সমকাল (১০ ফেব্রুয়ারি, ২০০৭)
জামায়াতের গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে
সমকাল প্রতিবেদক
খুলনার আমির :
নজিরবিহীন দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক হয়ে যাওয়া খুলনা-৫ আসনের সাবেক সাংসদ ও নগর জামায়াতে ইসলামীর আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার বহাল তবিয়তে রয়েছেন। নিজে গাড়ি বাণিজ্য, চরমপন্থি কানেকশন, ভাইদের দিয়ে জুট মিল ও ঘের দখল, বিভিন্ন সরকারি দফতরের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, সরকারি প্রকল্পের কমিশন গ্রহণসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি সম্পদের পাহাড় গড়েছেন বলে জানা যায়। 'আঙুল ফুলে কলাগাছ' বনে যাওয়া গোলাম পরওয়ার যৌথ বাহিনীর চলমান অভিযানেও ধরাছোঁয়ার বাইরে আছেন।
গোলাম পরওয়ার আশির দশকের শেষ দিকে নগরীর বয়রা ইসলামিয়া কলেজের প্রভাষক ছিলেন। নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে জামায়াতের অঙ্গ সংগঠন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের খুলনা বিভাগীয় সভাপতি হন। তখন সংগঠন থেকে 'ফুল টাইমার' (সংগঠনের কাজ ছাড়া অন্য কিছু করা যাবে না) হিসেবে তাকে পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়া হতো। ১৯৯৬ সালে মহানগর জামায়াতের আমির নির্বাচিত হন। সাংসদ হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি সংগঠন থেকে পেতেন মাসে সাত হাজার টাকা। এই টাকায় চলত তার সংসার।
২০০১ সালের নির্বাচনে খুলনা-৫ আসন থেকে জোট প্রার্থী হিসেবে চরমপন্থি দল নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টিরর প্রধান মৃণাল ও তার বাহিনীর সহযোগিতায় এমপি নির্বাচিত হন। কিছুদিন পর ৩৯ লাখ ১ হাজার ৮৭৯ টাকায় শুল্ক্কমুক্ত এমএল-৫০০ অফরোড ভেহিকেল (মাসর্িডিজ বেঞ্জ) গাড়ি আমদানি করেন। গাড়িটি ১ কোটি ১৮ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন। এ গাড়ি বাণিজ্যে লাভ হয় প্রায় ৮০ লাখ টাকা। র্বতমানে তিনি জাপানি টয়োটা রাভা গাড়িতে চড়েন। ২০০২ সালে বাড়ির দুই রুম সম্প্রসারণ করেছেন। সে বছরের আগস্টে ভাই মিয়া গোলাম কদু্দুস নগরীর আটরা শিল্পাঞ্চলের আফিল জুট মিল দখল করে মিলের গদুামে রক্ষিত প্রায় ৩০ লাখ টাকার পাটসহ অন্যান্য মালামাল বিক্রি করে দেন। মিল মালিক আবদুল কাদের পিন্টু খানজাহান আলী থানায় জিডি করলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। পরে অবশ্য গোলাম কদু্দুস মিল ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।
সাবেক সাংসদের দু'ভাই মিয়া গোলাম কদু্দুস ও গোলাম খায়ের ডুমুরিয়ার শরাফপুর ইউনিয়নের চাঁদগড় এলাকায় ৪০০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে ঘের করছেন। কিন্তু জমি মালিকদের লিজের টাকা পরিশোধ করেননি বলে অভিযোগ। এছাড়া ডুমুরিয়ায় ছোট-বড় অসংখ্য ঘের রয়েছে। অধিকাংশ ঘের থেকে উপঢৌকন হিসেবে গোলাম কদু্দুস প্রতি মাসে মোটা অগ্ধেকর টাকা পেয়ে যাচ্ছেন। পরোয়ারের পরিবারের লোকজন শিরোমণি বিসিক শিল্প নগরীর জায়গা দখল করে ২ কোটি টাকা ব্যয়ে পোলট্রি ফার্ম করেছেন।
ফুলতলা ও ডুমুরিয়ায় যত টিআর ও কাবিখা প্রকল্পের কাজ হয়েছে তার অধিকাংশই জামায়াতের থানা আমির ও রোকনদের মাধ্যমে করিয়েছেন গোলাম পরওয়ার। জোট সরকারের আমলে যেসব গভীর নলকূপ এসেছে তার বেশিরভাগ দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। জোট সরকারের ৫ বছরে ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলায় যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ বিভিন্ন খাতে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার কাজ হয়েছে। অভিযোগ আছে, অধিকাংশ কাজ থেকেই গোলাম পরওয়ার ৫ থেকে ১০ শতাংশ কমিশন নিয়েছেন গোলাম কদু্দুসের মাধ্যমে। দু'ভাই মিয়া গোলাম কদু্দুস ও গোলাম খায়ের ফুলতলা এবং ডুমুরিয়ার এলজিইডিসহ বিভিন্ন সরকারি অফিসের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করে মাসে লাখ টাকা আয় করেন।
মৃণাল বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে এখনো সাবেক সাংসদ পরওয়ারের সখ্য রয়েছে। ডুমুরিয়ায় এখনো পুলিশের কথিত সোর্স বাহিনী সক্রিয়। এসব সোসরাউর অনেকেই বিএনপি ও জামায়াতের সমর্থক। তাদের আশ্রয়দাতা জনাব পরওয়ার।
ভাই মিয়া গোলাম কদু্দুস আওয়ামী লীগ নেতা শেখ আকরাম হোসেনকে হত্যার উদ্দেশ্যে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের দিয়ে বোমা হামলা চালায় বলে অভিযোগ। পাশাপাশি বোমা হামলার মামলায় গ্রেফতার হওয়া চরমপন্থি নুরুল ইসলাম গত বছরের ৯ জুলাই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছিল, মিয়া গোলাম কদু্দুসের নিদরাউশে তারা এ বোমা হামলা চালায়। অবশ্য পরে ৩১ জুলাই সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহার করে নেয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১০