উডি এলেন এবং তার প্রাক্তন স্ত্রীর পালক কন্যার প্রেম, বিবাহ একটা সময়ে ব্যপক আলোড়ন তুলেছিলো সংবাদপত্রে, যদিও এটা নিষিদ্ধ হওয়ার মতো কোনো সম্পর্ক ছিলো না, বরং পালক পিতা-মাতা সম্পর্কে যে শুদ্ধতার বোধ কাজ করতো মানুষের ভেতরে, সেই শুদ্ধতার বোধকে আহত করেছে।
আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিন ১৯৯৭ সাল থেকে সেখানে সংঘটিত ধর্ষণ ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগের পরিসংখ্যান প্রকাশ করছে- ১৯৯৭ সনে শতকরা ৩৫ শতাংশ শিশুর যৌন নিপীড়ক ছিলো তার বাবা, ভাই এবং মা।
১৯৯৮ সালে সে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫ শতাংশ, এবং ১৯৯৯ সালে সেটা ৪৫ শতাংশেই স্থির থাকে, সেই পরিসংখ্যান বলছে ডাবলিন শহরে শিশুদের যৌন নিপীড়নের প্রায় অর্ধেকই সংঘটিত হচ্ছে পরিবারের সদস্যদের হাতে , যাদের সাথে রক্তের সম্পর্ক রয়েছে এবং শতকরা ৫০ শতাংশ ধর্ষণ করছে আত্মীয় স্বজন। যদি আমরা পরিসংখ্যানটির দিকে তাকাই, তবে একটা ভয়াবহ সত্য উপলব্ধি করবো, শিশুর উপরে যৌন নির্যাতনকারী কিংবা চাইল্ড মোলেস্টর আসলে জঙ্গলে কিংবা অপরিচতি মানুষের ভেতরে থাকে না, বরং নিপীড়িত ৪জন শিশুর ৩ জনই নিপীড়িত হয়েছে তাদের কাছের আত্মীয়দের হাতে।
এসব দীর্ঘমেয়াদী এবং স্বল্পমেয়াদী যৌননিপীড়ন এবং ধর্ষণের কোনোটা কোনোটা এসেছে সংবাদের পাতায়, এটা পড়ে মানুষ শিউড়ে উঠেছে, এবং সংবাদপত্র এবং তার প্রকোপ যেহেতু অত্যন্ত প্রত্যন্ত অঞ্চলে নেই, সুতরাং পরিসংখ্যানে যে হার উঠে এসেছে, বাস্তবের পরিস্থিতি তার তুলনায় ভয়াবহ হওয়াটাই স্বাভাবিক।
শিশু কোথাও নিরাপদ নয়, এমন কি নিজস্ব গৃহে, গৃহপরিচারিকা কিংবা গৃহপরিচারক, বাবা, মা, ভাই, মামা, চাচা, কেউই শিশুর রক্ষক নয়- আইওয়া স্টেট আইন করেছে আদালতের দন্ডপ্রাপ্ত কোনো শিশু নিপীড়ক স্কুল, খেলার মাঠ কিংবা বিনোদন পার্কের আশে পাশে ১ মাইলের ভেতরে বসতি গড়তে পারবে না, কিন্তু আইওয়া স্টেট কি প্রতিটা শিশুকে নিজস্ব অনাথাশ্রম কিংবা নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যেতে পারবে?
তবে কি আমরা শিশুদের জন্মের পর হাসপাতাল থেকে বাসায় না নিয়ে এসে রেখে আসবো রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে, যেখানে অন্তত তারা যৌন নিপীড়নের শিকার হবে না?
ইনসেস্ট বিষয়ে মানুষের একটা ট্যাবু আছে, তারা এই বিষয়টা ভাবতেই শিউড়ে উঠে, আমাদের ইতিহাসের পাতা ২০০০ বছর পিছিয়ে নিলেই দেখা যাবে সে সময়ে এইসব পারিবারিক সম্পর্ক সামাজিক ভাবেই স্বীকৃত ছিলো, বাইবেলের নবী লুত, তার দুই মেয়েকে নিয়ে যখন সোডোম থেকে পালিয়ে আসছেন, পেছনে রেখে এসেছেন অবিশ্বস্ত স্ত্রীকে, সমকামীতার পাপে কিংবা অবৈধ যৌনাচারের পাপে ইশ্বর সে শহরের সকল বাসিন্দাকে হত্যা করেন।
এই দুই মেয়ে, যাদের লুত ক্ষিপ্ত শহরবাসীকে উপহার দিতে চেয়েছিলো, এমন ভাবে, যেনো এই সুন্দরী দুই মেয়ের সাথে শাররীক সম্পর্ক স্থাপন করে হলেও লুতের বাসায় আশ্রয় নিতে আসা অতিথিকে তারা আক্রমন না করে- এই দুই মেয়েই পাহাড়ের গুহায় পিতাকে মাতাল করে তার সাথে সঙ্গমলিপ্ত হয় এবং তাদের ঔরসে লুতের সন্তান জন্মে-
এই প্রথা নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়ে যায় কিংবা অপ্রচলিত হয়ে যায় ১৮০০ বছর আগেই। এরপর আমরা এইসব ইনসেস্টের যত ঘটনা পড়েছি পত্রিকায় তার কোনোটাই সমাজস্বীকৃত নয়, এমন কি এসব সম্পর্কের সামাজিক বৈধতা না থাকলেও এইসব অঘটন থেমে থাকে নি।
প্রেমের কিংবা মোহের সম্পর্ক তৈরি হওয়ার মতো সামাজিক পরিবেশ থাকলে কি হতো আমি জানি না, তবে গত ৫ বছরে পত্রিকায় অন্তত ১০০ থেকে ৫০০ সংবাদ পাওয়া যাবে যেখানে পিতা তার কন্যাকে ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই অভিযোগ শাস্তি পর্যন্ত গড়িয়েছে।
নৈতিকতার প্রশ্নে এটাকে সামাল দেওয়া হবে কি ভাবে সেটা নিয়ে ভাববার সময় হয়তো এখনও আসে নি, এখনও পারস্পরিক সম্মতিতে এমন সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে না, কিন্তু খুব শীঘ্রই একটা অসস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে আমাদের,
উডি এলেনের মতো প্রাক্তন স্ত্রীর পালক কন্যা বুক ফুলিয়ে যেমন বলেছিলো আমি তাকে ভালোবাসি এবং তার সাথে আমি সচেতন ভাবে সংসার করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, হয়তো কোনো এক দিন আমরা কোনো কন্যাকে এমন ভাবে সংবাদ মাধ্যমের সামনে দেখবো বলছে- আমি তাকে ভালোবাসি এবং সচেতন ভাবে তার সাথে সংসার করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
সেই সময়ে আমাদের মানসিক বিপর্যয়ের খানিকটা এখনই অনুমাণ করা যাচ্ছে। আদতে কন্যা কিংবা পূত্রকে কেউ এমন যৌন অবকাঠামো চিন্তা করছে না এখনও, তবে এটার ব্যপকতা মানুষের নিজস্ব দর্শন এবং দৃষ্টিভঙ্গিকে বদলাতে বাধ্য করবে এবং বলা যায় না, তখন লোলপুরুষ নিজের কন্যার শরীর দেখে যৌনউত্তেজিত হবে এবং মেয়ের সাথেও ফ্ল্যার্ট করা শুরু করবে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০১১ রাত ৮:৩৭