আল বেরুনী:
আল বেরুনী ৯৭৩ খ্রিস্টাব্দের ৩রা সেপ্টেম্বর খাওয়ারিজমের শহরতলীতে জন্মগ্রহণ করেন।জ্যোতির্বিজ্ঞান,পদার্থবিজ্ঞান,রসায়নবিজ্ঞান,চিকিৎসাবিজ্ঞান,দর্শনশাস্ত্র,জীবতত্ত্ব,ভূতত্ত্ব,উদ্ভিদতত্ত্ব,গণিত,ন্যায়শাস্ত্ত্র,দিনপঞ্জির তালিকা ও ইতিহাস,সভ্যতার ইতিহাস,ধর্মতত্ত্ব প্রভৃতি বিষয়ে তিনি ছিলেন অগাধ পাণ্ডিত্বের অধিকারী।
কোপার্নিকাসের জন্মের ৪২৫ বছর পূর্বেই আল বেরুনী বলেছেন,”বৃত্তিক গতিতে পৃথিবী ঘুরে।“তিনিই সর্বপ্রথম প্রাকৃতিক ঝর্ণা এবং আর্টেসীয় কূপ এর রহস্য উদঘাটন করেছিলেন।তিনি শব্দের গতির সাথে আলোর গতির পার্থক্য নির্ণয় করেছিলেন।সূক্ষ্ণ ও শুদ্ধ গণনায় আল বেরুনী একটি বিস্ময়কর পন্হা আবিষ্কার করেন যার বর্তমান নাম The Formula Of Intarpolation.স্যার আইজ্যাক নিউটনের জন্মের ৫৯২ বছর পূর্বেই আল বেরুনী এটি আবিষ্কার করেন এবং একে ব্যবহার করে বিশুদ্ধ সাইন তালিকা প্রস্তুত করেন।এরপর এ ফর্মূলা পূর্ণতা দান করে তিনি ট্যানজেন্ট তালিকা তৈরি করেন।তিনিই বিভিন্নপ্রকার ফুলের পাঁপড়ি সংখ্যা হয় ৩,৪,৫,৬ এবং ১৮ হবে,কিনতু কখনো ৭ বা ৯ হবেনা;এ সত্য আবিষ্কার করেন।চিকিৎসাবিজ্ঞানেও তাঁর অবদান ছিল সর্বাধিক।চিকিৎসাবিজ্ঞানে তিনি একটি অমূল্য গ্রন্থ রচনা করেন।গ্রন্থ তিনি বহু রোগের ঔষধ তৈরির কলাকৌশল বর্ণনা করেছেন।বিভিন্ন বিষয়ে রচিত তাঁর গ্রন্থের সংখ্যা ১১৪ টি।
১০৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১২ ডিসেম্বর আল বেরুনী শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
ইবনে সিনা:
৯৮০ খ্রিস্টাব্দে তু্র্কিস্তানের বিখ্যাত শহর বুখারার নিকটবর্তী আফসানা গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।বিজ্ঞান,দর্শন,ইতিহাস,অর্থনীতি, রাজনীতি, গণিতশাস্ত্র,জ্যামিতি,ন্যায়শাস্ত্র,খোদতত্ত্ব,চিকিৎসাশাস্ত্র,কাব্য,সাহিত্য প্রভৃতি বিষয়ে অসীম জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন।একশ বছর বয়সে ''আল মোজমুয়া'' নামক একটি বিশ্বকোষ রচনা করেন যার মধ্যে গণিতশাস্ত্র ব্যতীত প্রায় সকল বিষয়াদি লিপিবদ্ধ করেছিলেন।
তিনি ''আল কানুন'' নামে একটি কিতাব রচনা করেন যা তৎকালীন যুগে চিকিৎসাবিজ্ঞানে একটি বিপ্লব এনে দিয়েছিল।কিতাবটিতে শতাধিক জটিল রোগের কারণ,লক্ষণ,পথ্যাদির বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়।প্রকৃতপক্ষে তিনিই হোলেন আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনক।তার রচিত ''আশ শেফা'' দর্শনশাস্ত্রের আরেকটি অমূল্য গ্রন্থ।এতে ইবনে সিনার রাজনীতি,অর্থনীতি,প্রাণীতত্ত্ব,উদ্ভিদতত্ত্বসহ যাবতীয় বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।তিনি মানুষের কল্যাণ ও জ্ঞানবিজ্ঞানের উন্নতি সাধনে আজীবন পরিশ্রম করেছেন এবং ভ্রমণ করেছেন জ্ঞানের সন্ধানে।তিনিই সর্বপ্রথম ''মেনিনজাইটিস'' রোগটি শনাক্ত করেন।পানি ও ভূমির মাধ্যমে যেসকল রোগ ছড়ায় তা তিনিই প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন।সময় ও গতির সাথে বিদ্যমান সম্পর্কের কথা তিনিই প্রথম আবিষ্কার করেন।
১০৩৭খ্রিস্টাব্দে মহাজ্ঞানী বিশ্ববিখ্যাত এই বিজ্ঞানী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
ইবনুন নাফীস:
১২০৮ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।তার জন্মস্থান দামেস্ক মিশর না সিরিয়া তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে।চিকিৎসাবিজ্ঞান ও আইনশাস্ত্রে তার অবদান অবিস্মরণীয়।
ইবনুন নাফিস মানবদেহে রক্তসঞ্চালন পদ্ধতি,ফুসফুসের সথিক গঠন পদ্ধতি,শ্বাসনালী,হৃদপিন্ড,শরীরে সিরা-উপশিরায় বায়ু ও রক্তের প্রবাহ ইত্যাদি সম্পর্কে বিশ্বের জ্ঞানভান্ডারকে অবহিত করেন।আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান জগতে তিনি যে কারণে অবস্মরণীয় হয়ে আছেন তা হল মানবদেহে রক্ত চলাচল সম্পর্কে গ্যালেনের মতবাদের ধরিয়ে ছিলেন তিনি এবং এই সম্মন্ধে নিজের মতবাদ সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছেন।
১২৮৮খ্রিস্টাব্দের ১৮ডিসেম্বর এই মহামনীষি মৃত্যুবরণ করেন।
জোহানস গুটেনবার্গ:
১৪০০সালে জার্মানের এক ভদ্রপরিবারে তার জন্ম।তিনি ছিলেন একজন খুব ভালো শিল্পী।
মুদ্রণযন্ত্রের আবিষ্কারক হিসেবে তার নাম কে না জানে!গুটেনবার্গের কাঠের টাইপ আজো বিজ্ঞান জগতে এক শ্রেষ্ঠ অবদান।আজ পৃথিবীতে ছাপাখানার অনেক উন্নতি হয়েছে।১৮৮৬সালে ওটসার মার্গেন থ্যাসার নামে এক আমেরিকান যন্ত্রবিদ লাইনোটাইপ নামে একটি টাইপযন্ত্র আবিষ্কার করেন।পরে অবশ্য মনোটাইপ অফসেট আবিষ্কার হয়ে মুদ্রণশিল্পের উন্নতি হয়েছে।তবে গুটেনবার্গ হচ্ছেন মুদ্রণশিল্পের প্রথম ও প্রধান জন্মদাতা।
১৪৬৮সালে এই বিজ্ঞানী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
নিকোলাস কোপার্নিকাস:
১৮৭৩সালের ১৮ফেব্রুয়ারী পোল্যান্ডের থর্ন শহরে কোপার্নিকাসের জন্ম।তিনি ছিলেন একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী।
কোপার্নিকাস ছিলেন বিচিত্র প্রতিভার অধিকারী।তিনি সর্বপ্রথম সারাদেশে একিধরণের মুদ্রা চালু প্রথা করেন।তার একটি উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব হল আধুনিক ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করা।প্রকৃতপক্ষে তিনিই বছরের সঠিক কাল পরিমাপ করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন।তিনি টলেমীর ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে গ্রহগুলি সূর্যের চারিদিকে পরিভ্রমণ করছে এই ব্যাখ্যা দিলেন।জীবন সায়াহ্নে এসে কোপার্নিকাস তার জীবনব্যাপী পর্যবেক্ষণ আর আবিষ্কারকে প্রকাশ করলেন তা যুগান্তকারী গ্রন্থে-''দি রিভেল্যুশনিবাস আররিথার কোয়েলেসটিয়াম(মহাজাগতিক বস্তুগুলির ঘূর্ণন)''।এই বইটির প্রথম সিদ্ধান্ত ছিল-পৃথিবী আপন অক্ষের চারদিকে আবর্তনশীল।দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত ছিল-সূর্যই কেন্দ্রে অবস্থান করছে।পৃথিবীসহ প্রত্যেকটি গ্রহ ব্যাসর্ধের নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে আপন আপন বৃত্তপথে সূর্যের চারদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে।শুধুমাত্র চাঁদই পৃথিবীর চারদিকে বৃত্তপথে ঘুরছে।কোপার্নিকাস এই বইয়ের মধ্য দিয়ে যে সত্যের প্রতিষ্ঠা করলেন তার উপর ভিত্তি করে গ্যালিলিও,কেপলার,নিউটন,আইনষ্টাইন জ্যোতির্বিজ্ঞানের নতুন নতুন দিগন্তকে উন্মোচন করলেন।
১৫৪৩সালের ২১মে আধুনিক বিজ্ঞানের এই পথিকৃতের মৃত্যু হয়।
চলবে....