আস্তিকরা দাবী করে 'সৃষ্টিকর্তা আছে'।
নাস্তিকরা দাবী করে 'সৃষ্টিকর্তা নাই'।
---------------------
সৃষ্টিকর্তা আছে কি নাই তা শক্তিশালী কোন যুক্তি বা বিজ্ঞান দিয়ে কখনো প্রমাণ করা যায়নি।
----------------------------------------------
মূল প্রশ্ন ইশ্বরের অস্তিত্বের প্রশ্ন, ইশ্বর আছেন কি নেই এই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পন্থা আদতে কি হতে পারে? অনেক ভাবেই আলোচনা শুরু করা যায়। অনেক ডালপালা মেলবে আলোচনা, যৌক্তিকতার ভিত্তিতে আলোচনার অবসানে আমার নিজস্ব অভিমত কারোই আদর্শিক এবং বিশ্বাসের অবস্থান পরিবর্তন হবে না। তবে মূলত কাউকে অভিভুত করবার জন্য যুক্তি সাজানো নয়- মূলত আলোচনা করবো বলেই আলোচনা করা-
------------------------------------
ঈমানের শর্ত আছে কিছু- আস্তিকতার শর্ত ইশ্বরের অস্তিত্বে নিঃশর্ত বিশ্বাস স্থাপন। সেই সূত্রেই ইশ্বরের কারসাজি এবং কারিগরির উপরেও বিশ্বাস স্থাপন করাটা আস্তিকতার একটা শর্ত হয়ে দাঁড়ায় ।
ইহুদী, খ্রীস্টান কিংবা ইসলাম সব ধর্মেই নিশ্চিত করে বলা হয়েছে ইশ্বরই এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি করেছেন, নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনে, নির্দিষ্ট কয়েকটি উদ্দেশ্যেই এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে।
আপাতত এখানে দাঁড়িয়ে আলোচনা করা যায়, মহাবিশ্ব সৃষ্টি এবং একে পরিচালনা এবং একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যমুখী করবার জন্য কোনো ইশ্বরের প্রয়োজন রয়েছে কি না?
যদিও এটা ইশ্বরের অস্তিত্ব এবং অনস্তিত্বের প্রশ্নকে মহাবিশ্বের সূচনার পূর্বের বিষয় বলেই ধরে নেবে। অর্থ্যাৎ একবার সৃষ্টি হয়ে যাওয়ার পরে মহাবিশ্বের অভ্যন্তরে ইশ্বরের কোনো প্রভাব নেই। মহাবিশ্বের ভেতরে ইশ্বর লুকিয়ে আছেন- ইশ্বর লুকিয়ে আছেন তার সৃষ্টির ভেতরে জাতীয় মতবাদ অখন্ড ইশ্বরের ধারণাকে ব্যহত করে বলেই পরিত্যাজ্য।[ যদি কেউ বিভাজিত ইশ্বরের অস্তিত্বকে মেনে নিতে আগ্রহী হয় তবে আস্তিকতার যুক্তি অনুযায়ী বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতেই বলতে পারো ইশ্বর নিজেই বিভাজিত হয়ে বিভিন্ন শক্তিরূপ ধারণ করে মহাবিশ্বের ভেতরেই সমাহিত রয়েছেন]
ইশ্বরের অস্তিত্ব তার সংবেদন, তার অনুভুতি- আমরা যেভাবে নিজস্ব পরিমন্ডলে অনুভব , প্রতিক্রিয়া ,সংবেদন নামক বিষয়গুলোকে বৈজ্ঞানিক ভাবে চিহ্নিত করি সেই পর্যায়ে আলোচিত হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। ইশ্বরের সংবেদনশীলতার অন্য কোনো পরিমাপ হয়তো বিদ্যমান যা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় অনুভুত হয় না।
যদিও অস্তিত্বের প্রমাণ কিভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব এ নিয়ে একটা আলোচনা করা যায়।
দৃশ্যমান হওয়ার অন্য একটি শর্ত হচ্ছে তাকে প্রতিক্রিয়া দেখাতে হবে, ইশ্বরের ক্রোধের প্রতিক্রিয়ায় যেভাবে ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত আছে বিভিন্ন জনপদ ধ্বংস হয়েছে। সুতরাং ইশ্বরের অস্তিত্ব একটা সময় পর্যন্ত ছিলো। বইয়ের বক্তব্য সত্য মেনে নিলে এমনটাই ধরে নিতে হয়।
পুঁথির বক্তব্য ধরে নিলে এটাও ধরে নিতে হয় ইউনুস নবী সরাসরিই বেহেশতে গিয়েচিলেন আজরাইলের সাথে বন্ধুতার কারণে। এবং এখানেই আদতে অস্তিত্ব এবং অনস্তিত্বের প্রমাণের জায়গাটা চলে আসে।
পূঁথি নির্ভরতায় আমি নিশ্চিত বলতে পারি, পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টি হওয়ার আগেই বেহেশত দোজখ নির্মিত হয়েছে, ইডেনে ইশ্বরের বাসস্থান।সুতরাং ইশ্বরকে খুঁজে পাওয়া না গেলেও তার বাসস্থান খুঁজে পাওয়ার একটা সম্ভবনা থেকেই যেতো।
আপাতত বেহেশত দোজখের অস্তিত্ব কিংবা এমন কোনো স্থাপনার অস্তিত্ব বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত নয়। যতটুকু হাবল দেখে তার পরিসীমায় এমন কোনো স্থাপনা নেই যা পূঁথি বর্ণিত বেহেশত দোজখের ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করে।
------------------------------------------------------------------
বর্তমান মহাবিশ্ব পরিচালনা করা কিংবা এটার সৃষ্টির পেছনে ইশ্বরের কোনো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব নেই। মহাবিশ্ব প্রসারিত এবং বিকশিত হওয়ার কোনো পর্যায়েই ইশ্বর কোনো ভুমিকা রাখতে পারেন না। ইশ্বর প্রাকৃতিক নিয়মের দাসত্বশৃঙ্খলে বন্দী। তার কোনো কিছু পরিবর্তন করতে চাওয়ার বিষয়টাও প্রাকৃতিক জগতে চিহ্ন রেখে যাবে যা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব।
মুলত মহাবিশ্বকে পর্যবেক্ষণ করে এখনও বেহেশত দোজখ নামক ইশ্বর ও ফেরেশতাদের আবাসস্থলের খোঁজ পাওয়া যায় নি। সুতরাং এই মহাবিশ্বে আমাদের পর্যবেক্ষণসীমা যেখান থেকে আলোর গতিতে আসলেও ২০০০ বছরের ভেতরে পৃথিবীতে পৌঁছানো সম্ভব এমন নিকট দুরত্ব থাকা আমাদের মিল্কি ওয়েতে কোনো স্থাপনার অস্তিত্ব পাওয়া যায় নি।
-----------------------------------------
মুসা ইশ্বরকে সরাসরি দেখতে পারেন নি, তবে তার তেজের প্রভাবে পর্বত পুড়ে যায়। মুহাম্মদ ইশ্বরকে সরাসরি পর্যবেক্ষণ করেছেন। তাওরাতকে সত্য ধরে নিলে, অর্থ্যাৎ তাওরাতের গল্পগুলোকে সত্য মেনে নিলে তাদের দাবিকেও সত্য মেনে নিতে হয়। মুসার কারণেই এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি ও বিকাশ। মোহাম্মদ নিজের গুরুত্ব আরও বর্ধিত করবার কারণেই মিরাজের নিঁখুত মিথ্যা গল্প সাজিয়েছিলো।
কথা চলেই আসে, বিজ্ঞান তো মেনেই নিয়েছে আলোর গতিতে চলমান সকল বস্তুর জন্যই সময় স্থির। এই সত্য প্রতিদিনই প্রমাণিত হচ্ছে গবেষণাগারে। সুতরাং মুহাম্মদের মিরাজ সম্পর্কিত গল্পগুলোকে কেনো গাঁজাখুরী বলা হবে। এমনও হতে পারে মুহাম্মদ সত্যি সত্যিই ইশ্বরের সান্নিধ্যে এসেছিলো।
মুলত এখানেইএকটা গলদ ধারণা রয়ে যায়। যেসব বস্তুর ভর রয়েছে সেসব বস্তু কোনো সময়ই আলোর গতিবেগ অর্জন করতে পারবে না। বরং তার অতিক্রান্ত দুরত্ব তার কক্ষপথ কিংবা গতির দিক পরিবর্তনের সাথে সাথেই সময়ের তীর বদলে যাবে। বিষয়টা আরও বেশী গাণিতিক হয়ে উঠবার আগেই বিষয়টাকে স্থগিত রাখি এই পর্যায়ে।
যখন মিরাজ হয় তখন বদনা থেকে পানি গড়ানো শুরু করেছিলো, এবং মিরাজের অবসানেও মুহাম্মদ ফিরে এসে দেখলো বদনার পানি গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে। অতিক্রান্ত সময়ের পরিমাণটা সীমিত। এই সীমিত সময়ে কতদুর ভ্রমন করা সম্ভব? কতদুর গিয়ে দুই রাকাত শোকরানা নামাজ আদায় করা সম্ভব। বায়তুল মোকাদ্দাসে গিয়ে সেখানে নামাজ পড়বার সময়ও মোহাম্মদ স্থির। সুতরাং নামাজের সময়টাতে কোনো আপেক্ষিকতার তত্ত্ব খাটছে না।
-----------------------------------------------------
তবে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে নাকচ না করে দিয়ে এই বক্তব্যগুলো শুধুমাত্র এই মহাবিশ্বের সসীমতায় ইশ্বরের উপস্থিতিকেই নাকচ করে, যেমন ভাবে নাকচ করে তার নির্মিত আবাসস্থল এবং সেখানে গুনগান গাইতে থাকা ফেরেশতাদের উপস্থিতির বিষয়টাকে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১০:৩৯