সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের স্ত্রী দাবিদার ডালিয়া সুলতানা হেপীকে নিয়ে সিলেটে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কামরান। এ ব্যাপারে তিনি যুগান্তরকে জানান, ডালিয়া নামের কোন মহিলাকে তিনি চেনেন না। কেউ বললেই তার স্ত্রী দাবি করতে পারে না। বিয়ের কাবিনসহ প্রমাণ করতে হবে। এসব তার বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ অপপ্রচার বলে দাবি করে তিনি বলেন এ সব কিছু মিথ্যা ও বানোয়াট।
বৃহস্পতিবার নির্বাচনী প্রচারণাকে ছাড়িয়ে ডালিয়ার বিষয়টি ছিল নগরজুড়ে আলোচনায়। দীর্ঘদিন ধরে গোপন থাকা কামরানের দ্বিতীয় স্ত্রীর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসায় কামরানসহ তার পরিবারের সদস্যরা এ নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন। ঢাকায় কামরানের আরেক স্ত্রী আছেন এমন সংবাদ প্রায় সময় শোনা গেলেও স্ত্রীর সন্ধান কেউ পায়নি। অবশেষে ঢাকায় একটি দূর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিষয়টি প্রকাশ হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার একটি জাতীয় দৈনিক ও স্থানীয় একটি অনলাইনে বিষয়টি প্রকাশিত হওয়ায় সকাল থেকেই লোকজনের মুখে মুখে আলোচিত হয় বিষয়টি। এ ব্যাপারে জানতে অনেকে ফোন করেন সাংবাদিকদের কাছে।
জানা যায়, বুধবার সকালে ঢাকার মহাখালী পুলিশ বক্সের কাছে একটি গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-গ-৩৫-০১৫৮) অপর একটি গাড়িকে ধাক্কা দেয়। এ নিয়ে দুই গাড়ি চালকের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা শুরু হলে ঘটনাস্থলে আসেন বনানী থানার এসআই জাকির। তিনি বিষয়টি জেনে ঢাকা মেট্রো-গ-৩৫-০১৫৮ গাড়িটি থানায় নিয়ে যেতে চাইলে চালক জানান, এই গাড়িটির মালিক সিলেটের মেয়রের স্ত্রী ডালিয়া সুলতানা হেপী। এসআই জাকির যুগান্তরের কাছে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। তবে মেয়র কামরান সাংবাদিকদের কাছে বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি গাড়ির মালিকও নন বলে দাবি করেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডালিয়া সুলতানা হেপী সদ্য বিদায়ী মেয়র কামরানের দ্বিতীয় স্ত্রী। প্রায় ১০ বছর আগে কামরান প্রথম স্ত্রীকে না জানিয়ে এক সন্তানের জননী ডালিয়াকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে তিনি হেপীকে আদর করে ইতি বলে ডাকতেন। ডালিয়া ঢাকার ওয়ারীর ৮ র্যাংকিং রোডের ফরচুন টাওয়ারের সাউথ ভবনের ৬ বি ফ্ল্যাটে মেয়েকে নিয়ে থাকেন। ফ্ল্যাটটি কামরান তাকে কিনে দিয়েছেন। ঢাকায় ডালিয়ার নামে দোকান, প্লট ছাড়াও বিপুল পরিমাণ অর্থ রয়েছে বলে জানা গেছে। কামরান যখনই ঢাকায় যান বেশিরভাগ সময় ওয়ারীতে ডালিয়ার বাসায় ওঠেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে দলীয় কয়েকজন নেতা, কামরানের ঘনিষ্ঠ একাধিক ব্যবসায়ী এ বিষয়টি জানেন। তাদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথাও বলেন ডালিয়া।
ওয়ান ইলেভেনের সময় কামরান গ্রেফতারের পর তার প্রথম স্ত্রী আসমা কামরান বিষয়টি জানতে পারেন। এ নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘদিন মনোমালিন্য চলে কামরানের। কামরানের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, ডালিয়ার গ্রামের বাড়ি দোহার উপজেলায়। তার পিতাও একজন আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন। এর আগে ডালিয়ার একটি বিয়ে হয়েছিল। ১৫ বছর বয়সের তার একটি মেয়ে রয়েছে। প্রথম স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর ‘ঘটনাচক্রে’ কামরানের সঙ্গে পরিচয় হয় ডালিয়ার। এরপর তাদের ঘনিষ্ঠতা বাড়লে একপর্যায়ে ডালিয়াকে বিয়ে করতে বাধ্য হন কামরান।
সূত্রমতে, ডালিয়া একাধিকবার সিলেট এসেছেন। একবার সিটি কর্পোরেশনেও যান ডালিয়া। সে সময় আসমা কামরান লন্ডনে ছিলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্পোরেশনের একজন কর্মকর্তা বিষয়টির সত্যতাও স্বীকার করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগর আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ঢাকায় কামরানের একজন স্ত্রী আছেন এটা তো ‘ওপেন সিক্রেট’ ব্যাপার। বিষয়টি কামরানের পরিবারের সদস্যরাও জানেন। কিন্তু লোকলজ্জার ভয়ে এবং রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের কথা ভেবে কেউ কিছু বলেন না।
সূত্র
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:৩৭