মেধা,শ্রম এমনকি জীবন দিয়েও যারা পৃথিবীকে করেছেন আলোকিত (পর্ব-২)
গ্যালিলিও গ্যালিলি:
গ্যালিলিওর জন্ম ইতালির পিসা শহরে ১৫৬৪ সালে।তিনি ছিলেন একজন প্রথিতযশা গণিতশাস্ত্রবিদ,পদার্থবিজ্ঞানী,জ্যোতির্বিদ।তাঁকে আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রাণপুরুষ বলা হয়।
গ্যালিলিও গ্যালিলিই সর্বপ্রথম ধারণা দেন যে,পৃথিবীকে আপাতদৃষ্টিতে ব্রহ্মাণ্ডের কেন্দ্র বলে মনে হলেও বস্তুত পৃথিবী এবং অন্যান্য গ্রহ সূর্যকে কেন্দ্র করে সদা ঘূর্ণায়মান।ঝাড়লণ্ঠনের দোলন থেকে আবিষ্কার করলেন পেন্ডুলাম।গ্যালিলিওর মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে পেন্ডুলামের নক্সা দেখে তৈরি করেছিলেন পেন্ডুলাম ঘড়ি।১৬০৯ সালে আবিষ্কার করেন টেলিস্কোপ।বিরাট সেই টেলিস্কোপ দিয়ে গ্যালিলিও পর্যবেক্ষণ করতে আরম্ভ করলেন সমস্ত আকাশ।তিনি বললেন চাঁদ একটি উপগ্রহ।তার মধ্যে রয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য পাহাড় আর গিরিখাদ।তিনি আবিষ্কার করলেন শনির বলয়।তাছাড়া তিনি পড়ন্ত বস্তুর সূত্রেরও উদ্ভাবক।
এই মহান বিজ্ঞানী ১৬৪২ সালে ইতালিতে মৃত্যুবরণ করেন।
জোহান কেপলার:
১৫৭১ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ-পশ্চিম জার্মানির ওয়েল নামক একটি শহরে জোহান কেপলার জন্মগ্রহণ করেন।কেপলারের প্রিয় বিষয়গুলি ছিল গণিত ও জ্যোতির্বিদ্যা।
কেপলারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পুস্তকটির নাম ‘নিউ অ্যাসট্রোনমি’,যা প্রকাশের পর বিজ্ঞানীরা জানতে পারলেন,সূর্যের চারদিকে গ্রহরা একটি উপবৃত্তাকার পথে পরিভ্রমণ করছে।তাই ওরা ঘুরতে ঘুরতে কখন সূর্যের সন্নিকটবর্তী হয় আবার কখন দূরে সরে যায়।কেপলারই প্রথম বিজ্ঞানী –যিনি গ্রহদের পরিভ্রমণ পথের অনেকটা সঠিক তথ্য প্রদান করেছিলেন।তিনি অত্যন্ত জোরের সঙ্গে বলেছিলেন ,কোন গ্রহের কক্ষপথ ঠিক বৃত্তাকার নয়।
অনেকের মতে কেপলার একটি শক্তিশালী দূরবীনও তৈরি করেছিলেন এবং সেই দূরবীনের সাহায্যে তিনি গ্রহ,নক্ষত্র এবং চন্দ্রের গতিবিধি লক্ষ্য করতেন।কিন্তু তাঁর দূরবীনটি কেমন ছিল আজ আর জানার কোন উপায় নেই।বহুপূর্বেই যন্ত্রটি হারিয়ে গেছে পৃথিবী থেকে।
১৬৩০ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যু হয়।
উইলিয়াম হার্ভে:
১৫৭৮সালে ১লা এপ্রিল ফোকস্টনে উইলিয়াম হার্ভের জন্ম হয়।শরীরের রক্ত সন্চালন সম্পর্কে গুরুত্ত্বপূর্ণ আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানী উইলিয়াম হার্ভে।হার্ভে দেখলেন রক্ত প্রবাহিত হয় হৃদপিন্ডের দিকে।তিনি পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণ করেন যে রক্ত মোটেই দুই রকমের নয়।একি রকমের রক্ত শিরা ও ধমনীতে প্রবাহিত হয়।রক্ত শুধু হৃদপিন্ডের ভেতরেই নয় শরীরের সব জায়গায় এবং সব সময়ে একি দিকে প্রবাহিত হয়।হৃদলিন্ড থেকে যে রক্ত পাম্পের মত প্রতিক্রিয়ায় বেরিয়ে আসে,বৃত্তাকারে তা শরীরে প্রবাহিত হয় এবং আবার তার সূত্রে ফিরে আসে।শোণিত সংবহন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া মানেই মৃত্যু হওয়া।হৃদপিন্ড এ কাজ করে রক্তবাহী নালীর সাহায্যে।
১৬৫৭সালে তাঁর মৃত্যু হয়।
ব্লেইজ প্যাসকেল:
১৬২৩খ্রিস্টাব্দের ১৯শে জুন ফ্রান্সের ক্লারমন্টে ব্লেইজ প্যাসকেল জন্মগ্রহণ করেন।তিনি ছিলেন একজন বিখ্যাত গণিতশাস্ত্রবিদ,পদার্থবিদ,ধর্মীয় দার্শনিক।
প্যাসকেল ১৬ বছর বয়সে প্রজেক্টিভ জিওমেট্রির উপর তাৎপর্যপূর্ণ গবেষণাগ্রন্থ রচনা করেন।২২বছর বয়সে প্রথম গণনাযন্ত্র তৈরী করতে সক্ষম হন।তরল নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে তিনি একটি যুগান্তকারী সূত্র উদঘাটন করেন যা ''প্যাসকেলের সূত্র'' নামে পরিচিত।প্যাসকেলের নাম অনুসারে চাপের এককের নাম ''প্যাসকেল'' রাখা হয়।বায়ুর চাপ মাপক যন্ত্র ও তাঁরই আবিষ্কার।
১৬৬২খ্রিস্টাব্দে ১৯শে আগস্ট ফ্রান্সের প্যারিসে মৃত্যুবরণ করেন।
এনথনি ফন লিউয়েনহুক:
১৬৩২খ্রিস্টাব্দে ২৪অক্টোবর হল্যান্ডের ডেল্ফট এ লিউয়েনহুক জন্মগ্রহণ করেন।
ডাচ বিজ্ঞানী লিউয়েনহুক সর্বপ্রথম অণুবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কার করেন।তবে তাঁর অণুবীক্ষণ যন্ত্র এখনকার মত এত উন্নত ছিলনা।নিজের তৈরী অণুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করে তিনি প্রোটোজোয়া,ব্যাকটেরিয়া,
স্পারমাটোজোয়া,স্নায়ুকোষ,হাইড্রা,ভলভক্স ইত্যাদি জীবের যে বর্ণনা লিখে গেছেন তা অত্যন্ত সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছে,তিনি বিস্তারিতভাবে লোহিত রক্তকণিকার বর্ণনা দিয়েছেন।১৬৭৪সালে তিনি লোহিত রক্তকণিকার আকৃতি ৮.৫ মাইক্রন(প্রকৃত ৭.৭মাইক্রন)পরিমাপ করেন যা প্রকৃত মাপের কাছাকাছি।১৬৮২সালে তিনি মাছের লোহিত রক্তকণিকায় নিউক্লিয়াস আবিষ্কার করেন।১৬৮৩সালে তিনি ESR পরিমাপ করেন।
১৬২৩সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
স্যার আইজ্যাক নিউটন:
স্যার আইজ্যাক নিউটন ১৬৪২খ্রিস্টাব্দের ১৫ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যের লিঙ্কনশায়ারের উলথ্রক ম্যানরে জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি ছিলেন সর্বকালের সর্বযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মহাবিজ্ঞানী।পদার্থবিদ্যা,গণিতশাস্ত্র,রসায়নশাস্ত্র,জ্যোতির্বিদ্যা,প্রকৃতিদর্শনসহ বহুমুখী বিষয়ে সুপন্ডিত।
কলেজে ছাত্র থাকাকালীন অবস্থাতেই তিনি অংকশাস্ত্রের কিছু জটিল তথ্য আবিষ্কার করেন-বাইনমিয়াল থিওরেম(Binomial theorem),ফ্লাক্সসন(Fluxions)যা বর্তমানে ইন্টিগ্রাল ক্যালকুলাস(Interegal Calculus)নামে পরিচিত।এছাড়া কঠিন পদার্থের ঘনত্ব আবিষ্কার (The method for Calculating the area of curves or the volume of solids)করেন।তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞানে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির আবিষ্কার,মহাকর্ষ বল,আহ্নিক ও বার্ষিক গতির সপক্ষে গ্রহণীয় সুস্পষ্ট ব্যাখ্যাদান করেন।১৬৪৭সালে প্রকাশিত হয় তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ''Philosophia naturalis principia Mathemetica''এই গ্রন্থের প্রথম খন্ডে নিউটন গতিসূত্র সম্মন্ধে আলোচনা করেছেন।দ্বিতীয় খন্ডে তিনি গ্যাস,ফ্লুইড বস্তুর গতির কথা আলোচনা করেছেন।তৃতীয় খন্ডে মাধ্যাকর্ষণ সম্মন্ধে খুঁটিনাটি আলোচনা করেছেন।
১৭২৭ খ্রিস্টাব্দের ২০ মার্চ এই মহাবিজ্ঞানী মৃত্যুবরণ করেন।
গ্যাব্রিয়েল ফারেনহাইট:
১৬৮৬খ্রিসটাব্দের ২৪শে মে নেদারল্যান্ডের ড্যানজিগ শহরে জনমগরহণ করেন।তিনি ছিলেন একজন জার্মান পদার্থবিদ ও প্রকৌশলী,পদার্থবিজ্ঞানের অন্যতম প্রতিভূ।
জীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি নেদারল্যান্ডে কাজ করেন।তিনি তাপমাত্রার একক ''ফারেনহাইট'' এর আবিষ্কারক।তার উদ্ভাবিত এ একক সেলসিয়াসের এককের অনেক আগে থেকেই প্রচলিত ছিল।
১৭৩৬খ্রিস্টাব্দের ১৬সেপ্টেম্বর নেদারল্যান্ডের দ্যা হেইগ শহরে মৃত্যুবরণ করেন।