পূর্বকথাঃ ব্লগে কিভাবে একটি পরিপূর্ণ থিসিস রিপোর্ট লিখবেন সে বিষয়ে ব্লগার কালীদাসের একটি অসাধারণ পোস্ট আছে। এই পোস্টটিকে ঐ পোস্টের কমপ্লিমেন্টারি হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
আপনি কি গবেষণা ভিত্তিক কোন বিষয়ে পড়ছেন? আপনি কি ফার্মেসি, মাইক্রোবায়োলজি, জেনেটিকস, বায়োটেকনোলজি, বা লাইফ সায়েন্সের কোন শাখার থিসিস স্টুডেন্ট? থিসিস টপিক ঠিক হয়ে গেছে এবং কাজ প্রায় গুছিয়ে এনেছেন? এবার রিপোর্ট লিখতে বসছেন?
এই পোস্ট হয়ত আপনাকে আপনার থিসিস পেপার লেখার বিষয়ে আপনাকে সামান্য হলেও সাহায্য করতে পারবে। আমরা এই সিরিজে বেশ কয়েকটা পর্বে কিভাবে একটি থিসিস রিপোর্ট লিখতে হবে বা লেখা উচিত তা শেখার চেষ্টা করবো। একটি থিসিস পেপারের প্রয়োজনিয় বিভাগগুলো মূলত প্রতি পর্বে আলোচ্য বিষয় হিসেবে থাকবে।
Introduction
প্রতিটি থিসিস পেপারে কিছু ফর্মালিটিজ থাকে। সেগুলো আপাতত আলোচনা না করে আমরা সরাসরি ইন্ট্রোডাকশান সেকশন নিয়ে আলোচনা শুরু করি।
আমার ব্যক্তিগত মতামত থিসিসের ল্যাব ওয়ার্ক যেদিন শুরু করেছেন বা থিসিস সুপারভাইজার যেদিন আপনাকে টপিক দিয়ে দিয়েছেন সেদিন থেকেই ইন্ট্রোডাকশন পর্ব লেখার কাজে হাত দেয়া উচিত।
কি কি থাকবে এই সেকশনে?
এই পর্বটিকে আপনি কতগুলো ভাগে ভাগ করে নিতে পারেন। একটি থিসিসের ইন্ট্রোডাকশনে অবশ্যই কিছু প্রশ্নের উত্তর থাকা আবশ্যক-
১. কি করতে যাচ্ছেন?
২. কেন এই বিষয়ে কাজ করতে যাচ্ছেন?
৩. আগে কি এই বিষয় নিয়ে কোন কাজ হয়নি?
৪. যদি হয়ে থাকে তবে কি কি কাজ হয়েছে?
৫. যদি আগে এই বিষয়ে কাজ হয়েই থাকে তবে আপনি নতুন করে আবার কাজটি কেন করছেন?
অর্থাৎ আপনাকে ইন্ট্রোডাকশন পর্বে কাজের ব্যাকগ্রাউন্ড, লিটেচার রিভিউ এবং কাজটি করার যৌক্তিকতা উল্লেখ করতে হবে।
নোটঃ অনেকে থিসিস পেপারে লিটারেচার রিভিউ নামে আলাদা একটি চ্যাপ্টার লিখে থাকেন। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত অভিমত এই পর্বটি ইন্ট্রোডাকশন পর্বেই থাকা উচিত।
এবার আসুন একটা উদাহরণ দেয়া যাকঃ
ধরে নিচ্ছি আপনার থিসিস টপিক বাংলাদেশে মাছে ফরমালিনের ব্যবহার নিয়ে।
কিভাবে শুরু করা যেতে পারে?
ফরমালিন কি এবং এটি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এই ইনফরমেশনগুলো আপনাকে প্রথমেই দিয়ে নিতে হবে। এরপর বলুন বাংলাদেশে মাছে ফরমালিন ব্যবহার হয় এবং তাই আপনারা মনে করেন কি মাত্রায় এবং কোন মাছে ফরমালিন ব্যবহার করা হয় তা খতিয়ে দেখা উচিত। [আমরা ১ ও ২ নাম্বার প্রশ্নের উত্তর ইতিমধ্যে দিয়ে দিয়েছি এবং সবচেয়ে আশার কথা আমাদের থিসিস পেপার লেখার আইস ব্রেকিং পর্বটি সফলতার সাথে শেষ হয়েছে]
এবার?
আগে কি মাছে ফরমালিন ব্যবহার নিয়ে কোন কাজ হয়নি?
এই প্রশ্নের উত্তর হতে বড় দাগে দু'টি- "হ্যা হয়েছে" অথবা "না হয়নি"। যদি আগে কাজ না হয়ে থাকে তাহলে আপনার কাজ কিছুটা কমলো। কিন্তু যদি হয়ে থাকে তাহলে আপনি কেন এই কাজটি করছেন?
এই প্রশ্নটির সম্ভাব্য উত্তর হতে পারে- "হয়েছে, কিন্তু অন্য দেশে" অথবা "হয়েছে, বাংলাদেশেই"
যদি "হয়েছে, কিন্তু অন্য দেশে" এই হয় আপনার উত্তর সেক্ষেত্রে আপনাকে রেফারেন্স সহ কোন কোন দেশে কি কি কাজ হয়েছে তা উল্লেখ করতে হবে এবং তাদের ফাইন্ডিংসগুলো কি তাও। এই কাজটা একটা টেবিল আকারে করলে ভালো হয়। এরপর যেহেতু অন্যদেশে এই নিয়ে কাজ হয়েছে সেহেতু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই বিষয়ক একটি গবেষণা জরুরী বিধায় আপনি কাজটি করছেন এমন একটি স্টেটমেন্ট থাকবে।
যদি আপনার উত্তর "হয়েছে, বাংলাদেশেই" হয় তবে কিন্তু বিপদ! বাংলাদেশেই যদি হবে তাহলে আবার এ নিয়ে কাজ কেন করতে হবে? এর উত্তর দেয়াটা আপনার দায়িত্ব। তবে কি ধরণের উত্তর হতে পারে? হতে পারে এর আগে যে কাজ হয়েছে তাতে স্যাম্পল সাইজ ছোট ছিল, মাত্র ১০০ মাছের উপর গবেষণা করা হয়েছে। বা আগের কাজগুলোতে কি লিমেটেশন ছিল তা উল্লেখ করুন উপযুক্ত তথ্যসূত্র সহ। আপনি আপনার বর্তমান কাজে এই লিমিটেশনগুলোকে পূরণ করতে পারবেন এমন ভাবছেন বলেই আপনি কাজটি করতে চাচ্ছেন। এক্ষেত্রে অবশ্যই বাইরের দেশে কি কি কাজ হয়েছে তা একটি টেবুলার প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে এবং দেশে কি কি কাজ হয়েছে তাও টেবিল আকারে প্রেজেন্ট করা উচিত। [আপনি হয়ত লক্ষ করেননি আমরা কিন্তু ৩, ৪ এবং ৫ নাম্বার প্রশ্নগুলোর উত্তর ইতিমধ্যে পেয়ে গেছি!]
এবার খুব সংক্ষেপে এই অবস্থার আলোকে আপনি কি কাজ করতে যাচ্ছেন সেটি দু' চার লাইনে লিখে ইন্ট্রোডাকশন চ্যাপ্টার লেখা শেষ করুন!!
প্রশ্ন ১- বিষয়টা কি আদতে এত সহজ?
না, বিষয়টা আমি যত সহজে লিখলাম ততটা সহজ নয়। কারণ অথেনটিক সোর্স থেকে তথ্য সংগ্রহ একটি সময় সাপেক্ষ বিষয়।
প্রশ্ন ২- কোথা থেকে তাহলে তথ্য সংগ্রহ করবো?
ভালো প্রশ্ন। অথেনটিক তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা এবং সেটির সঠিক ব্যবহার একটি ভালো থিসিসের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তথ্য সংগ্রহের জন্য আপনি গুগল স্কলার ব্যবহার করুন। চেষ্টা করুন ওপেন এক্সেস জার্নালগুলোর আর্টিকেল ঘাটতে। এতে করে আপনার সামনের দিনে লাভ হবে।
প্রশ্ন ৩- কিভাবে তথ্য সংগ্রহ করবো?
আগেই বলেছি গুগল স্কলার আপনার এখন পরমাত্মিয়! তাকে আপনার ঠিক কি কি ইনফো প্রয়োজন সেগুলো জিজ্ঞেস করুন। এ জন্য আপনি "কি ওয়ার্ড" দিয়ে সার্চ করবেন। ধরুন উদাহরনে আমরা বাংলাদেশে মাছে ফরমালিনের ব্যবহার নিয়ে কাজ করারা কথা বলেছি। তাহলে আপনাকে "ফিস স্যাম্পল" "ফরমালিন ইউজ" "বাংলাদেশ" এই কি ওয়ার্ডগুলো ব্যবহার করতে হবে।
আবার ফরমালিন রিলেটেড হেলথ রিস্ক নিয়ে তথ্য খুঁজে পেতে আপনাকে "ফরমালিন" "হেলথ রিস্ক" এই কি ওয়ার্ডগুলো ব্যবহার করতে হবে।
প্রশ্ন ৪- আমি কি শুধু জার্নালগুলো থেকেই ইনফো সংগ্রহ করবো?
যতটা সম্ভব জার্নাল পেপার থেকে ইনফো কালেক্ট করুন। তবে ওয়েবসাইট থেকেও তথ্য নিতে পারেন। বলা ভালো অনেক সময় ওয়েবসাইট থেকে তথ্য আমাদের নিতেই হয়। তবে এক্ষেত্রে অথেনটিসিটি একটি বড় বিষয়। যেমনঃ আপনি বাংলাদেশে মাছের বানিজ্যিক গুরুত্ব কেমন? বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ফিসারিজ সেক্টরের ভূমিকা কি এই তথ্যগুলো সহজেই মৎস অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে পেতে পারেন।
প্রশ্ন ৫- আমি কি উইকিপিডিয়ার রেফারেন্স ব্যবহার করতে পারবো?
সোজাসাপ্টা উত্তর "না"। একদম প্রাথমিক পর্যায়ে উইকি থেকে হয়ত আপনি কোন তথ্য পেতে পারেন। কিন্তু সেই তথ্যটি উইকি যে তথ্যসূত্র থেকে নিয়েছে আপনি সেই রেফারেন্স খুঁজে বের করুন।
প্রশ্ন ৬- তথ্যসূত্র কিভাবে লিখবো?
আপাতত আপনার প্রতিটি তথ্যসূত্রের ফাইল কম্পিউটারে আলাদা একটি ফোল্ডারে ১, ২, ৩ এভাবে নাম্বার দিয়ে সেভ করে রাখুন এবং যে সূত্র থেকে লিখেছেন সেই ১, ২ বা ৩ তথ্যসূত্র আকারে টেক্সটের পাশে উল্লেখ করে রাখুন। সামনে আমরা তথ্যসূত্র লেখা নিয়ে একটি বিস্তারিত পর্বে আলোচনা করবো।
প্রশ্ন ৭- আমি কি জার্নাল আর্টিকেল থেকে লাইন বাই লাইন কপি পেস্ট করবো?
না উচিত হবেনা এবং করবেন না। খুব বড় কোন প্যারা একবারে কপি করলে তা এক ধরণের অপরাধ হিসবে বিবেচিত হবে।
প্রশ্ন ৮- তাহলে কি করবো?
তথ্যটি নিজের ভাষায় উপস্থাপন করুন।
প্রশ্ন ৯- ইন্ট্রোডাকশন কত পেজের হতে হবে?
উপরে উল্লেখ করা ১ থেকে ৫ পর্যন্ত প্রশ্ন গুলোর জবাব পেতে যত পেজ লিখতে হবে। অনেকে মনে করেন ইন্ট্রোডাকশন চ্যাপ্টার অনেক বড় হলে বুঝি থিসিস রিপোর্ট খুব ভালো হলো! আদতে তা নয়। ঠিক যা যা প্রয়োজন তা থাকাটাই সবচেয়ে বেশি জরুরী।
তাহলে আজই শুরু করে দিন থিসিস পেপারের প্রথম চ্যাপ্টার লেখা!!