধের নগর

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:৫২


ষড়ঋপু সিরিজের দ্বিতীয় কাহিনী ”ক্রোধ”

রাত্রি নেমেছে শহরের উপর, কিন্তু তিমির কেবল আকাশে নয়—সে বসেছে মানুষের শিরায়, দৃষ্টিতে, শ্বাসে। পুরনো শহরের এক প্রান্তে, যেখানে ইট ভেঙে পড়ে আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রিয় কন্যা আমার- ৭৪

লিখেছেন রাজীব নুর, ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:৪২



প্রিয় কন্যা আমার-
ফারাজা, তুমি কি শুরু করেছো- আমি কিছুই বুঝতে পারছি না! রাতে তুমি ঘুমানোর আগে ঘুমানোর দোয়া পড়ে ঘুমাতে যাও। প্রতিদিন তোমার মুখে ঘুমের দোয়া শুনতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নববর্ষের শোভাযাত্রা নাম বদল করছি না, পুরোনো নাম–ঐতিহ্যে ফেরত যাচ্ছি: ঢাবি উপাচার্য

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:০৪



পয়লা বৈশাখে ফি বছর চারুকলা অনুষদ আয়োজিত মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেছেন, ‘আমরা নাম পরিবর্তন করছি না। আমরা পুরোনো নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

'৭৪ সালের কুখ্যাত বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল এখন সময়ের দাবী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৫


বিগত আম্লিক সরকারের আমলে যে কুখ্যাত আইনের অপব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে কোনো অভিযোগ ছাড়াই আটক করে গায়েব করার চেষ্টা চলতো তা হলো ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন। এই আইন ব্যবহার করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×