সমকাল ( ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০০৭)
জামায়াতের গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে
সমকাল প্রতিবেদক
সাতকানিয়ার সম্রাট :
কালো নেকাব আর বোরকা ছাড়া সাতকানিয়ায় কোনো নারী ঘর থেকে বের হতে পারেন না। 'বেপর্দা চলাফেরার' ওপর অলিখিতভাবে এ 'আইন' চালু করেছিলেন চট্টগ্রামের জামায়াতি গডফাদার ও সাতকানিয়া আসনের সাবেক সাংসদ শাহজাহান চৌধুরী। এ আইন কার্যকর করার দায়িত্ব ছিল আধুনিক অস্ত্রশস্টে্প সজ্জিত শাহজাহানের বিশাল ক্যাডার বাহিনীর। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি তার এলাকায় চালিয়েছেন জামায়াতি শাসন। তার প্রভাব এতটাই বিস্তৃত যে, দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণার পরও নগরীর দিদার মার্কেটের জামায়াত অফিসে দফায় দফায় সাংগঠনিক সভা করেছেন। সর্বশেষ গত শুক্রবারও নিজ নির্বাচনী এলাকায় মাহফিলে বক্তব্য রাখেন। শনিবার রাতে নগরীর রাহাত্তারপুলস্থ শাহজাহানের বাসভবনে অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী। সেখানে তাকে পাওয়া যায়নি।
সূত্র জানায়, দীর্ঘ সময় ধরে পুরো সাতকানিয়া ছিল ক্ষমতাধর শাহজাহান চৌধুরীর নিয়ন্ত্রণে। তার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত স্থানীয় জামায়াত নেতা নুরুল হক, আবুল ফয়েজ ও আতাউল্লাহসহ আরো কয়েকজন চিহিক্রত জামায়াত নেতা সাতকানিয়া থানা নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন। বিশেষ করে জোট সরকার আমলে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছিল_ থানায় মামলা হবে কি হবে না, মামলার ধরন কী হবে কিংবা আসামি ছাড়া পাবে কি পাবে না সবকিছুর নিদরাউশনা দিতেন শাহজাহান চৌধুরী! তার ইচ্ছা-অনিচ্ছার কাছে অসহায় আত্নসমর্পণ করে প্রশাসন। এ নিয়ে জামায়াতের সঙ্গে ছিল স্থানীয় বিএনপির তুমুল ্টন্্ট।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইসলামী ছাত্র সংঘের নেতা শাহজাহান চৌধুরী গত শতকের আশির দশক থেকে সাতকানিয়ায় প্রথম ক্যাডার বাহিনী তৈরি করেন। ১৯৯১ সাল থেকে ওই ক্যাডার বাহিনী দিয়ে সাতকানিয়ায় শুরু হয় ত্রাসের রাজত্ব। এরপর সেখানে পড়তে থাকে একের পর এক লাশ। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে শাহজাহান চৌধুরীর জয়লাভের পেছনে বিরাট ভূমিকা রাখেন চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আমিনুল ইসলাম। কিন্তু তাকে ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেওয়ার অপরাধে ২০০৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি শাহজাহানের ক্যাডার বাহিনী তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, একই অপরাধে ক্রসফায়ারে ফেলা হয় চেয়ারম্যান আহমদু্যা ও যুবদল নেতা মিনহাজকে।
শাহজাহান চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় একাধিক হত্যাকা-সহ ৩০টি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে কেবল জোট সরকারের ক্ষমতাকালে হত্যা মামলাসহ প্রায় ২০টি মামলা থেকে রাজনৈতিক বিবেচনায় খালাস পেয়ে যান তিনি। তার বিরুদ্ধে সাতকানিয়ার এওচিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা নুরুল কবির, কাঞ্চনা ইউপি মেম্বার মোঃ হাফেজ, মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ কাদেরী, মুক্তিযোদ্ধা মফিজুর রহমান ও আওয়ামী লীগ নেতা নজির আহমদকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে।
ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করলেও শাহাজাহান তার তিন ভাইকেই পাঠিয়ে দিয়েছেন আমেরিকায়। আরেক ভাইকে নিয়োগ দিয়েছেন তার প্রতিষ্ঠিত 'জামায়াতের গোডাউন' বলে পরিচিত সাতকানিয়া আদর্শ মহিলা কলেজের শিক্ষক পদে। অপর ভাই আবদুল আউয়াল টুকু ও ভাগিনা মুরাদকে দায়িত্ব দিয়েছেন বিত্তবৈভব দেখাশোনার।
২০০৫ সালের শেষের দিকে শুল্ক্কমুক্ত ৫০ লাখ টাকা দামের গাড়ি কিনে ফায়দা লুটতে শাহজাহান তা বিক্রি করে দেন ব্যবসায়ী নুর আহমদের কাছে। এছাড়া সৌদি আরব, আরব আমিরাত, ওমান ও পাকিস্তানে তার ব্যবসা রয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়। বন্দরনগরীর রাহাত্তারপুলের শিবির নিয়ন্ত্রিত কমার্শিয়াল ইনসি্টটিউট সংলগ্ন এলাকায় তার রয়েছে তিনতলা বিলাসবহুল বাড়ি।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১১