সাধারণত ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস নিয়েই বাসায় চলে আসা হয়না। আমাদের জব কনট্রাক্টে বলা আছে প্রত্যেক ফ্যাকাল্টি সপ্তাহে ন্যুনতম ৩৬ ঘন্টা সময় দেবে যার একটা অংশ ক্লাস নেয়ায়, একটা অংশ গবেষণার কাজে এবং একটা অংশ বাচ্চাদের কাউন্সেলিং এর জন্য নির্দিষ্ট করা। আমি দেখা যায় প্রায় প্রতি সপ্তাহেই বাড়তি ১২-১৫ ঘন্টা সময় আমি ক্যাম্পাসেই থাকি। সাধারণত বাসায় ফিরি রাত ৮টা-৯টায়!
সেদিন পারিবারিক কাজে বাসায় ফিরছি একটু আগে আগে, সন্ধ্যা ৬টার দিকে। মৌচাক থেকে বেশ জোর জবরদস্তি করে একটা রিকশা নামের মূল্যবান বাহন এবং বাহনের চালককে ম্যানেজ করা গেছে। সকাল বেলা যে দূরত্বের জন্য শ্রমমূল্য ৩০ টাকা, বিকেল বেলা তা ৪০! কিছু বলতে গিয়েও বলা হয়না, এর চেয়ে কত বড় বড় কাঠাঁল ভাঙা হচ্ছে মানুষের মাথায়। ভাবি থাক!
রিকশা মালিবাগ রেলগেটে এসে ট্রেনের সিগন্যালে আটকা পরেছে। আমার পাশের রিকশায় এক ভদ্রমহিলা সাথে তার পিচ্চি। দেখতে দুষ্ট দুষ্ট ৬ কি ৭ বছরের একটা শিশু। যেহেতু একদম আমার পাশের রিকশায় সেহেতু তাদের কথোপকথন আমি বেশ শুনতে পাচ্ছি।
- মা বাসায় ফিরবো কখন, আর কতক্ষন?
- এইতো বাবা চলে এসেছি।
মা আর ছেলের খুনসুটি, এটা ওটা, আব্দার শুনতে মন্দ লাগছেনা। কিন্তু হঠাৎ একটু চমকে উঠতে বাধ্য হলাম। বলা যায় কিছুটা ধাক্কাই খেলাম!
- মা, মা, আজ স্কুলে জুবায়ের আমাকে পঁচা কথা বলেছে, গালি দিয়েছে।
- কেয়া বোলা উসনে!
- উসনে মুঝে উল্লু কা পাঠা বোলা!
আমি চমকে দু'জনার দিকে একবার তাকালাম খুব মনোযোগ দিয়ে। না, এদেরতো অবাঙালী মনে হচ্ছেনা! কি শুনছি এসব!!
ছোট একটা শিশু হিন্দিতে কথা বলছে! কি ভয়ানক!! তারচেয়ে ভয়ানক হিন্দিতে কথা শুরু করেছে বাচ্চার মা!!!
হিন্দি ভাষা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা দূরে থাক, আক্ষরিক অর্থে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বা ভবিষ্যত জীবনে কোন গুরুত্বই বহন করেনা। আমি নিজে হিন্দি গান শুনি, বলা যায় বেশ পছন্দ করি। কিন্তু মনের ভাব প্রকাশে, প্রাত্যহিক জীবনে হিন্দিতে কথা বলবো? কোন ভাষা জানা-বোঝা-বলতে পারা দোষের কিছু নয়। কিন্তু প্রাত্যহিক আলাপ এবং যেখানে হিন্দি ভাষার কোনভাবেই প্র্যাকটিসিং ল্যাংগুয়েজ হতে পারেনা সেখানে একটা শিশুকে তার মা হিন্দিতে প্রশ্ন করছে। কি অদ্ভুত!
এর চেয়ে বাচ্চাটা যদি ইংরেজী শেখে, মা যদি ইংরেজীতে তার সাথে কথা বলে তাহলে আখেরে ঐ বাচ্চাটারই লাভ হবে। তাই বলি বাচ্চাকে প্রয়োজনে ইংরেজী শেখান!