
চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ থানার গাজীপুর মিজিবাড়ির নূরুল ইসলাম মিজির দ্বিতীয় কন্যা সলিমা আক্তার শিমু।বয়স ত্রিশের কোঠায়। তবে দেখতে খুবই সুন্দরী। পেশা তার নীলনেশার মাদক ইয়াবা বিক্রি। ১৯৯৫ সালে একই গ্রামের মাইনুদ্দিনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। সেই সংসারে দুই সন্তানের জন্মের পর ভাসুর জসীমের সঙ্গে প্রথমে পরকীয়া ও পরে ১৯৯৮ সালে তাকে গোপনে বিয়ে করে শিমু। এ ঘটনা জানাজানি হলে গ্রাম্য সালিশে তাকে পুকুরের পানিতে ডুবিয়ে ও দোররা মেরে গ্রামছাড়া করা হয়। অতপর শিমুর ঢাকায় আগমন। ২০০১ সালে ২০, তাহেরবাগ নবাবপুরের ব্যবসায়ী মান্নানকে বিয়ে করে শিমু। এরই মধ্যে যাত্রাবাড়ী মীরহাজিরবাগের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী নাজিমের সঙ্গে সখ্য গড়ে প্রেম ও পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে ২০০২ সালে তাকে বিয়ে করে। মাদকাসক্ত নাজিমের হাত ধরে ২০০৩ সালে ফেনসিডিল ব্যবসায় পা বাড়ায় শিমু। ফেনসিডিল ব্যবসার পর দেড় বছর আগে চতুর্থ স্বামী নাজিমকে সঙ্গে নিয়ে ইয়াবা ব্যবসা শুরু করে। কেবল ইয়াবা বিক্রি করেই বনে গেছে সে কোটি পতি।শিমু একদিকে ইয়াবা বিক্রেতা অন্যদিকে দেখতে সুন্দরী এ জন্য তার নামের পরিচিতি পেয়েছে ইয়াবা সুন্দরী হিসবে।

সম্প্রতি তসলিমা আক্তার শিমুকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে বের হয়ে এসেছে ইয়াবা সুন্দরীর চাঞ্চল্যকর কাহিনী। জিজ্ঞাসাবাদে সে জানিয়েছে রাজধানীতে ইয়াবা বিক্রি করে তার কোটিপতি হওয়ার কাহিনী।
ইয়াবা সুন্দরী শিমুর প্রতিদিন বিক্রি কমপক্ষে লাখ টাকা। রাজধানীর বিভিন্ন মহল্লায় মাসে মাসে বাসা বদলের পাশাপাশি মোবাইল ফোনের সিমকার্ড বদল করে থাকে শিমু। ইয়াবা ডিলার শিমুর এবি ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংকের যাত্রাবাড়ী শাখায় দুটি হিসাবে জমা রয়েছে প্রায় কোটি টাকা।
গত ৪ অক্টোবর রাতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সূত্রাপুর জোনের সদস্যরা ১২০ পিস ইয়াবা ও ইয়াবা বিক্রির ৩৭ হাজার ৩১০ টাকাসহ গ্রেফতার করে শিমুকে। এ ঘটনায় ইন্সপেক্টর আজিজুল ইসলাম বাদী হয়ে গেন্ডারিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শিমুসহ ৩ জনকে শাহবাগ থানায় রাখা হয়। পরদিন তাদের আদালতে পাঠানো হলে শিমু আদালত থেকে ছাড়া পায়।

আদালত থেকে মুক্ত হয়েই প্রতিহিংসা চারিতার্থ করার জন্য ইন্সপেক্টর আজিজকে ফাঁদে ফেলতে শিমু মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ২২/১ তোপখানার অফিসে গিয়ে এক সদস্যের কাছে তার ওয়ারিদ কোম্পানির সেলফোন নম্বর দিয়ে তাকে যোগাযোগ করতে বলে। এরপর আজিজ তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে শিমু নিজে ভাল হয়ে যাওয়ার কথা বলে অন্য যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের ধরিয়ে দেয়ার আশ্বাস দেয়। ইয়াবা সিন্ডিকেট ধরতে আজিজ তাঁর পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের পরামর্শে কৌশলে শিমুর সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। তবে শিমুর ওই প্রস্তাব ছিল একটি 'ফাঁদ'। আজিজের সঙ্গে নানাভাবে ভাব জমিয়ে মুঠোফোনে তাদের সব কথোপকথন রেকর্ড করে শিমু। পরে তা সিডি করে আজিজের কাছে ৬ লাখ টাকা দাবি করে বলে, দাবিকৃত টাকা না দিলে তার সংসার ভাঙ্গা হবে। এ অবস্থায় আজিজ গত ১৮ অক্টোবর পুরো কাহিনী বর্ণনা করে শাহবাগ থানায় একটি জিডি করেন। ইয়াবা সুন্দরী শিমু কিভাবে কেমন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ সংশ্লিষ্টদের ফাঁদে ফেলে মাদক বিক্রি করে কোটিপতি বনেছে তার নেপথ্যের কাহিনী বের হয়ে এসেছে তদন্তে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৩৮