মেধা,শ্রম এমনকি জীবন দিয়েও যারা পৃথিবীকে করেছেন আলোকিত (পর্ব-১)
মেধা,শ্রম এমনকি জীবন দিয়েও যারা পৃথিবীকে করেছেন আলোকিত (পর্ব-২)
মেধা,শ্রম এমনকি জীবন দিয়েও যারা পৃথিবীকে করেছেন আলোকিত (পর্ব-৩)
মেধা,শ্রম এমনকি জীবন দিয়েও যারা পৃথিবীকে করেছেন আলোকিত (পর্ব-৪)
মেধা,শ্রম এমনকি জীবন দিয়েও যারা পৃথিবীকে করেছেন আলোকিত (পর্ব-৫)
টমাস আলভা এডিসন:
এডিসনের জন্ম ১৮৪৭ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি কানাডার মিলানে।প্রচলিত অর্থে বিজ্ঞানী বলতে যা বোঝায় টমাস আলভা এডিসন সেই ধরণের বিজ্ঞানী নন।তিনি ছিলেন যন্ত্রবিদ।
১৮৬৯ সালে তিনি একটি যন্ত্র আবিষ্কার করলেন যা দিয়ে ভোল্ট গণনা করা যায়।অল্পদিনেই তৈরি হল ডুপ্লেক্স টেলিগ্রাফ পদ্ধতি।এর সাহায্যে দুটি বার্তা একইসাথে একইতারের মধ্যদিয়ে দুইদিকে পাঠানো সম্ভব।১৮৭৬ সালে এডিসনের প্রথম উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার,টেলিফোন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ।
এডিসন কয়েকমাসের চেষ্টায় তৈরি করলেন কার্বন ট্রান্সমিটার।এতে গ্রাহকদের প্রতিটি কথা স্পষ্ট আর পরিষ্কারভাবে শোনা গেল।১৮৭৭ সালে সৃষ্টি হল ফোনোগ্রাফ যা আধুনিককালের গ্রামোফোন রেকর্ড।দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর তৈরি হল কার্বন ফিলামেন্ট।তাঁর আবিষ্কৃত প্রথম বৈদ্যুতিক বাতিটি প্রায় চল্লিশ ঘন্টা চলেছিল।দিনটি ছিল ২১শে অক্টোবর,১৮৭৯ সাল।তিনি উদ্ভাবন করলেন ‘কিনেটোগ্রাফ’ যা গতিশীল ছবি তোলবার জন্য প্রথম ক্যামেরা।
যখন আমেরিকাতে বাণিজ্যিকভাবে ছায়াছবি নির্মাণের কাজ শুরু করার ভাবনা চলছিল তখন সিনেমার প্রয়োজনীয় সবকিছুই উদ্ভাবন করে ফেলেছেন এডিসন।প্রথম অবস্থায় সিনেমা ছিল নির্বাক।১৯২২সালে এডিসন আবিষ্কার করলেন কিনেটোফোন,যা সংযুক্ত করা হল সিনেমার ক্যামেরার সাথে।এর ফলে তৈরি হল সবাকচিত্র।
এই মহান কর্মবীর মানুষটির মৃত্যু হয় ১৯৩১ সালের ১৮ই অক্টোবর।
জগদীশ চন্দ্র বসু:
১৮৫৮সালে বিজ্ঞান তাপস আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বিক্রমপুরে জন্মগ্রহণ করেন।
মূলত তিনিই মার্কোনির আগে Wireless telegraphy আবিষ্কার করেন।অর্থনৈতিক কারণে তাঁর গবেষণা ব্যহত হয়েছিল।এর মধ্যে মার্কোনি Wireless telegraphy এর প্রথম পেটেন্ট নিলেন।১৯০২সালে তিনি রচনা করলেন তাঁর বৈজ্ঞানিক গবেষণালব্দ্ধ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ''জীব ও জড়ের সাড়া''।১৯০৬সালে প্রকাশিত হল তাঁর আরেকটি গ্রন্থ ''উদ্ভিদের সাড়া''।এই দুটি গ্রন্থের মধ্যে তিনি প্রমাণ করলেন,উদ্ভিদ বা প্রাণীকে কোনভাবে উত্তেজিত করলে তা থেকে একিরকম সাড়া পাওয়া যায়।তিনি অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে,এছাড়া রয়েল সোসাইটিতেও তার উদ্ভাবিত যন্ত্রের সাহায্যে প্রমাণ করলেন,জীবদেহের মত বৃক্ষেরও প্রাণ আছে,তারাও আঘাতে উত্তেজনায় অণুরণিত হয়।
১৯৩৭সালের ২৩নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ম্যাক্স প্লাংক:
১৮৫৮ সালে জার্মানিতে জন্মগ্রহণ করেন।তিনি ছিলেন একজন জার্মান পদার্থবিদ,যিনি কোয়ান্টাম তত্ত্বের প্রবর্তক।
ম্যাক্স প্লাংক সর্বপ্রথম ধারণা দেন যে,আলো সম্পূর্ণরূপে তরঙ্গ নয় আবার সম্পূর্ণরূপে মৌলিক পদার্থও নয়,উভয়ের মিলিত ধর্মরূপে বিদ্যমান।পরবর্তীতে আলবার্ট আইনস্টাইন এ তত্ত্বের ব্যাখ্যা প্রদান করেন।আলো কি করে প্রতিফলিত,প্রতিসরিত ও বিচ্ছুরিত হয় তা বোঝার জন্য আমাদেরকে আলোকে শব্দতরঙ্গের মতো বিবেচনা করতে হবে;যার তরঙ্গদৈর্ঘ্য ও কম্পাঙ্ক আছে।কিন্তু পরমাণু কিভাবে আলো বিকিরণ বা শোষণ করে তা বোঝার জন্য আমাদেরকে আলোকে কণারূপে ফোটনের ধারণা হিসেবে চিন্তা করতে হবে যা নির্দিষ্ট পরিমাণ শক্তি বহন করে।একেই কোয়ান্টাম তত্ত্ব বলা হয়।
১৯৪৭ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
মেরী কুরী:
১৮৬৭ সালের ৭ই নভেম্বর ওয়রশতে মেরীর জন্ম।
কুরী দম্পতি প্রমাণ করলেন কোন কোন মৌলের পরমাণু ক্রমাগত ভেঙে গিয়ে রশ্মি বিকিরণ করে।এই বিকিরণ অন্য পদার্থ ভেদ করেও যেতে পারে।এই ধরণের পদার্থকে বলে তেজস্ক্রিয় পদার্থ আর এই গুণকে বলে তেজস্ক্রিয়তা।বিরল ধাতু ইউরেনিয়ামের লবণ থেকে তাঁরা রেডিয়াম,পলোনিয়াম মৌল দুটি আবিষ্কারকরেন।মেরী কুরী তাঁর বাকিজীবন রেডিয়াম গবেষণাগারে কাটিয়ে দিয়েছেন।
রেডিয়ামের বিষ তাঁকে সমস্ত জীবন ধরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে।
১৯৩৪ সালের ৪ঠা জুলাই এই মহীয়সী বিজ্ঞান সাধিকার জীবনপ্রদ্বীপ চিরদিনের জন্য নির্বাপিত হল।
রাইট ভাতৃদ্বয়:
উইলবার রাইটের জন্ম১৮৬৭সালে আমেরিকার ইন্ডিয়ানা প্রদেশে।অরভিলের জন্ম ১৮৭১ সালে।এরা রাইট ভাতৃদ্বয় নামে পরিচিত।আদুনিক বিমানের আবিষ্কর্তা।
প্রথমে তারা কিছুদিন বাজারে প্রচলিত ছাপার যন্ত্র নিয়ে কাজ শুরু করলেন যাতে তার ব্যঘার আরো সহজসরল ও উন্নত হয়।এরপর বাইসাইকেলের উন্নতির জন্য সচেষ্ট হলেন।দুটি ক্ষেত্রেই তারা অনেকাংশে সফল হয়েছিলেন।তবে যে উড়োজাহাজ আবিষ্কারের জন্য দুই ভাইয়ের খ্যাতি,তার চিন্তাভাবনা শুরু হয় ১৮৯৬সাল থেকে।লিলিঅ্যান্থেলের তৈরী উড়ন্তাযানের(gliding maschine)নকশা ভালোভাবে পরীক্ষা করে রাইটভাইরা দেখলেন যেমন তা অসম্পূর্ণ অন্যদিকে তেমনি নানা ভুলত্রুটিতে ভরা।নিরলস অধ্যবসায় নিয়ে শুরু হল তাঁদের অধ্যয়ন।অবশেষে এল সেইদিন ১৭ডিসেম্বর,১৯০৩।আকাশে ঐতিহাসিক আকাশভ্রমণ করেছিল সেই দুইপ্রস্থ ডানার(Biplane)বিমান।যদিও সেই সময় এরোপ্লেন নাম দেওয়া হয়নি।নাম দেওয়া হয়েছে রাইট ফ্লাইয়ার।
অবশেষে ১৯১২সালে উইলবার মারা গেলেন।অরভিল তারপরেও বহুবছর বেঁচে ছিলেন।
গুগলিয়েলমো মার্কোনি:
ইতালির বেলোনিয়া শহরে ১৮৭৪সালে ২৫এপ্রিল মার্কোনি জন্মগ্রহণ করেন।
১৮৯৫সালে প্রথমে তিনি বেতার সংকেতের কার্যকরী পদ্ধতি তৈরী করেন।এর সাহায্যে তিনি ১মাইল দূরে বেতার বার্তা পাঠাতে পারেন।১৮৯৬সালে তিনি ২মাইল দূরে বেতার বার্তা পাঠাতে পারেন।১৯০৫সালে বেতার যন্ত্রের আরো উন্নতি ঘটে।বেতার গ্রাহক যন্ত্রের সমস্ত অসুবিধাগুলো দূর হয়ে যায়।১৯১১সাল থেকে ১৯৩৮সালের মধ্যে বেতার বার্তা পাঠানোর পদ্ধতি অনেক উন্নত হয়।যার ফলে তখনি রেডিও তৈরী হয়।
১৯৩৭সালে তাঁর মৃত্যু হয়।
আলেকজান্ডার ফ্লেমিং:
আলেকজান্ডার ফ্লেমিং এর জন্ম হয় ১৮৮১সালের ৬ইআগস্ট স্কটল্যান্ডের অন্তর্গত লকফিল্ড নামক এক পাহাড়ি গ্রামে।
৮বছরের সাধনায় তিনি পেনিসিলিন আবিষ্কার করেন।যে ছত্রাকটির কারণে তাঁর এই আবিষ্কার হয়েছিল তার বৈজ্ঞানিক নাম ছিল পেনিসিলিয়াম নোটেটাম।তাই তিনি তাঁর আবিষ্কৃত প্রতিষেধকটির নাম দিলেন পেনিসিলিন।১৯৩৯সালে দ্বিতিয়া বিশ্বযুদ্ধে পেনিসিলিন প্রথম ব্যবহার করা হয়।
১৯৫৫সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আলবার্ট আইনস্টাইন:
১৪ই মার্চ,১৮৭৯সালে জার্মানীর উলম এ আলবার্ট আইনস্টাইন জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি ছিলেন সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মহাবিজ্ঞানী।আপেক্ষিক তত্ত্বের জন্য বিখ্যাত।
১৯০৫ সালে আলবার্ট আইনস্টাইন তাঁর যুগান্তকারী আপেক্ষিক তত্ত্ব প্রকাশ করে বিশ্বময় খ্যাতি অর্জন করেন।তিনি প্রমাণ করে দেখান যে,কোন কিছু আলোর বেগে চললে সময় ধীরে চলে এবং আলোর বেগকে অতিক্রম করাও সম্ভব।তিনি ভরশক্তি মতবাদের প্রবর্তক।
তিনি ১৯৫৫ সালের ১৮ই এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে মৃত্যুবরণ করেন।
জন বেয়ার্ড:
জন বেয়ার্ডের পূর্ণ নাম জন লগি বেয়ার্ড।তিনি ১৩ই আগস্ট ১৮৮৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন।
জন বেয়ার্ড একজন স্কটল্যান্ডীয় ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন।বিশ্বের প্রথম কার্যক্ষম ইলেক্ট্রোমেকানিক্যাল টেলিভিশন আবিস্কারের জন্য, তিনি বিশ্ব বিখ্যাত।
১৯৪৬ সালের ১৪ই জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ড.আব্দুস সালাম:
১৯২৬সালে ২৯জানুয়ারী পাকিস্তানের পান্জাবে জন্মগ্রহণ করেন।
৫প্রকার মৌলিক বল তথা তড়িৎ বল,মহাকর্ষ বল,চৌম্বক আকর্ষণ-বিকর্ষণ,নিউক্লিয় দুর্বল বল,নিউক্লিয় সবল বল এবং অন্য সকল বল কার্যত এ মৌলিক বলগুলো থেকে উদ্ভূত।১৯৭৯সালে সেলভেন গ্লাসগো,স্টিভেন ওয়েনবার্গ ও আব্দুস সালাম প্রমাণ করেন যে,চৌম্বক বল,তড়িৎ বল ও নিউক্লিয় বল আসলে একই প্রকার বলের ভিন্ন রূপ এবং এ বলকে তাঁরা Electroweak force বলে অভিহিত করেন।
১৯৯৬সালের ১৯নভেম্বর ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডে আব্দুস সালাম মৃত্যুবরণ করেন।
স্টিফেন হকিং:
স্টিফেন হকিং ১৯৪২সালে জন্মগ্রহণ করেন।তিনি একজন ব্রিটিশ গণিতবিদ।
তিনি তাঁর ''A Brief History Of Time''গ্রন্থে মহাবিশ্ব সৃষ্টির আলোড়ন সৃষ্টিকারী মতবাদ ''মহাবিস্ফোরণ'' তত্ত্বের অবতারণা করেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০১২ দুপুর ১২:৩৭